হাসপাতালে অবহেলায় মৃত্যু হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত

হাসপাতালে অবহেলাজনিত মৃত্যু ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত। করোনাকালীন বেসরকারি হাসপাতাল মনিটরিং, হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া ১০টি নির্দেশনার মধ্যে ৭টি স্থগিত করা হয়েছে।

গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী এ আদেশ দেন। সকালে হাইকোর্টে আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে ভার্চুয়ালি রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ, আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান, আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান এবং ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান।

মুরাদ রেজা জানান, আমরা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিলাম। ১০টির মধ্যে ১, ৮ ও ৯ নম্বর নির্দেশনা ও অভিমত বহাল রয়েছে। বাকিগুলো স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। বহাল থাকা ১ নম্বর নির্দেশনা হলো ৩০ জুনের মধ্যে একটা প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন, এটা রেখেছেন। সরকার কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সে ব্যাপারে। ৮ নম্বর ছিল আইসিইউতে যেন রিজনেবল প্রাইস নেয়া হয়, এটা রেখছেন। ‘৯ নম্বর হলো- অক্সিজেন সিলিন্ডার। অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম নির্দিষ্ট করে দিতে বলেছেন, আদালত এটা বহাল রেখেছেন। এ তিনটা ছাড়া বাকিগুলো স্টে (স্থগিত) করে দিয়েছেন।

স্থগিত করা নির্দেশনাগুলো হলো : ১। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা নির্দেশনা অনুসারে ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে ১৫ জুন পর্যন্ত কত জন কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালনের কথা ছিল। পাশাপাশি ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের তালিকাও আর আদালতে দিতে হবে না।

২। বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনাসমূহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কিনা সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পর পর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দেয়া। ওইসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ প্রতিবেদন আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছিল।

৩। ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যাতে কোভিড ও নন-কোভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেয়, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে একটি মনিটরিং সেল গঠন।

৪। কোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে দেয়া নির্দেশনা স্থগিত করা হয়েছে।

৫। স্বাস্থ্য অধিদফতরকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কর্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করার কথা বলা হয়েছিল।

৬। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করা, কোন হাসপাতালে আইসিইউতে কত জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা, পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন’ চালু এবং হটলাইন নাম্বারগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করার কথা বলা হয়েছিল। এটিও স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।

৭। এছাড়া লকডাউনের বিষয়টি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

বহাল থাকা নির্দেশনাগুলো হলো : ১। অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান/দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে।

২। সরকার ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোন আদেশ দেয়া সঙ্গত হবে না মর্মে আদালত মনে করেন।

৩। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, তা আগামী ৩০ জুন স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতে দাখিল করতে হবে।

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১

হাসপাতালে অবহেলায় মৃত্যু হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

হাসপাতালে অবহেলাজনিত মৃত্যু ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত। করোনাকালীন বেসরকারি হাসপাতাল মনিটরিং, হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া ১০টি নির্দেশনার মধ্যে ৭টি স্থগিত করা হয়েছে।

গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী এ আদেশ দেন। সকালে হাইকোর্টে আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে ভার্চুয়ালি রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ, আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান, আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান এবং ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান।

মুরাদ রেজা জানান, আমরা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিলাম। ১০টির মধ্যে ১, ৮ ও ৯ নম্বর নির্দেশনা ও অভিমত বহাল রয়েছে। বাকিগুলো স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। বহাল থাকা ১ নম্বর নির্দেশনা হলো ৩০ জুনের মধ্যে একটা প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন, এটা রেখেছেন। সরকার কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সে ব্যাপারে। ৮ নম্বর ছিল আইসিইউতে যেন রিজনেবল প্রাইস নেয়া হয়, এটা রেখছেন। ‘৯ নম্বর হলো- অক্সিজেন সিলিন্ডার। অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম নির্দিষ্ট করে দিতে বলেছেন, আদালত এটা বহাল রেখেছেন। এ তিনটা ছাড়া বাকিগুলো স্টে (স্থগিত) করে দিয়েছেন।

স্থগিত করা নির্দেশনাগুলো হলো : ১। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা নির্দেশনা অনুসারে ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে ১৫ জুন পর্যন্ত কত জন কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালনের কথা ছিল। পাশাপাশি ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের তালিকাও আর আদালতে দিতে হবে না।

২। বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনাসমূহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কিনা সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পর পর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দেয়া। ওইসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ প্রতিবেদন আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছিল।

৩। ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যাতে কোভিড ও নন-কোভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেয়, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে একটি মনিটরিং সেল গঠন।

৪। কোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে দেয়া নির্দেশনা স্থগিত করা হয়েছে।

৫। স্বাস্থ্য অধিদফতরকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কর্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করার কথা বলা হয়েছিল।

৬। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করা, কোন হাসপাতালে আইসিইউতে কত জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা, পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন’ চালু এবং হটলাইন নাম্বারগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করার কথা বলা হয়েছিল। এটিও স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।

৭। এছাড়া লকডাউনের বিষয়টি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

বহাল থাকা নির্দেশনাগুলো হলো : ১। অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান/দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে।

২। সরকার ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোন আদেশ দেয়া সঙ্গত হবে না মর্মে আদালত মনে করেন।

৩। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, তা আগামী ৩০ জুন স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতে দাখিল করতে হবে।