বাঁশের ঘেরা উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢুকে পড়ে এলাকায়

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে তিন সপ্তাহের জন্য প্রথম লকডাউন করা হয় চট্টগ্রামের মূল প্রবেশপথ উত্তর কাট্টলী ১০নং ওয়ার্ড। কিন্তু টানা ২১ দিনের লকডাউনের শুরুর প্রথম দিনেই ‘অবরুদ্ধ বিধি’ মানাতে ঘাম ছুটেছে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্রশাসনের। ভোরেই বাঁশের ঘেরা উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢুকে পড়েছে লকডাউন এলাকার ভেতরে- এতে পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেকটা বেকায়দায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া মহানগরীতে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১০টি ওয়ার্ড।

স্থানীয় সূত্র জানায়, লকডাউনের প্রথম দিন ভোরেই বাঁশের তৈরি বাঁধ উপচে বিভিন্ন পয়েন্টে ঢুকতে শুরু করে লোকজন। নিয়ম অমান্য করে লকডাউন এলাকার ভেতরেই গার্মেন্টস খোলা রাখার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, পরীক্ষামূলক লকডাউন হওয়া এই ওয়ার্ডে ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে অন্তত দেড়শটি কলকারখানা। এদের মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে ৬৫টি গার্মেন্টস। কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জানানো হয় এই ওয়ার্ডে ২৫ হাজার পরিবারে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে কমপক্ষে ১ লাখ বাসিন্দা রয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই ওয়ার্ডে ১৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন। তাছাড়া অন্তত আরও ৭ জন করোনা উপসর্গে মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উত্তর কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন জানান, লকডাউনের আগে বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু মাত্র বিসিক, ওষুধের দোকান আর ব্যাংক খোলা রাখা হবে এই এলাকায়। কোন গার্মেন্টস খোলা থাকবে না। কিন্তু ভেতরে পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই ভোর হতেই এইসব গার্মেন্ট শ্রমিকরা দলে দলে আসতে শুরু করে। ভোরে ওই এলাকার বিভিন্ন প্রবেশ মুখে বাঁশের বাঁধ উপচে ওই এলাকায় প্রবেশ করে। এ সময় ওই সব পয়েন্টের তদারকিতে কেউ ছিল না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় সূত্র জানায়, ভোরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢল নামে বাঁশ দিয়ে বেঁধে রাখা বিভিন্ন পয়েন্টে। অনেকটা অনাকাক্সিক্ষত ভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নেছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর বক্তব্য জানা যায়নি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তার ব্যক্তিগত সহকারী রোকন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কিছু পয়েন্টে সকাল সকাল শ্রমিকরা ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এসব পয়েন্টে এখন স্বেচ্ছাসেবক এবং প্রশাসনের লোকজন তদারকির দায়িত্বে রয়েছে। যারা ঢুকেছে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে।

আকবর শাহ থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিছু পয়েন্টে শ্রমিকরা ভোরে ঢুকে পড়েছে। এই থানার আওতাধীন পয়েন্টগুলোতে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। তবে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, লকডাউনের প্রথম দিন অনেকেই বুঝতে পারেনি বিধিনিষেধের ব্যপারটি। তাই হয়ত এমন হয়েছে।

এদিকে লকডাউনকৃত উত্তর কাট্টলীতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কার্যক্রম সচল রাখার দায়ে চার গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গতকাল লকডাউন এলাকাটি পরিদর্শনে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই চার প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে। এগুলো হলো- এইচবি ফ্যাশনস, এইচকে টিজি গার্মেন্টস, কাট্টলী টেক্সটাইলস লিমিটেড ও গার্টেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড।

মোবাইল কোর্ট সূত্র জানায়, করোনাকে কেন্দ্র করে রেডজোন ঘোষিত ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন বাস্তবায়ন ও সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য গতকাল বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় রেডজোনকৃত ১০নং ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ পাওয়া যায়। রাস্তায় পাওয়া যায়নি কোন গণপরিবহন ও রিকশা। তবে কয়েকটি গার্মেন্টস সম্পূর্ণভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন অভিযোগ পান মোবাইল কোর্ট।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০ , ৪ আষাঢ় ১৪২৭, ২৫ শাওয়াল ১৪৪১

লকডাউনের প্রথম দিন চট্টগ্রামে

বাঁশের ঘেরা উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢুকে পড়ে এলাকায়

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে তিন সপ্তাহের জন্য প্রথম লকডাউন করা হয় চট্টগ্রামের মূল প্রবেশপথ উত্তর কাট্টলী ১০নং ওয়ার্ড। কিন্তু টানা ২১ দিনের লকডাউনের শুরুর প্রথম দিনেই ‘অবরুদ্ধ বিধি’ মানাতে ঘাম ছুটেছে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্রশাসনের। ভোরেই বাঁশের ঘেরা উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢুকে পড়েছে লকডাউন এলাকার ভেতরে- এতে পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেকটা বেকায়দায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া মহানগরীতে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১০টি ওয়ার্ড।

স্থানীয় সূত্র জানায়, লকডাউনের প্রথম দিন ভোরেই বাঁশের তৈরি বাঁধ উপচে বিভিন্ন পয়েন্টে ঢুকতে শুরু করে লোকজন। নিয়ম অমান্য করে লকডাউন এলাকার ভেতরেই গার্মেন্টস খোলা রাখার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, পরীক্ষামূলক লকডাউন হওয়া এই ওয়ার্ডে ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে অন্তত দেড়শটি কলকারখানা। এদের মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে ৬৫টি গার্মেন্টস। কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জানানো হয় এই ওয়ার্ডে ২৫ হাজার পরিবারে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে কমপক্ষে ১ লাখ বাসিন্দা রয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই ওয়ার্ডে ১৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন। তাছাড়া অন্তত আরও ৭ জন করোনা উপসর্গে মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উত্তর কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন জানান, লকডাউনের আগে বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু মাত্র বিসিক, ওষুধের দোকান আর ব্যাংক খোলা রাখা হবে এই এলাকায়। কোন গার্মেন্টস খোলা থাকবে না। কিন্তু ভেতরে পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই ভোর হতেই এইসব গার্মেন্ট শ্রমিকরা দলে দলে আসতে শুরু করে। ভোরে ওই এলাকার বিভিন্ন প্রবেশ মুখে বাঁশের বাঁধ উপচে ওই এলাকায় প্রবেশ করে। এ সময় ওই সব পয়েন্টের তদারকিতে কেউ ছিল না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় সূত্র জানায়, ভোরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢল নামে বাঁশ দিয়ে বেঁধে রাখা বিভিন্ন পয়েন্টে। অনেকটা অনাকাক্সিক্ষত ভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নেছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর বক্তব্য জানা যায়নি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তার ব্যক্তিগত সহকারী রোকন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কিছু পয়েন্টে সকাল সকাল শ্রমিকরা ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এসব পয়েন্টে এখন স্বেচ্ছাসেবক এবং প্রশাসনের লোকজন তদারকির দায়িত্বে রয়েছে। যারা ঢুকেছে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে।

আকবর শাহ থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিছু পয়েন্টে শ্রমিকরা ভোরে ঢুকে পড়েছে। এই থানার আওতাধীন পয়েন্টগুলোতে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। তবে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, লকডাউনের প্রথম দিন অনেকেই বুঝতে পারেনি বিধিনিষেধের ব্যপারটি। তাই হয়ত এমন হয়েছে।

এদিকে লকডাউনকৃত উত্তর কাট্টলীতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কার্যক্রম সচল রাখার দায়ে চার গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গতকাল লকডাউন এলাকাটি পরিদর্শনে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই চার প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে। এগুলো হলো- এইচবি ফ্যাশনস, এইচকে টিজি গার্মেন্টস, কাট্টলী টেক্সটাইলস লিমিটেড ও গার্টেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড।

মোবাইল কোর্ট সূত্র জানায়, করোনাকে কেন্দ্র করে রেডজোন ঘোষিত ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন বাস্তবায়ন ও সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য গতকাল বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় রেডজোনকৃত ১০নং ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ পাওয়া যায়। রাস্তায় পাওয়া যায়নি কোন গণপরিবহন ও রিকশা। তবে কয়েকটি গার্মেন্টস সম্পূর্ণভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন অভিযোগ পান মোবাইল কোর্ট।