সংক্রমণ থাকবে ৩ বছর বা তারও বেশি মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদফতর

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ইঙ্গিত করে বলেছেন এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না করোনা পরিস্থিতি। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় স্থায়ী হবে। বাংলাদেশ ঘনবসতি এবং জনবহুল একটি দেশ। করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এ কারণে অসতর্কভাবে চলাফেরা এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে এদেশে সংক্রমণের হার মোকাবিলা করা কঠিন। গতকাল দুপুরে অনলাইন ব্রিফিংয়ে হাজির হয়ে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

মহাপরিচালক বলেন, বেশ কিছুদিন পর আপনাদের সামনে হাজির হলাম। আপনারা জানেন, আমিও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলাম। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। সুস্থ হয়ে আবার অফিসে যোগ দিয়েছি এবং কাজ করছি। দেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা জানেন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শীর্ষ রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক, পুলিশসহ অনেককে হারিয়েছি।

করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে কর্মহীনতা, আয় রোজগার বন্ধ হওয়া এবং অন্যান্য সামাজিক, অর্থনৈতিক কারণেও ব্যাপক অপুষ্টি দেখা দিতে পারে। বিশ্বব্যাপী অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সময় পর বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চহার কমে আসতে পারে। কিন্তু করোনার পরীক্ষা সংখ্যা বৃদ্ধি করলে লুকায়িত এবং মৃত কেসও শনাক্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা পরিবর্তন, দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহার নাও থাকতে পারে। সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেন। এ মুহূর্তে তিনিই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততম ব্যক্তি। করোনা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত বিষয় না। এটা সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবনের সব উপজীব্যকে ঘিরে। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে অধিকতর জোরালো নজর দিয়েছেন।

মহাপরিচালক বলেন, কোভিড পরীক্ষার কাজ সরকারি, বেসরকারিভাবে সম্প্রসারিত হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায় পর্যন্ত আরপিসিআর পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব সম্প্রসারিত হবে। আরও নতুন নতুন, সহজে করা যায় এমন কোভিড পরীক্ষা চালু হবে। উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা চালু করার প্রচেষ্টা নেয়া হবে। দেশের সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত সব সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। পরীক্ষার কিট বা পিপিই এর যেন কোন অভাব না হয়ে সেজন্য সুপরিকল্পিতভাবে সংগ্রহ এবং সরবরাহ এর পদ্ধতি নেয়া হচ্ছে। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালে কোভিড, নন-কোভিড রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়া যায় সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে মূল্য নির্ধারণ, তদারকি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি-বেসরকারি খাত যেন যৌথভাবে দায়িত্বে গুরুদায়িত্ব পালন করে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। জোনিংয়ের ক্ষেত্রে যখন যা প্রয়োজন তা করা হবে।

‘করোনা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবনের সব কিছুকে ঘিরে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে অধিকতর জোরালো নজর দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি দুই হাজার চিকিৎসক, পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তার নির্দেশে এখন দীর্ঘস্থায়ী সক্ষমতার কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়েছে। আপনারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভরসা রাখুন। বিশ্বের করোনা বাস্তবতার প্রতিও লক্ষ্য রাখুন। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম কোন দেশ নয়। আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্যে যা করা সম্ভব এবং যা করা বাস্তবমুখী, সরকার সে ব্যবস্থাই নিচ্ছে। আরেকটি কথা বলতে চাই, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতেই। যতদিন করোনা থাকবে, ততদিন প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘কারও করোনা সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা দিন। যেকোন মূল্যে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাসে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতেই হবে।

শুক্রবার, ১৯ জুন ২০২০ , ৫ আষাঢ় ১৪২৭, ২৬ শাওয়াল ১৪৪১

সংক্রমণ থাকবে ৩ বছর বা তারও বেশি মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদফতর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ইঙ্গিত করে বলেছেন এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না করোনা পরিস্থিতি। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় স্থায়ী হবে। বাংলাদেশ ঘনবসতি এবং জনবহুল একটি দেশ। করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এ কারণে অসতর্কভাবে চলাফেরা এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে এদেশে সংক্রমণের হার মোকাবিলা করা কঠিন। গতকাল দুপুরে অনলাইন ব্রিফিংয়ে হাজির হয়ে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

মহাপরিচালক বলেন, বেশ কিছুদিন পর আপনাদের সামনে হাজির হলাম। আপনারা জানেন, আমিও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলাম। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। সুস্থ হয়ে আবার অফিসে যোগ দিয়েছি এবং কাজ করছি। দেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা জানেন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শীর্ষ রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক, পুলিশসহ অনেককে হারিয়েছি।

করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে কর্মহীনতা, আয় রোজগার বন্ধ হওয়া এবং অন্যান্য সামাজিক, অর্থনৈতিক কারণেও ব্যাপক অপুষ্টি দেখা দিতে পারে। বিশ্বব্যাপী অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সময় পর বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চহার কমে আসতে পারে। কিন্তু করোনার পরীক্ষা সংখ্যা বৃদ্ধি করলে লুকায়িত এবং মৃত কেসও শনাক্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা পরিবর্তন, দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহার নাও থাকতে পারে। সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেন। এ মুহূর্তে তিনিই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততম ব্যক্তি। করোনা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত বিষয় না। এটা সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবনের সব উপজীব্যকে ঘিরে। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে অধিকতর জোরালো নজর দিয়েছেন।

মহাপরিচালক বলেন, কোভিড পরীক্ষার কাজ সরকারি, বেসরকারিভাবে সম্প্রসারিত হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায় পর্যন্ত আরপিসিআর পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব সম্প্রসারিত হবে। আরও নতুন নতুন, সহজে করা যায় এমন কোভিড পরীক্ষা চালু হবে। উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা চালু করার প্রচেষ্টা নেয়া হবে। দেশের সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত সব সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। পরীক্ষার কিট বা পিপিই এর যেন কোন অভাব না হয়ে সেজন্য সুপরিকল্পিতভাবে সংগ্রহ এবং সরবরাহ এর পদ্ধতি নেয়া হচ্ছে। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালে কোভিড, নন-কোভিড রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়া যায় সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে মূল্য নির্ধারণ, তদারকি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি-বেসরকারি খাত যেন যৌথভাবে দায়িত্বে গুরুদায়িত্ব পালন করে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। জোনিংয়ের ক্ষেত্রে যখন যা প্রয়োজন তা করা হবে।

‘করোনা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবনের সব কিছুকে ঘিরে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে অধিকতর জোরালো নজর দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি দুই হাজার চিকিৎসক, পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তার নির্দেশে এখন দীর্ঘস্থায়ী সক্ষমতার কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়েছে। আপনারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভরসা রাখুন। বিশ্বের করোনা বাস্তবতার প্রতিও লক্ষ্য রাখুন। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম কোন দেশ নয়। আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্যে যা করা সম্ভব এবং যা করা বাস্তবমুখী, সরকার সে ব্যবস্থাই নিচ্ছে। আরেকটি কথা বলতে চাই, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতেই। যতদিন করোনা থাকবে, ততদিন প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘কারও করোনা সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা দিন। যেকোন মূল্যে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাসে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতেই হবে।