বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) না নিলে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের নিজস্ব উদ্যোগে বিদেশ থেকে তেল আমদানির অনুমোদন দেবে না জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
বিপিসির পরিশোধিত ফার্নেস অয়েলের গুণগত মান ভালো না এমন যুক্তিতে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা সরাসরি বিদেশ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস তেল আমদানি শুরু করে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি মালিকরা সরকারি ভ্যাট, ট্যাক্স মওকুফ ছাড়াও ৯ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা পায়। তাই বিপিসির কাছ থেকে তেল নেয়ার চেয়ে আমদানি করাই তাদের জন্য লাভজনক। তবে নতুন (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেসরকারি মালিকদের আমদানি করা তেলের ওপর ৯ শতাংশ প্রণোদনা তুলে নিয়েছে। বিপিসি বিদেশ থেকে ক্রুড অয়েল আমদানি করে অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে পরিশোধন করে ফার্নেস অয়েল উৎপাদন করে। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে প্রায় দুই লাখ মেট্রিকটন ফার্নেস তেল জমা হয়ে আছে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পিডিবির এই তেল না নেয়ায় বিপাকে পড়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে তেল বিক্রি নিশ্চিত করতে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট চাহিদা বা ব্যবহারের ১০ শতাংশ জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) বিপিসির কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে গত বুধবার অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ, বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিপিসির কাছ থেকে ২ লাখ মেট্রিকটন ফার্নেস অয়েল নেবে পিডিবি। সেই তেল তারা সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের কাছেও সরবরাহ করবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক এবং পিডিবিকে বিপিসির কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল গ্রহণ করতে হবে। বিপিসিকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে বিদেশ থেকে ক্রুড অয়েল আমদানি করে পরিশোধন করতে হয়। আর বেসরকারি মালিকরা তেল আমদানিতে ৯ শতাংশ প্রণোদনা পায়। ফলে বিপিসির তুলনায় তাদের তেল আমদানিতে খরচ কম পড়ে। এবার রাজস্ব বোর্ড বেসরকারি মালিকদের তেল আমদানি করার ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ প্রণোদনা তুলে দেয়ায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তেল আমদানি এবং বিপিসির তেল বিক্রির মূল্য প্রায় সমান হবে। সচিব জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যারা বিপিসি থেকে তেল গ্রহণ করবে না, তাদের তেল আমদানির অনুমোদনের ক্ষেত্রে কঠোর হবে জ্বালানি বিভাগ।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, বিপিসি প্রয়োজনে ব্রেক ইভেনে তেল বিক্রি করবে। এছাড়া আগে জাহাজ ভাড়া পিডিবি বা বেসরকারি মালিকরা এবং বিপিসি অর্ধেক করে পরিশোধ করতো। এখন থেকে জাহাজ ভাড়া বিপিসি একাই পরিশোধ করবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রয়োজনে বিপিসি কোন লাভ করা ছাড়া উৎপাদন খরচেই পিডিবির কাছে তেল বিক্রি করবে।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিপপা) সভাপতি এবং কনফিডেন্ট গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম বলেন, জ্বালানি বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল কিনব। কিন্তু বিপিসির তেলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরদের আলাদা আলাদা তেলের স্টোরেজ রয়েছে। বললেই বিপিসির কাছে থেকে বেশি পরিমাণ তেল কেনা কঠিন।
বিপিসির তেলের গুণগত মান ভালো না- এমন অভিযোগের বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, বিপিসি বিদেশ থেকে তেল আমদানি করে একই সঙ্গে বেসরকারি মালিকরাও বিদেশ থেকে তেল আমদানি করে। সুতরাং তেলের গুণগত মান ভালো না এটা সঠিক অভিযোগ নয়। তবে মূল ডিপো থেকে তেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিবহনের সময় যে শ্যালো জাহাজে করে নেয়া হয়, সেখানে কোন ঝামেলা থাকতে পারে। এ বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে আনা হবে।
শুক্রবার, ১৯ জুন ২০২০ , ৫ আষাঢ় ১৪২৭, ২৬ শাওয়াল ১৪৪১
ফয়েজ আহমেদ তুষার |
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) না নিলে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের নিজস্ব উদ্যোগে বিদেশ থেকে তেল আমদানির অনুমোদন দেবে না জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
বিপিসির পরিশোধিত ফার্নেস অয়েলের গুণগত মান ভালো না এমন যুক্তিতে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা সরাসরি বিদেশ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস তেল আমদানি শুরু করে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি মালিকরা সরকারি ভ্যাট, ট্যাক্স মওকুফ ছাড়াও ৯ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা পায়। তাই বিপিসির কাছ থেকে তেল নেয়ার চেয়ে আমদানি করাই তাদের জন্য লাভজনক। তবে নতুন (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেসরকারি মালিকদের আমদানি করা তেলের ওপর ৯ শতাংশ প্রণোদনা তুলে নিয়েছে। বিপিসি বিদেশ থেকে ক্রুড অয়েল আমদানি করে অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে পরিশোধন করে ফার্নেস অয়েল উৎপাদন করে। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে প্রায় দুই লাখ মেট্রিকটন ফার্নেস তেল জমা হয়ে আছে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পিডিবির এই তেল না নেয়ায় বিপাকে পড়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে তেল বিক্রি নিশ্চিত করতে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট চাহিদা বা ব্যবহারের ১০ শতাংশ জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) বিপিসির কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে গত বুধবার অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ, বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিপিসির কাছ থেকে ২ লাখ মেট্রিকটন ফার্নেস অয়েল নেবে পিডিবি। সেই তেল তারা সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের কাছেও সরবরাহ করবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক এবং পিডিবিকে বিপিসির কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল গ্রহণ করতে হবে। বিপিসিকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে বিদেশ থেকে ক্রুড অয়েল আমদানি করে পরিশোধন করতে হয়। আর বেসরকারি মালিকরা তেল আমদানিতে ৯ শতাংশ প্রণোদনা পায়। ফলে বিপিসির তুলনায় তাদের তেল আমদানিতে খরচ কম পড়ে। এবার রাজস্ব বোর্ড বেসরকারি মালিকদের তেল আমদানি করার ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ প্রণোদনা তুলে দেয়ায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তেল আমদানি এবং বিপিসির তেল বিক্রির মূল্য প্রায় সমান হবে। সচিব জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যারা বিপিসি থেকে তেল গ্রহণ করবে না, তাদের তেল আমদানির অনুমোদনের ক্ষেত্রে কঠোর হবে জ্বালানি বিভাগ।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, বিপিসি প্রয়োজনে ব্রেক ইভেনে তেল বিক্রি করবে। এছাড়া আগে জাহাজ ভাড়া পিডিবি বা বেসরকারি মালিকরা এবং বিপিসি অর্ধেক করে পরিশোধ করতো। এখন থেকে জাহাজ ভাড়া বিপিসি একাই পরিশোধ করবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রয়োজনে বিপিসি কোন লাভ করা ছাড়া উৎপাদন খরচেই পিডিবির কাছে তেল বিক্রি করবে।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিপপা) সভাপতি এবং কনফিডেন্ট গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম বলেন, জ্বালানি বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল কিনব। কিন্তু বিপিসির তেলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরদের আলাদা আলাদা তেলের স্টোরেজ রয়েছে। বললেই বিপিসির কাছে থেকে বেশি পরিমাণ তেল কেনা কঠিন।
বিপিসির তেলের গুণগত মান ভালো না- এমন অভিযোগের বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, বিপিসি বিদেশ থেকে তেল আমদানি করে একই সঙ্গে বেসরকারি মালিকরাও বিদেশ থেকে তেল আমদানি করে। সুতরাং তেলের গুণগত মান ভালো না এটা সঠিক অভিযোগ নয়। তবে মূল ডিপো থেকে তেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিবহনের সময় যে শ্যালো জাহাজে করে নেয়া হয়, সেখানে কোন ঝামেলা থাকতে পারে। এ বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে আনা হবে।