চুরির অপবাদ দিয়ে

মা-মেয়েকে নির্যাতন

আইন হাতে তুলে নিলেন ইউপি চেয়ারম্যান তদন্ত কমিটি গঠন

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের বিরুদ্ধে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা-মেয়ে ও ছেলেসহ চারজনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার দুপুরে হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখিল গ্রামে প্রথমদফা মারধরের পর কোমরে রশি বেঁধে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে এনে তাদের দ্বিতীয় দফা প্রহার করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরান।

অভিযোগ উঠেছে, শাররীক নির্যাতনের পর চারজনকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলে গত শনিবার গরু চুরির মামলায় পুলিশ তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি সংগঠিত হলেও শনিবার রাত ১১টার দিকে মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে তুলে আনার কয়েকটি ছবি স্থানীয় জনগণের ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর দুই নারীকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে।

এলাকাবাসী জানায়, গরু চুরির অপবাদ দিয়ে শুক্রবার দুপুরে হওয়ায় হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখিল গ্রামের স্থানীয় লোকজন একটি সিএনজি অটোরিকশা আটকিয়ে চারজনকে আটক করেন।

ওইসময় উত্তেজিত কিছু লোক ঘটনাস্থলে চুরির অপবাদ দিয়ে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে তাদের মারধর করে। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম বিষয়টি জানার পর তার নির্দেশে কিছু যুবক ঘটনাস্থল থেকে তাদের রশি দিয়ে বেঁধে টানা হেচড়া করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, আটক চারজনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে গরু চুরির অভিযোগে হারবাং বৃন্দাবনখিল গ্রামের মৃত নুর আহমদের পুত্র মাহবুবুল হক (৬১) বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে ইমরান হোসেন (২১) ও মেয়ে সেলিনা আক্তার (২৮) এবং পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ছুট্টোকে (২৭)।

তার আগে ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার লোকজন আটক চারজনের সঙ্গে একটি গরুর বাছুর, ১টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ১টি ¯েপ্র, ১টি কসট্যাব ও ১টি ছুরা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তিনি বলেন, আটককৃতদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করে, একই পরিবারের মা, মেয়ে, ভাই ও তাদের এক আত্মীয়কে পরিকল্পিতভাবে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে কোমরে রশি বেঁধে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন।

হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান বলেন, অভিযুক্তদের আমি পরিষদের এনে মেরেছি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক না। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় ফিরে আসি। পরে গরু চোর আটকের ঘটনাটি জানতে পারি। ঘটনাটি চকরিয়া থানা পুলিশ ও ইউএনওকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তাই বিরোধী পক্ষ আমাকে ফাঁসানোর জন্য নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে।

এদিকে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে সংগঠিত ঘটনার জেরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের উপ-সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ঘটনার দিন বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। আমি তখন গরু চোরদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিনসদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এতে উপ-সচিব শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি নিজেই খতিয়ে দেখছি। অভিযুক্তরা যদি মনে করে তাদের অপমান বা হয়রানি করা হয়েছে তাহলে তাদের অভিযোগও আমলে নেয়া হবে।’

সোমবার, ২৪ আগস্ট ২০২০ , ৪ মহররম ১৪৪২, ২৪ আগস্ট ২০২০

চুরির অপবাদ দিয়ে

মা-মেয়েকে নির্যাতন

আইন হাতে তুলে নিলেন ইউপি চেয়ারম্যান তদন্ত কমিটি গঠন

এম. জিয়াবুল হক, চকরিয়া (কক্সবাজার)

image

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের বিরুদ্ধে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা-মেয়ে ও ছেলেসহ চারজনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার দুপুরে হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখিল গ্রামে প্রথমদফা মারধরের পর কোমরে রশি বেঁধে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে এনে তাদের দ্বিতীয় দফা প্রহার করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরান।

অভিযোগ উঠেছে, শাররীক নির্যাতনের পর চারজনকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলে গত শনিবার গরু চুরির মামলায় পুলিশ তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি সংগঠিত হলেও শনিবার রাত ১১টার দিকে মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে তুলে আনার কয়েকটি ছবি স্থানীয় জনগণের ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর দুই নারীকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে।

এলাকাবাসী জানায়, গরু চুরির অপবাদ দিয়ে শুক্রবার দুপুরে হওয়ায় হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখিল গ্রামের স্থানীয় লোকজন একটি সিএনজি অটোরিকশা আটকিয়ে চারজনকে আটক করেন।

ওইসময় উত্তেজিত কিছু লোক ঘটনাস্থলে চুরির অপবাদ দিয়ে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে তাদের মারধর করে। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম বিষয়টি জানার পর তার নির্দেশে কিছু যুবক ঘটনাস্থল থেকে তাদের রশি দিয়ে বেঁধে টানা হেচড়া করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, আটক চারজনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে গরু চুরির অভিযোগে হারবাং বৃন্দাবনখিল গ্রামের মৃত নুর আহমদের পুত্র মাহবুবুল হক (৬১) বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে ইমরান হোসেন (২১) ও মেয়ে সেলিনা আক্তার (২৮) এবং পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ছুট্টোকে (২৭)।

তার আগে ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার লোকজন আটক চারজনের সঙ্গে একটি গরুর বাছুর, ১টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ১টি ¯েপ্র, ১টি কসট্যাব ও ১টি ছুরা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তিনি বলেন, আটককৃতদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করে, একই পরিবারের মা, মেয়ে, ভাই ও তাদের এক আত্মীয়কে পরিকল্পিতভাবে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে কোমরে রশি বেঁধে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন।

হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান বলেন, অভিযুক্তদের আমি পরিষদের এনে মেরেছি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক না। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় ফিরে আসি। পরে গরু চোর আটকের ঘটনাটি জানতে পারি। ঘটনাটি চকরিয়া থানা পুলিশ ও ইউএনওকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তাই বিরোধী পক্ষ আমাকে ফাঁসানোর জন্য নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে।

এদিকে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে সংগঠিত ঘটনার জেরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের উপ-সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ঘটনার দিন বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। আমি তখন গরু চোরদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিনসদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এতে উপ-সচিব শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি নিজেই খতিয়ে দেখছি। অভিযুক্তরা যদি মনে করে তাদের অপমান বা হয়রানি করা হয়েছে তাহলে তাদের অভিযোগও আমলে নেয়া হবে।’