ঢাকা মেডিকেলে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে

বহির্বিভাগে ১৫ হাজারের চিকিৎসা ভর্তি ৭ হাজার, মৃত্যু ৩৫১

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে (ঢামেক) প্রতিদিন করোনা রোগীর (কোভিড-১৯) চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। গতকাল ঢামেক কার্যালয়ে সংবাদকে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের বৃহৎ হাসপাতাল এমন মন্তব্য করে একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, জরুরি ও বহির্বিভাগে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে হিমশিমে পড়েছে চিকিৎসক। মৃদু করোনা রোগী থেকে শুরু করে মারাত্মক রোগীদের হাসপাতালের জরুরি ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ আগের তুলনায় চলতি মাসে অনেক বেশি। আগে করোনা রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এখন সেটি নেই, চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে বেড সংখ্যা প্রায় ৯শ’। আইসিইউ ২৪টি। গতকাল পর্যন্ত ৬৬৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ে ও কমে। এখন দিনে গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়। আর যারা একটু সুস্থ তাদের বহির্বিভাগে উপসর্গ বুঝে চিকিৎসা দেয়া হয়। বহির্বিভাগে অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসার কারণে রাজধানীতে এখন করোনা রোগীর চিকিৎসার সমস্যা হচ্ছে না। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাচ্ছে না। সব চাপ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কোরবানির ঈদের আগে ও পরে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আগস্ট মাসে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ঢামেক পরিচালক বলেন, করোনাভাইরাস শুরুর পর অনেকে হাসপাতালে আসেননি, উপসর্গ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। হাসপাতালের ওপর রোগীদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছিল। এখন সেটি আর নেই। করোনা উপসর্গ নিয়ে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে আসছেন।

দেশের করোনা রোগীদের একটি বৃহৎ অংশ এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে গতকাল পর্যন্ত ঢামেকে ২শ’ চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। আর নার্স সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও কর্মচারী ও টেকনোলজিস্ট রয়েছে। চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা আক্রান্তের বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তারা নিয়মিত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন। মাস্ক না পরলে দ্রুত রোগ ছড়াবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাহির হওয়ার সময় বা কর্মস্থলে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা শাখার জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডগুলোতে জরুরি বিভাগে দিনে এখন ৭০টির মতো রোগী ভর্তি ও চিকিৎসার টিকিট বিতরণ করছে আগে এ সংখ্যা ছিল ৮০ থেকে ৯০টি। ওই সময়ে দিনে কমবেশি ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমার ব্যাপারে ঢামেকের পরিচালক বলেন, কোন রোগী এখন আর ফেরত যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে রোগীর চাপ বাড়ছে। রোগীদের চিকিৎসা চলছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৬৬৮ জন রোগী ভর্তি আছে। সংখ্যা বাড়ে ও সংখ্যা কমে। গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন মারা গেছে। তারমধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ১ জন মহিলা। এভাবে দিনে ২ জন ৩ জন বা ৪ জনও মারা যায়। এখন সব করোনা রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন। কাউকে রাস্তায় পড়ে থাকতে হচ্ছে না। ঢাকা মেডিকেলে এলেই চিকিৎসা পাচ্ছেন। একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে উপসর্গ বুঝে রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিরউদ্দিন বলেন, করোনা শুরু পর বিভিন্ন স্থানে রোগীরা রাস্তায় চিকিৎসা না পেয়ে অপেক্ষা করত। এখন সেই দৃশ্য নেই। করোনা রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছেন। নিয়মিত চিকিৎসা পাচ্ছেন।

সোমবার, ২৪ আগস্ট ২০২০ , ৪ মহররম ১৪৪২, ২৪ আগস্ট ২০২০

পরিচালকের সাক্ষাৎকার

ঢাকা মেডিকেলে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে

বহির্বিভাগে ১৫ হাজারের চিকিৎসা ভর্তি ৭ হাজার, মৃত্যু ৩৫১

বাকিবিল্লাহ |

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে (ঢামেক) প্রতিদিন করোনা রোগীর (কোভিড-১৯) চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। গতকাল ঢামেক কার্যালয়ে সংবাদকে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের বৃহৎ হাসপাতাল এমন মন্তব্য করে একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, জরুরি ও বহির্বিভাগে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে হিমশিমে পড়েছে চিকিৎসক। মৃদু করোনা রোগী থেকে শুরু করে মারাত্মক রোগীদের হাসপাতালের জরুরি ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ আগের তুলনায় চলতি মাসে অনেক বেশি। আগে করোনা রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এখন সেটি নেই, চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে বেড সংখ্যা প্রায় ৯শ’। আইসিইউ ২৪টি। গতকাল পর্যন্ত ৬৬৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ে ও কমে। এখন দিনে গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়। আর যারা একটু সুস্থ তাদের বহির্বিভাগে উপসর্গ বুঝে চিকিৎসা দেয়া হয়। বহির্বিভাগে অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসার কারণে রাজধানীতে এখন করোনা রোগীর চিকিৎসার সমস্যা হচ্ছে না। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাচ্ছে না। সব চাপ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কোরবানির ঈদের আগে ও পরে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আগস্ট মাসে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ঢামেক পরিচালক বলেন, করোনাভাইরাস শুরুর পর অনেকে হাসপাতালে আসেননি, উপসর্গ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। হাসপাতালের ওপর রোগীদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছিল। এখন সেটি আর নেই। করোনা উপসর্গ নিয়ে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে আসছেন।

দেশের করোনা রোগীদের একটি বৃহৎ অংশ এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে গতকাল পর্যন্ত ঢামেকে ২শ’ চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। আর নার্স সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও কর্মচারী ও টেকনোলজিস্ট রয়েছে। চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা আক্রান্তের বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তারা নিয়মিত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন। মাস্ক না পরলে দ্রুত রোগ ছড়াবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাহির হওয়ার সময় বা কর্মস্থলে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা শাখার জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডগুলোতে জরুরি বিভাগে দিনে এখন ৭০টির মতো রোগী ভর্তি ও চিকিৎসার টিকিট বিতরণ করছে আগে এ সংখ্যা ছিল ৮০ থেকে ৯০টি। ওই সময়ে দিনে কমবেশি ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমার ব্যাপারে ঢামেকের পরিচালক বলেন, কোন রোগী এখন আর ফেরত যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে রোগীর চাপ বাড়ছে। রোগীদের চিকিৎসা চলছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৬৬৮ জন রোগী ভর্তি আছে। সংখ্যা বাড়ে ও সংখ্যা কমে। গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন মারা গেছে। তারমধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ১ জন মহিলা। এভাবে দিনে ২ জন ৩ জন বা ৪ জনও মারা যায়। এখন সব করোনা রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন। কাউকে রাস্তায় পড়ে থাকতে হচ্ছে না। ঢাকা মেডিকেলে এলেই চিকিৎসা পাচ্ছেন। একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে উপসর্গ বুঝে রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিরউদ্দিন বলেন, করোনা শুরু পর বিভিন্ন স্থানে রোগীরা রাস্তায় চিকিৎসা না পেয়ে অপেক্ষা করত। এখন সেই দৃশ্য নেই। করোনা রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছেন। নিয়মিত চিকিৎসা পাচ্ছেন।