করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা অঘোষিতভাবে বন্ধ

বিভাগীয় নগরীসহ পুরো রংপুর জেলায় করোনার নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা অঘোষিতভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করার পর তা ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে দিনের পর দিন এমনকি এক সপ্তাহেও নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন মিলছে না।

এদিকে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নিজেরাই স্বীকার করেছেন শুধুমাত্র ভিভিআইপি ও বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সাধারণ মানুষের করোনার নমুনা নেয়া অঘোষিতভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন শত শত করোনা আক্রান্ত রোগী নমুনা পরীক্ষার জন্য রংপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ধরনা দিয়ে নমুনা দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে। রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মেডিকেল কলেজে যে পিসিআর মেশিন রয়েছে সেখানে প্রতিদিন ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায়। ফলে রংপুর সিটি করপোরেশেন ছাড়াও জেলার ৮ উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনা রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করা হয়। ফলে বেশিরভাগ সময় নমুনার জট লেগে যায়। বর্তমানে দেড় হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য পড়ে আছে। এ সব পরীক্ষা করতে কমপক্ষে ৭/৮ দিন সময় লাগবে। অন্যদিকে প্রতিদিনই শতাধিক নমুনা জমা পড়ছে। এমনি অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থা না করলে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। এর আগে নমুনার জট বাড়লে কয়েক দফা ঢাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এবারেও ২/১ দিনের মধ্যে ৬শ’র বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে বলে রংপুর জেলা সিভিল সার্জেন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজের কার্যালয়ে গত দু’দিন ধরে নমুনা দিতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন এমন দু’জন শালবন মিস্ত্রি পাড়ার আফসানা বেগম ও কলেজ রোডের মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেছেন সিটি করপোরেশন এলাকায় নমুনা সংগ্রহ করার দায়িত্ব প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দফতরের। যারা বুথে নমুনা পরীক্ষা করাবেন তাদের একশ’ টাকা আর যারা বাসায় করাবেন তাদের তিনশ’ টাকা সরকার নির্ধারণ করে দিলেও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সেচ্ছাচারিতা, অশোভন আচরণ, ফোন রিসিভ না করাসহ নানান অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। তিনি কথা বলতে চাননা, নমুনার ব্যাপারে জানতে চাইলে একবার বলেন, নগরীর সুরভী উদ্যানের উল্টোদিকে বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বুথে যান সেখানে গেলে বেশির ভাগ সময় কাউকেই পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বাসায় নমুনা পরীক্ষা করার কথা বললে, কখন যাবে কি করতে হবে জানতে চাইলে, তিনি বেশির ভাগ সময় কথা বলতে চান না। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আরও বেশ কয়েকজন। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ বাসায় বা বুথে নমুনা পরীক্ষা করালে কোন রিসিট দেন না তিনি। তার আচরণ এবং স্বেচ্ছাচারিতার কাছে নগরবাসি জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ নমুনা পরীক্ষা করতে আসা ভুক্তভোগিদের।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও নমুনা পরীক্ষার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রংপুরের সিভিল সার্জেন ডা. হিরম্ব কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রংপুর পিসিআর ল্যাবের সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে।

অন্যদিকে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবসরজনিত কারণে ছুটিতে থাকায় একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে তোগলকি কারবার চলছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবার আশঙ্কা রয়েছে।

সোমবার, ২৪ আগস্ট ২০২০ , ৪ মহররম ১৪৪২, ২৪ আগস্ট ২০২০

রংপুরে

করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা অঘোষিতভাবে বন্ধ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

বিভাগীয় নগরীসহ পুরো রংপুর জেলায় করোনার নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা অঘোষিতভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করার পর তা ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে দিনের পর দিন এমনকি এক সপ্তাহেও নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন মিলছে না।

এদিকে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নিজেরাই স্বীকার করেছেন শুধুমাত্র ভিভিআইপি ও বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সাধারণ মানুষের করোনার নমুনা নেয়া অঘোষিতভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন শত শত করোনা আক্রান্ত রোগী নমুনা পরীক্ষার জন্য রংপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ধরনা দিয়ে নমুনা দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে। রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মেডিকেল কলেজে যে পিসিআর মেশিন রয়েছে সেখানে প্রতিদিন ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায়। ফলে রংপুর সিটি করপোরেশেন ছাড়াও জেলার ৮ উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনা রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করা হয়। ফলে বেশিরভাগ সময় নমুনার জট লেগে যায়। বর্তমানে দেড় হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য পড়ে আছে। এ সব পরীক্ষা করতে কমপক্ষে ৭/৮ দিন সময় লাগবে। অন্যদিকে প্রতিদিনই শতাধিক নমুনা জমা পড়ছে। এমনি অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থা না করলে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। এর আগে নমুনার জট বাড়লে কয়েক দফা ঢাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এবারেও ২/১ দিনের মধ্যে ৬শ’র বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে বলে রংপুর জেলা সিভিল সার্জেন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজের কার্যালয়ে গত দু’দিন ধরে নমুনা দিতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন এমন দু’জন শালবন মিস্ত্রি পাড়ার আফসানা বেগম ও কলেজ রোডের মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেছেন সিটি করপোরেশন এলাকায় নমুনা সংগ্রহ করার দায়িত্ব প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দফতরের। যারা বুথে নমুনা পরীক্ষা করাবেন তাদের একশ’ টাকা আর যারা বাসায় করাবেন তাদের তিনশ’ টাকা সরকার নির্ধারণ করে দিলেও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সেচ্ছাচারিতা, অশোভন আচরণ, ফোন রিসিভ না করাসহ নানান অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। তিনি কথা বলতে চাননা, নমুনার ব্যাপারে জানতে চাইলে একবার বলেন, নগরীর সুরভী উদ্যানের উল্টোদিকে বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বুথে যান সেখানে গেলে বেশির ভাগ সময় কাউকেই পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বাসায় নমুনা পরীক্ষা করার কথা বললে, কখন যাবে কি করতে হবে জানতে চাইলে, তিনি বেশির ভাগ সময় কথা বলতে চান না। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আরও বেশ কয়েকজন। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ বাসায় বা বুথে নমুনা পরীক্ষা করালে কোন রিসিট দেন না তিনি। তার আচরণ এবং স্বেচ্ছাচারিতার কাছে নগরবাসি জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ নমুনা পরীক্ষা করতে আসা ভুক্তভোগিদের।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও নমুনা পরীক্ষার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রংপুরের সিভিল সার্জেন ডা. হিরম্ব কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রংপুর পিসিআর ল্যাবের সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে।

অন্যদিকে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবসরজনিত কারণে ছুটিতে থাকায় একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে তোগলকি কারবার চলছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবার আশঙ্কা রয়েছে।