পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের মুখে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার ১৫ বছরের এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় তিন আসামিকে। দুই দফায় আসামিদের রিমান্ডে নেয়া হয়। পরে আদালতে জবানবন্দি দেয় তারা। জবানবন্দিতে আসামিরা স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে বলে জানায় পুলিশ। হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে তারা এখন কারাগারে। কিন্তু নিখোঁজের ৫১ দিন পর সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া গেছে ছাত্রীকে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের তদন্ত ও আদালতে দেয়া আসামিদের জবানবন্দি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এর সদুত্তর নেই পুলিশের কাছে।
স্কুলছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল জিসা মনি (১৫) নামে ওই কিশোরী। সে স্থানীয় সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। অনেক খোজাখুঁজির পর মেয়েকে না পেয়ে ১৭ জুলাই সাধারণ ডায়েরি, পরে ৬ আগস্ট সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। মামলার তদন্তভার পান সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন।
এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (২২), বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬)। গত ৯ আগস্ট আসামিরা নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানায় সদর মডেল থানা পুলিশ।
আসামিদের দেয়া জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানিয়েছিল, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ৪ জুলাই বিকেলে রকিবের ইজিবাইকে ঘোরাঘুরি শেষে ওই কিশোরীকে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় নিয়ে যায় আবদুল্লাহ। সন্ধ্যায় খলিল মাঝির নৌকা ভাড়া করে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। পরে আবদুল্লাহ ওই নৌকাতেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পালাক্রমে ধর্ষণ করে নৌকার মাঝি খলিলও। মেয়েটি তার মাকে ধর্ষণের কথা বলে দিবে বললে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আবদুল্লাহ ও খলিল। এরপর লাশ নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, মামলার পর জিসার মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পাই। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আবদুল্লাহ নিহত কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ করত। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে সে। রকিবকে গ্রেফতারের পর আবদুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেফতার করি। আসামিরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী খোঁজ করেও ভুক্তভোগীর মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে গত ২৩ আগস্ট দুপুর আড়াইটার সময় বন্দরের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকা থেকে জিসা তার মাকে ফোন করে জানায় সে ইকবাল নামে এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেছে। তার কিছুই হয়নি। সে সুস্থ আছে। তবে কিছু টাকার প্রয়োজন। এমন কথায় টাকা পাঠিয়ে উল্লেখিত এলাকায় ছুটে যান জিসার মা-বাবা। খবর পেয়ে পুলিশ জিসা মনিকে সদর মডেল থানায় নিয়ে আসে।
জিসার মা রেখা আক্তার বলেন, ‘পুলিশ জানিয়েছিল, আসামিরা আমার মেয়েকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। আমরা তো লাশের অপেক্ষায় ছিলাম। ভাবতেই পারিনি সে বেঁচে আছে। তার সঙ্গে ধর্ষণের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি। আমি চাই না অন্য কেউ বিনা দোষে জেলে থাকুক।’
একটি সূত্র জানায়, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় ইকবাল ওরফে ইব্রাহিম নামে এক ছেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গত দেড় মাস ধরে এক সঙ্গে বসবাস করেছে জিসা। এদিকে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ের কারাগারে দিন কাটাচ্ছে আবদুল্লাহ, রকিব ও খলিল।
ধর্ষণ কিংবা হত্যার ঘটনা না ঘটলে আসামিরা আদালতে এমন জবানবন্দি কেন দিয়েছে সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। পুলিশের নির্যাতনের মুখে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন আসামিদের স্বজনরা। তারা বলছেন, জিসা মনিকে ধর্ষণ কিংবা হত্যা কিছুই করা হয়নি। সে অন্য এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি এখন প্রমাণিত। বর্তমানে সে সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে। অথচ তাকে অপহরণের দায়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে পুলিশি নির্যাতনের মুখে তাদের দিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। পুলিশই এই ঘটনা সাজিয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন আসামির স্বজনদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে কয়েক হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করছেন তারা। গ্রেফতার আবদুল্লাহ’র মা শিউলী আক্তার বলেন, আবদুল্লাহ ওয়ার্কশপে কাজ করত। আমার ছেলের একটি স্টেটমেন্ট ছিল যে, আমি ওর (জিসা) সাথে ঘুরছি একসাথে। আর কিছু করি নাই। বিনা কারণে আমার ছেলেরে এত কিছু সহ্য করা লাগছে। যদি আমার ছেলে কিছু করত তাহলে মেয়েটা জীবিত ফিরে আসল কেমনে? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীমকে দুই দফায় দশ হাজার টাকা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
নৌকার মাঝি খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছোটবেলা মা-বাপরে হারাইয়া আমি এতিম। স্বামী কামাইয়া না আনলে না খাইয়া থাকি। এই কয়টা দিন আমার তিনটা মাইয়া নিয়ে আমি মাইনষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি। পোলাপান থুইয়া কাম কইরা যে খামু হেইডাও পারতাছি না। আমার স্বামীরে কেন পুলিশ ফাঁসাইলো সেইটা আমি জানতে চাই।
এসআই শামীমের বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন শারমিনও। তিনি বলেন, ‘টাকা না দিলে জেলে ভইরা দেয়ার হুমকি দিছিল এসআই শামীম। টাকা না দেয়ায় আমার স্বামীরে সারা রাইত ঝুলাইয়া পিডাইছে। এই কথা শোনার পর আমি অনেক কষ্ট কইরা সাত হাজার টাকা দিছি। আমার স্বামীরে যেন না মারে। কিন্তু তারা আমার স্বামীরে ফাঁসাইয়া দিল। এখন তো দেখা যায় মাইয়া বাঁইচা আছে। তাইলে তারা মাইরা নদীতে কেমনে ফেলল?’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, আসামিরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ধর্ষণ ও হত্যার। কিন্তু এখন ওই মেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ফিরে এসেছে। বলছে, এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। যদি পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসামির স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতেও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই ঘটনার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালেহউদ্দিন আহমেদ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা পরিদর্শক ইকবাল হোসেন। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও সরিয়ে নিয়ে পরিদর্শক পদবীর এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হবে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট ২০২০ , ৫ মহররম ১৪৪২, ২৫ আগস্ট ২০২০
পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের মুখে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ
সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার ১৫ বছরের এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় তিন আসামিকে। দুই দফায় আসামিদের রিমান্ডে নেয়া হয়। পরে আদালতে জবানবন্দি দেয় তারা। জবানবন্দিতে আসামিরা স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে বলে জানায় পুলিশ। হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে তারা এখন কারাগারে। কিন্তু নিখোঁজের ৫১ দিন পর সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া গেছে ছাত্রীকে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের তদন্ত ও আদালতে দেয়া আসামিদের জবানবন্দি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এর সদুত্তর নেই পুলিশের কাছে।
স্কুলছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল জিসা মনি (১৫) নামে ওই কিশোরী। সে স্থানীয় সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। অনেক খোজাখুঁজির পর মেয়েকে না পেয়ে ১৭ জুলাই সাধারণ ডায়েরি, পরে ৬ আগস্ট সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। মামলার তদন্তভার পান সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন।
এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (২২), বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬)। গত ৯ আগস্ট আসামিরা নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানায় সদর মডেল থানা পুলিশ।
আসামিদের দেয়া জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানিয়েছিল, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ৪ জুলাই বিকেলে রকিবের ইজিবাইকে ঘোরাঘুরি শেষে ওই কিশোরীকে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় নিয়ে যায় আবদুল্লাহ। সন্ধ্যায় খলিল মাঝির নৌকা ভাড়া করে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। পরে আবদুল্লাহ ওই নৌকাতেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পালাক্রমে ধর্ষণ করে নৌকার মাঝি খলিলও। মেয়েটি তার মাকে ধর্ষণের কথা বলে দিবে বললে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আবদুল্লাহ ও খলিল। এরপর লাশ নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, মামলার পর জিসার মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পাই। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আবদুল্লাহ নিহত কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ করত। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে সে। রকিবকে গ্রেফতারের পর আবদুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেফতার করি। আসামিরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী খোঁজ করেও ভুক্তভোগীর মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে গত ২৩ আগস্ট দুপুর আড়াইটার সময় বন্দরের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকা থেকে জিসা তার মাকে ফোন করে জানায় সে ইকবাল নামে এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেছে। তার কিছুই হয়নি। সে সুস্থ আছে। তবে কিছু টাকার প্রয়োজন। এমন কথায় টাকা পাঠিয়ে উল্লেখিত এলাকায় ছুটে যান জিসার মা-বাবা। খবর পেয়ে পুলিশ জিসা মনিকে সদর মডেল থানায় নিয়ে আসে।
জিসার মা রেখা আক্তার বলেন, ‘পুলিশ জানিয়েছিল, আসামিরা আমার মেয়েকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। আমরা তো লাশের অপেক্ষায় ছিলাম। ভাবতেই পারিনি সে বেঁচে আছে। তার সঙ্গে ধর্ষণের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি। আমি চাই না অন্য কেউ বিনা দোষে জেলে থাকুক।’
একটি সূত্র জানায়, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় ইকবাল ওরফে ইব্রাহিম নামে এক ছেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গত দেড় মাস ধরে এক সঙ্গে বসবাস করেছে জিসা। এদিকে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ের কারাগারে দিন কাটাচ্ছে আবদুল্লাহ, রকিব ও খলিল।
ধর্ষণ কিংবা হত্যার ঘটনা না ঘটলে আসামিরা আদালতে এমন জবানবন্দি কেন দিয়েছে সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। পুলিশের নির্যাতনের মুখে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন আসামিদের স্বজনরা। তারা বলছেন, জিসা মনিকে ধর্ষণ কিংবা হত্যা কিছুই করা হয়নি। সে অন্য এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি এখন প্রমাণিত। বর্তমানে সে সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে। অথচ তাকে অপহরণের দায়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে পুলিশি নির্যাতনের মুখে তাদের দিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। পুলিশই এই ঘটনা সাজিয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন আসামির স্বজনদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে কয়েক হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করছেন তারা। গ্রেফতার আবদুল্লাহ’র মা শিউলী আক্তার বলেন, আবদুল্লাহ ওয়ার্কশপে কাজ করত। আমার ছেলের একটি স্টেটমেন্ট ছিল যে, আমি ওর (জিসা) সাথে ঘুরছি একসাথে। আর কিছু করি নাই। বিনা কারণে আমার ছেলেরে এত কিছু সহ্য করা লাগছে। যদি আমার ছেলে কিছু করত তাহলে মেয়েটা জীবিত ফিরে আসল কেমনে? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীমকে দুই দফায় দশ হাজার টাকা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
নৌকার মাঝি খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছোটবেলা মা-বাপরে হারাইয়া আমি এতিম। স্বামী কামাইয়া না আনলে না খাইয়া থাকি। এই কয়টা দিন আমার তিনটা মাইয়া নিয়ে আমি মাইনষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি। পোলাপান থুইয়া কাম কইরা যে খামু হেইডাও পারতাছি না। আমার স্বামীরে কেন পুলিশ ফাঁসাইলো সেইটা আমি জানতে চাই।
এসআই শামীমের বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন শারমিনও। তিনি বলেন, ‘টাকা না দিলে জেলে ভইরা দেয়ার হুমকি দিছিল এসআই শামীম। টাকা না দেয়ায় আমার স্বামীরে সারা রাইত ঝুলাইয়া পিডাইছে। এই কথা শোনার পর আমি অনেক কষ্ট কইরা সাত হাজার টাকা দিছি। আমার স্বামীরে যেন না মারে। কিন্তু তারা আমার স্বামীরে ফাঁসাইয়া দিল। এখন তো দেখা যায় মাইয়া বাঁইচা আছে। তাইলে তারা মাইরা নদীতে কেমনে ফেলল?’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, আসামিরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ধর্ষণ ও হত্যার। কিন্তু এখন ওই মেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ফিরে এসেছে। বলছে, এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। যদি পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসামির স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতেও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই ঘটনার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালেহউদ্দিন আহমেদ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা পরিদর্শক ইকবাল হোসেন। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও সরিয়ে নিয়ে পরিদর্শক পদবীর এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হবে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।