ভ্যাটের অনিয়ম রোধে ইএফডি মেশিন বসানো শুরু

নতুন আইনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ের জন্য ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন গত বছরের জুলাইয়ে বসানোর কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে অবশেষে দোকানে দোকানে ইএফডি বসানোর কাজ উদ্বোধন করল এনবিআর। গতকাল এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ইএফডি বসানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাটের অনিয়ম বন্ধ করতেই ইএফডি চালু করা হচ্ছে। ইএফডি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এর ফলে কথিত হয়রানি দূর হবে এবং রাজস্ব আহরণের ব্যয় ও ব্যবসায়িক খরচ কমবে। কর পরিহারের সুযোগ থাকবে না। রাজস্ব আদায়ে গতি আশার পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অটোমেশনের আওতায় আসবে। আস্তার জায়গা তৈরি করতে পারব। প্রাথমিকভাবে ১০০ মেশিন বসানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আগামী তিন মাসের মধ্যে এক হাজার ইএফডি মেশিন বসানো হবে। আগামী জুনের মধ্যে এক লাখ ইএফডি মেশিন বসানো হবে। ভোক্তার টেলিফোন নম্বর আমাদের কাছে সংরক্ষিত থাকবে। নির্দিষ্ট সময় শেষে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ভোক্তাকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার পুরস্কার দেয়া হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় ৮০টি এবং চট্টগ্রামে ২০টি ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ইএফডি হলো আধুনিক হিসাব যন্ত্র। এটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টারের (ইসিআর) উন্নত সংস্করণ। এ যন্ত্র বসানো হলে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত লেনদেন বা বিক্রির তথ্য জানতে পারবে এনবিআর। এর মধ্যে কত অংশ ভ্যাট তা জানা যাবে। ফলে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হবে এবং আদায় বাড়বে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৈনিক লেনদেনের তথ্য তদারকিতে রাজস্ব বোর্ডের সার্ভারের সঙ্গে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে ইএফডি মেশিন। সার্ভার ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। মূলত হোটেল, রেস্তোরাঁ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ সেবাখাতের লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে ভ্যাটের হালনাগাদ তথ্য পেতে ইএফডি মেশিন বসানো হচ্ছে। ২৫ সেবাখাতে ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এ মেশিন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে প্রথম পর্যায়ে বিনামূল্যে দেয়া হবে। শুরুতে এটি ব্যবহারে তাদের অভ্যস্ত করার চেষ্টা করা হবে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে চালু করা হবে।

এছাড়াও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানই প্রশ্ন করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, যদি কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রশ্ন তোলে তবে তাদের সেটা হবে অন্যায়, অনুচিত। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে প্রশ্ন করে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে না। যদি কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রশ্ন তোলে তবে সেটা অন্যায় হবে, অনুচিত হবে। তবে এক্ষেত্রে কেউ চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। সরকার আইন করে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে বলেছে। এখানে কেউ প্রশ্ন রাখতে পারে না। তবে আমার মনে হয় কাউকেই আইনের আশ্রয় নিতে হবে না। পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ফলে ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে। তবে আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে তেমন সাড়া পড়েনি। রিটার্ন আসলে বোঝা যাবে কী পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেটে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগে সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া আগের নিয়ম অনুযায়ী আবাসন খাতেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।

এনবিআর গত অর্থবছরে ইএফডি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করে। এর আগে ২০০৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ইসিআর মেশিন ব্যবহার করা হয়। তবে তা সফল হয়নি। এরপর ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ চলছে। এক লাখ মেশিন কেনার নীতিগত অনুমোদনও দেয়া হয় ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকে। মেশিন সরবরাহে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে গত এপ্রিলে এটি চালুর কথা থাকলেও করোনা মহামারীতে তা পিছিয়ে যায়। চীনে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা ঢাকায় এলে মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া ফের শুরু করে এনবিআর। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব বাংলাদেশ মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার, ২৬ আগস্ট ২০২০ , ৬ মহররম ১৪৪২, ২৬ আগস্ট ২০২০

ভ্যাটের অনিয়ম রোধে ইএফডি মেশিন বসানো শুরু

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

নতুন আইনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ের জন্য ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন গত বছরের জুলাইয়ে বসানোর কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে অবশেষে দোকানে দোকানে ইএফডি বসানোর কাজ উদ্বোধন করল এনবিআর। গতকাল এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ইএফডি বসানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাটের অনিয়ম বন্ধ করতেই ইএফডি চালু করা হচ্ছে। ইএফডি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এর ফলে কথিত হয়রানি দূর হবে এবং রাজস্ব আহরণের ব্যয় ও ব্যবসায়িক খরচ কমবে। কর পরিহারের সুযোগ থাকবে না। রাজস্ব আদায়ে গতি আশার পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অটোমেশনের আওতায় আসবে। আস্তার জায়গা তৈরি করতে পারব। প্রাথমিকভাবে ১০০ মেশিন বসানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আগামী তিন মাসের মধ্যে এক হাজার ইএফডি মেশিন বসানো হবে। আগামী জুনের মধ্যে এক লাখ ইএফডি মেশিন বসানো হবে। ভোক্তার টেলিফোন নম্বর আমাদের কাছে সংরক্ষিত থাকবে। নির্দিষ্ট সময় শেষে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ভোক্তাকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার পুরস্কার দেয়া হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় ৮০টি এবং চট্টগ্রামে ২০টি ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ইএফডি হলো আধুনিক হিসাব যন্ত্র। এটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টারের (ইসিআর) উন্নত সংস্করণ। এ যন্ত্র বসানো হলে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত লেনদেন বা বিক্রির তথ্য জানতে পারবে এনবিআর। এর মধ্যে কত অংশ ভ্যাট তা জানা যাবে। ফলে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হবে এবং আদায় বাড়বে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৈনিক লেনদেনের তথ্য তদারকিতে রাজস্ব বোর্ডের সার্ভারের সঙ্গে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে ইএফডি মেশিন। সার্ভার ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। মূলত হোটেল, রেস্তোরাঁ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ সেবাখাতের লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে ভ্যাটের হালনাগাদ তথ্য পেতে ইএফডি মেশিন বসানো হচ্ছে। ২৫ সেবাখাতে ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এ মেশিন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে প্রথম পর্যায়ে বিনামূল্যে দেয়া হবে। শুরুতে এটি ব্যবহারে তাদের অভ্যস্ত করার চেষ্টা করা হবে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে চালু করা হবে।

এছাড়াও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানই প্রশ্ন করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, যদি কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রশ্ন তোলে তবে তাদের সেটা হবে অন্যায়, অনুচিত। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে প্রশ্ন করে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে না। যদি কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রশ্ন তোলে তবে সেটা অন্যায় হবে, অনুচিত হবে। তবে এক্ষেত্রে কেউ চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। সরকার আইন করে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে বলেছে। এখানে কেউ প্রশ্ন রাখতে পারে না। তবে আমার মনে হয় কাউকেই আইনের আশ্রয় নিতে হবে না। পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ফলে ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে। তবে আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে তেমন সাড়া পড়েনি। রিটার্ন আসলে বোঝা যাবে কী পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেটে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগে সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া আগের নিয়ম অনুযায়ী আবাসন খাতেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।

এনবিআর গত অর্থবছরে ইএফডি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করে। এর আগে ২০০৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ইসিআর মেশিন ব্যবহার করা হয়। তবে তা সফল হয়নি। এরপর ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ চলছে। এক লাখ মেশিন কেনার নীতিগত অনুমোদনও দেয়া হয় ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকে। মেশিন সরবরাহে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে গত এপ্রিলে এটি চালুর কথা থাকলেও করোনা মহামারীতে তা পিছিয়ে যায়। চীনে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা ঢাকায় এলে মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া ফের শুরু করে এনবিআর। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব বাংলাদেশ মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।