এবার মৌনভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার তৃতীয় বর্ষ পালন

মায়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আগমনের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এই দীর্ঘ ৩ বছর ধরে বিপুল পরিমাণ এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। মানবিক আশ্রয়ে থাকা এসব রোহিঙ্গারা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে স্বদেশে ফিরতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৫ আগস্ট ৩য় রোহিঙ্গা জেনোসাইড রিমেম্বার ডে পালন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বড় আকারে সমাবেশ আয়োজন, মসজিদে মসজিদে দোয়া, ব্যানার ফেস্টুন, টি শার্ট ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক আকারে দিনটিকে স্মরণ করলেও এ বছর কোন কর্মসূচি দেয়নি রোহিঙ্গারা। এ বছর সকাল-সন্ধ্যা ঘরে থেকে দিনটি স্মরণ করেছে রোহিঙ্গারা। করোনা পরিস্থিতিতে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি না পাওয়া এমন কর্মসূচির প্রধান কারণ। তবে রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটি (এআরএসপিএস) এর ভাষ্য হচ্ছে, মৌনতার মাধ্যমেই তারা বোঝাতে চান ‘ঘরে ফিরে যাওয়াই প্রধান লক্ষ্য।

টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মোস্তফা কামাল বলেছেন, গতকাল মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এই উপলক্ষে করোনায় যাতে ক্যাম্পে কোন লোকজন জড়ো হয়ে মিছিল, মিটিংয়ে অংশ না নেয় সেজন্য আগে থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা কক্সবাজারের ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, করোনাকাল হওয়ায় ক্যাম্পে ২৫ আগস্ট উপলক্ষে মিটিং, মিছিলসহ সব ধরনের সভা না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ নিয়ে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেছেন, সরকার মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল রোহিঙ্গা আগমনের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এই তিন বছর ধরে রোহিঙ্গাদের কিভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে আসছে সরকার। যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা যায় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘে দাবি জানিয়ে এসেছেন এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। যা এখনও সরকার সব ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এখনও আমরা জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। স্বাভাবিক পরিস্থিতি এখনও শুরু করেনি। করোনা মোকাবিলায় আমরা সবার সহযোগিতায় অনেকটা সফলতা অর্জন করেছি। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনবহুল এলাকায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৬ জন। এছাড়াও করোনার স্যাম্পল কালেকশনের পজেটিভ যে ফলাফলের অনুপাত এখনও ৩ দশমিক ১। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে করোনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক কম। এরপরও ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এ বছর কোন রোহিঙ্গাদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে কোন ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে কোন রোহিঙ্গা জমায়েত হতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে সহযোগিতা আগের মতো এখনও অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু আন্তর্জাতিক মহল নয়, দেশি-বিদেশি শতাধিক এনজিও রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এখন কাজ করে যাচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কোন ধরনের সংকট নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সেই আগের মতো স্বাভাবিকভাবে যাবতীয় কার্যক্রম চলছে।

মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ একাধিক এজেন্সি কাজ করছে। এতে করে পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বুধবার, ২৬ আগস্ট ২০২০ , ৬ মহররম ১৪৪২, ২৬ আগস্ট ২০২০

করোনার কারণে

এবার মৌনভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার তৃতীয় বর্ষ পালন

প্রতিনিধি, কক্সবাজার

মায়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আগমনের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এই দীর্ঘ ৩ বছর ধরে বিপুল পরিমাণ এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। মানবিক আশ্রয়ে থাকা এসব রোহিঙ্গারা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে স্বদেশে ফিরতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৫ আগস্ট ৩য় রোহিঙ্গা জেনোসাইড রিমেম্বার ডে পালন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বড় আকারে সমাবেশ আয়োজন, মসজিদে মসজিদে দোয়া, ব্যানার ফেস্টুন, টি শার্ট ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক আকারে দিনটিকে স্মরণ করলেও এ বছর কোন কর্মসূচি দেয়নি রোহিঙ্গারা। এ বছর সকাল-সন্ধ্যা ঘরে থেকে দিনটি স্মরণ করেছে রোহিঙ্গারা। করোনা পরিস্থিতিতে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি না পাওয়া এমন কর্মসূচির প্রধান কারণ। তবে রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটি (এআরএসপিএস) এর ভাষ্য হচ্ছে, মৌনতার মাধ্যমেই তারা বোঝাতে চান ‘ঘরে ফিরে যাওয়াই প্রধান লক্ষ্য।

টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মোস্তফা কামাল বলেছেন, গতকাল মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এই উপলক্ষে করোনায় যাতে ক্যাম্পে কোন লোকজন জড়ো হয়ে মিছিল, মিটিংয়ে অংশ না নেয় সেজন্য আগে থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা কক্সবাজারের ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, করোনাকাল হওয়ায় ক্যাম্পে ২৫ আগস্ট উপলক্ষে মিটিং, মিছিলসহ সব ধরনের সভা না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ নিয়ে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেছেন, সরকার মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল রোহিঙ্গা আগমনের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এই তিন বছর ধরে রোহিঙ্গাদের কিভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে আসছে সরকার। যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা যায় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘে দাবি জানিয়ে এসেছেন এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। যা এখনও সরকার সব ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এখনও আমরা জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। স্বাভাবিক পরিস্থিতি এখনও শুরু করেনি। করোনা মোকাবিলায় আমরা সবার সহযোগিতায় অনেকটা সফলতা অর্জন করেছি। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনবহুল এলাকায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৬ জন। এছাড়াও করোনার স্যাম্পল কালেকশনের পজেটিভ যে ফলাফলের অনুপাত এখনও ৩ দশমিক ১। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে করোনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক কম। এরপরও ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এ বছর কোন রোহিঙ্গাদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে কোন ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে কোন রোহিঙ্গা জমায়েত হতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে সহযোগিতা আগের মতো এখনও অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু আন্তর্জাতিক মহল নয়, দেশি-বিদেশি শতাধিক এনজিও রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এখন কাজ করে যাচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কোন ধরনের সংকট নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সেই আগের মতো স্বাভাবিকভাবে যাবতীয় কার্যক্রম চলছে।

মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ একাধিক এজেন্সি কাজ করছে। এতে করে পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।