করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট চার হাজার ২৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৮ জন। দিন দিন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা ভারি হচ্ছে। কবে নাগাদ দেশ থেকে করোনা দূর হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে মানুষ। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যাংকার, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিন করোনায় মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর আগের পরিসংখ্যানকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। কোনভাবেই করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।
প্রতিদিনের মতো গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানিয়েছে, দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে ৪৫ জনের প্রাণ। ফলে এখন দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো চার হাজার ২৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৫৪৫ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬২৮ জনে। গত ১২ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৭.৯৮ শতাংশ এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০.৩৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও তিন হাজার ৮৮১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৬ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬২.৩৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনার মৃতের হার ১.৩৪ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৮৮১ জন এবং এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৬ জন সুস্থ হয়েছেন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৭৮৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৪ হাজার ১৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭০ হাজার ১৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ১৩ জন নারী। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১৬৯ জন পুরুষ এবং ৮৫৯ জন নারী মারা গেছেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব ২৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ২৫, চট্টগ্রামে ৯, রাজশাহীতে ২, খুলনায় ৪, বরিশালে ২, রংপুরে ১ এবং ময়মনসিংহে ২ জন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৪৪ এবং বাড়িতে একজন মারা গেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮০৬ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ৩৭৫ জন। আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৭১৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৬৫৮ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৩৩ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ২৪২ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ২০৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার ৪০২ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৩ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৭৬১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আট সদস্যের জনস্বাস্থ্যবিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা গত জুনের মাঝামাঝি সংক্রমণ কমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতির সঙ্গে ওই পূর্বাভাস মিলছে না। প্রতিদিনই মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন কমবেশি হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল, সঠিক সময়ে যথাযথভাবে সেগুলো গ্রহণ করা যায়নি। এ কারণে করোনা প্রতিরোধে পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এতে করে সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সঠিক সময়ে পরিস্থিতি অনুধাবন করে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন আমরা সবাই মিলে এর মাশুল দিচ্ছি। চীনে সংক্রমণের পর যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ তা গ্রহণ করেনি।
চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে বলা যায়, তারা করোনার পেছনে ছুটছেন। এভাবে পেছনে ছুটে তো কাউকে প্রতিরোধ করা যায় না। প্রতিরোধ করতে হলে আগে ছুটতে হবে।
বুধবার, ২৬ আগস্ট ২০২০ , ৬ মহররম ১৪৪২, ২৬ আগস্ট ২০২০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট চার হাজার ২৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৮ জন। দিন দিন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা ভারি হচ্ছে। কবে নাগাদ দেশ থেকে করোনা দূর হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে মানুষ। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যাংকার, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিন করোনায় মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর আগের পরিসংখ্যানকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। কোনভাবেই করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।
প্রতিদিনের মতো গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানিয়েছে, দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে ৪৫ জনের প্রাণ। ফলে এখন দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো চার হাজার ২৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৫৪৫ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬২৮ জনে। গত ১২ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৭.৯৮ শতাংশ এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০.৩৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও তিন হাজার ৮৮১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৬ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬২.৩৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনার মৃতের হার ১.৩৪ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৮৮১ জন এবং এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৬ জন সুস্থ হয়েছেন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৭৮৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৪ হাজার ১৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭০ হাজার ১৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ১৩ জন নারী। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১৬৯ জন পুরুষ এবং ৮৫৯ জন নারী মারা গেছেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব ২৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ২৫, চট্টগ্রামে ৯, রাজশাহীতে ২, খুলনায় ৪, বরিশালে ২, রংপুরে ১ এবং ময়মনসিংহে ২ জন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৪৪ এবং বাড়িতে একজন মারা গেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮০৬ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ৩৭৫ জন। আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৭১৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৬৫৮ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৩৩ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ২৪২ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ২০৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার ৪০২ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৩ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৭৬১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আট সদস্যের জনস্বাস্থ্যবিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা গত জুনের মাঝামাঝি সংক্রমণ কমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতির সঙ্গে ওই পূর্বাভাস মিলছে না। প্রতিদিনই মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন কমবেশি হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল, সঠিক সময়ে যথাযথভাবে সেগুলো গ্রহণ করা যায়নি। এ কারণে করোনা প্রতিরোধে পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এতে করে সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সঠিক সময়ে পরিস্থিতি অনুধাবন করে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন আমরা সবাই মিলে এর মাশুল দিচ্ছি। চীনে সংক্রমণের পর যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ তা গ্রহণ করেনি।
চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে বলা যায়, তারা করোনার পেছনে ছুটছেন। এভাবে পেছনে ছুটে তো কাউকে প্রতিরোধ করা যায় না। প্রতিরোধ করতে হলে আগে ছুটতে হবে।