সিআইডির মানি লন্ডারিং মামলা
পাঁচ বছরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদ করিম। বিশেষ করে করোনাকালেই ভুয়া নমুনা পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে ৩ কোটি টাকারও বেশি। করোনার নমুনা পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট দেয়ার নামে প্রতারনাসহ নানা প্রতারনার মাধ্যমে ১১ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করীমের বিরুদ্ধে এবার অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত (গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত) বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে প্রায় ১১ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় গতকাল মামলাটি দায়ের করে সিআইডি।
সিআইডির এএসপি জিসান জানান, প্রতারক সাহেদ ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী কোভিড ১৯ মহামারী আকার ধারণ করলে ভূয়া পরীক্ষা এবং জাল সনদ প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৩ কোটি ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সাহেদ তার অপরাধকর্মের প্রধান সহযোগী মাসুদ পারভেজের সহযোগিতায় রিজেন্ট ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল লি. এর নামে ট্রাস্ট ব্যাংকের শাহ মখদুম শাখায় একটি নতুন হিসেব খোলে (হিসাব নং- ০০৬২০২১০০০৫৯৩৫) গত ফেব্রুয়ারি মাসে। হিসাবটি পরিচালনা করত সাহেদের পিতা সিরাজুল করিম ও এমডি মাসুদ পারভেজ।
সিআইডির অনুসন্ধানে অভিযুক্ত সাহেদের অর্জিত সম্পদের প্রধান উৎস প্রতারণা ও জালিয়াতি আন্দোপান্ত বেরিয়ে আসে। অপরাধলব্ধ আয় লেনদেনের সুবিধার্থে সে রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড ও অন্যান্য অস্তিত্ববিহীন ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেছে। ওই ব্যাংক হিসাবসমূহ খোলার সময় কেওয়াইসি ফরমে সে প্রতিষ্ঠানসমূহের চেয়ারম্যান বা স্বত্বাধিকারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানসমূহের এমডি মাসুদ পারভেজ অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাহেদের পক্ষে হিসাবসমূহ প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করেছে, যা সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উদ্ঘাটিত হয়। হিসাবসমূহের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নগদ টাকা জমা করা হয়েছে। অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাহেদ ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ৪৩টি ব্যাংক হিসাবে সর্বমোট জমা ৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে উত্তোলন ৯০ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে তার হিসাবসমূহে বর্তমান স্থিতির পরিমাণ ২ কোটি ৪ চার লক্ষ টাকা যার মধ্যে ৮০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজের ১৫ টি ব্যাংক হিসাবে মোট জমা ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা, মোট উত্তোলনকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা এবং বর্তমান স্থিতি ৫ পাঁচ হাজার টাকা।
‘প্রতারণা’ ও ‘জালিয়াতি’ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(শ) (৫) ও (৬) ধারা অনুযায়ী সম্পৃক্ত অপরাধ। এ সকল অপরাধের অভিযোগে মোহাম্মদ সাহেদ ও সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০ টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায়, মোহাম্মদ সাহেদ (৪৮), মাসুদ পারভেজ (৪০) ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যথাক্রমে: রিজেন্ট হাসপাতাল লিঃ, রিজেন্ট কে. সি এস লিমিটেড, রিজেন্ট ডিসকভারি টুরস এন্ড ট্রাভেল্স লিমিটেড এবং অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ১১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৭ টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের মাধ্যমে রুপান্তর এবং ভোগ-বিলাসে অর্থ ব্যয় করার অপরাধে অর্গানাইজড ক্রাইম (ফিন্যান্সশিয়াল ক্রাইম), সিআইডি বাদী হয়ে রাজধানী উত্তরা পশ্চিম থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)/৪(৪) ধারায় নিয়মিত মামলা দায়ের করেছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(ঠ)(অ) ধারা অনুসারে মামলাটি অপরাধ তদন্ত বিভাগ এর অর্গানাইজড ক্রাইম তদন্ত করবে।
বুধবার, ২৬ আগস্ট ২০২০ , ৬ মহররম ১৪৪২, ২৬ আগস্ট ২০২০
সিআইডির মানি লন্ডারিং মামলা
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
পাঁচ বছরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদ করিম। বিশেষ করে করোনাকালেই ভুয়া নমুনা পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে ৩ কোটি টাকারও বেশি। করোনার নমুনা পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট দেয়ার নামে প্রতারনাসহ নানা প্রতারনার মাধ্যমে ১১ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করীমের বিরুদ্ধে এবার অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত (গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত) বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে প্রায় ১১ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় গতকাল মামলাটি দায়ের করে সিআইডি।
সিআইডির এএসপি জিসান জানান, প্রতারক সাহেদ ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী কোভিড ১৯ মহামারী আকার ধারণ করলে ভূয়া পরীক্ষা এবং জাল সনদ প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৩ কোটি ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সাহেদ তার অপরাধকর্মের প্রধান সহযোগী মাসুদ পারভেজের সহযোগিতায় রিজেন্ট ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল লি. এর নামে ট্রাস্ট ব্যাংকের শাহ মখদুম শাখায় একটি নতুন হিসেব খোলে (হিসাব নং- ০০৬২০২১০০০৫৯৩৫) গত ফেব্রুয়ারি মাসে। হিসাবটি পরিচালনা করত সাহেদের পিতা সিরাজুল করিম ও এমডি মাসুদ পারভেজ।
সিআইডির অনুসন্ধানে অভিযুক্ত সাহেদের অর্জিত সম্পদের প্রধান উৎস প্রতারণা ও জালিয়াতি আন্দোপান্ত বেরিয়ে আসে। অপরাধলব্ধ আয় লেনদেনের সুবিধার্থে সে রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড ও অন্যান্য অস্তিত্ববিহীন ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেছে। ওই ব্যাংক হিসাবসমূহ খোলার সময় কেওয়াইসি ফরমে সে প্রতিষ্ঠানসমূহের চেয়ারম্যান বা স্বত্বাধিকারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানসমূহের এমডি মাসুদ পারভেজ অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাহেদের পক্ষে হিসাবসমূহ প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করেছে, যা সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উদ্ঘাটিত হয়। হিসাবসমূহের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নগদ টাকা জমা করা হয়েছে। অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাহেদ ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ৪৩টি ব্যাংক হিসাবে সর্বমোট জমা ৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে উত্তোলন ৯০ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে তার হিসাবসমূহে বর্তমান স্থিতির পরিমাণ ২ কোটি ৪ চার লক্ষ টাকা যার মধ্যে ৮০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজের ১৫ টি ব্যাংক হিসাবে মোট জমা ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা, মোট উত্তোলনকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা এবং বর্তমান স্থিতি ৫ পাঁচ হাজার টাকা।
‘প্রতারণা’ ও ‘জালিয়াতি’ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(শ) (৫) ও (৬) ধারা অনুযায়ী সম্পৃক্ত অপরাধ। এ সকল অপরাধের অভিযোগে মোহাম্মদ সাহেদ ও সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০ টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায়, মোহাম্মদ সাহেদ (৪৮), মাসুদ পারভেজ (৪০) ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যথাক্রমে: রিজেন্ট হাসপাতাল লিঃ, রিজেন্ট কে. সি এস লিমিটেড, রিজেন্ট ডিসকভারি টুরস এন্ড ট্রাভেল্স লিমিটেড এবং অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ১১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৭ টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের মাধ্যমে রুপান্তর এবং ভোগ-বিলাসে অর্থ ব্যয় করার অপরাধে অর্গানাইজড ক্রাইম (ফিন্যান্সশিয়াল ক্রাইম), সিআইডি বাদী হয়ে রাজধানী উত্তরা পশ্চিম থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)/৪(৪) ধারায় নিয়মিত মামলা দায়ের করেছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(ঠ)(অ) ধারা অনুসারে মামলাটি অপরাধ তদন্ত বিভাগ এর অর্গানাইজড ক্রাইম তদন্ত করবে।