‘করোনায় বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা প্রয়োজন’

করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মতো প্রতিবন্ধীদের জীবন-জীবিকাও ব্যাপক হুমকির মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে হলে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রয়োজন। এছাড়াও অনগ্রসর ও শিক্ষাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসনও বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা প্রয়োজন। যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা চাকরি করছেন তারা যেন চাকরি না হারায়, যেসব শিশুদের শিক্ষা বন্ধ আছে সেই সব শিশুরা যাতে বাড়িতে বসে পড়ার প্রতি মনোযোগী হয় সে জন্য ফোনের মাধ্যমে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষাদান করা উচিত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (বার্ডো) প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুল হক।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্ত করলে প্রতিবন্ধীরা আরও উপকৃত হতো। বিষয়সমূহ হলো- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য পৃথক অধিদফতর গঠন, প্রতিবন্ধী ভাতা সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা বৃদ্ধিকরণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১০০ কোটি প্রতিবন্ধী উপযোগী বাজেট বরাদ্দ, প্রতিবন্ধী সংগঠনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দে অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রেশন ব্যবস্থাকরণ, অনলাইনভিত্তিক প্রশিক্ষণ বাজেটের ব্যবস্থা করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বীমা কার্যক্রম চালু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বেকার ভাতার ব্যবস্থাকরণ, কেয়ার গিভারদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রযুক্তি উন্নয়নের বাজেটের ব্যবস্থা করা ও প্রতিবন্ধিতা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

তিনি আরও জানান, বার্ডো প্রতিবন্ধী মানুষদের ক্ষমতায়নের জন্য তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চায়। প্রতিবন্ধী মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বার্ডো একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও শেল্টার ওয়ার্কশপ করবে। তাছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য একটি ব্রেইল প্রকাশনা করতে বার্ডো বিশেষভাবে আগ্রহী। তথ্য প্রযুক্তি সম্পন্ন কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে জনগণ বিভিন্ন সেবাসমূহ সম্পর্কে অবগত হতে পারে। এছাড়া লিফলেট, পত্রিকা, রেডিও এবং টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রদানের বিষয়সমূহ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যেতে পারে। বার্ডো’র ৫০ বছরপূর্তির আগেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়ে শিশুদের জন্য একটি আবাসিক বিদ্যালয়, একটি ব্রেইল প্রেস ভবন ৬ তলায় উন্নীত, এছাড়াও ৬৪টি জেলায় বার্ডোর কর্ম এলাকা সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (বার্ডো) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ের একটি সংগঠন যা ১৭ জুলাই ১৯৯১ সাল থেকে ২৯ বছর যাবৎ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। বার্ডো বর্তমানে ৪০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্র নিয়ে আবাসিক বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালিত করছে। এই ৪০টি শিশুর সব ব্যয়ভার বার্ডো বহন করে থাকে। বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি ও আবাসিক ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সহযোগিতা পাওয়া গেলে শিক্ষা বঞ্চিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষা লাভ করতে পারবে। বার্ডো প্রতিষ্ঠা করেন বার্ডোর নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুল হক তিনি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

‘করোনায় বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা প্রয়োজন’

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মতো প্রতিবন্ধীদের জীবন-জীবিকাও ব্যাপক হুমকির মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে হলে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রয়োজন। এছাড়াও অনগ্রসর ও শিক্ষাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসনও বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা প্রয়োজন। যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা চাকরি করছেন তারা যেন চাকরি না হারায়, যেসব শিশুদের শিক্ষা বন্ধ আছে সেই সব শিশুরা যাতে বাড়িতে বসে পড়ার প্রতি মনোযোগী হয় সে জন্য ফোনের মাধ্যমে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষাদান করা উচিত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (বার্ডো) প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুল হক।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্ত করলে প্রতিবন্ধীরা আরও উপকৃত হতো। বিষয়সমূহ হলো- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য পৃথক অধিদফতর গঠন, প্রতিবন্ধী ভাতা সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা বৃদ্ধিকরণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১০০ কোটি প্রতিবন্ধী উপযোগী বাজেট বরাদ্দ, প্রতিবন্ধী সংগঠনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দে অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রেশন ব্যবস্থাকরণ, অনলাইনভিত্তিক প্রশিক্ষণ বাজেটের ব্যবস্থা করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বীমা কার্যক্রম চালু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বেকার ভাতার ব্যবস্থাকরণ, কেয়ার গিভারদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রযুক্তি উন্নয়নের বাজেটের ব্যবস্থা করা ও প্রতিবন্ধিতা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

তিনি আরও জানান, বার্ডো প্রতিবন্ধী মানুষদের ক্ষমতায়নের জন্য তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চায়। প্রতিবন্ধী মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বার্ডো একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও শেল্টার ওয়ার্কশপ করবে। তাছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য একটি ব্রেইল প্রকাশনা করতে বার্ডো বিশেষভাবে আগ্রহী। তথ্য প্রযুক্তি সম্পন্ন কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে জনগণ বিভিন্ন সেবাসমূহ সম্পর্কে অবগত হতে পারে। এছাড়া লিফলেট, পত্রিকা, রেডিও এবং টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রদানের বিষয়সমূহ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যেতে পারে। বার্ডো’র ৫০ বছরপূর্তির আগেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়ে শিশুদের জন্য একটি আবাসিক বিদ্যালয়, একটি ব্রেইল প্রেস ভবন ৬ তলায় উন্নীত, এছাড়াও ৬৪টি জেলায় বার্ডোর কর্ম এলাকা সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (বার্ডো) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ের একটি সংগঠন যা ১৭ জুলাই ১৯৯১ সাল থেকে ২৯ বছর যাবৎ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। বার্ডো বর্তমানে ৪০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্র নিয়ে আবাসিক বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালিত করছে। এই ৪০টি শিশুর সব ব্যয়ভার বার্ডো বহন করে থাকে। বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি ও আবাসিক ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সহযোগিতা পাওয়া গেলে শিক্ষা বঞ্চিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষা লাভ করতে পারবে। বার্ডো প্রতিষ্ঠা করেন বার্ডোর নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুল হক তিনি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।