করোনা শনাক্ত ৩ লাখ ছাড়ালো

পরীক্ষা নিম্নমুখী মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী

একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ৫৪ জন য় নমুনা পরীক্ষা ১৪,৮৫,০০০

দেশে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আবারও বেড়েছে। করোনা শনাক্ত হবার ১৭২তম দিনে (২৬ আগস্ট) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ৫৪ জন, এর আগে ৩০ জুন একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ৬৪ জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, ২৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৮২ জনের। প্রতিদিনই নমুনা পরীক্ষার প্রায় ২০.৩৮ শতাংশ রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তিন মাসের ব্যবধানে ১৮ জুন ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন শনাক্ত হয়। ১৮ জুলাই ২ লাখ ২ হাজার ৬৬ জন শনাক্ত হয়। আর গতকাল ২৬ আগস্ট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে করোনা রোগীদের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অব্যবস্থাপনায় মানুষ করোনা চিকিৎসা বিমুখ হয়েছেন। এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রতি মাসে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উপযোগী করে না তুলতে পারলে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করবে।

তিনি আরও বলেন, চীনে ডিসেম্বর করোনা সংক্রমণ শুরু হয় জানুয়ারিতে সংক্রমণ বেড়ে যায়। ফেব্রুয়ারিতে করোনা আক্রান্ত নিচের দিকে নিয়ে এসেছে। ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। ইরান করোনা রোগীর প্রকৃতি সংখ্যা দিতে পারছে না, বাংলাদেশেও প্রকৃতি সংখ্যা দিতে পারছে না। করোনা পরীক্ষার জন্য ফি আরোপ করায় মানুষ বিমুখ হয়েছে।

সর্বশেষ কয়েকদিন সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও মৃত্যুর সংখ্যায় তেমন হেরফের হয়নি। গতকাল স্বাস্থ্য অধিফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫৪ জন মারা গেছেন। আর গত সাত দিনে করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন যথাক্রমে ৪৫, ৪২, ৩৪, ৪৬, ৩৯, ৪১ ও ৪১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১৫ হাজার ৭০টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এরমধ্যে ২ হাজার ৫১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগের সাত দিনে যথাক্রমে ২৫৪৫, ২৪৮৫, ১৯৭৩, ২২৬৫, ২৪০১, ২৮৬৮ ও ২৭৪৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে মোট ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৬১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। আর মোট পরীক্ষার ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ পজেটিভ। কিছুদিন আগে প্রতিদিন ৩ হাজারের বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করলেও বর্তমানে আড়াই হাজারের মতো করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত আট মার্চ, তার ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ৮ মার্চ মাস থেকে ১৮ মে পর্যন্ত দৈনিক ২০ থেকে ২৮ জনের মৃত্যু হয়। আর গত ৩১ মে থেকে মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ এর ওপরে চলে যায়। গত ৩০ জুনন করোনাতে একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু এবং গতকাল একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৪ জনের মৃত্যুর সংখ্যা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

দেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনা অবস্থার অবনতি হতে থাকে, জুন মাসের শুরু থেকেই সেটা তীব্র আকার ধারণ করে। জুলাইয়ের শুরুতে নমুনা পরীক্ষার হার কমার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে নতুন রোগীর সংখ্যা। আগস্ট মাসে করোনার নমুনা পরীক্ষা কমে এসেছে আড়াই হাজারের কাছাকাছি কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা আগের মতোই রয়ে গেছে।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু পর ২০ এপ্রিল ১০০ জনের মৃত্যু হয়, ৯ মে ২০০ জনের মৃত্যু হয়, ২৫ মে ৫০০ জনের মৃত্যু হয়, ১০ জুন ১০০০ জনের মৃত্যু হয়, ২১ জুন এক হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়, ৩ জুলাই ২ হাজার জনের মৃত্যু হয় , ১৭ জুলাই দুই হাজার ৫০০ মৃত্যু হয়, ২৮ জুলাই তিন হাজার জনের মৃত্যু হয়, ১২ আগস্ট পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়ায় এবং সর্বশেষ গতকাল ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২ জনের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষ তথ্য জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জন শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে এক লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ জন সুস্থ হয়েছেন। আর আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ২৮৭ জন। আইসোলেশন থেকে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২৮৭ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৬৮৬ জনকে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কমছে। উল্টো চিত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়। সেখানে সংক্রমণের হার এখনো বাড়ছে। সংস্থাটির গত মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮ লাখ ১০ হাজার ৪৯২ জন। বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় ব্রাজিল, চতুর্থ ভারত এবং বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন করোনা রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষ হাসপাতাল বিমুখ হয়েছে। সরকারের যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছিল তাতে ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার অভাবে করোনার গতির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগ এগিয়ে যেতে পারছে না। করোনা প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিফতর যখন যেটা মনে করেছে সেটিই করেছে। এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, বাস্তবায়ন করেনি।

তিনি আরও বলেন, আগস্টে ঢাকায় করোনা আক্রান্ত বেড়েছে। উল্টোদিকে করোনা চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। করোনা চিকিৎসা গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা চলছে। মানুষ করোনা টেস্ট কম করেন সেজন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণ নিম্নগামীর লক্ষণ নেই। যদিও সরকারি হিসেবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখানোর প্রবণতা চলছে। বাস্তবে, করোনা আক্রান্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় বেশি সেটি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে দিচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, সারাদেশে ৫১টি ল্যাবে গতকাল ১৫ হাজার করোনার উপসর্গ টেস্ট করে আড়াই হাজারের মতো করোনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ কিছুদিন আগেও ৫৫ থেকে ৫৬টি ল্যাব টেস্ট হয়েছে। তখন কমবেশি ২০ হাজার করোনা উপসর্গ টেস্ট করা হয়েছে। বর্তমানে কৌশলে টেস্ট কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

করোনা শনাক্ত ৩ লাখ ছাড়ালো

পরীক্ষা নিম্নমুখী মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী

একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ৫৪ জন য় নমুনা পরীক্ষা ১৪,৮৫,০০০

ফারুক আলম

image

দেশে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আবারও বেড়েছে। করোনা শনাক্ত হবার ১৭২তম দিনে (২৬ আগস্ট) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ৫৪ জন, এর আগে ৩০ জুন একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ৬৪ জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, ২৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৮২ জনের। প্রতিদিনই নমুনা পরীক্ষার প্রায় ২০.৩৮ শতাংশ রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তিন মাসের ব্যবধানে ১৮ জুন ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন শনাক্ত হয়। ১৮ জুলাই ২ লাখ ২ হাজার ৬৬ জন শনাক্ত হয়। আর গতকাল ২৬ আগস্ট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে করোনা রোগীদের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অব্যবস্থাপনায় মানুষ করোনা চিকিৎসা বিমুখ হয়েছেন। এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রতি মাসে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উপযোগী করে না তুলতে পারলে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করবে।

তিনি আরও বলেন, চীনে ডিসেম্বর করোনা সংক্রমণ শুরু হয় জানুয়ারিতে সংক্রমণ বেড়ে যায়। ফেব্রুয়ারিতে করোনা আক্রান্ত নিচের দিকে নিয়ে এসেছে। ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। ইরান করোনা রোগীর প্রকৃতি সংখ্যা দিতে পারছে না, বাংলাদেশেও প্রকৃতি সংখ্যা দিতে পারছে না। করোনা পরীক্ষার জন্য ফি আরোপ করায় মানুষ বিমুখ হয়েছে।

সর্বশেষ কয়েকদিন সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও মৃত্যুর সংখ্যায় তেমন হেরফের হয়নি। গতকাল স্বাস্থ্য অধিফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫৪ জন মারা গেছেন। আর গত সাত দিনে করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন যথাক্রমে ৪৫, ৪২, ৩৪, ৪৬, ৩৯, ৪১ ও ৪১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১৫ হাজার ৭০টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এরমধ্যে ২ হাজার ৫১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগের সাত দিনে যথাক্রমে ২৫৪৫, ২৪৮৫, ১৯৭৩, ২২৬৫, ২৪০১, ২৮৬৮ ও ২৭৪৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে মোট ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৬১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। আর মোট পরীক্ষার ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ পজেটিভ। কিছুদিন আগে প্রতিদিন ৩ হাজারের বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করলেও বর্তমানে আড়াই হাজারের মতো করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত আট মার্চ, তার ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ৮ মার্চ মাস থেকে ১৮ মে পর্যন্ত দৈনিক ২০ থেকে ২৮ জনের মৃত্যু হয়। আর গত ৩১ মে থেকে মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ এর ওপরে চলে যায়। গত ৩০ জুনন করোনাতে একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু এবং গতকাল একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৪ জনের মৃত্যুর সংখ্যা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

দেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনা অবস্থার অবনতি হতে থাকে, জুন মাসের শুরু থেকেই সেটা তীব্র আকার ধারণ করে। জুলাইয়ের শুরুতে নমুনা পরীক্ষার হার কমার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে নতুন রোগীর সংখ্যা। আগস্ট মাসে করোনার নমুনা পরীক্ষা কমে এসেছে আড়াই হাজারের কাছাকাছি কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা আগের মতোই রয়ে গেছে।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু পর ২০ এপ্রিল ১০০ জনের মৃত্যু হয়, ৯ মে ২০০ জনের মৃত্যু হয়, ২৫ মে ৫০০ জনের মৃত্যু হয়, ১০ জুন ১০০০ জনের মৃত্যু হয়, ২১ জুন এক হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়, ৩ জুলাই ২ হাজার জনের মৃত্যু হয় , ১৭ জুলাই দুই হাজার ৫০০ মৃত্যু হয়, ২৮ জুলাই তিন হাজার জনের মৃত্যু হয়, ১২ আগস্ট পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়ায় এবং সর্বশেষ গতকাল ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২ জনের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষ তথ্য জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জন শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে এক লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ জন সুস্থ হয়েছেন। আর আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ২৮৭ জন। আইসোলেশন থেকে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২৮৭ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৬৮৬ জনকে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কমছে। উল্টো চিত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়। সেখানে সংক্রমণের হার এখনো বাড়ছে। সংস্থাটির গত মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮ লাখ ১০ হাজার ৪৯২ জন। বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় ব্রাজিল, চতুর্থ ভারত এবং বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন করোনা রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষ হাসপাতাল বিমুখ হয়েছে। সরকারের যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছিল তাতে ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার অভাবে করোনার গতির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগ এগিয়ে যেতে পারছে না। করোনা প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিফতর যখন যেটা মনে করেছে সেটিই করেছে। এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, বাস্তবায়ন করেনি।

তিনি আরও বলেন, আগস্টে ঢাকায় করোনা আক্রান্ত বেড়েছে। উল্টোদিকে করোনা চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। করোনা চিকিৎসা গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা চলছে। মানুষ করোনা টেস্ট কম করেন সেজন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণ নিম্নগামীর লক্ষণ নেই। যদিও সরকারি হিসেবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখানোর প্রবণতা চলছে। বাস্তবে, করোনা আক্রান্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় বেশি সেটি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে দিচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, সারাদেশে ৫১টি ল্যাবে গতকাল ১৫ হাজার করোনার উপসর্গ টেস্ট করে আড়াই হাজারের মতো করোনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ কিছুদিন আগেও ৫৫ থেকে ৫৬টি ল্যাব টেস্ট হয়েছে। তখন কমবেশি ২০ হাজার করোনা উপসর্গ টেস্ট করা হয়েছে। বর্তমানে কৌশলে টেস্ট কমিয়ে দেয়া হয়েছে।