বিলসের সংবাদ সম্মেলন

শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে

করোনাকালীন সময়ে ট্রেড ইউনিয়নের (শ্রমিকদের সংগঠন) সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের টার্গেট করে ছাঁটায় করা হচ্ছে। একইভাবে কারখানাও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কোভিড-১৯ তৈরি পোশাক শিল্পে শোভন কাজের পরিস্থিতি পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের ঢাকা-মিরপুর ক্লাস্টার কমিটির সমন্বয়কারী আমিরুল হক আমিন বলেন, করোনাকালীন সময়ে এখন অনেক করাখানা বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিকদের চাকরি চলে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় কিছু কর্মক্ষেত্র বা শ্রমিকদের টার্গেট করে কারখানা বন্ধ করছে। শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে যে কারখানায় ইউনিয়ন আছে মালিকরা সে কারখানাগুলো টার্গেট করে বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রতিবারই ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের টার্গেট করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলোতে সরকারের কোন বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু অলিখিভাবে শ্রমিদের সংগঠিত করা, ইউনিয়ন করা, ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন করা বন্ধ আছে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের জায়গায় সরকার আপত্তি করছে না কিন্তু শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করা হচ্ছে। এসব ব্যাপারে আমরা শ্রমিকদের সহায়তার লক্ষ্যে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, করোনা ভাইরাসের কারণে নানা বিপর্যয়ের মধ্যে বেড়েছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের হার। গত কয়েক মাসে ৮৭টি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে সাড়ে ২৬ হাজার। অনেক ক্ষেত্রেই আইন না মেনেই ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতন-বোনাস, শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন ও কারখানা বন্ধের ইস্যুতে তৈরি পোশাক শিল্পে আন্দোলনের ঘটনা ঘটে সব থেকে বেশি। করোনাকালীন সময়েও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বেতন-বোনাস নিয়ে অনিশ্চয়তা, শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। বিনা নোটিসে কারখানা বন্ধ বা লে-অফসহ অন্যান্য ইস্যুতে সামাজিক দূরত্বকে তুচ্ছ করে এ বছর এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত হবার অধিকার শ্রমিকদের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু শ্রম অধিদফতরের হিসাব মতে বর্তমানে দেশে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা মাত্র ৮৮০টি। এই খাতে কর্মরত মোট জনশক্তির ৯.৬৫ শতাংশ বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে শ্রম আইনের সব শর্ত মেনে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের আবেদন করলেও অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে নিবন্ধন আবেদন বাতিল করার অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন করার কারণে শ্রমিকরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ছাঁটাই, পদন্নোতি না হওয়ার পাশাপাশি ভাড়াটে মাস্তান দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হন। এছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত শ্রমিকদের চিহ্নিত করে ছাঁটাই করা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। কিন্তু বছর বছর প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী হলেও পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের হার নিম্নমুখী। তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো আমাদের জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। করোনার ভয়াবহ সংকটের সময় তৈরি পোশাক শিল্প খাতের শ্রমিকদের জীবনযাত্রার শোচনীয়তা আরও প্রকটভাবে আমাদের সামনে আসে। লকডাউন চলাকালীন সময়ে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি না পাওয়া, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখার বিষয়ে বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তের কারণে এই শিল্পের শ্রমিকরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়। করোনাকালীন সংকটে এই খাতে বেকার হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ জন শ্রমিক এবং বন্ধ ও লে-অফ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯১৫টি কারখানা। এছাড়া দিন দিন সারা বিশ্ব প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ার কারণে নিশ্চিতভাবে পোশাক খাতেও বাড়বে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। আর এতে করে এ খাতে কর্মরত ৬০ শতাংশ শ্রমিকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা বলেন, গণমাধ্যমে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের যে সংবাদ আসে প্রকৃত পক্ষে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। যেসব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে সেসব কারখানা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তারা বলেন, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, লে-অফ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে সেসব বিষয়ে সরকারের কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া থেকে শুরু করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সবই বন্ধ রাখা হয়েছে। নেতারা অভিযোগ করে বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করে কাজ করানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কারখানায় তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া কোভিড-১৯ সময়ে কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিকরা নিরাপত্তা ঝুঁকি, চাকরির ঝুঁকি ও কাজ করেও সময়মত মজুরি না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানান তারা।

বিল্স ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং বিল্স ভাইস চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের ঢাকা-মিরপুর ক্লাস্টার কমিটির সমন্বয়কারী আমিরুল হক আমিনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিল্স-এর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ-স্কপ-এর যুগ্ম সমন্বয়কারী নইমুল আহসান জুয়েল। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল-আইবিসি সাধারণ সম্পাদক চায়না রহমান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল টঙ্গী-গাজীপুর ক্লাস্টার কমিটির সমন্বয়কারী সালাউদ্দিন স্বপন, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সভাপতি রুহুল আমিন, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ বাদল এবং বিল্স পরিচালক নাজমা ইয়াসমিন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক শিল্পের ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ-স্কপ নেতারা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল নেতারা, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এবং বিল্স কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০ , ৮ মহররম ১৪৪২, ২৮ আগস্ট ২০২০

বিলসের সংবাদ সম্মেলন

শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাকালীন সময়ে ট্রেড ইউনিয়নের (শ্রমিকদের সংগঠন) সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের টার্গেট করে ছাঁটায় করা হচ্ছে। একইভাবে কারখানাও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কোভিড-১৯ তৈরি পোশাক শিল্পে শোভন কাজের পরিস্থিতি পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের ঢাকা-মিরপুর ক্লাস্টার কমিটির সমন্বয়কারী আমিরুল হক আমিন বলেন, করোনাকালীন সময়ে এখন অনেক করাখানা বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিকদের চাকরি চলে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় কিছু কর্মক্ষেত্র বা শ্রমিকদের টার্গেট করে কারখানা বন্ধ করছে। শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে যে কারখানায় ইউনিয়ন আছে মালিকরা সে কারখানাগুলো টার্গেট করে বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রতিবারই ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের টার্গেট করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলোতে সরকারের কোন বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু অলিখিভাবে শ্রমিদের সংগঠিত করা, ইউনিয়ন করা, ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন করা বন্ধ আছে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের জায়গায় সরকার আপত্তি করছে না কিন্তু শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করা হচ্ছে। এসব ব্যাপারে আমরা শ্রমিকদের সহায়তার লক্ষ্যে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, করোনা ভাইরাসের কারণে নানা বিপর্যয়ের মধ্যে বেড়েছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের হার। গত কয়েক মাসে ৮৭টি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে সাড়ে ২৬ হাজার। অনেক ক্ষেত্রেই আইন না মেনেই ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতন-বোনাস, শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন ও কারখানা বন্ধের ইস্যুতে তৈরি পোশাক শিল্পে আন্দোলনের ঘটনা ঘটে সব থেকে বেশি। করোনাকালীন সময়েও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বেতন-বোনাস নিয়ে অনিশ্চয়তা, শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। বিনা নোটিসে কারখানা বন্ধ বা লে-অফসহ অন্যান্য ইস্যুতে সামাজিক দূরত্বকে তুচ্ছ করে এ বছর এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত হবার অধিকার শ্রমিকদের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু শ্রম অধিদফতরের হিসাব মতে বর্তমানে দেশে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা মাত্র ৮৮০টি। এই খাতে কর্মরত মোট জনশক্তির ৯.৬৫ শতাংশ বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে শ্রম আইনের সব শর্ত মেনে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের আবেদন করলেও অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে নিবন্ধন আবেদন বাতিল করার অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন করার কারণে শ্রমিকরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ছাঁটাই, পদন্নোতি না হওয়ার পাশাপাশি ভাড়াটে মাস্তান দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হন। এছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত শ্রমিকদের চিহ্নিত করে ছাঁটাই করা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। কিন্তু বছর বছর প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী হলেও পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের হার নিম্নমুখী। তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো আমাদের জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। করোনার ভয়াবহ সংকটের সময় তৈরি পোশাক শিল্প খাতের শ্রমিকদের জীবনযাত্রার শোচনীয়তা আরও প্রকটভাবে আমাদের সামনে আসে। লকডাউন চলাকালীন সময়ে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি না পাওয়া, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখার বিষয়ে বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তের কারণে এই শিল্পের শ্রমিকরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়। করোনাকালীন সংকটে এই খাতে বেকার হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ জন শ্রমিক এবং বন্ধ ও লে-অফ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯১৫টি কারখানা। এছাড়া দিন দিন সারা বিশ্ব প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ার কারণে নিশ্চিতভাবে পোশাক খাতেও বাড়বে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। আর এতে করে এ খাতে কর্মরত ৬০ শতাংশ শ্রমিকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা বলেন, গণমাধ্যমে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের যে সংবাদ আসে প্রকৃত পক্ষে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। যেসব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে সেসব কারখানা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তারা বলেন, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, লে-অফ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে সেসব বিষয়ে সরকারের কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া থেকে শুরু করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সবই বন্ধ রাখা হয়েছে। নেতারা অভিযোগ করে বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করে কাজ করানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কারখানায় তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া কোভিড-১৯ সময়ে কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিকরা নিরাপত্তা ঝুঁকি, চাকরির ঝুঁকি ও কাজ করেও সময়মত মজুরি না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানান তারা।

বিল্স ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং বিল্স ভাইস চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের ঢাকা-মিরপুর ক্লাস্টার কমিটির সমন্বয়কারী আমিরুল হক আমিনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিল্স-এর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ-স্কপ-এর যুগ্ম সমন্বয়কারী নইমুল আহসান জুয়েল। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল-আইবিসি সাধারণ সম্পাদক চায়না রহমান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল টঙ্গী-গাজীপুর ক্লাস্টার কমিটির সমন্বয়কারী সালাউদ্দিন স্বপন, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সভাপতি রুহুল আমিন, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ বাদল এবং বিল্স পরিচালক নাজমা ইয়াসমিন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক শিল্পের ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ-স্কপ নেতারা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল নেতারা, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এবং বিল্স কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।