রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা

প্রতিরোধে আর্মড পুলিশ মোতায়েন য় কাঁটাতারের বেড়ার কাজ চলছে য় অস্ত্র গুলি মাদক উদ্ধার গ্রেফতার ১৫০ য় ৩২টি মামলা

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিনিয়ত অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। ক্যাম্পগুলো আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আর্মড পুলিশের ২টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। দুই জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা (ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ইউএনডিপি) এবং পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারপাশে কাটাতারের বেড়া দেয়াসহ নিরাপত্তার জন্য যা কিছু করার সবই করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘের সংস্থা গুলোর একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সব ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। পারিবারিক সহিংসতা, অপহরণ, ডাকাতি, ধর্ষণ, নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি, গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া,মাদক ব্যবসাসহ সবধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এছাড়াও কিছু উগ্র গোষ্ঠীর পরিচয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকা- করে চলেছে একটি চক্র। এরমধ্যে আরাকান রোহিঙ্গা সলিভেশন আর্মি বা আল-ইয়াকিন এর মতো গ্রুপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিঘœ সৃষ্টির পায়তারা চলছে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে চলেছে। শুধু তাই না প্রতিনিয়ত পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে ছোটোখাট ঘটনা নিয়ে মারামারি, স্বামী স্ত্রী বিরোধ, ভাই বোনের দ্বন্দ্বসহ নানা অজুহাতে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও ক্যাম্পভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ ঘটছে। বহু গ্রুপ ক্যাম্পগুলো নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যাপক উদ্যোগ নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা কমিউনিটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দুটি বিশেষ ইউনিট ছাড়াও ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ (ইউএনডিপি) ৩টি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ক্যাম্পভিত্তিক কাজ করছে এবং আরও একাধিক সংস্থাও তৎপর রয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইতোমধ্যে কাটাতারের বেড়া দেয়া শুরু হয়েছে। ক্যাম্পের চারপাশে কাটাতারের বেড়ার কাজ শেষ হলে অপরাধ কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর রোহিঙ্গা লোকজনকেও ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার কাজে সম্পৃক্ত করলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সূত্র মতে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে একাধিক উগ্রবাদী মতাদর্শের দল বা গ্রুপ রয়েছে। তারা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আল-ইয়াকিন এর মতো বিভিন্ন উগ্রগোষ্ঠীর পরিচয়ে ক্যাম্পের ভিতর ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে নানা অপকর্ম করছে। ক্যাম্পের ভেতর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টাও করা হয়। তাদের এই কার্যক্রম বন্ধ করা কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে।

আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একজন কর্মকর্তা জানান, মায়ানমার থেকে কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৩৪টি ক্যাম্পে আমর্ড পুলিশের দুটি ইউনিটের সব সদস্য পালাক্রমে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশের দুই ব্যাটালিয়ন মিলে ১১৭৬ জন কর্মকর্তা ও সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মতে, ক্যাম্পগুলোতে নিজেদের নেতা (হেড মাঝি) ও উপনেতা বানানো নিয়ে চরম বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে মারপিট থেকে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে। তাদের মধ্যে ডাকাত দলও রয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে এ ধরনের ১০টির বেশি গ্রুপ এখন তৎপর রয়েছে। তাদের আস্তানা থেকে সম্প্রতি একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, নতুন আর্মড পুলিশের ক্যাম্প এলাকায় টহল দেয়ার মতো গাড়ির ব্যবস্থাও নেই। থাকার ব্যবস্থা নেই। অপরাধীদের ডাটাবেজ তৈরি করার মতো কোন কম্পিউটার নেই। এমনকি সারাদিন কাজ করার পর খাওয়ার ব্যবস্থাও খুবই খারাপ। এ অবস্থায়ও তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও রোহিঙ্গাদের অপকর্মের কারণে পুরো কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এসব অপকর্মের পেছনে রোহিঙ্গা অপরাধী ছাড়াও একদল দালাল চক্র কাজ করছে। রোহিঙ্গা শরনার্থীরা শুধু ক্যাম্পেই না তারা কক্সবাজারে সর্বত্র নানা বেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশেও তারা বিচ্ছিন্নভাবে আছে। এমনকি দেশের অন্যান্য স্থানে মাদক ব্যবসায়ী ও মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তবে আর্মড পুলিশ তাদের সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জানা গেছে, আমর্ড পুলিশ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত পৃথক ৩২টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলার আসামি ৫৭ জন রোহিঙ্গা সদস্য। তাদের কাছ থেকে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০ রাউন্ড গুলি, প্রায় ৫ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র ও ভোতা অস্ত্র (লাঠি, গজারি) উদ্ধার করেছে।

এছাড়া রোহিঙ্গারা অনেকেই ক্যাম্পে থাকতে আগ্রহী নয়। অপরাধ করার সুযোগ খুজতে তারা অনেক সময় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাইরে চলে যায়। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভুয়া পরিচয় দিয়ে নানা কাজে নিযুক্ত হয়।

অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধে জড়িয়ে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে যায়। পালানারে সময় কিছুদিন আগে আরো ৩৫ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করে পুনরায় ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে পালাতে না পারে তার জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি চকিতে প্রায় রোহিঙ্গারা ধরা পড়ে। এ কারণে অনেকেই কৌশল করে প্রধান সড়ক দিয়ে না পালিয়ে ছোটোখাট রাস্তা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। যেসব রাস্তায় পুলিশের টহল থাকে না ওইসব রাস্তা দিয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গ্রেফতাকৃত অনেক রোহিঙ্গা স্বীকার করে জানায়, তারা মায়ানমার থেকে গোপনে অস্ত্র আনে। কিছু অস্ত্র কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে সংগ্রহ করে এসব নিজেরা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করে। মহেশখালীর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প আর্মড পুলিশের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর গত জুন মানে শুধু একটি ব্যাটালিয়ন ৩টি মামলা করেছে। জুলাই মাসে মামলার সংখ্যা ৯টি। ২৬ আগস্ট পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ৬টি।

আর্মড পুলিশ-১৪ ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তারা মোট পৃথক ১৪টি মামলা দায়ের করেছে। ওই সব মামলায় ২২ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে জুন মাসে ৫ মামলা ও জুলাই মাসে ৯টি মামলা দায়ের করেন। চলতি মাসে, মামলা হলেও তার তথ্য এখনো নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব হয়নি। মোট ১৪ মামলায় আসামি ২২ জন।

স্থানীয় হোটেল মোটেল জোনের ব্যবসায়ীরা জানান, পুলিশ, আমর্ড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্প্রতি নিরাপত্তা ও চেকপোস্টে তল্লাশি জোরদার করেছে। এ কারণে এখন রোহিঙ্গারা আগের মতো বের হতে পারে না। এপরও হয়ত চোরাই পথে বের হওয়ার চেষ্টা করে।

শনিবার, ২৯ আগস্ট ২০২০ , ৯ মহররম ১৪৪২, ২৯ আগস্ট ২০২০

কক্সবাজার

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা

প্রতিরোধে আর্মড পুলিশ মোতায়েন য় কাঁটাতারের বেড়ার কাজ চলছে য় অস্ত্র গুলি মাদক উদ্ধার গ্রেফতার ১৫০ য় ৩২টি মামলা

বাকিবিল্লাহ |

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিনিয়ত অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। ক্যাম্পগুলো আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আর্মড পুলিশের ২টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। দুই জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা (ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ইউএনডিপি) এবং পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারপাশে কাটাতারের বেড়া দেয়াসহ নিরাপত্তার জন্য যা কিছু করার সবই করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘের সংস্থা গুলোর একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সব ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। পারিবারিক সহিংসতা, অপহরণ, ডাকাতি, ধর্ষণ, নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি, গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া,মাদক ব্যবসাসহ সবধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এছাড়াও কিছু উগ্র গোষ্ঠীর পরিচয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকা- করে চলেছে একটি চক্র। এরমধ্যে আরাকান রোহিঙ্গা সলিভেশন আর্মি বা আল-ইয়াকিন এর মতো গ্রুপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিঘœ সৃষ্টির পায়তারা চলছে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে চলেছে। শুধু তাই না প্রতিনিয়ত পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে ছোটোখাট ঘটনা নিয়ে মারামারি, স্বামী স্ত্রী বিরোধ, ভাই বোনের দ্বন্দ্বসহ নানা অজুহাতে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও ক্যাম্পভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ ঘটছে। বহু গ্রুপ ক্যাম্পগুলো নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যাপক উদ্যোগ নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা কমিউনিটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দুটি বিশেষ ইউনিট ছাড়াও ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ (ইউএনডিপি) ৩টি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ক্যাম্পভিত্তিক কাজ করছে এবং আরও একাধিক সংস্থাও তৎপর রয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইতোমধ্যে কাটাতারের বেড়া দেয়া শুরু হয়েছে। ক্যাম্পের চারপাশে কাটাতারের বেড়ার কাজ শেষ হলে অপরাধ কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর রোহিঙ্গা লোকজনকেও ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার কাজে সম্পৃক্ত করলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সূত্র মতে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে একাধিক উগ্রবাদী মতাদর্শের দল বা গ্রুপ রয়েছে। তারা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আল-ইয়াকিন এর মতো বিভিন্ন উগ্রগোষ্ঠীর পরিচয়ে ক্যাম্পের ভিতর ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে নানা অপকর্ম করছে। ক্যাম্পের ভেতর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টাও করা হয়। তাদের এই কার্যক্রম বন্ধ করা কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে।

আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একজন কর্মকর্তা জানান, মায়ানমার থেকে কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৩৪টি ক্যাম্পে আমর্ড পুলিশের দুটি ইউনিটের সব সদস্য পালাক্রমে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশের দুই ব্যাটালিয়ন মিলে ১১৭৬ জন কর্মকর্তা ও সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মতে, ক্যাম্পগুলোতে নিজেদের নেতা (হেড মাঝি) ও উপনেতা বানানো নিয়ে চরম বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে মারপিট থেকে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে। তাদের মধ্যে ডাকাত দলও রয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে এ ধরনের ১০টির বেশি গ্রুপ এখন তৎপর রয়েছে। তাদের আস্তানা থেকে সম্প্রতি একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, নতুন আর্মড পুলিশের ক্যাম্প এলাকায় টহল দেয়ার মতো গাড়ির ব্যবস্থাও নেই। থাকার ব্যবস্থা নেই। অপরাধীদের ডাটাবেজ তৈরি করার মতো কোন কম্পিউটার নেই। এমনকি সারাদিন কাজ করার পর খাওয়ার ব্যবস্থাও খুবই খারাপ। এ অবস্থায়ও তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও রোহিঙ্গাদের অপকর্মের কারণে পুরো কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এসব অপকর্মের পেছনে রোহিঙ্গা অপরাধী ছাড়াও একদল দালাল চক্র কাজ করছে। রোহিঙ্গা শরনার্থীরা শুধু ক্যাম্পেই না তারা কক্সবাজারে সর্বত্র নানা বেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশেও তারা বিচ্ছিন্নভাবে আছে। এমনকি দেশের অন্যান্য স্থানে মাদক ব্যবসায়ী ও মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তবে আর্মড পুলিশ তাদের সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জানা গেছে, আমর্ড পুলিশ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত পৃথক ৩২টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলার আসামি ৫৭ জন রোহিঙ্গা সদস্য। তাদের কাছ থেকে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০ রাউন্ড গুলি, প্রায় ৫ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র ও ভোতা অস্ত্র (লাঠি, গজারি) উদ্ধার করেছে।

এছাড়া রোহিঙ্গারা অনেকেই ক্যাম্পে থাকতে আগ্রহী নয়। অপরাধ করার সুযোগ খুজতে তারা অনেক সময় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাইরে চলে যায়। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভুয়া পরিচয় দিয়ে নানা কাজে নিযুক্ত হয়।

অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধে জড়িয়ে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে যায়। পালানারে সময় কিছুদিন আগে আরো ৩৫ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করে পুনরায় ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে পালাতে না পারে তার জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি চকিতে প্রায় রোহিঙ্গারা ধরা পড়ে। এ কারণে অনেকেই কৌশল করে প্রধান সড়ক দিয়ে না পালিয়ে ছোটোখাট রাস্তা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। যেসব রাস্তায় পুলিশের টহল থাকে না ওইসব রাস্তা দিয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গ্রেফতাকৃত অনেক রোহিঙ্গা স্বীকার করে জানায়, তারা মায়ানমার থেকে গোপনে অস্ত্র আনে। কিছু অস্ত্র কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে সংগ্রহ করে এসব নিজেরা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করে। মহেশখালীর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প আর্মড পুলিশের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর গত জুন মানে শুধু একটি ব্যাটালিয়ন ৩টি মামলা করেছে। জুলাই মাসে মামলার সংখ্যা ৯টি। ২৬ আগস্ট পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ৬টি।

আর্মড পুলিশ-১৪ ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তারা মোট পৃথক ১৪টি মামলা দায়ের করেছে। ওই সব মামলায় ২২ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে জুন মাসে ৫ মামলা ও জুলাই মাসে ৯টি মামলা দায়ের করেন। চলতি মাসে, মামলা হলেও তার তথ্য এখনো নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব হয়নি। মোট ১৪ মামলায় আসামি ২২ জন।

স্থানীয় হোটেল মোটেল জোনের ব্যবসায়ীরা জানান, পুলিশ, আমর্ড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্প্রতি নিরাপত্তা ও চেকপোস্টে তল্লাশি জোরদার করেছে। এ কারণে এখন রোহিঙ্গারা আগের মতো বের হতে পারে না। এপরও হয়ত চোরাই পথে বের হওয়ার চেষ্টা করে।