রাহাত খানের জীবনাবসান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

একুশে পদকপ্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক সম্পাদক সাংবাদিক রাহাত খান মারা গেছেন। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় নিজ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি......রাজিউন)। সাংবাদিক রাহাত খান একাধিক পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাহাত খানের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া রাহাত খানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সাংবাদিক মহলে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সহকর্মী, সাংবাদিক নেতারা বাসায় ছুটে যান। গুণী এ সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিসসহ নানা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

রাহাত খানের নিকটাত্মীয় সাংবাদিক দেলোয়ার হাসান জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় বাসাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর শেষ ইচ্ছা মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা। আমরা দায়িত্বশীল সংস্থার সঙ্গে কথা বলে সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। রাতে মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। এছাড়া রাত সোয়া ৯টার দিকে রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খান নিজের ফেইসবুক প্রোফাইলেও রাহাত খানের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২০ জুলাই রাহাত খানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন বাসায় খাট থেকে নামতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান তিনি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এক্স-রে করা হলে পাঁজরে গভীর ক্ষত ধরা পড়ে। এর পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে তাকে বারডেম হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। যার জন্য তার চিকিৎসা প্রক্রিয়াটা জটিল হয়ে পড়ায় সার্জারি করা যাচ্ছিল না বলে বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।

অপর্ণা খান এর আগে জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকরা ২৯ জুলাই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালে থেকে কোন লাভ হবে না। ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্টে সমস্যা থাকায় কোন সার্জারি করা যাবে না। এজন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় তাকে।

রাহাত খান বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখাতেই তার অবদান উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খানের অবদান উল্লেখযোগ্য। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনি ষাটের দশক থেকে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন। এদিকে রাহাত খানের মৃত্যুতে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শোক জানিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতিয়তাবাদী দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ গুণী সম্পাদক ও সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক জানানো হয়েছে।

রাহাত খান ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও কর্মসূত্রে রাহাত খান আপাদমস্তক ছিলেন সাংবাদিক। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে রাহাত খান কিছুদিন জোট পারচেজ ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে যোগদান করেন। তারপর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদে তার সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। শেষবেলায় এসে তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অনিশ্চিত লোকালয়’ প্রকাশিত হয়। তার পরবর্তী উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘অমল ধবল চাকরি’, ‘ছায়াদম্পতি’, ‘শহর’, ‘হে শূন্যতা’, ‘হে অনন্তের পাখি’, ‘মধ্য মাঠের খেলোয়াড়’, ‘এক প্রিয়দর্শিনী’, ‘মন্ত্রিসভার পতন’, ‘দুই নারী’, ‘কোলাহল’ ইত্যাদি। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে (১৯৯৬) ভূষিত হন।

শনিবার, ২৯ আগস্ট ২০২০ , ৯ মহররম ১৪৪২, ২৯ আগস্ট ২০২০

সাংবাদিক-সাহিত্যিক

রাহাত খানের জীবনাবসান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

একুশে পদকপ্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক সম্পাদক সাংবাদিক রাহাত খান মারা গেছেন। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় নিজ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি......রাজিউন)। সাংবাদিক রাহাত খান একাধিক পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাহাত খানের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া রাহাত খানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সাংবাদিক মহলে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সহকর্মী, সাংবাদিক নেতারা বাসায় ছুটে যান। গুণী এ সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিসসহ নানা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

রাহাত খানের নিকটাত্মীয় সাংবাদিক দেলোয়ার হাসান জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় বাসাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর শেষ ইচ্ছা মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা। আমরা দায়িত্বশীল সংস্থার সঙ্গে কথা বলে সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। রাতে মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। এছাড়া রাত সোয়া ৯টার দিকে রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খান নিজের ফেইসবুক প্রোফাইলেও রাহাত খানের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২০ জুলাই রাহাত খানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন বাসায় খাট থেকে নামতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান তিনি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এক্স-রে করা হলে পাঁজরে গভীর ক্ষত ধরা পড়ে। এর পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে তাকে বারডেম হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। যার জন্য তার চিকিৎসা প্রক্রিয়াটা জটিল হয়ে পড়ায় সার্জারি করা যাচ্ছিল না বলে বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।

অপর্ণা খান এর আগে জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকরা ২৯ জুলাই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালে থেকে কোন লাভ হবে না। ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্টে সমস্যা থাকায় কোন সার্জারি করা যাবে না। এজন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় তাকে।

রাহাত খান বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখাতেই তার অবদান উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খানের অবদান উল্লেখযোগ্য। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনি ষাটের দশক থেকে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন। এদিকে রাহাত খানের মৃত্যুতে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শোক জানিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতিয়তাবাদী দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ গুণী সম্পাদক ও সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক জানানো হয়েছে।

রাহাত খান ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও কর্মসূত্রে রাহাত খান আপাদমস্তক ছিলেন সাংবাদিক। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে রাহাত খান কিছুদিন জোট পারচেজ ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে যোগদান করেন। তারপর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদে তার সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। শেষবেলায় এসে তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অনিশ্চিত লোকালয়’ প্রকাশিত হয়। তার পরবর্তী উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘অমল ধবল চাকরি’, ‘ছায়াদম্পতি’, ‘শহর’, ‘হে শূন্যতা’, ‘হে অনন্তের পাখি’, ‘মধ্য মাঠের খেলোয়াড়’, ‘এক প্রিয়দর্শিনী’, ‘মন্ত্রিসভার পতন’, ‘দুই নারী’, ‘কোলাহল’ ইত্যাদি। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে (১৯৯৬) ভূষিত হন।