নদী ভাঙনে শিবচর চরাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন
দেশের অধিকাংশ চরাঞ্চল যখন সুবিধাবঞ্চিত তখন শিবচরের পদ্মা বেষ্টিত চরাঞ্চল ও আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা অবকাঠামো সমতলের সমান হলেও নদীর ভাঙ্গনে প্রতিবছরই সেইটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও স্থায়ী বাঁধ না থাকায় আধুনিকতার ছোঁয়া পাওয়া চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন রক্ষা করা যাচ্ছে না। শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ছে অনেক শিশু। ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজারো পরিবার। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তরা এক নিমিষেই হয়ে যাচ্ছে সর্বশান্ত। চলতি বছর এ পর্যন্ত পদ্মা নদীর কড়াল গ্রাসে ৪টি স্কুলসহ সহস্রাধিক ঘর বাড়ি ভাঙন আক্রান্ত হয়েছে। এই চারটি বিদ্যালয়সহ গত ১২ বছরে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হাজারো পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে।
সরজমিনে একাধিক সূত্রে জানা যায়, শিবচরের পদ্মা নদীর ভাঙ্গা গড়ার খেলায় প্রায় ৪০ বছর আগে ৪ ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে উঠে বৃহৎ চরাঞ্চল। নাগরিক সব সুবিধাবঞ্চিত ছিল চরাঞ্চল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে বারবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর উদ্যোগে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে অবহেলিত চরাঞ্চলে। জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল পর্যায়ক্রমে সম্পৃক্ত হয় মূল জনপদে। অসংখ্য সেতু, পাকা সড়ক, বিদ্যুতায়ন, স্কুলগুলোতে পাকা ভবনসহ ব্যাপক উন্নয়নে চরাঞ্চল হয়ে উঠে দেশের মডেল আধুনিক চরাঞ্চল। কিন্তু নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ না নির্মাণ না হওয়ায় চরাঞ্চল উন্নয়নের রূপরেখাগুলো এখন বিলীনের প্রহর গুণছে। চলতি বন্যায় শিবচরের চরাঞ্চলের চরজানাজাত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়টি ২য় বারের মতো ভাঙন কবলিত হয়, এর আগে ২০১৮ সালে স্কুলটির ৩টি ভবন নদীতে বিলীন হয়। এছাড়াও বন্দরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের ৩ তলা ভবন, বন্দরখোলার কাজীরসুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন কাম সাইক্লোন সেন্টার, কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ৭৭নং কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের ৩তলা ভবন নদীতে বিলীন হয়। এছাড়াও সহ¯্রাধিক পরিবার কোন মতে সহায়সম্বল নিয়ে আশ্রয় নেয় নিরাপদ স্থানে। ভাঙন প্রতিরোধে চিফ হুইপের নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ডাম্পিং চালিয়ে গেলেও দফায় দফায় পানি বাড়া কমায় ভাঙন আগ্রাসী রূপ নিয়ে চরাঞ্চলকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এখনও ভাঙন মুখে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বাজার, মসজিদ, বসত বাড়ি। প্রতি বছরের ভাঙনে চরাঞ্চল রূপ নিয়েছে বিপর্যস্ত জনপদে।
২০১৯ সালে ৪টি বিদ্যালয় ভবন, সহস্রাধিক ঘরবাড়িসহ চরজানাজাত ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, খাসেরহাটের অর্ধশত দোকান বিলীন হয়। গত বছরের বিলীন হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো কাঁঠালবাড়ির ৪৪নং মাগুরখ- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩০নং পূর্ব খাস বন্দরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭৪নং মজিদ বেপারিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কাজীরসুরা তাহফীজুল কুরআন গোরস্তান মাদরাসাটি স্থানান্তর করা হয়।
২০১৮ সালে চরাঞ্চলের চরজানাজাত ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক স্কুল চরজানাজাত ইলিয়াছ আহম্মেদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের ৩টি ভবন, আ. মালেক তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মজিদ সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্দরখোলার ৭২নং নারিকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়। ভাঙনের তীব্রতায় অনেক স্কুল ঘর বাড়ি সরিয়ে নেয়ারও সময় পায়নি কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে একটি মাদ্রাসা ও ২টি প্রাথমিক স্কুল ভবন নদীতে বিলীন হয়। ২০১৬ সালে ৩০নং পূর্ব খাসচর বন্দরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন বিলীন হয়। ২০১৫ সালে ১টি ৩ তলা ভবন, ২টি দ্বিতল ভবনের প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়। এনিয়ে গত এক যুগে এ উপজেলায় ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ১০ হাজার পরিবার নদী ভাঙনে আক্রান্ত হয়ে নিঃস্ব হয়। এরমধ্যে আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী কয়েকটি স্কুলও রয়েছে। একসঙ্গে স্কুল ও বসতভিটা হারিয়ে অনেক শিশু কিশোর শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ছে।
স্কুলছাত্র রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাগো স্কুল বাড়ি ঘর সব নদীতে ভাইঙ্গা গেছে। ব্রিজের ওপর আশ্রয় নিছি। করোনার জন্য স্কুল বন্ধ। কিন্তু চালু হইলে কই যে পড়মু।
চরজানাজাত ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আ. মালেক তালুকদার বলেন, দেশের অন্যান্য চরের চাইতে আমাদের সংসদ সদস্যর নিরলস পরিশ্রমে আমাদের চরগুলো অনেক আধুনিক ছিল। বড় বড় ভবনের স্কুল, পাকা রাস্তা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সবই ছিল। কিন্তু প্রতি বছরের ভাঙনে আমরা এখন নিঃস্ব।
ভাঙন আক্রান্ত বন্দরখোলার নুরুউদ্দিন মাদবরেরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলটিসহ চরাঞ্চল এত সুন্দর যে কেউ বলবেই না এটি পদ্মার চর। কিন্তু প্রতি বর্ষায় ভাঙনে আধুনিক চরটি এখন বিলীনের পথে। হাজার হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও স্থায়ী বাধ না থাকায় আধুনিকতার ছোঁয়া পাওয়া চরটি হারিয়ে যাচ্ছে।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহবুব বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের স্কুলটির ৩টি ভবন নদীতে বিলীন হয়। অন্যত্র সরিয়ে আনলেও আবারও স্কুলটি এ বছর নদীতে বিলীন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে চরের শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিশুই ঝরে পড়ছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর পদ্মার ভাঙনে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অন্যত্র উঁচুস্থানে জায়গা নির্ধারণে কাজ চলতে। স্কুল ও সংলগ্ন এলাকাগুলো ভাঙন আক্রান্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী স্যারের নির্দেশে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চলমান রয়েছে। যদি স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এই চরাঞ্চল দেশের মধ্যে আধুনিকতার একটি মডেল চরাঞ্চল হিসেবে রূপ নিতো। চরাঞ্চলটি আধুনিক মানউন্নয়নের মডেল ছিল। সব আধুনিক সুবিধাই এখানে বিদ্যমান ছিল। চিফ হুইপ স্যারের নির্দেশনা অনুসারে ভাঙন কবলিত স্কুলগুলোর বিকল্প স্থান নির্ণয়ের কাজ চলছে।
শনিবার, ২৯ আগস্ট ২০২০ , ৯ মহররম ১৪৪২, ২৯ আগস্ট ২০২০
নদী ভাঙনে শিবচর চরাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন
শিব শংকর রবিদাস, শিবচর (মাদারীপুর)
দেশের অধিকাংশ চরাঞ্চল যখন সুবিধাবঞ্চিত তখন শিবচরের পদ্মা বেষ্টিত চরাঞ্চল ও আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা অবকাঠামো সমতলের সমান হলেও নদীর ভাঙ্গনে প্রতিবছরই সেইটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও স্থায়ী বাঁধ না থাকায় আধুনিকতার ছোঁয়া পাওয়া চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন রক্ষা করা যাচ্ছে না। শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ছে অনেক শিশু। ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজারো পরিবার। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তরা এক নিমিষেই হয়ে যাচ্ছে সর্বশান্ত। চলতি বছর এ পর্যন্ত পদ্মা নদীর কড়াল গ্রাসে ৪টি স্কুলসহ সহস্রাধিক ঘর বাড়ি ভাঙন আক্রান্ত হয়েছে। এই চারটি বিদ্যালয়সহ গত ১২ বছরে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হাজারো পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে।
সরজমিনে একাধিক সূত্রে জানা যায়, শিবচরের পদ্মা নদীর ভাঙ্গা গড়ার খেলায় প্রায় ৪০ বছর আগে ৪ ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে উঠে বৃহৎ চরাঞ্চল। নাগরিক সব সুবিধাবঞ্চিত ছিল চরাঞ্চল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে বারবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর উদ্যোগে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে অবহেলিত চরাঞ্চলে। জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল পর্যায়ক্রমে সম্পৃক্ত হয় মূল জনপদে। অসংখ্য সেতু, পাকা সড়ক, বিদ্যুতায়ন, স্কুলগুলোতে পাকা ভবনসহ ব্যাপক উন্নয়নে চরাঞ্চল হয়ে উঠে দেশের মডেল আধুনিক চরাঞ্চল। কিন্তু নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ না নির্মাণ না হওয়ায় চরাঞ্চল উন্নয়নের রূপরেখাগুলো এখন বিলীনের প্রহর গুণছে। চলতি বন্যায় শিবচরের চরাঞ্চলের চরজানাজাত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়টি ২য় বারের মতো ভাঙন কবলিত হয়, এর আগে ২০১৮ সালে স্কুলটির ৩টি ভবন নদীতে বিলীন হয়। এছাড়াও বন্দরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের ৩ তলা ভবন, বন্দরখোলার কাজীরসুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন কাম সাইক্লোন সেন্টার, কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ৭৭নং কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের ৩তলা ভবন নদীতে বিলীন হয়। এছাড়াও সহ¯্রাধিক পরিবার কোন মতে সহায়সম্বল নিয়ে আশ্রয় নেয় নিরাপদ স্থানে। ভাঙন প্রতিরোধে চিফ হুইপের নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ডাম্পিং চালিয়ে গেলেও দফায় দফায় পানি বাড়া কমায় ভাঙন আগ্রাসী রূপ নিয়ে চরাঞ্চলকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এখনও ভাঙন মুখে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বাজার, মসজিদ, বসত বাড়ি। প্রতি বছরের ভাঙনে চরাঞ্চল রূপ নিয়েছে বিপর্যস্ত জনপদে।
২০১৯ সালে ৪টি বিদ্যালয় ভবন, সহস্রাধিক ঘরবাড়িসহ চরজানাজাত ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, খাসেরহাটের অর্ধশত দোকান বিলীন হয়। গত বছরের বিলীন হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো কাঁঠালবাড়ির ৪৪নং মাগুরখ- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩০নং পূর্ব খাস বন্দরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭৪নং মজিদ বেপারিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কাজীরসুরা তাহফীজুল কুরআন গোরস্তান মাদরাসাটি স্থানান্তর করা হয়।
২০১৮ সালে চরাঞ্চলের চরজানাজাত ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক স্কুল চরজানাজাত ইলিয়াছ আহম্মেদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের ৩টি ভবন, আ. মালেক তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মজিদ সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্দরখোলার ৭২নং নারিকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়। ভাঙনের তীব্রতায় অনেক স্কুল ঘর বাড়ি সরিয়ে নেয়ারও সময় পায়নি কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে একটি মাদ্রাসা ও ২টি প্রাথমিক স্কুল ভবন নদীতে বিলীন হয়। ২০১৬ সালে ৩০নং পূর্ব খাসচর বন্দরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন বিলীন হয়। ২০১৫ সালে ১টি ৩ তলা ভবন, ২টি দ্বিতল ভবনের প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়। এনিয়ে গত এক যুগে এ উপজেলায় ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ১০ হাজার পরিবার নদী ভাঙনে আক্রান্ত হয়ে নিঃস্ব হয়। এরমধ্যে আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী কয়েকটি স্কুলও রয়েছে। একসঙ্গে স্কুল ও বসতভিটা হারিয়ে অনেক শিশু কিশোর শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ছে।
স্কুলছাত্র রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাগো স্কুল বাড়ি ঘর সব নদীতে ভাইঙ্গা গেছে। ব্রিজের ওপর আশ্রয় নিছি। করোনার জন্য স্কুল বন্ধ। কিন্তু চালু হইলে কই যে পড়মু।
চরজানাজাত ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আ. মালেক তালুকদার বলেন, দেশের অন্যান্য চরের চাইতে আমাদের সংসদ সদস্যর নিরলস পরিশ্রমে আমাদের চরগুলো অনেক আধুনিক ছিল। বড় বড় ভবনের স্কুল, পাকা রাস্তা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সবই ছিল। কিন্তু প্রতি বছরের ভাঙনে আমরা এখন নিঃস্ব।
ভাঙন আক্রান্ত বন্দরখোলার নুরুউদ্দিন মাদবরেরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলটিসহ চরাঞ্চল এত সুন্দর যে কেউ বলবেই না এটি পদ্মার চর। কিন্তু প্রতি বর্ষায় ভাঙনে আধুনিক চরটি এখন বিলীনের পথে। হাজার হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও স্থায়ী বাধ না থাকায় আধুনিকতার ছোঁয়া পাওয়া চরটি হারিয়ে যাচ্ছে।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহবুব বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের স্কুলটির ৩টি ভবন নদীতে বিলীন হয়। অন্যত্র সরিয়ে আনলেও আবারও স্কুলটি এ বছর নদীতে বিলীন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে চরের শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিশুই ঝরে পড়ছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর পদ্মার ভাঙনে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অন্যত্র উঁচুস্থানে জায়গা নির্ধারণে কাজ চলতে। স্কুল ও সংলগ্ন এলাকাগুলো ভাঙন আক্রান্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী স্যারের নির্দেশে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চলমান রয়েছে। যদি স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এই চরাঞ্চল দেশের মধ্যে আধুনিকতার একটি মডেল চরাঞ্চল হিসেবে রূপ নিতো। চরাঞ্চলটি আধুনিক মানউন্নয়নের মডেল ছিল। সব আধুনিক সুবিধাই এখানে বিদ্যমান ছিল। চিফ হুইপ স্যারের নির্দেশনা অনুসারে ভাঙন কবলিত স্কুলগুলোর বিকল্প স্থান নির্ণয়ের কাজ চলছে।