সমুদ্রের পর এবার নদীপথে পণ্য পরিবহন শুরু হবে

৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক যাত্রা গোমতি নদী ড্রেজিং করে নিয়মিত সার্ভিস শুরু হবে

সমুদ্রপথের পর এবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নদীপথে পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন শুরু হচ্ছে আগামী ৫ সেপ্টম্বর থেকে। ওইদিন কুমিল্লার দাউদকান্দি নদী বন্দর থেকে ১ হাজার বস্তা বা ৫০ মেট্রিক টন সিমেন্ট নিয়ে ভারতের ত্রিপুরার সোনামুড়া বন্দরে যাবে এমভি প্রিমিয়ার-১ নামের কার্গো (ছোট জাহাজ)। দুই দেশের মধ্যে নদীপথে এটার প্রথম পণ্য পরিবহন সার্ভিস। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রবাহিত গোমতি নদীর এই ৯২ কিলোমিটার নৌ-পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই দিন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম চালান যাবে বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর মো. গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে নদীপথে পরীক্ষামূলক এই পণ্যপরিবহন করা হচ্ছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ একটি ছোট জাহাজ যাবে ত্রিপুরায়। গোমতি নদী ত্রিপুরা অংশে পানি কম থাকে। তাই পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষে ড্রেজিং করে নিয়মিতভাবে এই সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি আওতায় কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পরীক্ষামূলক কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়। চারটি কনটেইনার ‘এমভি সেঁজুতি’ কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পৌঁছায়। কলকাতা-হলদিয়া-চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছতে সময় লাগে তিন থেকে চারদিন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে পণ্য ত্রিপুরার আগরতলায় পৌঁছে দেয়া হয়। এভার সরাসরি নদীপথে বাংলাদেশ পণ্য যাবে ত্রিপুরায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ত্রিপুরায় পরীক্ষামূলক পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নদীপথে দাউদকান্দি থেকে সোনামুড়ায় পণ্য যাবে। নদীপথে পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহনের জন্য ১ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট পাঠানো হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ গোমতি নদীপথটি পরিদর্শন করে নাব্যতা সংকটসহ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সমস্যার কারণেই প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ৫০ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনের করার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়েছে।। দাউদকান্দি থেকে বিবিরবাজার পর্যন্ত নদীপথে বেশি সাবধানতা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই নদীপথের ভিবিন্ন স্থানে ডুবোচর থাকায় জাহাজ চলাচলের সমস্যা হয়। তাই পরীক্ষামূলক চলাচলের শেষে নদী খনন করে নিয়মিতভাবে নৌ-পথটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে বিআইডব্লিটিএ’র সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্ত ও ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে নদীপথে এই প্রথম পরিক্ষামূলক পণ্যপরিবহন শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়েছে কার্গোতে পণ্য পরিবহনের জন্য। ২-৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পণ্যপরিবহন করতে হবে। ১ হাজার বস্তা সিমেন্ট নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ত্রিপুরার সোনামুড়া বন্দরের জাহাজটি।

এদিকে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে নদীপথে পণ্যপরিবহন এক ঐতিহাসিক মুহুর্ত বলে উল্লেখ করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রী গত রোববার টুইটারে বলেন, ত্রিপুরার জন্য এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পরীক্ষামূলক যাত্রায় বার্জে ৫০ মেট্রিক টন সিমেন্ট ঢাকা থেকে সোনামুড়ায় পৌঁছাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এই প্রথম জাহাজে পণ্য ত্রিপুরা পর্যন্ত আসছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ত্রিপুরার সোনামুড়া পর্যন্ত গোমতী নদী দিয়ে পণ্য আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার অমুমতি দিয়েছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী মনসুখ মান্ডভিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। গত বুধবার ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকায় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

শনিবার, ২৯ আগস্ট ২০২০ , ৯ মহররম ১৪৪২, ২৯ আগস্ট ২০২০

বাংলাদেশ-ভারত

সমুদ্রের পর এবার নদীপথে পণ্য পরিবহন শুরু হবে

৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক যাত্রা গোমতি নদী ড্রেজিং করে নিয়মিত সার্ভিস শুরু হবে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

সমুদ্রপথের পর এবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নদীপথে পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন শুরু হচ্ছে আগামী ৫ সেপ্টম্বর থেকে। ওইদিন কুমিল্লার দাউদকান্দি নদী বন্দর থেকে ১ হাজার বস্তা বা ৫০ মেট্রিক টন সিমেন্ট নিয়ে ভারতের ত্রিপুরার সোনামুড়া বন্দরে যাবে এমভি প্রিমিয়ার-১ নামের কার্গো (ছোট জাহাজ)। দুই দেশের মধ্যে নদীপথে এটার প্রথম পণ্য পরিবহন সার্ভিস। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রবাহিত গোমতি নদীর এই ৯২ কিলোমিটার নৌ-পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই দিন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম চালান যাবে বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর মো. গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে নদীপথে পরীক্ষামূলক এই পণ্যপরিবহন করা হচ্ছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ একটি ছোট জাহাজ যাবে ত্রিপুরায়। গোমতি নদী ত্রিপুরা অংশে পানি কম থাকে। তাই পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষে ড্রেজিং করে নিয়মিতভাবে এই সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি আওতায় কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পরীক্ষামূলক কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়। চারটি কনটেইনার ‘এমভি সেঁজুতি’ কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পৌঁছায়। কলকাতা-হলদিয়া-চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছতে সময় লাগে তিন থেকে চারদিন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে পণ্য ত্রিপুরার আগরতলায় পৌঁছে দেয়া হয়। এভার সরাসরি নদীপথে বাংলাদেশ পণ্য যাবে ত্রিপুরায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ত্রিপুরায় পরীক্ষামূলক পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নদীপথে দাউদকান্দি থেকে সোনামুড়ায় পণ্য যাবে। নদীপথে পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহনের জন্য ১ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট পাঠানো হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ গোমতি নদীপথটি পরিদর্শন করে নাব্যতা সংকটসহ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সমস্যার কারণেই প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ৫০ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনের করার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়েছে।। দাউদকান্দি থেকে বিবিরবাজার পর্যন্ত নদীপথে বেশি সাবধানতা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই নদীপথের ভিবিন্ন স্থানে ডুবোচর থাকায় জাহাজ চলাচলের সমস্যা হয়। তাই পরীক্ষামূলক চলাচলের শেষে নদী খনন করে নিয়মিতভাবে নৌ-পথটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে বিআইডব্লিটিএ’র সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্ত ও ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে নদীপথে এই প্রথম পরিক্ষামূলক পণ্যপরিবহন শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়েছে কার্গোতে পণ্য পরিবহনের জন্য। ২-৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পণ্যপরিবহন করতে হবে। ১ হাজার বস্তা সিমেন্ট নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ত্রিপুরার সোনামুড়া বন্দরের জাহাজটি।

এদিকে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে নদীপথে পণ্যপরিবহন এক ঐতিহাসিক মুহুর্ত বলে উল্লেখ করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রী গত রোববার টুইটারে বলেন, ত্রিপুরার জন্য এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পরীক্ষামূলক যাত্রায় বার্জে ৫০ মেট্রিক টন সিমেন্ট ঢাকা থেকে সোনামুড়ায় পৌঁছাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এই প্রথম জাহাজে পণ্য ত্রিপুরা পর্যন্ত আসছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ত্রিপুরার সোনামুড়া পর্যন্ত গোমতী নদী দিয়ে পণ্য আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার অমুমতি দিয়েছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী মনসুখ মান্ডভিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। গত বুধবার ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকায় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।