বঙ্গবন্ধুই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেন

অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় সবসময় স্বপ্ন দেখতেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার। যে রাষ্ট্রের চরিত্র হবে অসাম্প্রদায়িক, প্রতিষ্ঠিত হবে বাঙালি জাতিসত্তা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের অপূর্ব সমন্বয় থাকবে। মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকবে না। ধর্ম ভিত্তিতে নয়, দেশের নাগরিক হিসেবে সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। থাকবে না ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। প্রত্যেক নাগরিক তার মৌলিক অধিকার, মাতৃভাষার অধিকার, সুচিন্তিত মুক্ত চিন্তার মতপ্রকাশসহ তার নিজ নিজ অধিকার নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। এমনই একটি অধিকার ও মর্যাদাপূর্ণ উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। বঙ্গবন্ধুর এমন স্বপ্ন পূরণের আকাক্সক্ষা তাকে বিশ্বের ইতিহাসে মহানায়কে পরিণত করেছে। যে কারণে তার রাজনৈতিক জীবনকে জেল জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, মৃত্যুভয়, ষড়যন্ত্রসহ কোন বাধাই টলাতে পারেনি। মাতৃভাষার আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, ৬ দফা বাস্তবায়নের আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন কিংবা ১৯৭০ সালের নির্বাচন, সবশেষে ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালি জাতির মুক্তির ও অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছেন মুক্তির বার্তা নিয়ে। লাখো-কোটি জনতার সামনে দাঁড়িয়েছেন আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে অকুতোভয় বীর হিসেবে। সমগ্র জাতিকে সাহস জুগিয়েছেন। কা-ারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজে অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে আলোর দিশারি হয়ে সমগ্র জাতির চরম দুর্দিনে দিশা দিয়েছেন। অমৃতময় মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন কী অপূর্ব, কতনা বৈচিত্র্যপূণর্, বর্ণাঢ্য, আন্দোলন-সংগ্রামে পরিপূর্ণ, অনুসরণীয়, অনুকরণীয় ও শিক্ষণীয়।

বঙ্গবন্ধুর হাতেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু : স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। স্বাস্থ্যকে সংবিধানের মূল অধিকারের অংশ হিসেবে সংযোজন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যকে গুরুত্বদান, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠনসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স¦াস্থ্য খাতে গবেষণার জন্য তৎকালীন আইপিজিএম অ্যান্ড আর-কে গবেষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন এবং এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩০০ থেকে ৫০০ বেডে উন্নীত করেন। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। গবেষণার জন্য তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। তখন দেশে ছিল মোট আটটি মেডিকেল কলেজ। প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজে তিনি অধ্যাপকের পদসহ বিভিন্ন পদ সৃষ্টি করেন।

বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের স্বাস্থ্য ভাবনা ও পদক্ষেপগুলোর কিছু কথা উল্লেখ করছি। দেশের মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এডুকেশন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এডুকেশন, সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণার প্রত্যেকটা বিষয়ে জাতির পিতার অবদান রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ডিগ্রিগুলো ব্রিটিশ জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল একে একে স্বীকৃতি বাতিল করে দেয়। এর ফলে আামদের দেশ থেকে ইংল্যান্ডে গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষা লাভের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জাতির পিতা তখন অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং প্রজ্ঞার পরিচায়ক ১৯৭২ সালে একটা প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অব সার্জন্স (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠা করেন। যারা পাকিস্তান থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যারা বিদেশ থেকে এমআরসিপি, এফআরসিএস করেছেন, এ ধরনের ৫৪ জন ফেলো নিয়ে বিসিপিএসের যাত্রা শুরু। জাতির পিতা বিসিপিএস প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বলেই এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে ৬০০০ মতো ফেলো দেশে ও বিদেশে কাজ করছেন। ৩০০০ হাজারের মতো চিকিৎসক এমসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করে দেশে কাজ করেছেনÑ এটা দেশের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতির পিতার অনন্য অবদান বলে আমি মনে করি। স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ডা. আর জে গার্স্টকে আমন্ত্রণ জানান এবং অর্থপেডিক সার্জারি বিষয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য একটি টিমকে পূর্বজার্মানি প্রেরণ করেন। উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ পঙ্গু হাসপাতালে অর্থোপেডিক সার্জারির ওপরে এমএস ডিগ্রি চালু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এভাবে দেশে তিনি অর্থোপেডিক সার্জারির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করেন। তাছাড়া পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার ক্ষেত্রে আইপিজিএম অ্যান্ড আর-কে (বর্তমানে শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শাহবাগে শিফট করা হয় তখন শয্যা সংখ্যা ছিল ৩০০টা। জাতির পিতা এটা আরও বৃদ্ধি করে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর বর্তমানের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধু তখন আইপিজিএম অ্যান্ড আরের তৎকালীন ডাইরেক্টর প্রফেসর ডা. নুরুল ইসলামকে বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য চিকিৎসকরা এত বেশি শাহাদতবরণ করেছেন, আর কোনো পেশার লোক স্বাধীনতার জন্য এত বেশি শাহাদাতবরণ করে নাই। প্রফেসর ইসলাম আমি আপনাকে অনুরোধ করব যে সব শিক্ষক, চিকিৎসক শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের নাম লিখে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করুন। প্রফেসর ইসলাম সাহেব সেই মহতী কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন। ৮৯ জন চিকিৎসক দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। জাতির পিতা চিকিৎসকদের মর্যাদা দেয়ার জন্য দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) বঙ্গবন্ধুর সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালের শেষে দিকে দেশের ৭টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজকে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করা হয়। অবশ্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র সংসদের তৎকালীন সহ-সভাপতি জাহিদুল হাসানের নেতৃত্বে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ অন্যদের সঙ্গে আমিও মিছিল করেছিলাম এবং বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু বললেন, এক বছরও হয় নাই আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, এর মধ্যেই মিছিল করেছে, এরা কারা? বঙ্গবন্ধু তখন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুম আবদুর রাজ্জাককে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মালেক উকিলের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, আমিও ছিলাম সেখানে। ওই সময় জাতির পিতার নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৩ মাসের মধ্যে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একটি পরিত্যক্ত ভবনে বেসিক সায়েন্সে এমবিবিএস চালু হয়।

জাতির পিতার চিন্তা-চেতনা, আমাদের চিন্তা চেতনার চাইতে বহুগুণে অ্যাডভান্স ছিল। বঙ্গবন্ধু তখন একটা রেফারেল সিস্টেমের কথা বলেছিলেন। প্রতিটি গ্রাম বা ওয়ার্ডে একজন স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন। যে স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে মানুষের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিবেন। অসুস্থ লোক থাকলে তাকে চিহ্নিত করে ইউনিয়ন সাব সেন্টারে নিয়ে যাবেন। সেই ইউনিয়ন সাব সেন্টারে একজন ডাক্তার থাকবেন, একজন নার্স থাকবেন, একজন প্যারামেডিক থাকবেন এবং সেখানে রোগীকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করতে না পারলে রোগীকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাবেন। থানা কমপ্লেক্সে রোগী সুস্থ না হলে তাকে মহকুমা হাসপাতালে বা জেলা হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। এভাবে একটি রেফারেল সিষ্টেমের কথা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন। জাতির পিতা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন সাবজেক্ট, সাবস্পেশালিস্ট সাবজেক্ট পর্যন্ত তিনি চালু করেছেন। প্রফেসরের পদ তৈরি করেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি কার্ডিও ফিজিওলজি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আমলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ইউনিয়নে সাব সেন্টারগুলো ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহ যাতে নির্ধারিত সময়ের (১৯৭৮) মধ্যেই তৈরি হয় সেভাবেই পরিকল্পনা করেছিলেন। কারণ ইউনিয়নে সাব সেন্টারসমূহ ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহ যথাসময়ে তৈরি হলে দেশের সব মানুষকে চিকিৎসাসেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু ১ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১৯৭৮ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জাতির পিতা দেশের জনগণের জন্যই শাসনতন্ত্র তৈরি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুধু দেশকে প্রতিষ্ঠা ও শক্র মুক্ত করে যাননি; মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদাÑঅন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু কতটা জনকল্যাণমুখী ছিলেন বর্তমান সময়েও আমরা তা ভেবে অবাক হয়ে যাই। বঙ্গবন্ধুর কনসেপ্ট বা চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা নিয়েই আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক খুলেছেন। এ কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার চেষ্টা করছি। প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধর পথ ধরেই জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মেডিকেল শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫টি, সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৮টি, এর মূলে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। বর্তমানে যখন দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য অধ্যয়ন করছেন, চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন, শিক্ষাদান করছেন তখন বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা খুবই মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পদক্ষেপের ফলে আজকে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার এতটা উন্নতি সম্ভব হয়েছে।

পরিশেষে বলতে চাই, যে মহান নেতার জন্য একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই দেশকে সব দিক থেকে পুনর্গঠন করে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেনÑসেই বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমাদের সবচাইতে বড় ব্যর্থতা। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হত। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আমাদের সবচাইতে বড় সম্বল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বর্তমান বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ব দরবারে বাাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। সে কারণেই রাষ্ট্র পরিচালনায় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প নাই। পরিশেষে এ কথা জোড় দিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে, জনগণের মনের মনিকোঠায় বঙ্গবন্ধু ও তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চির অমর হয়ে বেঁচে থাকবেন। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। চিরজীবী হোক মহান মুক্তিযোদ্ধার চেতনা। চির জাগ্রত থাকুক, অনির্বান শিখার মতো জ্বল জ্বল করুক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। সবশেষে বাংলাদেশের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার সঙ্গে শাহাদাতবরণকারী সব শহীদদের প্রতি আমার অন্তরের ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

[লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

শনিবার, ২৯ আগস্ট ২০২০ , ৯ মহররম ১৪৪২, ২৯ আগস্ট ২০২০

বঙ্গবন্ধুই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেন

অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় সবসময় স্বপ্ন দেখতেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার। যে রাষ্ট্রের চরিত্র হবে অসাম্প্রদায়িক, প্রতিষ্ঠিত হবে বাঙালি জাতিসত্তা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের অপূর্ব সমন্বয় থাকবে। মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকবে না। ধর্ম ভিত্তিতে নয়, দেশের নাগরিক হিসেবে সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। থাকবে না ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। প্রত্যেক নাগরিক তার মৌলিক অধিকার, মাতৃভাষার অধিকার, সুচিন্তিত মুক্ত চিন্তার মতপ্রকাশসহ তার নিজ নিজ অধিকার নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। এমনই একটি অধিকার ও মর্যাদাপূর্ণ উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। বঙ্গবন্ধুর এমন স্বপ্ন পূরণের আকাক্সক্ষা তাকে বিশ্বের ইতিহাসে মহানায়কে পরিণত করেছে। যে কারণে তার রাজনৈতিক জীবনকে জেল জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, মৃত্যুভয়, ষড়যন্ত্রসহ কোন বাধাই টলাতে পারেনি। মাতৃভাষার আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, ৬ দফা বাস্তবায়নের আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন কিংবা ১৯৭০ সালের নির্বাচন, সবশেষে ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালি জাতির মুক্তির ও অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছেন মুক্তির বার্তা নিয়ে। লাখো-কোটি জনতার সামনে দাঁড়িয়েছেন আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে অকুতোভয় বীর হিসেবে। সমগ্র জাতিকে সাহস জুগিয়েছেন। কা-ারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজে অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে আলোর দিশারি হয়ে সমগ্র জাতির চরম দুর্দিনে দিশা দিয়েছেন। অমৃতময় মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন কী অপূর্ব, কতনা বৈচিত্র্যপূণর্, বর্ণাঢ্য, আন্দোলন-সংগ্রামে পরিপূর্ণ, অনুসরণীয়, অনুকরণীয় ও শিক্ষণীয়।

বঙ্গবন্ধুর হাতেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু : স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। স্বাস্থ্যকে সংবিধানের মূল অধিকারের অংশ হিসেবে সংযোজন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যকে গুরুত্বদান, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠনসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স¦াস্থ্য খাতে গবেষণার জন্য তৎকালীন আইপিজিএম অ্যান্ড আর-কে গবেষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন এবং এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩০০ থেকে ৫০০ বেডে উন্নীত করেন। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। গবেষণার জন্য তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। তখন দেশে ছিল মোট আটটি মেডিকেল কলেজ। প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজে তিনি অধ্যাপকের পদসহ বিভিন্ন পদ সৃষ্টি করেন।

বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের স্বাস্থ্য ভাবনা ও পদক্ষেপগুলোর কিছু কথা উল্লেখ করছি। দেশের মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এডুকেশন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এডুকেশন, সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণার প্রত্যেকটা বিষয়ে জাতির পিতার অবদান রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ডিগ্রিগুলো ব্রিটিশ জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল একে একে স্বীকৃতি বাতিল করে দেয়। এর ফলে আামদের দেশ থেকে ইংল্যান্ডে গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষা লাভের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জাতির পিতা তখন অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং প্রজ্ঞার পরিচায়ক ১৯৭২ সালে একটা প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অব সার্জন্স (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠা করেন। যারা পাকিস্তান থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যারা বিদেশ থেকে এমআরসিপি, এফআরসিএস করেছেন, এ ধরনের ৫৪ জন ফেলো নিয়ে বিসিপিএসের যাত্রা শুরু। জাতির পিতা বিসিপিএস প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বলেই এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে ৬০০০ মতো ফেলো দেশে ও বিদেশে কাজ করছেন। ৩০০০ হাজারের মতো চিকিৎসক এমসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করে দেশে কাজ করেছেনÑ এটা দেশের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতির পিতার অনন্য অবদান বলে আমি মনে করি। স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ডা. আর জে গার্স্টকে আমন্ত্রণ জানান এবং অর্থপেডিক সার্জারি বিষয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য একটি টিমকে পূর্বজার্মানি প্রেরণ করেন। উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ পঙ্গু হাসপাতালে অর্থোপেডিক সার্জারির ওপরে এমএস ডিগ্রি চালু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এভাবে দেশে তিনি অর্থোপেডিক সার্জারির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করেন। তাছাড়া পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার ক্ষেত্রে আইপিজিএম অ্যান্ড আর-কে (বর্তমানে শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শাহবাগে শিফট করা হয় তখন শয্যা সংখ্যা ছিল ৩০০টা। জাতির পিতা এটা আরও বৃদ্ধি করে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর বর্তমানের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধু তখন আইপিজিএম অ্যান্ড আরের তৎকালীন ডাইরেক্টর প্রফেসর ডা. নুরুল ইসলামকে বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য চিকিৎসকরা এত বেশি শাহাদতবরণ করেছেন, আর কোনো পেশার লোক স্বাধীনতার জন্য এত বেশি শাহাদাতবরণ করে নাই। প্রফেসর ইসলাম আমি আপনাকে অনুরোধ করব যে সব শিক্ষক, চিকিৎসক শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের নাম লিখে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করুন। প্রফেসর ইসলাম সাহেব সেই মহতী কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন। ৮৯ জন চিকিৎসক দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। জাতির পিতা চিকিৎসকদের মর্যাদা দেয়ার জন্য দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) বঙ্গবন্ধুর সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালের শেষে দিকে দেশের ৭টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজকে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করা হয়। অবশ্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র সংসদের তৎকালীন সহ-সভাপতি জাহিদুল হাসানের নেতৃত্বে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ অন্যদের সঙ্গে আমিও মিছিল করেছিলাম এবং বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু বললেন, এক বছরও হয় নাই আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, এর মধ্যেই মিছিল করেছে, এরা কারা? বঙ্গবন্ধু তখন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুম আবদুর রাজ্জাককে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মালেক উকিলের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, আমিও ছিলাম সেখানে। ওই সময় জাতির পিতার নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৩ মাসের মধ্যে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একটি পরিত্যক্ত ভবনে বেসিক সায়েন্সে এমবিবিএস চালু হয়।

জাতির পিতার চিন্তা-চেতনা, আমাদের চিন্তা চেতনার চাইতে বহুগুণে অ্যাডভান্স ছিল। বঙ্গবন্ধু তখন একটা রেফারেল সিস্টেমের কথা বলেছিলেন। প্রতিটি গ্রাম বা ওয়ার্ডে একজন স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন। যে স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে মানুষের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিবেন। অসুস্থ লোক থাকলে তাকে চিহ্নিত করে ইউনিয়ন সাব সেন্টারে নিয়ে যাবেন। সেই ইউনিয়ন সাব সেন্টারে একজন ডাক্তার থাকবেন, একজন নার্স থাকবেন, একজন প্যারামেডিক থাকবেন এবং সেখানে রোগীকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করতে না পারলে রোগীকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাবেন। থানা কমপ্লেক্সে রোগী সুস্থ না হলে তাকে মহকুমা হাসপাতালে বা জেলা হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। এভাবে একটি রেফারেল সিষ্টেমের কথা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন। জাতির পিতা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন সাবজেক্ট, সাবস্পেশালিস্ট সাবজেক্ট পর্যন্ত তিনি চালু করেছেন। প্রফেসরের পদ তৈরি করেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি কার্ডিও ফিজিওলজি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আমলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ইউনিয়নে সাব সেন্টারগুলো ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহ যাতে নির্ধারিত সময়ের (১৯৭৮) মধ্যেই তৈরি হয় সেভাবেই পরিকল্পনা করেছিলেন। কারণ ইউনিয়নে সাব সেন্টারসমূহ ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহ যথাসময়ে তৈরি হলে দেশের সব মানুষকে চিকিৎসাসেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু ১ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১৯৭৮ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জাতির পিতা দেশের জনগণের জন্যই শাসনতন্ত্র তৈরি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুধু দেশকে প্রতিষ্ঠা ও শক্র মুক্ত করে যাননি; মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদাÑঅন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু কতটা জনকল্যাণমুখী ছিলেন বর্তমান সময়েও আমরা তা ভেবে অবাক হয়ে যাই। বঙ্গবন্ধুর কনসেপ্ট বা চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা নিয়েই আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক খুলেছেন। এ কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার চেষ্টা করছি। প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধর পথ ধরেই জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মেডিকেল শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫টি, সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৮টি, এর মূলে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। বর্তমানে যখন দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য অধ্যয়ন করছেন, চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন, শিক্ষাদান করছেন তখন বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা খুবই মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পদক্ষেপের ফলে আজকে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার এতটা উন্নতি সম্ভব হয়েছে।

পরিশেষে বলতে চাই, যে মহান নেতার জন্য একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই দেশকে সব দিক থেকে পুনর্গঠন করে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেনÑসেই বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমাদের সবচাইতে বড় ব্যর্থতা। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হত। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আমাদের সবচাইতে বড় সম্বল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বর্তমান বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ব দরবারে বাাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। সে কারণেই রাষ্ট্র পরিচালনায় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প নাই। পরিশেষে এ কথা জোড় দিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে, জনগণের মনের মনিকোঠায় বঙ্গবন্ধু ও তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চির অমর হয়ে বেঁচে থাকবেন। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। চিরজীবী হোক মহান মুক্তিযোদ্ধার চেতনা। চির জাগ্রত থাকুক, অনির্বান শিখার মতো জ্বল জ্বল করুক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। সবশেষে বাংলাদেশের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার সঙ্গে শাহাদাতবরণকারী সব শহীদদের প্রতি আমার অন্তরের ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

[লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]