লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী
আগামী ডিসেম্বরে ক্ষমতার একযুগ পূর্ণ করবে আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ক্ষমতায় থেকে উদযাপনের যে আশা দলটি করেছিল, টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায়, এবার সে আশা দলটির পূর্ণ হচ্ছে। তবে মধ্যম আয় থেকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের যে লক্ষ্য দলটির রয়েছে, তা পূরণ করতে আরও অনেক দূর যেতে হবে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠন করে এখনও ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে আরও দুটি সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়ে টানা প্রায় পৌনে ১২ বছর সরকার পরিচালনা করছে দলটি, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। চার বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বিশ্বে একের পর এক রেকর্ড গড়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ দৃশ্যমান। ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে দলটি। তবে রূপকল্প ২০৪১, উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার ঘোষণা বাস্তবায়ন এই মেয়াদে সম্ভব নয়। এজন্য দলটিকে আরও কয়েকবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ জীবন দিতে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। বাঙালির আস্থার জায়গা এখানেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু কন্যার উপর জাতির আস্থা আছে বলেই আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়। শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাযজ্ঞ এখন দৃশ্যমান। আমরা মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে। করোনা সংকটে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল এখন দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পথে। রূপকল্প ২০৪১ এবং ব-দ্বীপ বা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর উপর দেশের জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। বাংলাশের মানুষ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে নয়, উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আর আওয়ামী লীগ জনগণের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই আগামীতেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখবে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় আনবে বলে আমারা বিশ্বাস করি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন টানা ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরেরও ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বিভিন্ন সময় এদের অনেকের অপকর্ম প্রকাশ্যে আসায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। যাদের দুর্নীতি ধরা পড়েছে, তাদের চিহ্নিত করা গেলেও, ভিন্নমতের, স্বার্থান্বেষীদের অনুপ্রবেশে সহযোগীতা ও পৃষ্ঠপোষকতাকারী অনেকেই এখনও পর্দার আড়ালে। দ্রুত এদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা না গেলে ভবিষ্যতে দলের সাংগঠনিক ঐক্য ও শক্তি ধরে রাখা কঠিন হতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নবম সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর রাজনীতির মাঠে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ওই নির্বাচনে মহাজোটের বিপক্ষে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট মাত্র ৩৩টি আসনে জয়লাভ করে এরমধ্যে বিএনপি ৩৩টি, জামায়াত ২টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ১টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পায় ২৬৩টি আসন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩০টি এবং জাতীয় পার্টি (জাপা) ২৭ আসনে বিজয়ী হয়। এছাড়া জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং এলডিপি যথাক্রমে ৩, ২ ও ১টি আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ৪টি আসনে।
জাতীয় নির্বাচনে বড় ধরনের বিপর্যায়ের পরও বিএনপি নবম সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এক-দশমাংশেরও কম আসন থাকায় সরকার বিরোধী জোড়ালো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। এরপর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বড় ভুল করে দলটি। এ সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষ অনেক নেতার ফাঁসিতে রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াত। ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শরীকদের অব্যাহত সহযোগিতা হারায় বিএনপি। এরমধ্যে দুর্নীতির দায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের শাস্তির আদেশ দেয় আদালত। শীর্ষ নেত্রীর কারাদ- এবং ছেলের ফেরারি হওয়ার ঘটনায় দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়। যার খেসারত দিতে হয় একাদশ সংসদ নির্বাচনেও। সর্বশেষ গণফোরামসহ কয়েকটি দল নিয়ে নতুন জোট করেও রাজনীতি এবং নির্বাচন, কোথাও সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বহুমুখী উন্নয়নের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাবের বেকায়দায় পড়ে সরকার। ব্যাপক সংক্রমণ এড়াতে মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের রাজনীতির পাশপাশি অর্থনীতিও গতি হারায়। অর্থনীতির চাকা সচল করতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বহুমুখী উদ্যোগ নেন, যা সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে একযোগে বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সামলে ওঠে সরকার। নতুন উদ্যোমে পথ চলা শুরু হয়।
আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করার সুযোগ এখনও রয়েছে। ২০২১ সালে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পাশপাশি মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি অর্জনের গৌরব নিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে চায় আওয়ামী লীগ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই। দশম সংসদের মতোই একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) সরকারেরই অংশ। এবার নিজেদের ৭ জন সদস্য এবং শরিক গণফোরামের ২ জন সদস্য নিয়ে সংসদে সরকারি দলের বিরুদ্ধে বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না বিএনপি।
করোনার কারণে দেশে এখন মাঠের রাজনীতি নেই বললেই চলে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে দেশে চলছে ভার্চুয়াল রাজনীতি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দু’জনই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিতে পারছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভার্চুয়াল দলের অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাদের মতে, বিএনপি পড়েছে উভয় সংকটে। নতুন প্রজন্মের চোখে স্বাধীনতাবিরোধী তকমা লাগানো জামায়াতকে তারা ছাড়তেও পারছে না, আবার পুরোপুরি আকড়ে ধরতেও পারছে না। সাজা স্থগিতের পর নিজ বাসায় স্বেচ্ছায় অন্তরীণ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রহস্যজনক কারণে রাজনীতি থেকে দূরে সরে আছেন। দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান সাজা মাথায় বিদেশে পলাতক থেকে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তবে প্রবীণ বিএনপি নেতাদের উপর আস্থা না রেখে তাদের একঘরে করে জামায়াত ঘেষা তারেকের প্রবাস রাজনীতি দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি। জেলের ভয়ে লন্ডনে থাকা তারেক রহমানের আয়েশী জীবন যাপন তৃণমূলে অসংখ্য নেতাকর্মীদের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০ , ১০ মহররম ১৪৪২, ১৪ ভাদ্র ১৪২৭
লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী
ফয়েজ আহমেদ তুষার |
আগামী ডিসেম্বরে ক্ষমতার একযুগ পূর্ণ করবে আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ক্ষমতায় থেকে উদযাপনের যে আশা দলটি করেছিল, টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায়, এবার সে আশা দলটির পূর্ণ হচ্ছে। তবে মধ্যম আয় থেকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের যে লক্ষ্য দলটির রয়েছে, তা পূরণ করতে আরও অনেক দূর যেতে হবে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠন করে এখনও ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে আরও দুটি সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়ে টানা প্রায় পৌনে ১২ বছর সরকার পরিচালনা করছে দলটি, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। চার বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বিশ্বে একের পর এক রেকর্ড গড়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ দৃশ্যমান। ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে দলটি। তবে রূপকল্প ২০৪১, উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার ঘোষণা বাস্তবায়ন এই মেয়াদে সম্ভব নয়। এজন্য দলটিকে আরও কয়েকবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ জীবন দিতে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। বাঙালির আস্থার জায়গা এখানেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু কন্যার উপর জাতির আস্থা আছে বলেই আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়। শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাযজ্ঞ এখন দৃশ্যমান। আমরা মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে। করোনা সংকটে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল এখন দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পথে। রূপকল্প ২০৪১ এবং ব-দ্বীপ বা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর উপর দেশের জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। বাংলাশের মানুষ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে নয়, উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আর আওয়ামী লীগ জনগণের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই আগামীতেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখবে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় আনবে বলে আমারা বিশ্বাস করি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন টানা ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরেরও ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বিভিন্ন সময় এদের অনেকের অপকর্ম প্রকাশ্যে আসায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। যাদের দুর্নীতি ধরা পড়েছে, তাদের চিহ্নিত করা গেলেও, ভিন্নমতের, স্বার্থান্বেষীদের অনুপ্রবেশে সহযোগীতা ও পৃষ্ঠপোষকতাকারী অনেকেই এখনও পর্দার আড়ালে। দ্রুত এদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা না গেলে ভবিষ্যতে দলের সাংগঠনিক ঐক্য ও শক্তি ধরে রাখা কঠিন হতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নবম সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর রাজনীতির মাঠে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ওই নির্বাচনে মহাজোটের বিপক্ষে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট মাত্র ৩৩টি আসনে জয়লাভ করে এরমধ্যে বিএনপি ৩৩টি, জামায়াত ২টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ১টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পায় ২৬৩টি আসন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩০টি এবং জাতীয় পার্টি (জাপা) ২৭ আসনে বিজয়ী হয়। এছাড়া জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং এলডিপি যথাক্রমে ৩, ২ ও ১টি আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ৪টি আসনে।
জাতীয় নির্বাচনে বড় ধরনের বিপর্যায়ের পরও বিএনপি নবম সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এক-দশমাংশেরও কম আসন থাকায় সরকার বিরোধী জোড়ালো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। এরপর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বড় ভুল করে দলটি। এ সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষ অনেক নেতার ফাঁসিতে রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াত। ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শরীকদের অব্যাহত সহযোগিতা হারায় বিএনপি। এরমধ্যে দুর্নীতির দায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের শাস্তির আদেশ দেয় আদালত। শীর্ষ নেত্রীর কারাদ- এবং ছেলের ফেরারি হওয়ার ঘটনায় দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়। যার খেসারত দিতে হয় একাদশ সংসদ নির্বাচনেও। সর্বশেষ গণফোরামসহ কয়েকটি দল নিয়ে নতুন জোট করেও রাজনীতি এবং নির্বাচন, কোথাও সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বহুমুখী উন্নয়নের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাবের বেকায়দায় পড়ে সরকার। ব্যাপক সংক্রমণ এড়াতে মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের রাজনীতির পাশপাশি অর্থনীতিও গতি হারায়। অর্থনীতির চাকা সচল করতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বহুমুখী উদ্যোগ নেন, যা সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে একযোগে বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সামলে ওঠে সরকার। নতুন উদ্যোমে পথ চলা শুরু হয়।
আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করার সুযোগ এখনও রয়েছে। ২০২১ সালে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পাশপাশি মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি অর্জনের গৌরব নিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে চায় আওয়ামী লীগ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই। দশম সংসদের মতোই একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) সরকারেরই অংশ। এবার নিজেদের ৭ জন সদস্য এবং শরিক গণফোরামের ২ জন সদস্য নিয়ে সংসদে সরকারি দলের বিরুদ্ধে বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না বিএনপি।
করোনার কারণে দেশে এখন মাঠের রাজনীতি নেই বললেই চলে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে দেশে চলছে ভার্চুয়াল রাজনীতি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দু’জনই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিতে পারছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভার্চুয়াল দলের অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাদের মতে, বিএনপি পড়েছে উভয় সংকটে। নতুন প্রজন্মের চোখে স্বাধীনতাবিরোধী তকমা লাগানো জামায়াতকে তারা ছাড়তেও পারছে না, আবার পুরোপুরি আকড়ে ধরতেও পারছে না। সাজা স্থগিতের পর নিজ বাসায় স্বেচ্ছায় অন্তরীণ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রহস্যজনক কারণে রাজনীতি থেকে দূরে সরে আছেন। দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান সাজা মাথায় বিদেশে পলাতক থেকে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তবে প্রবীণ বিএনপি নেতাদের উপর আস্থা না রেখে তাদের একঘরে করে জামায়াত ঘেষা তারেকের প্রবাস রাজনীতি দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি। জেলের ভয়ে লন্ডনে থাকা তারেক রহমানের আয়েশী জীবন যাপন তৃণমূলে অসংখ্য নেতাকর্মীদের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।