চট্টগ্রামে করোনায় সংকটাপন্ন রোগী বাড়ছে

মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো আরও ২ জন : নতুন শনাক্ত-৮৮

চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে আরও দুইজন যোগ হয়েছে। এ সময়ে ৮৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৮৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার কমলেও সংকটাপন্ন রোগী বাড়ছে। এসব রোগীর অধিকাংশই তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এর ফলে হাইফ্লো নজেল ক্যানোলা (এইচএফএনসি) এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যায় রোগী বেড়েছে। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকরা এমন অভিমত দিয়েছেন।

গতকাল সকালে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রামের ৬টি ল্যাবে ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৮৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে নগরীতে ৬৯ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৯ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ হাজার ৯৫৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যুসহ ২৭০ জন। করোনায় সুস্থ হয়েছেন আরো ৯০ জনসহ ১২ হাজার ৪২২ জন।

ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, ৮৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষার মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ল্যাবে ১২১টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। তার মধ্যে নগরীর ১৮ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৭ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ২৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হয় আরও ২২ জন। ২২ জনই নগরীর বাসিন্দা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ১৬১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৩ জন নগরীর ও ৪ জন জেলার উপজেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নগরীর ৩ জন ও উপজেলার ৩ জন বাসিন্দা। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ১১৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪ জন শনাক্ত হয়। ৪ জনই নগরীর বাসিন্দা। শেভরনে ৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নগরীর ৯ জন ও উপজেলার ৩ জন বাসিন্দা। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৯ জন শনাক্ত হয়েছে। এগুলো হলো, লোহাগাড়া ২ জন, বাঁশখালী ১ জন, আনোয়ারা ১ জন, চন্দনাইশ ১ জন, বোয়ালখালী ২ জন, রাউজান ৩ জন, হাটহাজারী ৬ জন, সীতাকু- ১ জন এবং সন্দ্বীপ ২ জন।

এদিকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শুরুতে করোনায় আক্রান্তর মধ্যে সাধারণ রোগী অর্থাৎ জটিলতা কম এমন রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। কিন্তু যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের মধ্যে সংকটাপন্ন রোগী বেশি। তাদের মতে, সচেতনতার অভাব, শুরু থেকে করোনাকে গুরুত্ব না দেয়া এবং সংক্রমণের পরও হাসপাতালে না গিয়ে বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বাসায় অবস্থান করায় এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে একসময় সর্বোচ্চ রোগী থাকতো ১৭০ জনের মতো। এখন উপসর্গ ও করোনা পজেটিভ মিলিয়ে রোগী থাকছে গড়ে ১০০ জনের মতো। তবে খালি থাকছে না হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা। গতকাল চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী ছিল ছয়জন। জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখন করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ রোগীর চেয়ে সিরিয়াস রোগী বেশি। এখন রোগীদের হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা, আইসিইউ এবং ডায়ালোসিস সাপোর্ট দিতে হচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৯৪ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। সেখানেও আইসিইউতে আছেন ৪২জন।

অন্যদিকে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় নির্ধারিত চট্টগ্রামের প্রথম চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ শয্যায় এখন রোগীর তেমন চাপ নেই। তবে শুরুতে এই হাসপাতালে শয্যা খালি পাওয়াই সংকট ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ মিলে রোগী রয়েছে ৫০ জন। তার মধ্যে ১০ জনই আইসিইউতে। হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জামাল মোস্তফা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পরিস্থিতি এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে, সার্বিকভাবে রোগীর চাপ কমেছে। তবে সংকটাপন্ন রোগী বেড়েছে। আইসিইউ শয্যা খালি থাকছে না। হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলাও ব্যবহার করতে হচ্ছে। দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে অনেক রোগীর অবস্থাই সংকটাপন্ন।

রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০ , ১০ মহররম ১৪৪২, ১৪ ভাদ্র ১৪২৭

চট্টগ্রামে করোনায় সংকটাপন্ন রোগী বাড়ছে

মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো আরও ২ জন : নতুন শনাক্ত-৮৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে আরও দুইজন যোগ হয়েছে। এ সময়ে ৮৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৮৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার কমলেও সংকটাপন্ন রোগী বাড়ছে। এসব রোগীর অধিকাংশই তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এর ফলে হাইফ্লো নজেল ক্যানোলা (এইচএফএনসি) এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যায় রোগী বেড়েছে। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকরা এমন অভিমত দিয়েছেন।

গতকাল সকালে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রামের ৬টি ল্যাবে ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৮৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে নগরীতে ৬৯ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৯ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ হাজার ৯৫৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যুসহ ২৭০ জন। করোনায় সুস্থ হয়েছেন আরো ৯০ জনসহ ১২ হাজার ৪২২ জন।

ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, ৮৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষার মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ল্যাবে ১২১টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। তার মধ্যে নগরীর ১৮ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৭ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ২৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হয় আরও ২২ জন। ২২ জনই নগরীর বাসিন্দা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ১৬১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৩ জন নগরীর ও ৪ জন জেলার উপজেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নগরীর ৩ জন ও উপজেলার ৩ জন বাসিন্দা। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ১১৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪ জন শনাক্ত হয়। ৪ জনই নগরীর বাসিন্দা। শেভরনে ৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নগরীর ৯ জন ও উপজেলার ৩ জন বাসিন্দা। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৯ জন শনাক্ত হয়েছে। এগুলো হলো, লোহাগাড়া ২ জন, বাঁশখালী ১ জন, আনোয়ারা ১ জন, চন্দনাইশ ১ জন, বোয়ালখালী ২ জন, রাউজান ৩ জন, হাটহাজারী ৬ জন, সীতাকু- ১ জন এবং সন্দ্বীপ ২ জন।

এদিকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শুরুতে করোনায় আক্রান্তর মধ্যে সাধারণ রোগী অর্থাৎ জটিলতা কম এমন রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। কিন্তু যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের মধ্যে সংকটাপন্ন রোগী বেশি। তাদের মতে, সচেতনতার অভাব, শুরু থেকে করোনাকে গুরুত্ব না দেয়া এবং সংক্রমণের পরও হাসপাতালে না গিয়ে বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বাসায় অবস্থান করায় এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে একসময় সর্বোচ্চ রোগী থাকতো ১৭০ জনের মতো। এখন উপসর্গ ও করোনা পজেটিভ মিলিয়ে রোগী থাকছে গড়ে ১০০ জনের মতো। তবে খালি থাকছে না হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা। গতকাল চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী ছিল ছয়জন। জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখন করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ রোগীর চেয়ে সিরিয়াস রোগী বেশি। এখন রোগীদের হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা, আইসিইউ এবং ডায়ালোসিস সাপোর্ট দিতে হচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৯৪ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। সেখানেও আইসিইউতে আছেন ৪২জন।

অন্যদিকে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় নির্ধারিত চট্টগ্রামের প্রথম চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ শয্যায় এখন রোগীর তেমন চাপ নেই। তবে শুরুতে এই হাসপাতালে শয্যা খালি পাওয়াই সংকট ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ মিলে রোগী রয়েছে ৫০ জন। তার মধ্যে ১০ জনই আইসিইউতে। হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জামাল মোস্তফা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পরিস্থিতি এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে, সার্বিকভাবে রোগীর চাপ কমেছে। তবে সংকটাপন্ন রোগী বেড়েছে। আইসিইউ শয্যা খালি থাকছে না। হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলাও ব্যবহার করতে হচ্ছে। দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে অনেক রোগীর অবস্থাই সংকটাপন্ন।