আজ আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস

১৪ বছরে ৬০৪ জন গুম

আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হচ্ছে আজ। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সনদ হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। এদিকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ৬০৪ জন গুম হয়েছে বলে তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।

এদিকে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক, উদ্বেগ আর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। আসক কর্তৃক বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ (আগস্ট) পর্যন্ত ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন। এদেরমধ্যে পরবর্তী সময়ে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন ফেরত এসেছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে, বিশেষ বাহিনী-র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রায়শ সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে।

২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আর গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছে সাধারণ লোকজনও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ১৯৭০ ও ৮০-র দশকে কেবল অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও ভিন্ন মতাবলম্বীরাই গুম হতেন। কিন্তু বর্তমানে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, মাদক কারবারি ও মানব পাচাকারীদের মধ্যেও গুমের ঘটনা দেখা যায়।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর পল্লবী এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তৎকালীন সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুকে (৩১) ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি। গতকাল পিন্টুর বোন রেহেনা বেগম বলেন, ‘ছেলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমাদের বাবা গত ২২ এপ্রিল হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। আমরা আমাদের ভাইকে ফিরে পেতে এখনও অপেক্ষা করছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি যে আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিন।’

২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি র‌্যাবের পোশাক পরিহিত একটি টিম তুলে নিয়ে যায় বিএনপি নেতা সাদেকুলকে। সাদেকুলকে খুঁজে বের করেত র‌্যাব ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। কিন্ত আজও সাদেকুলকে ফেরত পায়নি তার পরিবার। পল্লবী থানার যুবদল নেতা নুরে আলমের স্ত্রী বীণা বেগম বলেন, ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের বাসা থেকে পুলিশের লোকজন তার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু থানা ও ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দফতরে গিয়েও আজ পর্যন্ত তার স্বামীর খোঁজ পাননি। তার স্বামী গুম হওয়ার পর পুলিশ তার দুই ছেলেকে কয়েকবার ধরে নিয়ে গেছে। এরপর টাকা দিয়ে ছেলেদের ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে। স্বামীকে এখনও পাইনি। ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে র‌্যাব ধরে নিয়ে যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল মোকাদ্দেসকে। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ মেলেনি। র‌্যাবও স্বীকার করেছে না। আল মোকাদ্দেসের চাচা আবদুল হাই বলেন, আল মোকাদ্দেসকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেছে এর প্রমান তার কাছে আছে। ২০১০ সালের ১ মার্চ দক্ষিণখান থানা এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ছাত্রদল নেতা মানিককে। আজও মানিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। মানিকের ভাই বলেন, ‘আমাদের কান্না কেউ শোনে না।’ ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি নিউমার্কেট থানা এলাকা থেকে গুম হয় ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান বাপ্পী। এর কিছুদিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। বাপ্পির বোন বলেন, ‘আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকেও ধরে নিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাকে ৬ মাস জেলে থাকতে হয়েছে। প্রথমে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়। আমার বাবা এই শোক সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে।’

image

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গতকাল শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ‘গুম হওয়া’ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা -সংবাদ

আরও খবর
গণপরিবহন চলবে অবাধে
পবিত্র আশুরা আজ
পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে   স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্দেশনা অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর
ক্ষমতার যুগপূর্তির দ্বারপ্রান্তে আওয়ামী লীগ
২৪ ঘণ্টায় আরও ৩২ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রামে করোনায় সংকটাপন্ন রোগী বাড়ছে
সংসদ সদস্য মোস্তাফিজকে আ, লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি
পুলিশের ৩ সাক্ষী ২য় দফায় রিমান্ডে
সিলেটে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৫

রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০ , ১০ মহররম ১৪৪২, ১৪ ভাদ্র ১৪২৭

আজ আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস

১৪ বছরে ৬০৪ জন গুম

image

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গতকাল শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ‘গুম হওয়া’ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা -সংবাদ

আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হচ্ছে আজ। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সনদ হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। এদিকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ৬০৪ জন গুম হয়েছে বলে তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।

এদিকে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক, উদ্বেগ আর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। আসক কর্তৃক বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ (আগস্ট) পর্যন্ত ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন। এদেরমধ্যে পরবর্তী সময়ে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন ফেরত এসেছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে, বিশেষ বাহিনী-র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রায়শ সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে।

২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আর গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছে সাধারণ লোকজনও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ১৯৭০ ও ৮০-র দশকে কেবল অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও ভিন্ন মতাবলম্বীরাই গুম হতেন। কিন্তু বর্তমানে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, মাদক কারবারি ও মানব পাচাকারীদের মধ্যেও গুমের ঘটনা দেখা যায়।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর পল্লবী এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তৎকালীন সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুকে (৩১) ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি। গতকাল পিন্টুর বোন রেহেনা বেগম বলেন, ‘ছেলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমাদের বাবা গত ২২ এপ্রিল হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। আমরা আমাদের ভাইকে ফিরে পেতে এখনও অপেক্ষা করছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি যে আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিন।’

২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি র‌্যাবের পোশাক পরিহিত একটি টিম তুলে নিয়ে যায় বিএনপি নেতা সাদেকুলকে। সাদেকুলকে খুঁজে বের করেত র‌্যাব ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। কিন্ত আজও সাদেকুলকে ফেরত পায়নি তার পরিবার। পল্লবী থানার যুবদল নেতা নুরে আলমের স্ত্রী বীণা বেগম বলেন, ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের বাসা থেকে পুলিশের লোকজন তার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু থানা ও ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দফতরে গিয়েও আজ পর্যন্ত তার স্বামীর খোঁজ পাননি। তার স্বামী গুম হওয়ার পর পুলিশ তার দুই ছেলেকে কয়েকবার ধরে নিয়ে গেছে। এরপর টাকা দিয়ে ছেলেদের ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে। স্বামীকে এখনও পাইনি। ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে র‌্যাব ধরে নিয়ে যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল মোকাদ্দেসকে। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ মেলেনি। র‌্যাবও স্বীকার করেছে না। আল মোকাদ্দেসের চাচা আবদুল হাই বলেন, আল মোকাদ্দেসকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেছে এর প্রমান তার কাছে আছে। ২০১০ সালের ১ মার্চ দক্ষিণখান থানা এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ছাত্রদল নেতা মানিককে। আজও মানিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। মানিকের ভাই বলেন, ‘আমাদের কান্না কেউ শোনে না।’ ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি নিউমার্কেট থানা এলাকা থেকে গুম হয় ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান বাপ্পী। এর কিছুদিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। বাপ্পির বোন বলেন, ‘আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকেও ধরে নিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাকে ৬ মাস জেলে থাকতে হয়েছে। প্রথমে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়। আমার বাবা এই শোক সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে।’