সিলেটে ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের আড়ালে অবৈধ রক্ত ব্যবসা

ছাড়পত্র নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের

সিলেটে ব্লাড ব্যাংকের আড়ালে অবৈধভাবে রক্ত ব্যবসার অভিযোগ ওঠেছে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক নামের এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে অবিভোগ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মালিক একাধিক মামলার আসামি জাকির আহমদের নানা কর্মকা-ের তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।

নগরীর শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা শাহীন আহমদ অভিযোগ করেন, গত ২৮ জুলাই তিনি এবি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করতে গেলে তার কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আদায় করা হয়। এভাবে নগরীর চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়কে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া টাকার বিনিময়ে মাদকসেবীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করার অভিযোগও আছে।

ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের সাইনবোর্ডে সিলেটের একমাত্র অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক লিখা থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়েছিলেন ড. আবুল ফজল মোস্তাকিন মুসা। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে নেই। সিলেট স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, সিলেটে চারটির মতো ব্লাড ব্যাংকের অনুমোদন থাকলেও কোনটিরই নবায়ন নেই। আর রক্ত কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কয়েক বছর আগে অবৈধ ব্লাড সংগ্রহ ও বিক্রির অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয় র‌্যাব। কয়েকদিন পর ফের তা চালু করা হয়।

গত ২৫ জুলাই সিলেটের বিমানবন্দর এলাকার মো. শাহদাতুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক অভিযোগে বলেন, জামায়াত-শিবিরের আস্তাভাজন হওয়ার সুবাদে তিনি মালিক হয়ে যান ক্রিসেন্ট ব্লাড নামীয় রক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। এরপর থেকে অবৈধ ব্লাড ব্যবসার মাধ্যমে তিনি পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। একে একে গড়ে তুলেন মধুশহীদ কাজলশাহ এলাকায় ক্রিসেন্ট মেডিকেল সার্ভিসেস, স্টেডিয়াম মার্কেটে ক্রিসেন্ট ডেন্টাল কেয়ার, দরগাহ মহল্লায় হোটেল ক্রিসেন্ট গার্ডেন, এয়ারপোর্ট রোডের মংলিবাগে বিনিময় হাউজিং, এয়ারপোর্টে নয়াবাজারে মেসার্স ইসফাক আহমদ প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৮-০৯২৯, ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫-১৯৪৪ ও সিলেট খ ১১-০৩০০) বিলাসবহুল গাড়ি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, অবৈধ রক্ত ব্যবসার কারণে একপর্যায়ে জাকির আহমদ ব্লাড জাকু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও তার ভাই ইশফাক আহমদ কুটি এয়ারপোর্ট এলাকায় একটি বাহিনী গড়ে তুলে নানা অপরাধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, জাকির আহমদ গংদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা (নং-৮৬/০৫), কোতোয়ালি জিআর-২৬৪/০৫, কতোয়ালি থানার মামলা (নং-৮২(৩)০৫), সিআর (দ্রুত বিচার) মামলা নং-০৯/২০২০ ও এয়ারপোর্ট থানায় জিডি (নং-৯৪৭/২০২০) রয়েছে। এছাড়াও নীতিমালা অনুযায়ী রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, রক্তসংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই এই ব্লাড ব্যাংকে। ফলে মানহীন রক্ত সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন করে তোলা হচ্ছে। সেইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর ও লাইসেন্স ফাঁকি দিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ করা হয়েছে এই রক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।

যোগাযোগ করা হলে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, জাকির আহমদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

তবে জাকির আহমদ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার এলাকায় একটি শত্রু পক্ষ এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার ব্লাড ব্যাংক সিলেটের একমাত্র বৈধ জানিয়ে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে কোন রক্ত কেনাবেচা হয় না। তিনি বলেন, তার দাদার আমল থেকে তারা ধনাঢ্য। তার বাবাও ছিলেন শিক্ষিত। তিনি কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোও মিথ্যে বলে দাবি তার।

আরও খবর
দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়
আ’লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ
করোনায় একদিনে মৃত্যু ৪ আক্রান্ত ৬৭
সারাদেশে লুটপাট-দুর্নীতি বন্ধে ঐক্যের ডাক
সাংবাদিক-সাহিত্যিক রাহাত খানের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি কয়েক ঘণ্টায় আটক
শিক্ষার মানোন্নয়নে সুলতান মোল্লা স্কুলে কাজ করবে গুড নেইবারস
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা তাইন্দংয়ে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা ভগবান টিলা
রাতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে : নৌমন্ত্রী
ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ : বিয়াম স্কুলের ২ শিক্ষক বরখাস্ত তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্নীতির দায়ে প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ সভাপতি পলাতক আসামি
শামুক ভাঙায় লাভবান চিংড়ি খামারি, ঠকছেন নারীরা

রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০ , ১০ মহররম ১৪৪২, ১৪ ভাদ্র ১৪২৭

সিলেটে ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের আড়ালে অবৈধ রক্ত ব্যবসা

ছাড়পত্র নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের

বিশেষ প্রতিনিধি

সিলেটে ব্লাড ব্যাংকের আড়ালে অবৈধভাবে রক্ত ব্যবসার অভিযোগ ওঠেছে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক নামের এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে অবিভোগ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মালিক একাধিক মামলার আসামি জাকির আহমদের নানা কর্মকা-ের তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।

নগরীর শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা শাহীন আহমদ অভিযোগ করেন, গত ২৮ জুলাই তিনি এবি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করতে গেলে তার কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আদায় করা হয়। এভাবে নগরীর চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়কে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া টাকার বিনিময়ে মাদকসেবীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করার অভিযোগও আছে।

ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের সাইনবোর্ডে সিলেটের একমাত্র অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক লিখা থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়েছিলেন ড. আবুল ফজল মোস্তাকিন মুসা। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে নেই। সিলেট স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, সিলেটে চারটির মতো ব্লাড ব্যাংকের অনুমোদন থাকলেও কোনটিরই নবায়ন নেই। আর রক্ত কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কয়েক বছর আগে অবৈধ ব্লাড সংগ্রহ ও বিক্রির অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয় র‌্যাব। কয়েকদিন পর ফের তা চালু করা হয়।

গত ২৫ জুলাই সিলেটের বিমানবন্দর এলাকার মো. শাহদাতুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক অভিযোগে বলেন, জামায়াত-শিবিরের আস্তাভাজন হওয়ার সুবাদে তিনি মালিক হয়ে যান ক্রিসেন্ট ব্লাড নামীয় রক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। এরপর থেকে অবৈধ ব্লাড ব্যবসার মাধ্যমে তিনি পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। একে একে গড়ে তুলেন মধুশহীদ কাজলশাহ এলাকায় ক্রিসেন্ট মেডিকেল সার্ভিসেস, স্টেডিয়াম মার্কেটে ক্রিসেন্ট ডেন্টাল কেয়ার, দরগাহ মহল্লায় হোটেল ক্রিসেন্ট গার্ডেন, এয়ারপোর্ট রোডের মংলিবাগে বিনিময় হাউজিং, এয়ারপোর্টে নয়াবাজারে মেসার্স ইসফাক আহমদ প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৮-০৯২৯, ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫-১৯৪৪ ও সিলেট খ ১১-০৩০০) বিলাসবহুল গাড়ি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, অবৈধ রক্ত ব্যবসার কারণে একপর্যায়ে জাকির আহমদ ব্লাড জাকু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও তার ভাই ইশফাক আহমদ কুটি এয়ারপোর্ট এলাকায় একটি বাহিনী গড়ে তুলে নানা অপরাধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, জাকির আহমদ গংদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা (নং-৮৬/০৫), কোতোয়ালি জিআর-২৬৪/০৫, কতোয়ালি থানার মামলা (নং-৮২(৩)০৫), সিআর (দ্রুত বিচার) মামলা নং-০৯/২০২০ ও এয়ারপোর্ট থানায় জিডি (নং-৯৪৭/২০২০) রয়েছে। এছাড়াও নীতিমালা অনুযায়ী রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, রক্তসংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই এই ব্লাড ব্যাংকে। ফলে মানহীন রক্ত সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন করে তোলা হচ্ছে। সেইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর ও লাইসেন্স ফাঁকি দিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ করা হয়েছে এই রক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।

যোগাযোগ করা হলে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, জাকির আহমদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

তবে জাকির আহমদ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার এলাকায় একটি শত্রু পক্ষ এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার ব্লাড ব্যাংক সিলেটের একমাত্র বৈধ জানিয়ে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে কোন রক্ত কেনাবেচা হয় না। তিনি বলেন, তার দাদার আমল থেকে তারা ধনাঢ্য। তার বাবাও ছিলেন শিক্ষিত। তিনি কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোও মিথ্যে বলে দাবি তার।