বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার হলেও

গণপরিবহন মানছে না নির্ধারিত ভাড়া ও স্বাস্থ্যবিধি

আগের ভাড়া চলছে সারাদেশের গণপরিবহনে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রী, চালক ও সহকারী সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ও পরিবহনে পর্র্যাপ্ত সাবান পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখাসহ ট্রিপের শুরু এবং শেষে যানবাহন জীবাণুমুক্ত রাখা। কিন্তু রাজধানীর অধিকাংশ পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির এই ব্যবস্থাগুলো মানতে দেখা যায় না। যাত্রীদের মুখে মাস্ক পরা থাকলে বাস চালক ও হেলপার ছিল মাস্ক ছাড়া। এছাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী বাস-মিনি বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ ও ৭ টাকা। কিন্তু পরিবহনে তা আদায় করা হয়নি। দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন নিষেধ থাকলে অনেক পরিবহন তা মানেনি। তবে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায় নি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে সিটি ও আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

সিটি সার্ভিস বাসে মানছে না সরকার নির্ধারিত ভাড়া

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা, গাজীপুর, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে অনাবিল, রাইদা, তুরাগ, বলাকা, বিরতিহীন সাবেক ৮ নাম্বার পরিবহন, ট্রান্স সিলভা, বেস্টওয়ে, শিকড়, খাজাবাবা সহ বিভিন্ন পরিবহন চলাচল করে। বেশিরভাগ পরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচল করে বিরতিহীন সাবেক ৮ নম্বর, যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের শিকড় ও খাজাবাবা বাস সর্বনি¤œ ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা। করোনাকালে শিকড় ও খাজাবাবা যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের ভাড়া নেয়া হতো ১০ টাকা। কিন্তু ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া গতকাল থেকে প্রত্যাহার করা হলেও এই দুটি বাস একই ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে সোহেল রানা নামের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘করোনার আগে যাত্রীবাড়া থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। করোনার সময় তা ১০ টাকা হয়। কিন্তু সরকার বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করা হলেও বাসওয়ালা তা করছে না। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের বেশি হবে না।’

এ বিষয়ে শিকড় পরিবহনের হেলপার সংবাদকে বলেন, করোনার আগের গাড়িতে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হতো। তাই ৭ টাকার ভাড়া ৫ টাকা নেয়া হতো। কিন্তু এখন দাঁড়িয়ে কোন যাত্রী নেয়া যাবে না। সিটিং সার্ভিসে গাড়ি চলাচল করছে যত সিট তত যাত্রী পরিবহন করা হয় তাই সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা হয়। এছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরের করোনাকালে ভাড়া ছিলো ৬০ টাকা। এখন নেয়া হয় ৩০ টাকা। সব রুটের ভাড়া কমানো হয়েছে। রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি বাসে সিট যাত্রী বসিয়ে চলাচল করছে। তবে বাসের উঠার আগে যাত্রীদের স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দেখা যায় নি। অনেক বাসের প্লাস্টিকের বোকলে সাবান পানি রাখা হলেও তা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে ট্রান্স সিলভা পরিবহনে মনির নামের মিরপুরের এক যাত্রী সংবাদ বলেন, করোনাকালের ভাড়া থেকে কিছুটা কমানো হয়েছে। করোনা আগে যা ভাড়া নেয়া হতো তাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা তো সরকারি নির্ধারিত ভাড়া না। সরকার নির্ধারিত ভাড়া প্রতিকিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা। সে হিসেবে গুলিস্তান থেকে মিরপুরের ভাড়া হওয়ার কথা ২০-২৫ টাকা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। করোনাকালে নেয়া হতো ৬০ টাকা।

স্বাস্থ্যবিধি মানছে না আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রায় ৩০টি রুটের বাস চলাচল করে। গতকাল থেকে প্রতিটি বাসে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে আগের ভাড়ায় চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু কোন পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, মাদারীপুর বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু একটি বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করে তিশা পরিবহনের চালক কামাল হোসেন সংবাদকে বলেন, আগের ভাড়ায় এখন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। করোনাকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লা বিশ^রোডের ভাড়া ২০০- ২৫০ টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। কোন কোন ক্ষেত্রে ৯০ ও ৮০ টাকায় যাত্রী উঠানো হয়। এখন এক সিটে দুইজন যাত্রী বসানো হয়। তাই ভাড়া কমানো হয়েছে। গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা আছে। কিন্তু যাত্রীরা তা ব্যবহার করতে চায় না। এছাড়া আগে করোনা অনেকটা কমে গেছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটের হিমাচল পরিবহনের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, পরিবার নিয়ে লক্ষ্মীপুরের যাচ্ছি। করোনাকালে ঢাকা-লক্ষ্মীপুরের ভাড়া ছিল ৫৫০ টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা। তবে গাড়িতে জীবাণুনাশ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমার তা ব্যবহার করি না। কারণ বাসের যা রাখা তা আসলে কতটা নিরাপদ?

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের হানিফ পরিবহনের এক ম্যানেজার সংবাদকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ননএসি বাসের বর্তমান ৬৫০ টাকা। করোনাকালে যা ছিল ৮০০ টাকা। এছাড়া এসি বাসের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা। করোনাকালে ছিল ১৮০০ টাকা। স্বাস্থ্যবিধি মানতে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা সব মালিককে চিঠি দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। কোন বাসে দাঁড়িয়ে বা বর্ধিত ভাড়া আদায় করা যাবে না। যদি কেউ এমন করে থাকে বা কোন যাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ আসে সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবহনের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

বিআরটিএ’র উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভাড়া মনিটরিংসহ পরিবহনের অন্যান্য অনিয়ম দেখতে নগরজুড়ে আমাদের বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। তারা এসব বিষয় দেখভাল করছেন। কেউ আইন ভঙ্গ বা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গণপরিবহনে নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা : পরিবহনমন্ত্রী

গণপরিবহনে নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যেসব গণপরিবহনে সরকারি নির্দেশনা মানা হবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনেক পরিবহন নিয়ম মেনে গাড়ি চালায়। করোনাকালেও অনেকে নিয়ম মেনে চলেছে। কিন্তু কিছু কিছু পরিবহন নিয়ম মানছে না। যারা সরকারি নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল ঢাকায় সরকারি বাস ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন

সড়কমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি বাসে সরকার অনুমোদিত ভাড়ার তালিকা প্রদর্শনের বিধান রয়েছে। এ বিধান কার্যকর করতে আমি বিআরটিএ ও মালিক সমিতিকে অনুরোধ করছি। মঙ্গলবার থেকে গণপরিবহন করোনা কালের জন্য সমন্বয় করা ভাড়ার পরিবর্তে আগের ভাড়ায় ফিরেছে। জনস্বার্থে এবং যাত্রীদের স্বার্থে আমি সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা কামনা করছি। গণপরিবহনে ভ্রমণকালে যাত্রীসহ পরিবহনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যত আসন তত যাত্রী। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। সাবানের পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। এছাড়া ট্রিপের শুরু এবং শেষে পরিবহনকে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জনস্বার্থে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ম মানার অনুরোধ করছি। সারাদেশে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি জনস্বার্থে এ নিয়ম বা শর্ত মেনে বাস, মিনিবাস চালানোর অনুরোধ করছি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে ডিএমপি, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সক্রিয় থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের শোকের মাস শেষ হয়েছে। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।

বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭

বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার হলেও

গণপরিবহন মানছে না নির্ধারিত ভাড়া ও স্বাস্থ্যবিধি

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

আগের ভাড়া চলছে সারাদেশের গণপরিবহনে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রী, চালক ও সহকারী সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ও পরিবহনে পর্র্যাপ্ত সাবান পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখাসহ ট্রিপের শুরু এবং শেষে যানবাহন জীবাণুমুক্ত রাখা। কিন্তু রাজধানীর অধিকাংশ পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির এই ব্যবস্থাগুলো মানতে দেখা যায় না। যাত্রীদের মুখে মাস্ক পরা থাকলে বাস চালক ও হেলপার ছিল মাস্ক ছাড়া। এছাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী বাস-মিনি বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ ও ৭ টাকা। কিন্তু পরিবহনে তা আদায় করা হয়নি। দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন নিষেধ থাকলে অনেক পরিবহন তা মানেনি। তবে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায় নি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে সিটি ও আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

সিটি সার্ভিস বাসে মানছে না সরকার নির্ধারিত ভাড়া

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা, গাজীপুর, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে অনাবিল, রাইদা, তুরাগ, বলাকা, বিরতিহীন সাবেক ৮ নাম্বার পরিবহন, ট্রান্স সিলভা, বেস্টওয়ে, শিকড়, খাজাবাবা সহ বিভিন্ন পরিবহন চলাচল করে। বেশিরভাগ পরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচল করে বিরতিহীন সাবেক ৮ নম্বর, যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের শিকড় ও খাজাবাবা বাস সর্বনি¤œ ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা। করোনাকালে শিকড় ও খাজাবাবা যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের ভাড়া নেয়া হতো ১০ টাকা। কিন্তু ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া গতকাল থেকে প্রত্যাহার করা হলেও এই দুটি বাস একই ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে সোহেল রানা নামের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘করোনার আগে যাত্রীবাড়া থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। করোনার সময় তা ১০ টাকা হয়। কিন্তু সরকার বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করা হলেও বাসওয়ালা তা করছে না। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের বেশি হবে না।’

এ বিষয়ে শিকড় পরিবহনের হেলপার সংবাদকে বলেন, করোনার আগের গাড়িতে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হতো। তাই ৭ টাকার ভাড়া ৫ টাকা নেয়া হতো। কিন্তু এখন দাঁড়িয়ে কোন যাত্রী নেয়া যাবে না। সিটিং সার্ভিসে গাড়ি চলাচল করছে যত সিট তত যাত্রী পরিবহন করা হয় তাই সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা হয়। এছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরের করোনাকালে ভাড়া ছিলো ৬০ টাকা। এখন নেয়া হয় ৩০ টাকা। সব রুটের ভাড়া কমানো হয়েছে। রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি বাসে সিট যাত্রী বসিয়ে চলাচল করছে। তবে বাসের উঠার আগে যাত্রীদের স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দেখা যায় নি। অনেক বাসের প্লাস্টিকের বোকলে সাবান পানি রাখা হলেও তা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে ট্রান্স সিলভা পরিবহনে মনির নামের মিরপুরের এক যাত্রী সংবাদ বলেন, করোনাকালের ভাড়া থেকে কিছুটা কমানো হয়েছে। করোনা আগে যা ভাড়া নেয়া হতো তাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা তো সরকারি নির্ধারিত ভাড়া না। সরকার নির্ধারিত ভাড়া প্রতিকিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা। সে হিসেবে গুলিস্তান থেকে মিরপুরের ভাড়া হওয়ার কথা ২০-২৫ টাকা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। করোনাকালে নেয়া হতো ৬০ টাকা।

স্বাস্থ্যবিধি মানছে না আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রায় ৩০টি রুটের বাস চলাচল করে। গতকাল থেকে প্রতিটি বাসে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে আগের ভাড়ায় চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু কোন পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, মাদারীপুর বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু একটি বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করে তিশা পরিবহনের চালক কামাল হোসেন সংবাদকে বলেন, আগের ভাড়ায় এখন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। করোনাকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লা বিশ^রোডের ভাড়া ২০০- ২৫০ টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। কোন কোন ক্ষেত্রে ৯০ ও ৮০ টাকায় যাত্রী উঠানো হয়। এখন এক সিটে দুইজন যাত্রী বসানো হয়। তাই ভাড়া কমানো হয়েছে। গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা আছে। কিন্তু যাত্রীরা তা ব্যবহার করতে চায় না। এছাড়া আগে করোনা অনেকটা কমে গেছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটের হিমাচল পরিবহনের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, পরিবার নিয়ে লক্ষ্মীপুরের যাচ্ছি। করোনাকালে ঢাকা-লক্ষ্মীপুরের ভাড়া ছিল ৫৫০ টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা। তবে গাড়িতে জীবাণুনাশ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমার তা ব্যবহার করি না। কারণ বাসের যা রাখা তা আসলে কতটা নিরাপদ?

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের হানিফ পরিবহনের এক ম্যানেজার সংবাদকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ননএসি বাসের বর্তমান ৬৫০ টাকা। করোনাকালে যা ছিল ৮০০ টাকা। এছাড়া এসি বাসের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা। করোনাকালে ছিল ১৮০০ টাকা। স্বাস্থ্যবিধি মানতে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা সব মালিককে চিঠি দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। কোন বাসে দাঁড়িয়ে বা বর্ধিত ভাড়া আদায় করা যাবে না। যদি কেউ এমন করে থাকে বা কোন যাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ আসে সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবহনের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

বিআরটিএ’র উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভাড়া মনিটরিংসহ পরিবহনের অন্যান্য অনিয়ম দেখতে নগরজুড়ে আমাদের বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। তারা এসব বিষয় দেখভাল করছেন। কেউ আইন ভঙ্গ বা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গণপরিবহনে নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা : পরিবহনমন্ত্রী

গণপরিবহনে নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যেসব গণপরিবহনে সরকারি নির্দেশনা মানা হবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনেক পরিবহন নিয়ম মেনে গাড়ি চালায়। করোনাকালেও অনেকে নিয়ম মেনে চলেছে। কিন্তু কিছু কিছু পরিবহন নিয়ম মানছে না। যারা সরকারি নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল ঢাকায় সরকারি বাস ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন

সড়কমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি বাসে সরকার অনুমোদিত ভাড়ার তালিকা প্রদর্শনের বিধান রয়েছে। এ বিধান কার্যকর করতে আমি বিআরটিএ ও মালিক সমিতিকে অনুরোধ করছি। মঙ্গলবার থেকে গণপরিবহন করোনা কালের জন্য সমন্বয় করা ভাড়ার পরিবর্তে আগের ভাড়ায় ফিরেছে। জনস্বার্থে এবং যাত্রীদের স্বার্থে আমি সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা কামনা করছি। গণপরিবহনে ভ্রমণকালে যাত্রীসহ পরিবহনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যত আসন তত যাত্রী। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। সাবানের পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। এছাড়া ট্রিপের শুরু এবং শেষে পরিবহনকে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জনস্বার্থে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ম মানার অনুরোধ করছি। সারাদেশে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি জনস্বার্থে এ নিয়ম বা শর্ত মেনে বাস, মিনিবাস চালানোর অনুরোধ করছি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে ডিএমপি, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সক্রিয় থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের শোকের মাস শেষ হয়েছে। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।