৮৩ বাংলাদেশি দেশের কারাগারে

ভাগ্য বদলানোর আশা নিয়ে বিদেশে গেলেও ভিয়েতনাম ও কাতার থেকে ৮৩ বাংলাদেশিকে ফিরতে হয় শূন্য হাতে। অথচ বিদেশ যাওয়ার আগে তাদের দেখানো হয় পাহাড়সম স্বপ্ন। ভরসা দেয়া হয়েছে ভালো চাকরির। সরল বিশ্বাসে বিদেশ গিয়ে শিকার হয়েছেন নির্যাতনের। বুঝতে পেরেছেন তাদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে মানব পাচারকারীরা হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তাই সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে ফিরতে চাচ্ছিলেন নিজ ঠিকানায়।

গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত সিকদার তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে গতকাল সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ৫৪ ধারায় তাদের গ্রেফতার দেখায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গ্রেফতারের বিষয়ে তুরাগ থানার ওসি নুরুল মোক্তাকিন জানান, ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে বিদেশফেরত ৮৩ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ওই দেশে অবস্থানকালে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করেছেন। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছে ভিয়েতনাম।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, গ্রেফতার ৮৩ জনের মধ্যে দুইজন কাতার ফেরত। বাকিরা সবাই ভিয়েতনাম ফেরত। তারা সেখানে বিভিন্ন ধরণের অপরাধে জড়ানোয় জেলখানায় ছিলেন। সেখান থেকে পরে তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তবে তারা ঠিক কী ধরনের অপরাধ করেছেন, তা এখনও আমরা জানতে পারিনি। তাই সন্দেহজনক হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে, শ্রমিকেরা দাবি করে আসছিলেন, তারা কোন অন্যায় করেননি। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমতি নিয়েই বিদেশে গিয়েছিলেন।

এদিকে, দেশে ফিরেই দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সি, দালালদের বিচারের দাবি করে আসছিলেন ভিয়েতনাম গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফেরা ১০৬ জন প্রবাসী কর্মী। কোয়ারাইন্টাইনে থাকা অবস্থায় আলমগীর নামে এক শ্রমিক জানিয়েছিলেন, তারা প্রত্যেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে ভিয়েতনামে যান। দালালেরা বলেছিলেন, ভিয়েতনামে সোফা ফ্যাক্টরিতে কাজ দেবেন। কিন্তু সেই কাজ তারা পাননি। ওখানে পৌঁছানোর পর ছোটখাটো দু-চারটে কাজ দিলেও কোনটিই দীর্ঘমেয়াদি ছিল না। একপর্যায়ে তিনিসহ আরও অনেকে পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েন। তারা আশা করছিলেন, প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, নয়টি রিক্রুটিং এজেন্সি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ভিয়েতনামে কর্মী পাঠানোর ছাড়পত্র নিয়েছে। এদের সহায়তায় জড়িত আরও ১২টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর হয়েই কাজ করে দালাল চক্র। ভিয়েতনাম যেতে নেয়া হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, গত ১৮ আগস্ট ভিয়েতনাম থেকে ১০৬ বাংলাদেশি নাগরিককে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের সবাইকে উত্তরা দিয়াবাড়ী ক্যাম্পে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। ৩১ আগস্ট কোয়ারেন্টিন শেষ হয়। এরমধ্যে ভিয়েতনামে যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে অভিযোগ আসে। সে অনুযায়ী গতকাল ১০৬ জনের মধ্যে অভিযুক্ত ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি ২ জন কাতার ফেরত। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে পাঠানো ২১৯ জনকেও দেশে ফেরার পর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকার তাদের ক্ষমা করে দিলেও, দেশে এসে মুক্তি পাননি তারা।

বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭

ভিয়েতনাম ফেরত

৮৩ বাংলাদেশি দেশের কারাগারে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ভাগ্য বদলানোর আশা নিয়ে বিদেশে গেলেও ভিয়েতনাম ও কাতার থেকে ৮৩ বাংলাদেশিকে ফিরতে হয় শূন্য হাতে। অথচ বিদেশ যাওয়ার আগে তাদের দেখানো হয় পাহাড়সম স্বপ্ন। ভরসা দেয়া হয়েছে ভালো চাকরির। সরল বিশ্বাসে বিদেশ গিয়ে শিকার হয়েছেন নির্যাতনের। বুঝতে পেরেছেন তাদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে মানব পাচারকারীরা হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তাই সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে ফিরতে চাচ্ছিলেন নিজ ঠিকানায়।

গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত সিকদার তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে গতকাল সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ৫৪ ধারায় তাদের গ্রেফতার দেখায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গ্রেফতারের বিষয়ে তুরাগ থানার ওসি নুরুল মোক্তাকিন জানান, ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে বিদেশফেরত ৮৩ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ওই দেশে অবস্থানকালে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করেছেন। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছে ভিয়েতনাম।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, গ্রেফতার ৮৩ জনের মধ্যে দুইজন কাতার ফেরত। বাকিরা সবাই ভিয়েতনাম ফেরত। তারা সেখানে বিভিন্ন ধরণের অপরাধে জড়ানোয় জেলখানায় ছিলেন। সেখান থেকে পরে তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তবে তারা ঠিক কী ধরনের অপরাধ করেছেন, তা এখনও আমরা জানতে পারিনি। তাই সন্দেহজনক হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে, শ্রমিকেরা দাবি করে আসছিলেন, তারা কোন অন্যায় করেননি। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমতি নিয়েই বিদেশে গিয়েছিলেন।

এদিকে, দেশে ফিরেই দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সি, দালালদের বিচারের দাবি করে আসছিলেন ভিয়েতনাম গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফেরা ১০৬ জন প্রবাসী কর্মী। কোয়ারাইন্টাইনে থাকা অবস্থায় আলমগীর নামে এক শ্রমিক জানিয়েছিলেন, তারা প্রত্যেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে ভিয়েতনামে যান। দালালেরা বলেছিলেন, ভিয়েতনামে সোফা ফ্যাক্টরিতে কাজ দেবেন। কিন্তু সেই কাজ তারা পাননি। ওখানে পৌঁছানোর পর ছোটখাটো দু-চারটে কাজ দিলেও কোনটিই দীর্ঘমেয়াদি ছিল না। একপর্যায়ে তিনিসহ আরও অনেকে পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েন। তারা আশা করছিলেন, প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, নয়টি রিক্রুটিং এজেন্সি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ভিয়েতনামে কর্মী পাঠানোর ছাড়পত্র নিয়েছে। এদের সহায়তায় জড়িত আরও ১২টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর হয়েই কাজ করে দালাল চক্র। ভিয়েতনাম যেতে নেয়া হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, গত ১৮ আগস্ট ভিয়েতনাম থেকে ১০৬ বাংলাদেশি নাগরিককে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের সবাইকে উত্তরা দিয়াবাড়ী ক্যাম্পে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। ৩১ আগস্ট কোয়ারেন্টিন শেষ হয়। এরমধ্যে ভিয়েতনামে যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে অভিযোগ আসে। সে অনুযায়ী গতকাল ১০৬ জনের মধ্যে অভিযুক্ত ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি ২ জন কাতার ফেরত। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে পাঠানো ২১৯ জনকেও দেশে ফেরার পর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকার তাদের ক্ষমা করে দিলেও, দেশে এসে মুক্তি পাননি তারা।