সোনালি আঁশ ও আমাদের সম্ভাবনা

সুজলা-সুফলা, প্রকৃতির অপরুপ এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এই দেশের মানুষ ৮০ ভাগ কৃষির উপর নির্ভরশীল। পাট বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল। এই সোনালি আঁশ আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গৌরব। ধানের পরে পাটের স্থান। পাট বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান ফসল। তাই পাটকে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ বলা হয়। পাট উৎপাদনে বিশ্বে ভারত শীর্ষ এবং বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় হলেও রপ্তানিতে শীর্ষে। বাংলাদেশের দোআঁশ মাটিতে পাট ভালো জন্মে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয় এবং উৎপাদন হয় ৭৪.৪০ লাখ টন। দেশের অধিকাংশ কৃষক ধানের পাশাপাশি পাট চাষের সাথে জড?িত। হিসেব করলে প্রায় ৫০ লাখ কৃষক পাট চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। দেশে মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৩ থেকে ৪ ভাগ আসে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে। বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন করে এবং কাঁচা পাটের ৯০ শতাংশ রপ্তানি করে।

পাটকে কেন্দ্র করে, আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। পোশাক শিল্পের পর পাটশিল্পের স্থান।এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে, আমাদের দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হিসাবে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করছে। যা তাদের জীবনযাপন এর জন্য গুরুত্ব ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি আমাদের দেশের গবেষকরা, পাট থেকে সোনালি ব্যাগ তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। তা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। দেশ-বিদেশে এই সোনালি ব্যাগের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কোন এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, বিশ্বে ৫০০ মিলিয়ন শপিং ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। আর এই চাহিদার একটি ক্ষুদ্র অংশ বাংলাদেশের উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগের দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হলে, পাট খাতে এক নীরব বিপ্লব সাধিত হবে। যার ফলে দেশে অর্থনৈতিক চাকা আরো সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিদেশে ছাড়াও দেশে প্রতিদিন ৫০০ টন সোনালি ব্যাগ তৈরি হলেও, তা বাজারজাতকরণে সমস্যার সম্মুখীন হবে না। বিজ্ঞানীদের গবেষণার মতে, বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ লাখের বেশি এবং বছরে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন টন পলিথিন ব্যবহার করা হয়। আর এর ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হচ্ছে মানুষ। শুধু মানুষ যে তা নয়; বিপুলসংখ্যক স্থল ও জলজ প্রাণী এর শিকার হচ্ছে।যা আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বন ও পরিবেশ বিভাগের মতে, রাজধানী ঢাকাতে প্রতিমাসে ৪১ কোটি পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। আর এই পলিব্যাগ পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবেশ দূষিত হয়। যার ফলে আমাদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, পলিব্যাগের ক্ষতিকর বিষয় বিবেচনা করে তা পরিহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ বা পণ্য হতে পারে বিকল্প কিছু। আর এ ছাড়াও পাট থেকে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, সালোয়ার, কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ব্যাগ কাগজ, কার্পেট প্রভৃতি তৈরি করে দেশ ও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটা কাজে লাগাতে হবে সুষ্ঠভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে মাধ্যমে। এই পাটশিল্প দেশের কৃষকদের নগদ অর্থ উপার্জন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী হতে গু-ত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তাই পাট বা সোনালী আঁশ এর উৎপাদন ও ব্যবহার গতিশীল করার লক্ষ্যে সরকারসহ আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে সম্ভব নতুন সম্ভাবনার আলো ফুটাতে এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে।

মু. সায়েম আহমাদ

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭

সোনালি আঁশ ও আমাদের সম্ভাবনা

সুজলা-সুফলা, প্রকৃতির অপরুপ এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এই দেশের মানুষ ৮০ ভাগ কৃষির উপর নির্ভরশীল। পাট বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল। এই সোনালি আঁশ আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গৌরব। ধানের পরে পাটের স্থান। পাট বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান ফসল। তাই পাটকে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ বলা হয়। পাট উৎপাদনে বিশ্বে ভারত শীর্ষ এবং বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় হলেও রপ্তানিতে শীর্ষে। বাংলাদেশের দোআঁশ মাটিতে পাট ভালো জন্মে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয় এবং উৎপাদন হয় ৭৪.৪০ লাখ টন। দেশের অধিকাংশ কৃষক ধানের পাশাপাশি পাট চাষের সাথে জড?িত। হিসেব করলে প্রায় ৫০ লাখ কৃষক পাট চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। দেশে মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৩ থেকে ৪ ভাগ আসে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে। বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন করে এবং কাঁচা পাটের ৯০ শতাংশ রপ্তানি করে।

পাটকে কেন্দ্র করে, আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। পোশাক শিল্পের পর পাটশিল্পের স্থান।এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে, আমাদের দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হিসাবে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করছে। যা তাদের জীবনযাপন এর জন্য গুরুত্ব ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি আমাদের দেশের গবেষকরা, পাট থেকে সোনালি ব্যাগ তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। তা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। দেশ-বিদেশে এই সোনালি ব্যাগের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কোন এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, বিশ্বে ৫০০ মিলিয়ন শপিং ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। আর এই চাহিদার একটি ক্ষুদ্র অংশ বাংলাদেশের উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগের দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হলে, পাট খাতে এক নীরব বিপ্লব সাধিত হবে। যার ফলে দেশে অর্থনৈতিক চাকা আরো সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিদেশে ছাড়াও দেশে প্রতিদিন ৫০০ টন সোনালি ব্যাগ তৈরি হলেও, তা বাজারজাতকরণে সমস্যার সম্মুখীন হবে না। বিজ্ঞানীদের গবেষণার মতে, বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ লাখের বেশি এবং বছরে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন টন পলিথিন ব্যবহার করা হয়। আর এর ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হচ্ছে মানুষ। শুধু মানুষ যে তা নয়; বিপুলসংখ্যক স্থল ও জলজ প্রাণী এর শিকার হচ্ছে।যা আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বন ও পরিবেশ বিভাগের মতে, রাজধানী ঢাকাতে প্রতিমাসে ৪১ কোটি পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। আর এই পলিব্যাগ পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবেশ দূষিত হয়। যার ফলে আমাদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, পলিব্যাগের ক্ষতিকর বিষয় বিবেচনা করে তা পরিহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ বা পণ্য হতে পারে বিকল্প কিছু। আর এ ছাড়াও পাট থেকে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, সালোয়ার, কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ব্যাগ কাগজ, কার্পেট প্রভৃতি তৈরি করে দেশ ও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটা কাজে লাগাতে হবে সুষ্ঠভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে মাধ্যমে। এই পাটশিল্প দেশের কৃষকদের নগদ অর্থ উপার্জন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী হতে গু-ত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তাই পাট বা সোনালী আঁশ এর উৎপাদন ও ব্যবহার গতিশীল করার লক্ষ্যে সরকারসহ আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে সম্ভব নতুন সম্ভাবনার আলো ফুটাতে এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে।

মু. সায়েম আহমাদ

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।