ভারত থেকে ২৫ বাংলাদেশি ফিরেছেন

বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতে গিয়ে করোনার লকডাউনের কারণে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভারতীয় জেলে বন্দিজীবন কাটাতে হয় ২৬ বাংলাদেশিকে। এরমধ্যে একজন কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে বাকিদের সময় কাটে চরম আতঙ্ক আর দুর্ভাবনায়। সেই ভোগান্তির সময়গুলো এখন কেটে গেছে। নানা জটিলতার পর দু’দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে অপর ২৫ বাংলাদেশি গতকাল দুপুর ২টায় বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে পেরেছে। দীর্ঘ ১২৩ দিন পর প্রিয়জনদের কাছে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত স্বজনরা। কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার ভিকটিম রেসকিউ কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, বৈধভাবে ভারতে গিয়েও করোনা ও ভিসা জটিলতার কারণে ২৫ বাংলাদেশি দীর্ঘ চার মাস ভারতীয় জেলে বন্দী থাকার পর বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারি-চেংড়াবন্ধা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এদের সবার বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায়।

এর আগে গত শনিবার (২৯ আগস্ট) ভারতের ধুবড়ি আদালতের দেয়া আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কারামুক্ত হয়ে বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় বুড়িমারি-চেংড়াবন্ধা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফেরেন তারা। ভারতের হাইকোর্টের আইনজীবী অসীম দাস গুপ্ত এবং ধুবড়ি আদালতের আইনজীবী রাজস্বী দাস গুপ্ত আটক বাংলাদেশিদের পক্ষে আইনি লড়াই করেন। মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশিদের স্বজনদের মধ্যে আটক হানিফ মিয়া ও মানিক মিয়ার বাবা লাল মিয়া, আমিনুল ইসলামের ছোট ভাই মমিনুল বুড়িমারি চেকপোস্টে কারামুক্ত বাংলাদেশিদের গ্রহণ করে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। তারা জানান, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা ভারতে আটক থাকায় পরিবারগুলো ভীষণ দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করেছেন। এছাড়াও কোন দোষ না করেও তাদের জেল থেকে মুক্ত করে আনাটা দুরূহ হলেও ভারতীয় আইনজীবীদের সহায়তায় পরিবারের লোকজনকে ফিরে পেয়ে খুশি তারা এবং যারা নেপথ্যে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ২৬ বাংলাদেশি ভারতে যান। বৈধ পাসপোর্ট ও ভ্রমণ ভিসা থাকলেও ভারতে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন চলার মধ্যে গত ২ মে ওই ২৬ জন বাংলাদেশি দু’টি মিনিবাসে আসামের জোরহাট জেলা থেকে দেশে ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন। পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা ছিল তাদের। ভারতে জেলে ও খামারকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব বাংলাদেশিকে পরদিন (৩ মে) সকালে বাহালপুর এলাকা থেকে আটক করে আসামের ধুবড়ি জেলা পুলিশ। করোনা পরীক্ষার পর তাদের পাঠানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। গত ৫ মে ওই ২৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং ফরেনার্স (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০৪ এবং পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৬৭’র ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দেশটির পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাসপোর্টধারী এসব বাংলাদেশি টি-ওয়ান ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই ভিসাধারীদের কাজের অনুমতি না থাকলেও আসাম পুলিশের অভিযোগ, এই বাংলাদেশিরা রাজ্যের জোরহাট, গোলাঘাট ও শিবসাগর এলাকায় কর্মসংস্থান কার্যক্রমে যুক্ত থেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তাদের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রামে একাধিকবার মানববন্ধন করেন আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা। এরমধ্যে গত ১ জুলাই কারা হেফাজতে বকুল মিয়া নামে এক বাংলাদেশি মারা গেলে চারদিন পর তার মরদেহ দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। আজ ২৫ জনের মুক্তির আদেশ দিয়েছে সে দেশের আদালত। এখন প্রিয়জনদের দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে স্বজনরা।

বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৩ মহররম ১৪৪২, ১৭ ভাদ্র ১৪২৭

ভোগান্তির ১২৩ দিন পর

ভারত থেকে ২৫ বাংলাদেশি ফিরেছেন

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতে গিয়ে করোনার লকডাউনের কারণে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভারতীয় জেলে বন্দিজীবন কাটাতে হয় ২৬ বাংলাদেশিকে। এরমধ্যে একজন কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে বাকিদের সময় কাটে চরম আতঙ্ক আর দুর্ভাবনায়। সেই ভোগান্তির সময়গুলো এখন কেটে গেছে। নানা জটিলতার পর দু’দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে অপর ২৫ বাংলাদেশি গতকাল দুপুর ২টায় বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে পেরেছে। দীর্ঘ ১২৩ দিন পর প্রিয়জনদের কাছে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত স্বজনরা। কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার ভিকটিম রেসকিউ কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, বৈধভাবে ভারতে গিয়েও করোনা ও ভিসা জটিলতার কারণে ২৫ বাংলাদেশি দীর্ঘ চার মাস ভারতীয় জেলে বন্দী থাকার পর বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারি-চেংড়াবন্ধা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এদের সবার বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায়।

এর আগে গত শনিবার (২৯ আগস্ট) ভারতের ধুবড়ি আদালতের দেয়া আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কারামুক্ত হয়ে বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় বুড়িমারি-চেংড়াবন্ধা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফেরেন তারা। ভারতের হাইকোর্টের আইনজীবী অসীম দাস গুপ্ত এবং ধুবড়ি আদালতের আইনজীবী রাজস্বী দাস গুপ্ত আটক বাংলাদেশিদের পক্ষে আইনি লড়াই করেন। মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশিদের স্বজনদের মধ্যে আটক হানিফ মিয়া ও মানিক মিয়ার বাবা লাল মিয়া, আমিনুল ইসলামের ছোট ভাই মমিনুল বুড়িমারি চেকপোস্টে কারামুক্ত বাংলাদেশিদের গ্রহণ করে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। তারা জানান, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা ভারতে আটক থাকায় পরিবারগুলো ভীষণ দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করেছেন। এছাড়াও কোন দোষ না করেও তাদের জেল থেকে মুক্ত করে আনাটা দুরূহ হলেও ভারতীয় আইনজীবীদের সহায়তায় পরিবারের লোকজনকে ফিরে পেয়ে খুশি তারা এবং যারা নেপথ্যে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ২৬ বাংলাদেশি ভারতে যান। বৈধ পাসপোর্ট ও ভ্রমণ ভিসা থাকলেও ভারতে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন চলার মধ্যে গত ২ মে ওই ২৬ জন বাংলাদেশি দু’টি মিনিবাসে আসামের জোরহাট জেলা থেকে দেশে ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন। পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা ছিল তাদের। ভারতে জেলে ও খামারকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব বাংলাদেশিকে পরদিন (৩ মে) সকালে বাহালপুর এলাকা থেকে আটক করে আসামের ধুবড়ি জেলা পুলিশ। করোনা পরীক্ষার পর তাদের পাঠানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। গত ৫ মে ওই ২৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং ফরেনার্স (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০৪ এবং পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৬৭’র ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দেশটির পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাসপোর্টধারী এসব বাংলাদেশি টি-ওয়ান ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই ভিসাধারীদের কাজের অনুমতি না থাকলেও আসাম পুলিশের অভিযোগ, এই বাংলাদেশিরা রাজ্যের জোরহাট, গোলাঘাট ও শিবসাগর এলাকায় কর্মসংস্থান কার্যক্রমে যুক্ত থেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তাদের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রামে একাধিকবার মানববন্ধন করেন আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা। এরমধ্যে গত ১ জুলাই কারা হেফাজতে বকুল মিয়া নামে এক বাংলাদেশি মারা গেলে চারদিন পর তার মরদেহ দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। আজ ২৫ জনের মুক্তির আদেশ দিয়েছে সে দেশের আদালত। এখন প্রিয়জনদের দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে স্বজনরা।