হত্যা মামলায় নৌকার মাঝির জামিন

অযথা হয়রানি, লিগ্যাল অ্যাকশনে যাব : আইনজীবী 

নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রী জিসা মনিকে অপহরণের পর কথিত গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার নৌকার মাঝি খলিলুর রহমানের (৩৬) জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমানের আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালত জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন। এই মামলায় গ্রেফতার অন্য তিন আসামি কারাগারে রয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ মিয়া বলেন, জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। প্রথম দুই আসামির জবানবন্দির জেরে খলিলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ভুক্তভোগী ফিরে আসার পর ২২ ধারায় জবানবন্দিতে জানায়, নিজের ইচ্ছায় ইকবাল নামে এক ছেলের সঙ্গে চলে যায়। তাকে বিয়ে করে ঘর সংসারও করে। তাকে কেউ অপহরণ করেনি বলেও জবানবন্দিতে ওই মেয়ে জানায়। আমার মক্কেলকে অযথা হয়রানি করায় পরবর্তীতে আসামিপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা লিগ্যাল অ্যাকশনে যাবো।

এদিকে এই মামলার প্রধান আসামি আবদুল্লাহর জামিন আবেদন করেছেন জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন বলেন, আবদুল্লাহর জামিন আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগামী ৭ সেপ্টেম্বর শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন। গত ৪ জুলাই নিখোঁজ হয় জিসা মনি। পরে অপহরণ মামলা দায়ের করা হলে তিন আসামিকে গ্রেফতার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। আসামিরা গত ৯ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে তারা জানায়, জিসা মনিকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তবে ২৩ আগস্ট ওই স্কুল ছাত্রী জীবিত ফিরে এসে জানায়, সে তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সংসার করছিল। এ ঘটনায় চারদিকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুলিশের তদন্ত ও আদালতে তিন আসামির দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। জবানবন্দির সঙ্গে প্রকৃত ঘটনার সামঞ্জস্য না থাকাতে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তকার্যে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। রিমান্ডে পুলিশি নির্যাতনের মুখে এই মিথ্যা জবানবন্দি নেয়া হয়েছে অভিযোগ করেছেন আসামিপক্ষের স্বজনরা। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত ২৬ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই শামীম আল মামুনকে সদর মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পরিদর্শক (অপারেশন) আবদুল হাইকে। এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র নিয়ে হাইকোর্টে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ওসি ও সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা ‘গণধর্ষণের পর হত্যা’র জবানবন্দি এবং ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর সশরীরে ফিরে আসার ঘটনার ব্যাখ্যা দেন।

বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৩ মহররম ১৪৪২, ১৭ ভাদ্র ১৪২৭

না’গঞ্জে জীবিত স্কুলছাত্রী

হত্যা মামলায় নৌকার মাঝির জামিন

অযথা হয়রানি, লিগ্যাল অ্যাকশনে যাব : আইনজীবী 

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রী জিসা মনিকে অপহরণের পর কথিত গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার নৌকার মাঝি খলিলুর রহমানের (৩৬) জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমানের আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালত জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন। এই মামলায় গ্রেফতার অন্য তিন আসামি কারাগারে রয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ মিয়া বলেন, জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। প্রথম দুই আসামির জবানবন্দির জেরে খলিলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ভুক্তভোগী ফিরে আসার পর ২২ ধারায় জবানবন্দিতে জানায়, নিজের ইচ্ছায় ইকবাল নামে এক ছেলের সঙ্গে চলে যায়। তাকে বিয়ে করে ঘর সংসারও করে। তাকে কেউ অপহরণ করেনি বলেও জবানবন্দিতে ওই মেয়ে জানায়। আমার মক্কেলকে অযথা হয়রানি করায় পরবর্তীতে আসামিপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা লিগ্যাল অ্যাকশনে যাবো।

এদিকে এই মামলার প্রধান আসামি আবদুল্লাহর জামিন আবেদন করেছেন জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন বলেন, আবদুল্লাহর জামিন আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগামী ৭ সেপ্টেম্বর শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন। গত ৪ জুলাই নিখোঁজ হয় জিসা মনি। পরে অপহরণ মামলা দায়ের করা হলে তিন আসামিকে গ্রেফতার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। আসামিরা গত ৯ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে তারা জানায়, জিসা মনিকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তবে ২৩ আগস্ট ওই স্কুল ছাত্রী জীবিত ফিরে এসে জানায়, সে তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সংসার করছিল। এ ঘটনায় চারদিকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুলিশের তদন্ত ও আদালতে তিন আসামির দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। জবানবন্দির সঙ্গে প্রকৃত ঘটনার সামঞ্জস্য না থাকাতে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তকার্যে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। রিমান্ডে পুলিশি নির্যাতনের মুখে এই মিথ্যা জবানবন্দি নেয়া হয়েছে অভিযোগ করেছেন আসামিপক্ষের স্বজনরা। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত ২৬ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই শামীম আল মামুনকে সদর মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পরিদর্শক (অপারেশন) আবদুল হাইকে। এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র নিয়ে হাইকোর্টে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ওসি ও সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা ‘গণধর্ষণের পর হত্যা’র জবানবন্দি এবং ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর সশরীরে ফিরে আসার ঘটনার ব্যাখ্যা দেন।