ডব্লিউএইচও’র নেতৃত্বে

সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণে যুক্তরাষ্ট্র থাকছে না

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রস্তুত, উৎপাদন ও সমবণ্টনের প্রক্রিয়া উদ্যোগে আন্তর্জাতিকভাবে থাকছে না যুক্তরাষ্ট্র। ডব্লিইএইচওকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এ উদ্যোগে না থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।

ডব্লিউএইচওর পরিকল্পিত এ আন্তর্জাতিক উদ্যোগটির নাম ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’ (কোভ্যাক্স)। গত মাসে ডব্লিউএইচও জানিয়েছিল, তাদের উদ্যোগ কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বিশ্বের ১৭০টি দেশ আলোচনা করছে। উদ্যোগটির সঙ্গে রয়েছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন ও দাতব্য সংস্থা অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট।

গতকাল ২ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায় ‘কোভ্যাক্স’ নামের এই বিশেষ পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থাকছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে হোয়াইট হাউজের মুখপত্র জাড ড্রি এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে টিকা ও থেরাপি গবেষণা, উন্নয়ন ও পরীক্ষা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এতে কার্যকর ও উদ্ভাবনী ওষুধ পাওয়া যাবে। এটি সরকারি কোনও লাল ফিতায় আটকে থাকবে না। ভাইরাসকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পাশে থাকবে তবে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন দ্বারা প্রভাবিত বহুপক্ষীয় সংস্থা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে না।

গত মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়। এ সময় সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেশটি। সংস্থার সর্বোচ্চ অর্থদাতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের অভিযোগ, চীনা প্রভাবে পরিচালিত হয় সংস্থাটি।

এর আগে গত জুলাই মাসে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ টিকা কিনতে অনাগ্রহ দেখায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা এ প্রক্রিয়াকে গতিহীন ও ব্যয়বহুল হিসেবে তুলে ধরে। এর বদলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪০ মার্কিন ডলারেরও কমে প্রতি ডোজ টিকা পেতে সরাসরি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে। কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে টিকা কেনার যে প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছে, এতে সম্পদশালী দেশগুলোকে প্রতি ডোজ টিকার জন্য আগাম ৪০ মার্কিন ডলার দিতে বলা হয়। ইউরোপের কয়েকটি দেশ সবার জন্য টিকা উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। তারা বৈশ্বিক তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগকেও প্রচার করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তহবিল সংগৃহীত হয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশই এসেছে ইউরোপের দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। এ অর্থ কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদন ও সমবণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

তথ্যসূত্র বলছে, করোনার টিকা আগেভাগে পেতে অনেক দেশ আগাম ফরমাশ দিয়ে রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন গত বুধবার টিকা পেতে অনেক বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা পেতে টিকা উৎপাদনকারী ফাইজার ও বায়োএনটেকের সঙ্গে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বাধা আছে। তাদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট করোনা টিকা উৎপাদনের কাজ চলছে এবং সেগুলো উন্নত পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র একাই টিকা পাওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে চায়। তবে করোনার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ওষুধ ও টিকা উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৩ মহররম ১৪৪২, ১৭ ভাদ্র ১৪২৭

ডব্লিউএইচও’র নেতৃত্বে

সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণে যুক্তরাষ্ট্র থাকছে না

image

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রস্তুত, উৎপাদন ও সমবণ্টনের প্রক্রিয়া উদ্যোগে আন্তর্জাতিকভাবে থাকছে না যুক্তরাষ্ট্র। ডব্লিইএইচওকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এ উদ্যোগে না থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।

ডব্লিউএইচওর পরিকল্পিত এ আন্তর্জাতিক উদ্যোগটির নাম ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’ (কোভ্যাক্স)। গত মাসে ডব্লিউএইচও জানিয়েছিল, তাদের উদ্যোগ কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বিশ্বের ১৭০টি দেশ আলোচনা করছে। উদ্যোগটির সঙ্গে রয়েছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন ও দাতব্য সংস্থা অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট।

গতকাল ২ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায় ‘কোভ্যাক্স’ নামের এই বিশেষ পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থাকছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে হোয়াইট হাউজের মুখপত্র জাড ড্রি এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে টিকা ও থেরাপি গবেষণা, উন্নয়ন ও পরীক্ষা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এতে কার্যকর ও উদ্ভাবনী ওষুধ পাওয়া যাবে। এটি সরকারি কোনও লাল ফিতায় আটকে থাকবে না। ভাইরাসকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পাশে থাকবে তবে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন দ্বারা প্রভাবিত বহুপক্ষীয় সংস্থা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে না।

গত মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়। এ সময় সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেশটি। সংস্থার সর্বোচ্চ অর্থদাতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের অভিযোগ, চীনা প্রভাবে পরিচালিত হয় সংস্থাটি।

এর আগে গত জুলাই মাসে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ টিকা কিনতে অনাগ্রহ দেখায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা এ প্রক্রিয়াকে গতিহীন ও ব্যয়বহুল হিসেবে তুলে ধরে। এর বদলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪০ মার্কিন ডলারেরও কমে প্রতি ডোজ টিকা পেতে সরাসরি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে। কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে টিকা কেনার যে প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছে, এতে সম্পদশালী দেশগুলোকে প্রতি ডোজ টিকার জন্য আগাম ৪০ মার্কিন ডলার দিতে বলা হয়। ইউরোপের কয়েকটি দেশ সবার জন্য টিকা উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। তারা বৈশ্বিক তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগকেও প্রচার করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তহবিল সংগৃহীত হয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশই এসেছে ইউরোপের দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। এ অর্থ কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদন ও সমবণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

তথ্যসূত্র বলছে, করোনার টিকা আগেভাগে পেতে অনেক দেশ আগাম ফরমাশ দিয়ে রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন গত বুধবার টিকা পেতে অনেক বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা পেতে টিকা উৎপাদনকারী ফাইজার ও বায়োএনটেকের সঙ্গে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বাধা আছে। তাদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট করোনা টিকা উৎপাদনের কাজ চলছে এবং সেগুলো উন্নত পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র একাই টিকা পাওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে চায়। তবে করোনার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ওষুধ ও টিকা উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।