কুড়িগ্রামে সবজির মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। বাইরে থেকে যোগান আসলেও কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম। ফলে নাভিশ্বাস অবস্থা সাধারণ মানুষের। একদিকে বন্যার তা-বে নষ্ট হয়ে গেছে শাকসবজি। অন্যদিকে করোনার কারণে প্রায়ই কর্মহীন হয়ে পড়েছে কর্মজীবী মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে তিন থেকে চারগুণ মূল্যের পণ্য কিনতে হিমসিম অবস্থা তাদের। চলতি বন্যায় জেলায় ১৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমিন বিনষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে শাকসবজি ৯৫৩ হেক্টর ও মরিচ ২০৫ হেক্টর।
গতকাল বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সজবির বাজার লাগামহীন। কাঁচামরিচ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, পিয়াজ-৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ছোট করলা ১২০ টাকা, বড় করলা ১০০ টাকা, মুলা এবং লাল শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমির শাক ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতিপিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে চালের দামও বেড়েছে প্রকার ভেদে কেজি প্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা। খলিলগঞ্জ বাজারে সবজি কিনতে আসা অটোচালক দেলবর হোসেন জানান, অর্ধেক বেলায় অটো চালায়া কামাই হইছে ১৯৫ টাকা। এককেজি বেগুনের দাম চায় ৭০ টেকা। করলা ১০০ টাকা, মরিচ ৩২০ টাকা। কামাই করি যদি বাজার করবের না পাই। তাহলে অন্য মানুষ বাঁচপে কি করি।
ব্যবসায়ী বাহারুল আলম জানান, এমনিতেই বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ নাই। তার উপর তিনগুণ থেকে চারগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে জিনিষপত্র। এখন এক কেজির জায়গায় আড়াইশ’ গ্রাম সবজি বাড়িতে নিয়ে যেতে হচ্ছে। অপর ক্রেতা হায়দার আলী জানান, বাজারগুলোতে কোন মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ইচ্ছেমতো দাম হাকাচ্ছে খুচড়া বিক্রেতারা। মূল বাজার থেকে বাইরের বাজারগুলোতে একই পন্য দশ থেকে পনের টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে। কুড়িগ্রাম জিয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা নাদের আলী জানান, বন্যায় কুড়িগ্রামের অধিকাংশ সবজির আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জেলার বাইরে থেকে অধিক মূল্যে সবজি আনতে হচ্ছে। ফলে মূল্য বেড়ে গেছে। কাঁঠালবাড়ির সবজি চাষি ফাকের আলী জানান, একবিঘা উঁচু জমিতে লাউ, করলা আবাদ করেছিলাম। বন্যার পানিতে না ডুবলেও বৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এত করলা নষ্ট হয়ে গেছে। লাউয়ের ফলন কিছুটা হলেও আসল মূলধন উঠবে না। বর্তমানে তিনি প্রতিপিস লাউ ক্ষেত থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, কুড়িগ্রামের সবজির আঁধার খ্যাত রাজারহাট উপজেলার ছিনাই, সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ও মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড়সহ অন্যান্য এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর প্রভাব বাজারে পরেছে। এরফলে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে সবজি কিনে খাওয়া এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও রংপুর, বগুড়া ও চাপাই থেকে থেকে সবজির যোগান আসছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর তলিয়ে দেখা উচিৎ মার্কেটে দ্রব্যমূল্যের এমন তারতম্য কেন হচ্ছে। এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুড়িগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান জানান, আমরা অভিযোগ পেলেই বাজারগুলোতে মনিটরিং করি। এছাড়াও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিতভাবে ক্রেতা, বিক্রেতা ও বাজার কমিটির সঙ্গে আলোচনা করি। এ ব্যাপারে আমরা সবার পরামর্শ কাজে লাগাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৩ মহররম ১৪৪২, ১৭ ভাদ্র ১৪২৭
প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে সবজির মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। বাইরে থেকে যোগান আসলেও কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম। ফলে নাভিশ্বাস অবস্থা সাধারণ মানুষের। একদিকে বন্যার তা-বে নষ্ট হয়ে গেছে শাকসবজি। অন্যদিকে করোনার কারণে প্রায়ই কর্মহীন হয়ে পড়েছে কর্মজীবী মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে তিন থেকে চারগুণ মূল্যের পণ্য কিনতে হিমসিম অবস্থা তাদের। চলতি বন্যায় জেলায় ১৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমিন বিনষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে শাকসবজি ৯৫৩ হেক্টর ও মরিচ ২০৫ হেক্টর।
গতকাল বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সজবির বাজার লাগামহীন। কাঁচামরিচ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, পিয়াজ-৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ছোট করলা ১২০ টাকা, বড় করলা ১০০ টাকা, মুলা এবং লাল শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমির শাক ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতিপিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে চালের দামও বেড়েছে প্রকার ভেদে কেজি প্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা। খলিলগঞ্জ বাজারে সবজি কিনতে আসা অটোচালক দেলবর হোসেন জানান, অর্ধেক বেলায় অটো চালায়া কামাই হইছে ১৯৫ টাকা। এককেজি বেগুনের দাম চায় ৭০ টেকা। করলা ১০০ টাকা, মরিচ ৩২০ টাকা। কামাই করি যদি বাজার করবের না পাই। তাহলে অন্য মানুষ বাঁচপে কি করি।
ব্যবসায়ী বাহারুল আলম জানান, এমনিতেই বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ নাই। তার উপর তিনগুণ থেকে চারগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে জিনিষপত্র। এখন এক কেজির জায়গায় আড়াইশ’ গ্রাম সবজি বাড়িতে নিয়ে যেতে হচ্ছে। অপর ক্রেতা হায়দার আলী জানান, বাজারগুলোতে কোন মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ইচ্ছেমতো দাম হাকাচ্ছে খুচড়া বিক্রেতারা। মূল বাজার থেকে বাইরের বাজারগুলোতে একই পন্য দশ থেকে পনের টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে। কুড়িগ্রাম জিয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা নাদের আলী জানান, বন্যায় কুড়িগ্রামের অধিকাংশ সবজির আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জেলার বাইরে থেকে অধিক মূল্যে সবজি আনতে হচ্ছে। ফলে মূল্য বেড়ে গেছে। কাঁঠালবাড়ির সবজি চাষি ফাকের আলী জানান, একবিঘা উঁচু জমিতে লাউ, করলা আবাদ করেছিলাম। বন্যার পানিতে না ডুবলেও বৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এত করলা নষ্ট হয়ে গেছে। লাউয়ের ফলন কিছুটা হলেও আসল মূলধন উঠবে না। বর্তমানে তিনি প্রতিপিস লাউ ক্ষেত থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, কুড়িগ্রামের সবজির আঁধার খ্যাত রাজারহাট উপজেলার ছিনাই, সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ও মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড়সহ অন্যান্য এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর প্রভাব বাজারে পরেছে। এরফলে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে সবজি কিনে খাওয়া এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও রংপুর, বগুড়া ও চাপাই থেকে থেকে সবজির যোগান আসছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর তলিয়ে দেখা উচিৎ মার্কেটে দ্রব্যমূল্যের এমন তারতম্য কেন হচ্ছে। এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুড়িগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান জানান, আমরা অভিযোগ পেলেই বাজারগুলোতে মনিটরিং করি। এছাড়াও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিতভাবে ক্রেতা, বিক্রেতা ও বাজার কমিটির সঙ্গে আলোচনা করি। এ ব্যাপারে আমরা সবার পরামর্শ কাজে লাগাচ্ছি।