চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার রোসাংগিরী’র ঐতিহ্যবাহী বাড়ি ‘সোবহান মোল্লার বাড়ি’র সন্তান বাংলাদেশের অন্যতম গজল শিল্পী ইউনেস্কো অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ওস্তাদ জামাল হাসান। শুদ্ধ উচ্চারণে এবং অসাধারণ গায়কীর জন্য গজলে বাংলাদেশে জামাল হাসানের অবস্থান শীর্ষে। তার বাবা ছিলেন মো: নূরুল ইসলাম এবং মা ছিলেন মাসুদা খাতুন। সোবহান মোল্লা ছিলেন মূলত ওস্তাদ জামাল হোসেনের পূর্ব পুরুষ। পুরো চট্টগ্রাম এলাকায় সোবহান মোল্লার বাড়ি’র এক আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। এই বাড়িরই কন্যা চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। অর্থাৎ ওস্তাদ জামাল হাসানের বড় ভাই ডা. হানিফ ছিলেন পূর্ণিমার বাবা। কিন্তু তিনি অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিলো জামাল হাসানের প্রবল আকর্ষণ। ছোটবেলায় সেতার ও ব্যাঞ্জ বাজাতে ভীষণ ভালোবাসতেন। কিন্তু পাকিস্তানের ওস্তাদ জিয়া উদ্দিন যন্ত্র বাজানোর প্রতি তার এই আকর্ষণ দেখে পাকিস্তানের করাচী বাংলা স্কুলে পড়ার সময় উপমহাদেশের গজল স¤্রাট মেহেদী হাসানের কাছে গানে তালিম নেবার সুযোগ করে দেন। মেহেদী হাসানের কাছে এক বছর তালিম নেবার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ফটিকছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন জামাল হোসেন। দেশ স্বাধীনের পর জামাল হাসান ওস্তাদ বাড়ে গুলাম আলী খানের শীষ্য ব্রিটিশ উপাধী গ্রেট মাস্টার’খ্যাত গোলাম হোসেন আশরাফী’র কাছে কলকাতায় চারবছর তালিম নেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে। এভাবেই ধীরে ধীরে জামাল হাসান নিজেকে একজন সঙ্গীতশিল্পী বিশেষত গজল ঘরানার শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলেন। নিজেকে গজল শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলা প্রসঙ্গে জামাল হাসান বলেন,‘ গানেরই নানান রকম হচ্ছে ফোক গান, আধুনিক গান, ঠুমরী, দাদরা, খায়াল, গজল। আমার কাছে ছোটবেলা থেকেই গজলটাই বেশি ভালোলাগে। যে কারণে নিজেকে গজল শিল্পী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। এই দেশে বহুবছর পরে হলেও গজল শোনার জন্য অনেক শ্রোতা দর্শক তৈরি হয়েছে। এটা খুব পজিটিভ একটি দিক। আবার আমি নিয়মিত অনেক আগ্রহী শিল্পীদের গজল শিক্ষা দিয়ে থাকি। অনেক তরুন তরুণীদের মধ্যে গজল শেখার আগ্রহ অনেকাংশে বেড়েছে। এটা খুব ভালো লাগার বিষয়। শীত মৌসুম এলে কিন্তু দেশের বাইরেই সময় কাটে আমার গজল সন্ধ্যায়।’ বাদশাহ আকবরের নবরতœ সভা থেকে মূলত গজলের উৎপত্তি। ভারতের শেষ স¤্রাট বাহাদুর শাহ জাফর, মির্জা গালিবের লেখা গজল’সহ বিভিন্ন ধরনের গজল পরিবেশন করে সবসময়ই শ্রোতা দর্শককে মুগ্ধ করে আসছেন জামাল হাসান। নিজের লেখা গজল নিজেই সুর করেও গেয়ে থাকেন তিনি। জামাল হাসান নব্বই দশকের শুরুতে ইউনেস্কো অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। বাজারে জামাল হাসানের একমাত্র প্রকাশিত গজলের অ্যালবাম হচ্ছে ‘নাজরে জাম’। কিছুদিনের মধ্যে তার নতুন কিছু গজলও প্রকাশিত হবে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৪ মহররম ১৪৪২, ১৮ ভাদ্র ১৪২৭
বিনোদন প্রতিবেদক |
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার রোসাংগিরী’র ঐতিহ্যবাহী বাড়ি ‘সোবহান মোল্লার বাড়ি’র সন্তান বাংলাদেশের অন্যতম গজল শিল্পী ইউনেস্কো অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ওস্তাদ জামাল হাসান। শুদ্ধ উচ্চারণে এবং অসাধারণ গায়কীর জন্য গজলে বাংলাদেশে জামাল হাসানের অবস্থান শীর্ষে। তার বাবা ছিলেন মো: নূরুল ইসলাম এবং মা ছিলেন মাসুদা খাতুন। সোবহান মোল্লা ছিলেন মূলত ওস্তাদ জামাল হোসেনের পূর্ব পুরুষ। পুরো চট্টগ্রাম এলাকায় সোবহান মোল্লার বাড়ি’র এক আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। এই বাড়িরই কন্যা চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। অর্থাৎ ওস্তাদ জামাল হাসানের বড় ভাই ডা. হানিফ ছিলেন পূর্ণিমার বাবা। কিন্তু তিনি অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিলো জামাল হাসানের প্রবল আকর্ষণ। ছোটবেলায় সেতার ও ব্যাঞ্জ বাজাতে ভীষণ ভালোবাসতেন। কিন্তু পাকিস্তানের ওস্তাদ জিয়া উদ্দিন যন্ত্র বাজানোর প্রতি তার এই আকর্ষণ দেখে পাকিস্তানের করাচী বাংলা স্কুলে পড়ার সময় উপমহাদেশের গজল স¤্রাট মেহেদী হাসানের কাছে গানে তালিম নেবার সুযোগ করে দেন। মেহেদী হাসানের কাছে এক বছর তালিম নেবার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ফটিকছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন জামাল হোসেন। দেশ স্বাধীনের পর জামাল হাসান ওস্তাদ বাড়ে গুলাম আলী খানের শীষ্য ব্রিটিশ উপাধী গ্রেট মাস্টার’খ্যাত গোলাম হোসেন আশরাফী’র কাছে কলকাতায় চারবছর তালিম নেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে। এভাবেই ধীরে ধীরে জামাল হাসান নিজেকে একজন সঙ্গীতশিল্পী বিশেষত গজল ঘরানার শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলেন। নিজেকে গজল শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলা প্রসঙ্গে জামাল হাসান বলেন,‘ গানেরই নানান রকম হচ্ছে ফোক গান, আধুনিক গান, ঠুমরী, দাদরা, খায়াল, গজল। আমার কাছে ছোটবেলা থেকেই গজলটাই বেশি ভালোলাগে। যে কারণে নিজেকে গজল শিল্পী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। এই দেশে বহুবছর পরে হলেও গজল শোনার জন্য অনেক শ্রোতা দর্শক তৈরি হয়েছে। এটা খুব পজিটিভ একটি দিক। আবার আমি নিয়মিত অনেক আগ্রহী শিল্পীদের গজল শিক্ষা দিয়ে থাকি। অনেক তরুন তরুণীদের মধ্যে গজল শেখার আগ্রহ অনেকাংশে বেড়েছে। এটা খুব ভালো লাগার বিষয়। শীত মৌসুম এলে কিন্তু দেশের বাইরেই সময় কাটে আমার গজল সন্ধ্যায়।’ বাদশাহ আকবরের নবরতœ সভা থেকে মূলত গজলের উৎপত্তি। ভারতের শেষ স¤্রাট বাহাদুর শাহ জাফর, মির্জা গালিবের লেখা গজল’সহ বিভিন্ন ধরনের গজল পরিবেশন করে সবসময়ই শ্রোতা দর্শককে মুগ্ধ করে আসছেন জামাল হাসান। নিজের লেখা গজল নিজেই সুর করেও গেয়ে থাকেন তিনি। জামাল হাসান নব্বই দশকের শুরুতে ইউনেস্কো অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। বাজারে জামাল হাসানের একমাত্র প্রকাশিত গজলের অ্যালবাম হচ্ছে ‘নাজরে জাম’। কিছুদিনের মধ্যে তার নতুন কিছু গজলও প্রকাশিত হবে বলে জানান তিনি।