আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রক্ষক থেকে ভক্ষকে রূপান্তরিত টিআইবি

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো রক্ষক থেকে এখন ভক্ষকে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, এমন কোন অপরাধ পাওয়া যাবে না, যার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। পুরান ঢাকার অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত তারা টাকা নেয়। দুইভাবে তারা ঘুষ নিয়ে থাকে। প্রথম মাসিক ভিত্তিতে এবং দ্বিতীয়ত সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যখনই কোন দুর্যোগ হয় তখনই তারা সেটার সুযোগ নেয়। তল্লাশির নাম করে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। কেমিক্যালের গাড়ি থেকে টাকা নেয়। গতকাল দুপুরে নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং পুরনো ঢাকার অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিজেরাই যদি চায় তাহলে তারা নিজেরাই এই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু তারা করবে না। কারণ এই যে কালেকশন এটির ভাগ সবাই পায়। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসবের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একা তো দুর্নীতি মোকাবিলা করতে পারবেন না, যদি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সহযোগিতা না করে। তাই আমরা বলছি এসব প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজাতে হবে।

এর আগে টিআইবি নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং অতঃপর : পুরনো ঢাকার অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরান ঢাকায় অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসার নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক নেতা নিজেরা কেমিক্যাল ব্যবসা করেন না। কিন্তু তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসিডসহ বিভিন্ন কেমিক্যালের লাইসেন্স নেন। পরবর্তীতে সেই লাইসেন্স ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন।

গবেষণায় আরও বলা হয়, পুরান ঢাকায় কোন ভবনে কত কেমিক্যাল গোডাউন আছে, কী কী কেমিক্যাল, পরিমাণ কত এসব কোনটিরই কোন পরিসংখ্যান বা ডাটা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কাছে নেই। কেমিক্যাল ব্যবসার লাইসেন্স পেতে পরিবেশ অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরকে ঘুষ দিতে হয়। কেমিক্যাল ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো পুলিশকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিয়ে থাকে।

২০১৮ সালেই সরকারি হিসাব অনুযায়ী পুরান ঢাকার ছোটবড় ৪৬৮টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ের পর তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তাও মানা হয়নি। অগ্নিকা-ের ঘটনায় মামলা হলেও অভিযুক্তরা সাজা পায় না বলেও গবেষণায় জানানো হয়। নিমতলী অগ্নিকা-ের ঘটনার পর উচ্চ আদালত পুরান ঢাকা থেকে কেন কেমিক্যাল গুদাম সরানো হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়, রাষ্ট্র দীর্ঘ ১০ বছরেও এর জবাব দেয়নি। আদালত অবমাননার এই চরম ধৃষ্টতা রাষ্ট্র দেখিয়েছে। এছাড়া পরিবেশ অধিদফতর কোন ঘটনায় মামলা করলে আসামিদের বিষয়ে পুলিশের কাছে তথ্য চাইলে পুলিশ ঘুষের বিনিময়ে আসামিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানায়। এরপর বাধ্য হয়ে পরিবেশ অধিদফতর আসামি বা অভিযুক্তদের নাম বাদ দিতে বাধ্য হয়।

পুরান ঢাকায় দুর্নীতির কারণে মানুষের প্রাণহানি

পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল ব্যবসায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও সুশাসনের ঘাটতির কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিটি সংস্থা বছর জুড়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। পুরান ঢাকায় দুর্নীতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ব্যবসায়ীদের প্রভাবের কারণে কেমিক্যাল গুদাম সরছে না। দুর্নীতিই মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৪ মহররম ১৪৪২, ১৮ ভাদ্র ১৪২৭

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রক্ষক থেকে ভক্ষকে রূপান্তরিত টিআইবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো রক্ষক থেকে এখন ভক্ষকে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, এমন কোন অপরাধ পাওয়া যাবে না, যার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। পুরান ঢাকার অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত তারা টাকা নেয়। দুইভাবে তারা ঘুষ নিয়ে থাকে। প্রথম মাসিক ভিত্তিতে এবং দ্বিতীয়ত সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যখনই কোন দুর্যোগ হয় তখনই তারা সেটার সুযোগ নেয়। তল্লাশির নাম করে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। কেমিক্যালের গাড়ি থেকে টাকা নেয়। গতকাল দুপুরে নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং পুরনো ঢাকার অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিজেরাই যদি চায় তাহলে তারা নিজেরাই এই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু তারা করবে না। কারণ এই যে কালেকশন এটির ভাগ সবাই পায়। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসবের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একা তো দুর্নীতি মোকাবিলা করতে পারবেন না, যদি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সহযোগিতা না করে। তাই আমরা বলছি এসব প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজাতে হবে।

এর আগে টিআইবি নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং অতঃপর : পুরনো ঢাকার অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরান ঢাকায় অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসার নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক নেতা নিজেরা কেমিক্যাল ব্যবসা করেন না। কিন্তু তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসিডসহ বিভিন্ন কেমিক্যালের লাইসেন্স নেন। পরবর্তীতে সেই লাইসেন্স ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন।

গবেষণায় আরও বলা হয়, পুরান ঢাকায় কোন ভবনে কত কেমিক্যাল গোডাউন আছে, কী কী কেমিক্যাল, পরিমাণ কত এসব কোনটিরই কোন পরিসংখ্যান বা ডাটা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কাছে নেই। কেমিক্যাল ব্যবসার লাইসেন্স পেতে পরিবেশ অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরকে ঘুষ দিতে হয়। কেমিক্যাল ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো পুলিশকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিয়ে থাকে।

২০১৮ সালেই সরকারি হিসাব অনুযায়ী পুরান ঢাকার ছোটবড় ৪৬৮টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ের পর তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তাও মানা হয়নি। অগ্নিকা-ের ঘটনায় মামলা হলেও অভিযুক্তরা সাজা পায় না বলেও গবেষণায় জানানো হয়। নিমতলী অগ্নিকা-ের ঘটনার পর উচ্চ আদালত পুরান ঢাকা থেকে কেন কেমিক্যাল গুদাম সরানো হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়, রাষ্ট্র দীর্ঘ ১০ বছরেও এর জবাব দেয়নি। আদালত অবমাননার এই চরম ধৃষ্টতা রাষ্ট্র দেখিয়েছে। এছাড়া পরিবেশ অধিদফতর কোন ঘটনায় মামলা করলে আসামিদের বিষয়ে পুলিশের কাছে তথ্য চাইলে পুলিশ ঘুষের বিনিময়ে আসামিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানায়। এরপর বাধ্য হয়ে পরিবেশ অধিদফতর আসামি বা অভিযুক্তদের নাম বাদ দিতে বাধ্য হয়।

পুরান ঢাকায় দুর্নীতির কারণে মানুষের প্রাণহানি

পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল ব্যবসায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও সুশাসনের ঘাটতির কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিটি সংস্থা বছর জুড়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। পুরান ঢাকায় দুর্নীতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ব্যবসায়ীদের প্রভাবের কারণে কেমিক্যাল গুদাম সরছে না। দুর্নীতিই মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।