বাংলাদেশি দুই দালালের বিরুদ্ধে মামলা

ভিয়েতনামে বেশি বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের হোতা ভিয়েতনাম প্রবাসী মোস্তফার ভাই মাসুদ রানাসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পাচারের পর দেশে ফেরত আসা আলমগীর হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের হওয়া এ মামলায় মানব পাচারে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতাকারী মাসুদ রানার আরেক সহযোগী এপি এমআরটি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি মতিয়ার রহমান (৫০)। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এদিকে মামলার পর এইদুই আসামিকে গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে সিআইডি’র সংশ্লিষ্ট ইউনিট।

সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি মিডিয়া) জিসানুল হক জানান, ভিয়েতনামে শত শত মানুষ পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি দালাল মাসুদ রানার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পল্টন থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করেন ভিয়েতনামে পাচার হওয়ার পর দেশে ফিরে আসা শরীয়তপুরের আলমগীর হাসান। মামলা তদন্ত করবে সিআইডি’র সংশ্লিষ্ট ইউনিট।

মানবপাচারের শিকার আলমগীর হাসান মামলায় অভিযোগ করেন, আসামি মাসুদ রানা ও মতিয়ার রহমনের সঙ্গে আমার আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে তিনি (আলমগীর) বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে বিবাদী মাসুদ রানা তাকে বলেন আমার কছে বিদেশে লোক পাঠানোর ভালো লোক আছে। এসব কথা বলে ভিয়েতনামে বৈধভাবে ইলেক্ট্রনিক্স কাজ দেয়ার প্রস্তাব দেয় এবং এ জন্য ৪ লাখ টাকা চায়। প্রস্তাবে রাজি হয়ে মাসুদ রানা ও মতিয়ার রহমানকে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা দেই। কিছুদিন পরে মাসুদ তাকে ফোন করে ভিসা আসার কথা জানিয়ে বাকি টাকা নিয়ে ঢাকায় আসতে বলে।

আমার সঙ্গে রাসেল নামে আরেকজন ছিল। দুইজনে ঢাকায় এসে আড়াই লাখ টাকা করে মাসুদ রানাকে মোট ৫ লাখ টাকা দেই। টাকা দেয়ার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়ার জন্য তাদের জনশক্তি কর্মসংস্থান অফিসে নিয়ে যায় দালালরা। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে মাসুদ রানা তাদের ফোন করে জানায়, ভিয়েতনাম যাওয়ার ফ্লাইট ৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি তারা ঢাকায় মাসুদ রানার অফিসে আসেন। দুইজনে একলাখ করে আবারও মোট দুই লাখ টাকা দেন। ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কলকাতা হয়ে ভিয়েতনামের উদ্দেশে রওনা করেন তারা। ভিযয়েতনামে বিমানবন্দরে পৌঁছার পর জব্বার নামে এক লোক তাদের দুইজনকে রিসিভ করে। জব্বার ভিয়েতনামে দালাল মোস্তফার হয়ে কাজ করে। আলমগীর হাসান ভিয়েতনাম পৌঁছার পর জানতে পারেন যে, ৯০ দিন মেয়াদের ভিসায় তাদের ভিয়েতনামে পাঠানো হয়েছে। ইলেকট্রিকাল কাজ দেয়ার কথা থাকলেও তাদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করায় পাচারকারীরা। এমনকি কাজ করালেও তাদের কোন বেতন দেয়া হয়নি। বেতন ও ভিসার আকামা করে দিতে বললে পাচারকারীরা তাদের গালিগালাজ ও মারধর করত। বিষয়টি ভিয়েতনামের বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানালে বিশেষ ফ্লাইটে গত ১৮ আগস্ট তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফিরে এসে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ করে আলমগীর হাসান এখন শরীয়তপুরে তার গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন।

সিআইডি সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে আলমগীর হাসানের মতো এরকম প্রায় ১২০০ যুবককে ভিয়েতনামে পাচার করেছে মোস্তফা। মোস্তফা ভিয়েতনামে বিয়ে সাদি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। সে তার ভিয়েতনামী শ্বশুর ও শ্যালকদের নিয়ে সে দেশে মানব পাচারের একটি চক্র তৈরি করেছে। আর বাংলাদেশে মোস্তফার পাচার কাজের প্রধান হোতা হলো তার ভাই মাসুদ রানা। ভিয়েতনামে যাওয়ার পর এসব মানুষ বুঝতে পারেন যে, তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরবর্তীতে দূতাবাসে গিয়ে তারা অভিযোগ করেন। অনেকে দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভও করেছেন।

সরকার অন্তত ১২০ জনকে গত ১৮ আগস্ট বিশেষ ফ্লাইটে করে দেশে ফিরিয়ে আনে। তাদের সবাইকে এর পর উত্তরার দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। গত মঙ্গলবার এদের মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে আসা ৮১ জন ও কাতার ফেরত ২ জন মোট ৮৩ জনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তার আগে এ বিষয়ে তুরাগ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে।

আরও খবর
পদ্মা সেতুর ২৫নং পিলারের কাছে শুরু হয়নি ড্রেজিং
ফেরি চলাচল ব্যাহত পারের অপেক্ষায় শত শত গাড়ি, চরম দুর্ভোগ
সোমবার থেকে বিমান চলাচল শুরু
সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ : ফখরুল
সরবরাহ পর্যাপ্ত তবু কমছে না সবজির দাম
মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা আশিকুর এবার এক ধর্ষিতা মায়ের পাশে
অবৈধ বিলবোর্ড ও বিজ্ঞাপন প্রচারকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মেয়র আতিক
বরিশাল-ঢাকা নৌপথে সংক্ষিপ্ত মিয়ারচর চ্যানেল অকেজো হয়ে আছে
ঢাকা থেকে অপহৃত এক ব্যক্তি হবিগঞ্জে উদ্ধার
ভূমিখেকোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রক্তাক্ত হলো তরুণ
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবক খুন
সাংবাদিকসহ গ্রেফতার ৩
৯০ কোটি টাকার মালামাল জব্দ

শনিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৫ মহররম ১৪৪২, ১৯ ভাদ্র ১৪২৭

ভিয়েতনামে চাকরির লোভ দেখিয়ে পাচার

বাংলাদেশি দুই দালালের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ভিয়েতনামে বেশি বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের হোতা ভিয়েতনাম প্রবাসী মোস্তফার ভাই মাসুদ রানাসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পাচারের পর দেশে ফেরত আসা আলমগীর হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের হওয়া এ মামলায় মানব পাচারে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতাকারী মাসুদ রানার আরেক সহযোগী এপি এমআরটি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি মতিয়ার রহমান (৫০)। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এদিকে মামলার পর এইদুই আসামিকে গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে সিআইডি’র সংশ্লিষ্ট ইউনিট।

সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি মিডিয়া) জিসানুল হক জানান, ভিয়েতনামে শত শত মানুষ পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি দালাল মাসুদ রানার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পল্টন থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করেন ভিয়েতনামে পাচার হওয়ার পর দেশে ফিরে আসা শরীয়তপুরের আলমগীর হাসান। মামলা তদন্ত করবে সিআইডি’র সংশ্লিষ্ট ইউনিট।

মানবপাচারের শিকার আলমগীর হাসান মামলায় অভিযোগ করেন, আসামি মাসুদ রানা ও মতিয়ার রহমনের সঙ্গে আমার আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে তিনি (আলমগীর) বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে বিবাদী মাসুদ রানা তাকে বলেন আমার কছে বিদেশে লোক পাঠানোর ভালো লোক আছে। এসব কথা বলে ভিয়েতনামে বৈধভাবে ইলেক্ট্রনিক্স কাজ দেয়ার প্রস্তাব দেয় এবং এ জন্য ৪ লাখ টাকা চায়। প্রস্তাবে রাজি হয়ে মাসুদ রানা ও মতিয়ার রহমানকে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা দেই। কিছুদিন পরে মাসুদ তাকে ফোন করে ভিসা আসার কথা জানিয়ে বাকি টাকা নিয়ে ঢাকায় আসতে বলে।

আমার সঙ্গে রাসেল নামে আরেকজন ছিল। দুইজনে ঢাকায় এসে আড়াই লাখ টাকা করে মাসুদ রানাকে মোট ৫ লাখ টাকা দেই। টাকা দেয়ার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়ার জন্য তাদের জনশক্তি কর্মসংস্থান অফিসে নিয়ে যায় দালালরা। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে মাসুদ রানা তাদের ফোন করে জানায়, ভিয়েতনাম যাওয়ার ফ্লাইট ৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি তারা ঢাকায় মাসুদ রানার অফিসে আসেন। দুইজনে একলাখ করে আবারও মোট দুই লাখ টাকা দেন। ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কলকাতা হয়ে ভিয়েতনামের উদ্দেশে রওনা করেন তারা। ভিযয়েতনামে বিমানবন্দরে পৌঁছার পর জব্বার নামে এক লোক তাদের দুইজনকে রিসিভ করে। জব্বার ভিয়েতনামে দালাল মোস্তফার হয়ে কাজ করে। আলমগীর হাসান ভিয়েতনাম পৌঁছার পর জানতে পারেন যে, ৯০ দিন মেয়াদের ভিসায় তাদের ভিয়েতনামে পাঠানো হয়েছে। ইলেকট্রিকাল কাজ দেয়ার কথা থাকলেও তাদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করায় পাচারকারীরা। এমনকি কাজ করালেও তাদের কোন বেতন দেয়া হয়নি। বেতন ও ভিসার আকামা করে দিতে বললে পাচারকারীরা তাদের গালিগালাজ ও মারধর করত। বিষয়টি ভিয়েতনামের বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানালে বিশেষ ফ্লাইটে গত ১৮ আগস্ট তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফিরে এসে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ করে আলমগীর হাসান এখন শরীয়তপুরে তার গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন।

সিআইডি সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে আলমগীর হাসানের মতো এরকম প্রায় ১২০০ যুবককে ভিয়েতনামে পাচার করেছে মোস্তফা। মোস্তফা ভিয়েতনামে বিয়ে সাদি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। সে তার ভিয়েতনামী শ্বশুর ও শ্যালকদের নিয়ে সে দেশে মানব পাচারের একটি চক্র তৈরি করেছে। আর বাংলাদেশে মোস্তফার পাচার কাজের প্রধান হোতা হলো তার ভাই মাসুদ রানা। ভিয়েতনামে যাওয়ার পর এসব মানুষ বুঝতে পারেন যে, তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরবর্তীতে দূতাবাসে গিয়ে তারা অভিযোগ করেন। অনেকে দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভও করেছেন।

সরকার অন্তত ১২০ জনকে গত ১৮ আগস্ট বিশেষ ফ্লাইটে করে দেশে ফিরিয়ে আনে। তাদের সবাইকে এর পর উত্তরার দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। গত মঙ্গলবার এদের মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে আসা ৮১ জন ও কাতার ফেরত ২ জন মোট ৮৩ জনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তার আগে এ বিষয়ে তুরাগ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে।