নদীপথে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক দ্বার উন্মোচন

কুমিল্লা হয়ে ভারত গেল প্রথম জাহাজ

কুমিল্লা বিবিরবাজার সীমান্ত এলাকায় গোমতী নদী দিয়ে এই প্রথমবারের মতো কুমিল্লা-ভারতের সোনামুড়া নৌপথে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল গোমতী নদীপথে ১০ টন সিমেন্ট নিয়ে একটি বার্জ ভারতের সোনামুড়া যায়। দুপুরে কুমিল্লা বিবির বাজার স্থলবন্দর এলাকায় এ পথের উদ্বোধন করে নৌযানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এদিকে গোমতী নদীতে ন্যাব্যতা সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ের ৪ ঘণ্টা বিলম্বে সিমেন্টের প্রথম চালানটি ভারতের সোনামুড়ায় যায়। তবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানান, গোমতী নদীর ১২-১৪টি পয়েন্টে ন্যাব্যতার সংকট দূরীকরণসহ নদীপথে সব প্রতিবন্ধকতা নিরসন করে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে এ পথটি সক্ষম নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।

জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দী, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও আদর্শ সদর উপজেলার দিয়ে বয়ে গেছে গোমতী নদীর ৯২ কিলোমিটার নৌপথ। এরমধ্যে প্রায় ৮৯.৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে এবং অপর অংশ ভারতের ত্রিপুরা এলাকায়। এদিকে এ গোমতী নদী দিয়ে শনিবার দাউদকান্দি হতে নৌপথে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ টন সিমেন্ট বোঝাই চালান পাঠানো হয় ভারতের ত্রিপুরায়। বেলা ১১টার দিকে উদ্বোধনের কথা থাকলেও ন্যাব্যতা সংকটের কারণে আটকে যাওয়ায় প্রায় ৪ ঘণ্টা পর বিকেল ৩টার দিকে সিমেন্টের প্রথম চালানটি সোনামুড়া পৌঁছায়। এদিকে বাংলাদেশ থেকে নদীপথে রপ্তানি হওয়া মালামালের চালান গ্রহণের জন্য সোনামুড়ায় একটি ভাসমান জেটি নির্মাণ করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের সোনামুড়া এলাকায় উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এ সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক, শিল্প সচিব কিরণ গীত্তা, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই-কমিশনার ক্রিটি চাকমা প্রমুখ। এদিকে বাংলাদেশ অংশে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বিবিরবাজার স্থলবন্দর এলাকায় বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। এ সময় বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-এ সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন, আদর্শ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম ফয়সাল ও বিবিরবাজার সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল প্রমুখ। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি বিবিরবাজার স্থলবন্দরে পৌঁছান। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গত মে মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত নদীপথে বাণিজ্যের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরমধ্যে একটি ভারতের ধুলিয়ানের সঙ্গে রাজশাহী এবং অপরটি হচ্ছে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ভারতের সোনামুড়া। আজ প্রথমবারের মতো ট্রায়াল রানে সিমেন্ট রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ভারতে। এটা খুবই ঐতিহাসিক ডেভেলপমেন্ট (উন্নয়ন) আমাদের জন্য। কারণ ট্রাকে করে বেশিরভাগ পণ্য সীমান্ত অতিক্রম করে। আর পানি দিয়ে অতিক্রম করলে কোভিডের মধ্যে কম লোকের সংস্পর্শ হবে। এটা পরিবেশের জন্যও ভালো এবং সাশ্রয়ী। করোনার মহামারীর সময়েও আমাদের দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রজেক্ট খুব ভালোভাবে চলছে। এটা একেবারেই সত্যি, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। তিনি বলেন, এ ট্রায়াল রানের মাধ্যমে নদীপথে বিভিন্ন অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তীতে নিয়মিত কার্যক্রম চালু হবে।’ এদিকে দুপুরে বাংলাদেশ অংশে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন শেষে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবকিছু ছাপিয়ে এ রুটে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটা একটা বিশাল সাফল্য। এই ট্রায়াল রানের মাধ্যমে আমাদের কোথায় কোথায় নাব্যতা সংকট আছে তা চিহ্নিত করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে গোমতী নদী ড্রেজিংয়ের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ রুটের বিষয়ে ত্রিপুরা তথা ভারত সরকার খুব বেশি আগ্রহী। এর মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য সহায়ক হবে। তিনি বলেন, গোমতী নদীর ১২-১৪টি পয়েন্টে ন্যাব্যতা সংকট রয়েছে। বড় জাহাজ আনতে চাইলে নদীর গভীরতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া বেশকিছু কম উচ্চতা সম্পন্ন ব্রিজ রয়েছে, এ নিয়ে কাজ করতে হবে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে এটি সক্ষম নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠবে।’ এদিকে নৌপথে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় খুশি সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবসায়ীরা। প্রিমিয়ার সিমেন্টের রপ্তানি ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন জানান, ‘নাব্যতা সংকট থাকায় প্রথম দিনে আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি। তাই ৫০ টন প্রেরণের কথা থাকলেও আমরা ১০ টন রপ্তানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছি। তিনি বলেন, ত্রিপুরার দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন ছিল নৌপথে দুই বাংলার একটি কানেকটিভিটি হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। এ কার্যক্রম চালু থাকলে অল্প খরচে ত্রিপুরাবাসী বাংলাদেশের পণ্য পাবেন।’ বিবিরবাজার স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল জানান, ‘রপ্তানি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। এতে করে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরালো হবে এবং সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী হবে।’ এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মা. ওমর ফারুক বলেন, ‘এই নৌপথ চালু হওয়ার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আরও একটি বাণিজ্যিক দুয়ার উন্মোচিত হলো। এতে দুই দেশের বন্ধুপ্রতীম সম্পর্ক আরও জোড়ালো হবে বলে মনে করি।’ কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল হাকিম জানান, এ স্থলবন্দর দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯২ কোটি ৪৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা। নৌপথে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে রাজস্ব আয় আরও বেড়ে যাবে।’

image

নৌপথে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্য গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এ সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের সংসদ সদস্য প্রতিমা ভৌমিক, শিল্প সচিব বিকরণ গীত্তা, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ক্রিটি চাকমা প্রমুখ - সংবাদ

আরও খবর
সংসদের ৯ম অধিবেশন আজ শুরু
বাবা ওমর শেখের কোমরের নিচ থেকে সম্পূর্ণ প্যারালাইজড
স্কুল শিক্ষিকা ধর্ষণের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রনির বিরুদ্ধে মামলা
রোহিঙ্গা শিবিরের প্রতিনিধি দল ভাসানচর গেছেন
অনাকাক্সিক্ষতভাবে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়
চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি
সুশাসনের অভাবেই সর্বত্র বিশৃঙ্খলা ফখরুল
জেলে বসেই হুমকি সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্ত্রী
হ্যালো অ্যাম্বুলেন্স
বিউটি পার্লার মালিক কান্তাকে কুয়াকাটায় খুন করে সাগরে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়
সিনহা হত্যায় পুলিশের ৪ সদস্য ২য় দফা রিমান্ডে

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

নদীপথে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক দ্বার উন্মোচন

কুমিল্লা হয়ে ভারত গেল প্রথম জাহাজ

জাহিদুর রহমান, কুমিল্লা

image

নৌপথে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্য গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এ সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের সংসদ সদস্য প্রতিমা ভৌমিক, শিল্প সচিব বিকরণ গীত্তা, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ক্রিটি চাকমা প্রমুখ - সংবাদ

কুমিল্লা বিবিরবাজার সীমান্ত এলাকায় গোমতী নদী দিয়ে এই প্রথমবারের মতো কুমিল্লা-ভারতের সোনামুড়া নৌপথে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল গোমতী নদীপথে ১০ টন সিমেন্ট নিয়ে একটি বার্জ ভারতের সোনামুড়া যায়। দুপুরে কুমিল্লা বিবির বাজার স্থলবন্দর এলাকায় এ পথের উদ্বোধন করে নৌযানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এদিকে গোমতী নদীতে ন্যাব্যতা সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ের ৪ ঘণ্টা বিলম্বে সিমেন্টের প্রথম চালানটি ভারতের সোনামুড়ায় যায়। তবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানান, গোমতী নদীর ১২-১৪টি পয়েন্টে ন্যাব্যতার সংকট দূরীকরণসহ নদীপথে সব প্রতিবন্ধকতা নিরসন করে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে এ পথটি সক্ষম নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।

জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দী, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও আদর্শ সদর উপজেলার দিয়ে বয়ে গেছে গোমতী নদীর ৯২ কিলোমিটার নৌপথ। এরমধ্যে প্রায় ৮৯.৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে এবং অপর অংশ ভারতের ত্রিপুরা এলাকায়। এদিকে এ গোমতী নদী দিয়ে শনিবার দাউদকান্দি হতে নৌপথে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ টন সিমেন্ট বোঝাই চালান পাঠানো হয় ভারতের ত্রিপুরায়। বেলা ১১টার দিকে উদ্বোধনের কথা থাকলেও ন্যাব্যতা সংকটের কারণে আটকে যাওয়ায় প্রায় ৪ ঘণ্টা পর বিকেল ৩টার দিকে সিমেন্টের প্রথম চালানটি সোনামুড়া পৌঁছায়। এদিকে বাংলাদেশ থেকে নদীপথে রপ্তানি হওয়া মালামালের চালান গ্রহণের জন্য সোনামুড়ায় একটি ভাসমান জেটি নির্মাণ করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের সোনামুড়া এলাকায় উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এ সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক, শিল্প সচিব কিরণ গীত্তা, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই-কমিশনার ক্রিটি চাকমা প্রমুখ। এদিকে বাংলাদেশ অংশে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বিবিরবাজার স্থলবন্দর এলাকায় বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। এ সময় বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-এ সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন, আদর্শ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম ফয়সাল ও বিবিরবাজার সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল প্রমুখ। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি বিবিরবাজার স্থলবন্দরে পৌঁছান। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গত মে মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত নদীপথে বাণিজ্যের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরমধ্যে একটি ভারতের ধুলিয়ানের সঙ্গে রাজশাহী এবং অপরটি হচ্ছে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ভারতের সোনামুড়া। আজ প্রথমবারের মতো ট্রায়াল রানে সিমেন্ট রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ভারতে। এটা খুবই ঐতিহাসিক ডেভেলপমেন্ট (উন্নয়ন) আমাদের জন্য। কারণ ট্রাকে করে বেশিরভাগ পণ্য সীমান্ত অতিক্রম করে। আর পানি দিয়ে অতিক্রম করলে কোভিডের মধ্যে কম লোকের সংস্পর্শ হবে। এটা পরিবেশের জন্যও ভালো এবং সাশ্রয়ী। করোনার মহামারীর সময়েও আমাদের দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রজেক্ট খুব ভালোভাবে চলছে। এটা একেবারেই সত্যি, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। তিনি বলেন, এ ট্রায়াল রানের মাধ্যমে নদীপথে বিভিন্ন অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তীতে নিয়মিত কার্যক্রম চালু হবে।’ এদিকে দুপুরে বাংলাদেশ অংশে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন শেষে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবকিছু ছাপিয়ে এ রুটে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটা একটা বিশাল সাফল্য। এই ট্রায়াল রানের মাধ্যমে আমাদের কোথায় কোথায় নাব্যতা সংকট আছে তা চিহ্নিত করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে গোমতী নদী ড্রেজিংয়ের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ রুটের বিষয়ে ত্রিপুরা তথা ভারত সরকার খুব বেশি আগ্রহী। এর মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য সহায়ক হবে। তিনি বলেন, গোমতী নদীর ১২-১৪টি পয়েন্টে ন্যাব্যতা সংকট রয়েছে। বড় জাহাজ আনতে চাইলে নদীর গভীরতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া বেশকিছু কম উচ্চতা সম্পন্ন ব্রিজ রয়েছে, এ নিয়ে কাজ করতে হবে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে এটি সক্ষম নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠবে।’ এদিকে নৌপথে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় খুশি সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবসায়ীরা। প্রিমিয়ার সিমেন্টের রপ্তানি ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন জানান, ‘নাব্যতা সংকট থাকায় প্রথম দিনে আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি। তাই ৫০ টন প্রেরণের কথা থাকলেও আমরা ১০ টন রপ্তানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছি। তিনি বলেন, ত্রিপুরার দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন ছিল নৌপথে দুই বাংলার একটি কানেকটিভিটি হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। এ কার্যক্রম চালু থাকলে অল্প খরচে ত্রিপুরাবাসী বাংলাদেশের পণ্য পাবেন।’ বিবিরবাজার স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল জানান, ‘রপ্তানি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। এতে করে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরালো হবে এবং সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী হবে।’ এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মা. ওমর ফারুক বলেন, ‘এই নৌপথ চালু হওয়ার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আরও একটি বাণিজ্যিক দুয়ার উন্মোচিত হলো। এতে দুই দেশের বন্ধুপ্রতীম সম্পর্ক আরও জোড়ালো হবে বলে মনে করি।’ কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল হাকিম জানান, এ স্থলবন্দর দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯২ কোটি ৪৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা। নৌপথে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে রাজস্ব আয় আরও বেড়ে যাবে।’