স্কুল শিক্ষিকা ধর্ষণের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রনির বিরুদ্ধে মামলা

স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। সে সঙ্গে ধর্ষিতা নারীকে থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশিদ।

পুলিশ দায়ের করা মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, রংপুর নগরীর কেরানীপাড়া মহল্লার মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমানের মেয়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি করে। ২০১৭ সালে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় হয়। রনির বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর ফতেহপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু বক্কর। পরিচয়ের পর থেকে তাদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটি জানায়, রনি তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় কাজের কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলে ধর্ষিতা মেয়েটি অভিযোগ করে। এর পরেও বিয়ে করার কথা বললে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। পরে তার বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের চাপে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল তারিখে মেয়েটিকে নীলফামারীতে বিয়ে করার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজল কুমারের বাসায় নিয়ে গিয়ে ভুয়া কাজী এনে আমাকে বিয়ে করা দেখানো হয়। এরপর ওই রাতে বাসর রাত বানিয়ে আমাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে রনি। ধর্ষিতা মেয়েটি অভিযোগ করে বিয়ের পর তাকে রনির বাবার বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য বললে নানান টালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। এর মধ্যে রনি ছাত্রলীগের সভাপতি ৬ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করায় আর ছাত্রলীগ করা হয়তো সম্ভব হবে না। সে কারণে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ২০ লাখ টাকার দরকার। সেই টাকা তাকে জোগাড় করে দেবার জন্য চাপ দিলে টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি প্রদান করে। এদিকে ধর্ষিতা মেয়েটি রনিকে বিয়ে করার জন্য আবার চাপ সৃষ্টি করলে চলতি বছরের ৫ জুন তারিখে তাদের কেরানীপাড়ার বাসায় আসে সেখানে রাত্রি যাপন করে এবং তাকে ধর্ষণ করে। কথা দেয় তাকে স্ত্রীর অধিকার ফিরিয়ে দেবে বাসায় নিয়ে যাবে। কিন্তু বিভিন্ন টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। ধর্র্ষিতা মেয়েটি অভিযোগ করে উল্টো রনি তাকে সরে যাবার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। সে হুমকি প্রদান করে তার হাত অনেক লম্বা প্রশাসন তার কথা মতো চলে। এ ধরনের নানান হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এত কিছুর পরেও রনির সঙ্গে সংসার করার জন্য কাকুতি-মিনতি করে ধর্ষিতা মেয়েটি। গত ১২ জুলাই তারিখে রংপুর নগরীর গনেশপুর ক্লাব মোড় এলাকায় রনির ফুফুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বলে তার সঙ্গে কোন বিয়ে হয়নি রেজিস্ট্রি হয়নি কোন কাবিন নামাও সম্পাদিত হয়নি। এরপর তার সহযোগীদের দিয়ে তাকে তার ফুফুর বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

ধর্ষিতা মেয়েটি অভিযোগ করে পুরো বিষয় লিখিত আকারে আবেদন নিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করলে তাকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়। বাধ্য হয়ে থানায় হাজির হয়ে লিখিত এজাহার দায়ের করেন বলে জানান তিনি। ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিয়ে করার মিথ্যা প্রলোভনে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার বিচার দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশিদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা দায়ের করার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মেহেদী হাসান রনিকে সভাপতি রাকিবুল হাসান কাকনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করা হলেও অবৈধভাবে ৬ বছর ধরে রনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করেন।

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

রংপুর

স্কুল শিক্ষিকা ধর্ষণের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রনির বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। সে সঙ্গে ধর্ষিতা নারীকে থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশিদ।

পুলিশ দায়ের করা মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, রংপুর নগরীর কেরানীপাড়া মহল্লার মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমানের মেয়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি করে। ২০১৭ সালে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় হয়। রনির বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর ফতেহপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু বক্কর। পরিচয়ের পর থেকে তাদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটি জানায়, রনি তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় কাজের কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলে ধর্ষিতা মেয়েটি অভিযোগ করে। এর পরেও বিয়ে করার কথা বললে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। পরে তার বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের চাপে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল তারিখে মেয়েটিকে নীলফামারীতে বিয়ে করার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজল কুমারের বাসায় নিয়ে গিয়ে ভুয়া কাজী এনে আমাকে বিয়ে করা দেখানো হয়। এরপর ওই রাতে বাসর রাত বানিয়ে আমাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে রনি। ধর্ষিতা মেয়েটি অভিযোগ করে বিয়ের পর তাকে রনির বাবার বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য বললে নানান টালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। এর মধ্যে রনি ছাত্রলীগের সভাপতি ৬ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করায় আর ছাত্রলীগ করা হয়তো সম্ভব হবে না। সে কারণে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ২০ লাখ টাকার দরকার। সেই টাকা তাকে জোগাড় করে দেবার জন্য চাপ দিলে টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি প্রদান করে। এদিকে ধর্ষিতা মেয়েটি রনিকে বিয়ে করার জন্য আবার চাপ সৃষ্টি করলে চলতি বছরের ৫ জুন তারিখে তাদের কেরানীপাড়ার বাসায় আসে সেখানে রাত্রি যাপন করে এবং তাকে ধর্ষণ করে। কথা দেয় তাকে স্ত্রীর অধিকার ফিরিয়ে দেবে বাসায় নিয়ে যাবে। কিন্তু বিভিন্ন টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। ধর্র্ষিতা মেয়েটি অভিযোগ করে উল্টো রনি তাকে সরে যাবার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। সে হুমকি প্রদান করে তার হাত অনেক লম্বা প্রশাসন তার কথা মতো চলে। এ ধরনের নানান হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এত কিছুর পরেও রনির সঙ্গে সংসার করার জন্য কাকুতি-মিনতি করে ধর্ষিতা মেয়েটি। গত ১২ জুলাই তারিখে রংপুর নগরীর গনেশপুর ক্লাব মোড় এলাকায় রনির ফুফুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বলে তার সঙ্গে কোন বিয়ে হয়নি রেজিস্ট্রি হয়নি কোন কাবিন নামাও সম্পাদিত হয়নি। এরপর তার সহযোগীদের দিয়ে তাকে তার ফুফুর বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

ধর্ষিতা মেয়েটি অভিযোগ করে পুরো বিষয় লিখিত আকারে আবেদন নিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করলে তাকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়। বাধ্য হয়ে থানায় হাজির হয়ে লিখিত এজাহার দায়ের করেন বলে জানান তিনি। ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিয়ে করার মিথ্যা প্রলোভনে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার বিচার দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশিদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা দায়ের করার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মেহেদী হাসান রনিকে সভাপতি রাকিবুল হাসান কাকনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করা হলেও অবৈধভাবে ৬ বছর ধরে রনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করেন।