এ ট্র্যাজেডির দায় কার

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মসজিদে গত শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৪ জন মারা গেছেন, অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও অনেকে। অগ্নিদগ্ধের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমে ছিল। ইলেকট্রিক সুইচ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মসজিদের ভেতর থাকা ছয়টি এসি একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলো বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মসজিদে কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটা হয়তো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এক সময় জানা সম্ভব হবে। তবে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের আর ফিরে পাওয়া যাবে না। অগ্নিদগ্ধ অনেক মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না। মসজিদের ভেতর কোন কারণে গ্যাস জমে ছিল কিনা সেটা তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চয় অনুসন্ধান করে দেখবেন। আমরা জানতে চাইব যে, মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের লাইন গেল কীভাবে। নাকি গ্যাস লাইনের ওপরই মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণে কোন ত্রুটি আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা জরুরি। দেশে নিয়ম না মেনে যথেচ্ছভাবে ধর্মীয় স্থাপনা গড়ে তোলার নজির রয়েছে। মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণে অনেকেই নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না। প্রশাসনও এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রেও যে নিয়ম-কানুন মানতে হয়, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়Ñ সেটা প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উল্লিখিত মসজিদের পাশ দিয়ে গেলে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেত। বিষয়টি যদি মসজিদ বা সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষ আমলে নিত তাহলে উক্ত দুর্ঘটনা এড়ানো যেত কিনা সেটা জানা জরুরি। উক্ত মসজিদ নির্মাণে বা বিস্ফোণের ঘটনায় কারও কোন গাফিলতি থাকলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। উক্ত বিস্ফোরণকে স্রেফ দুর্ঘটনা বলে এড়ানোর উপায় নেই।

বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে বহন করতে হবে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। যদিও মৃত্যুর ক্ষতি কোনভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। বিস্ফোরণে যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। অগ্নিদগ্ধরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন সেই কামনা করি। আগামীতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আশা করি তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্টে এ সংক্রান্ত সুপারিশ থাকবে।

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণ

এ ট্র্যাজেডির দায় কার

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মসজিদে গত শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৪ জন মারা গেছেন, অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও অনেকে। অগ্নিদগ্ধের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমে ছিল। ইলেকট্রিক সুইচ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মসজিদের ভেতর থাকা ছয়টি এসি একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলো বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মসজিদে কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটা হয়তো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এক সময় জানা সম্ভব হবে। তবে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের আর ফিরে পাওয়া যাবে না। অগ্নিদগ্ধ অনেক মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না। মসজিদের ভেতর কোন কারণে গ্যাস জমে ছিল কিনা সেটা তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চয় অনুসন্ধান করে দেখবেন। আমরা জানতে চাইব যে, মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের লাইন গেল কীভাবে। নাকি গ্যাস লাইনের ওপরই মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণে কোন ত্রুটি আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা জরুরি। দেশে নিয়ম না মেনে যথেচ্ছভাবে ধর্মীয় স্থাপনা গড়ে তোলার নজির রয়েছে। মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণে অনেকেই নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না। প্রশাসনও এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রেও যে নিয়ম-কানুন মানতে হয়, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়Ñ সেটা প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উল্লিখিত মসজিদের পাশ দিয়ে গেলে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেত। বিষয়টি যদি মসজিদ বা সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষ আমলে নিত তাহলে উক্ত দুর্ঘটনা এড়ানো যেত কিনা সেটা জানা জরুরি। উক্ত মসজিদ নির্মাণে বা বিস্ফোণের ঘটনায় কারও কোন গাফিলতি থাকলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। উক্ত বিস্ফোরণকে স্রেফ দুর্ঘটনা বলে এড়ানোর উপায় নেই।

বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে বহন করতে হবে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। যদিও মৃত্যুর ক্ষতি কোনভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। বিস্ফোরণে যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। অগ্নিদগ্ধরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন সেই কামনা করি। আগামীতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আশা করি তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্টে এ সংক্রান্ত সুপারিশ থাকবে।