ভারত-বাংলাদেশ-চীন

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

করোনার মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আকস্মিক ঢাকা সফর এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনার প্রেক্ষিতে গুঞ্জন ও ঔৎসক্য তৈরি হয়েছে। লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘাতের পর উভয় দেশ হঠাৎ করে বাংলাদেশকে কাছে টানার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ভ্যাকসিন ভারতেও উৎপাদন হবে, ভারত বলছে, এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে। অন্যদিকে চীনের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে হবে। বাংলাদেশ সরকার দুটি ভ্যাকসিনই হাতে রাখার চেষ্টা করছে। চীন সম্প্রতি তাদের বাজারে বাংলাদেশের ৫ হাজার ১৬১টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তার আগেও প্রায় ৩ হাজার পণ্যের শুল্ক সুবিধা দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে সার্কের আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেও এমন শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা রয়েছে; মাদক ও তামাকজাতীয় ২৫টি পণ্য বাদে বাংলাদেশের সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে ভারত। কিন্তু কয়েকটি পণ্য ছাড়া চীন ও ভারতের বাজারে বাংলাদেশের কোন পণ্যের চাহিদা আছে বলে মনে হয় না। ভারতের বাজারে আমরা যা রপ্তানি করি তার ৮ গুণ আমরা আমদানি করি; আমরা যেখানে রপ্তানি করি ১১০ কোটি ডলারের পণ্য সেখানে আমদানি করি প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি আরও ভয়াবহ; চীন বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে ৭৫ কোটি ডলারের মতো, অথচ রপ্তানি করে ১৭০০ কোটি ডলারের বেশি। ফলে চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ২০ গুণ। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে তিস্তা চুক্তি হলো না; এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীন তিস্তায় জলাধার নির্মাণে সম্প্রতি বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। চীনের সঙ্গে বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছে বলে মনে হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। কারণ ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে অপপ্রচার গুরুত্ব পাওয়ায় সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকছে না। ভারত হিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্র, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ভারতের জন্য মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের প্রীতি থাকা স্বাভাবিক নয়। একই কারণে চীনও পছন্দের দেশ নয়; কিন্তু ‘শত্রুর শত্রু মিত্র’-এই সংজ্ঞায় চীন বাংলাদেশি মুসলমানদের কাছে কিছুটা নৈকট্য লাভ করেছে। ভারতে ২২ কোটি মুসলমান উগ্র জাতীয়তাবাদী হিন্দুদের দাপটে মাঝে মাঝে কোনঠাসা হয়ে পড়েন। সংখ্যালঘুদের প্রতি উগ্র হিন্দুদের চাপিয়ে দেয়া রীতিনীতি বাংলাদেশি মুসলমানদেরও ক্ষেপিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন হলেও ভারতীয় হিন্দুরা প্রকাশ্যে ক্ষেপে না, কারণ ভারতের অদৃশ্য চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েছে। পাকিস্তান ভাঙায় অনেক বাঙালি মুসলমানের মনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তার উপশম হয় ভারত বিরোধিতায়, চীনের দ্বারা ভারতের শায়েস্তায়। ভারতের আচরণও অনেক ক্ষেত্রে সৎ প্রতিবেশীসুলভ বলে প্রতিপন্ন হয়নি। ছিটমহলগুলোর হস্তান্তরে গড়িমসির কারণে ভারতের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। চোরাচালান প্রতিহত করার নামে সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশিদের মেরে ফেলার ঘটনা সব বাঙালির মনে ভারতের প্রতি বিতৃষ্ণার জন্ম দিয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস করে কিছু মুসলমানকে অবৈধ শনাক্ত করে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘোষণা আমাদের দেশের মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করেছে। তিস্তার পানি বণ্টনে ভারতের অনীহা বাংলাদেশ সরকারকেও বেকায়দায় ফেলেছে। ফারাক্কা নিয়ে পাকিস্তান আমলে সৃষ্ট বিরোধ এখনও চলছে; সিন্ধু নদের ওপর ভারতের বাঁধ নির্মাণের পর পাকিস্তান যত চিৎকার করেছে তার ১০০ ভাগের এক ভাগ চিৎকার করলেও ফারাক্কা বাঁধের ফয়সালা পাকিস্তান আমলেই হয়ে যেত। ভাসানীর লং মার্চ ভারতের বিরুদ্ধে বাঙালিদের ক্ষেপিয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। বাবরী মসজিদ ভাঙার পর একই জায়গায় আদালতের নির্দেশে রামমন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ধার্মিক মুসলমানদের মর্মাহত করেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে সহজ যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহণের সুবিধার্থে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার বাংলাদেশের এক শ্রেণীর লোকদের ভারতবিরোধী করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরে কোথাও কোথাও গরু জবাই নিষিদ্ধ করার পর গরু হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মাবলম্বীর মধ্যে খুনাখুনি করার ধর্মীয় স্ট্যাটাসে পরিণত হয়েছে।

পশ্চিম পাকিস্তানিদের বেশিরভাগ লোক মনে করতো বাংলা হচ্ছে হিন্দুদের ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি হচ্ছে হিন্দুদের সংস্কৃতি। পশ্চিম পাকিস্তানিরা মনে করতো, বাঙালিরা খাঁটি মুসলমান নয়। যারাই মুসলিম লীগের সঙ্গে সুর মেলাতে পারতেন না তাদের বলা হতো ‘ভারতের দালাল’। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অভিপ্রায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা ভারতের দালাল বলে। পাকিস্তান আমল থেকেই শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন, বদরুদ্দিন ওমরকে ভারতীয় দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সোহরাওয়ার্দীকে বলেছিলেন ‘ভারতের লেলিয়ে দেয়া কুকুর’। চুয়ান্নর নির্বাচনে শেরে বাংলা ফজলুল হককে ‘ভারতের দালাল’ বলে গালি দেয়া হয়েছিল; এই গালির জবাব দিতে গিয়ে বরিশালের ভাষায় শেরে বাংলা বলেছিলেন, ‘চোরার পুত চোরারা, দেশটারে লুইট্যা-পুইট্যা খাইয়া আর কিছু রাখছোস যে বেইচ্যা দুইটা পয়সা পাইমু?’ ছয় দফা দাবি পেশ করে বঙ্গবন্ধু হয়ে গেলেন ভারতের দালাল। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ যারা বলে তারাও পাকিস্তানপন্থিদের কাছে ‘ভারতের দালাল’। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সর্বশেষ ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তান সফরে না যাওয়াতে পাকিস্তানপন্থি বাঙালিরা মুশফিককে বানিয়ে দিল ভারতের দালাল। ডাকসু’র ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাকারীদের ভারতের দালাল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। আন্তর্জাতিক মেরুকরণে পাকিস্তানপন্থি এবং চীনপন্থি উভয় গোষ্ঠী ভারত বিরোধিতায় এককাট্টা; উভয় গোষ্ঠীর ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম আর চীনপন্থি সমাজতন্ত্রের সুসম্পর্ক ও সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

মিডিয়ায় প্রায়ই উচ্চারিত হয়, চীন নাকি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। কিন্তু যেখানেই পরীক্ষা হয়েছে সেখানেই চীন আমাদের বিরোধিতা করেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চীন বাঙালির মরণপণ সংগ্রামে ঘোর বিরোধিতা করে বাঙালিকে হত্যা করার সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র পাকিস্তানকে সরবরাহ করেছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশর অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে চীন ভেটোর পর ভেটো প্রয়োগ করেছে। চীন এবং সৌদি আরব বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যুর একদিন আগেও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘে এখনও চীনের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই সত্য নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় খুব বেশি উচ্চবাচ্য নেই, উইঘুর মুসলিম নির্যাতন নিয়েও চীনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুসলমানদের ক্ষোভ খুব বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। কারণ চীন পাকিস্তান ভাঙেনি। কিছু লোক ভারতের সঙ্গে অনুকূল সম্পর্ককেও সহ্য করতে পারেন না; ভারতের সব ধরনের বিপদে এরা খুশি।

ভারত-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা সীমান্ত বিরোধ। ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য চীন ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের গভীরতর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শ্রীলঙ্কায় মহেন্দ্র রাজাপকসের ক্ষমতায় ফিরে আসায় চীন স্বস্তিতে আছে। রাজাপাকসের আগের শাসনামলে শ্রীলঙ্কায় চীনের বিপুল বিনিয়োগ হয়; এখন শ্রীলঙ্কার পক্ষে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে; বাধ্য হয়ে শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোটা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে হস্তান্তর করতে হয়েছে। ঋণের জালে মালদ্বীপকেও চীন আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে। ২০১৮ সনের নির্বাচনে ভারতের ঘনিষ্ঠ ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলি নির্বাচিত হওয়ায় ভারত এখন কিছুটা স্বস্তিতে আছে। নেপালে চীন সমর্থিত কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে নেপালের বাকবিত-া শুরু হয়েছে, লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে নেপাল বিতর্কিত ভারতীয় অঞ্চলকে তাদের নতুন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে চীনের পক্ষে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে। পাকিস্তানও নতুন মানচিত্র তৈরি করে তাতে ভারতের গুজরাটের অংশবিশেষসহ সমগ্র জম্মু এবং কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখিয়েছে। পাকিস্তান ও ভারত জাত শত্রু; এই দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব হয় না বলে সার্ককে সচল করা যাচ্ছে না। তবে ভারতের সঙ্গে নেপালের ধর্ম ও সংস্কৃতির মিল থাকায় দু’দেশের জনগণের মধ্যে দেয়াল তৈরি করা কঠিন হবে। এছাড়াও নেপালের সমুদ্রবন্দর না থাকায় ভারতকে শত্রু করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়াও নেপালের পক্ষে সম্ভব হবে না। ভুটানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ২৫ শতাংশের গ্রাহক ভারত। ছোট্ট এই দেশটি অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সর্বক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরশীল।

দীর্ঘ দিনের অন্তর্মুখী পররাষ্ট্রনীতি পরিত্যাগ করে চীন এখন আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ঋণের জালে আবদ্ধ করে সমীহ আদায় করার কৌশল বাংলাদেশেও চীন প্রয়োগ করবে বলে মনে হচ্ছে। বড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারতও চাইবে বংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। বিএনপি একবার পূর্বমুখী রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে বাণিজ্যনীতি পরিচালনার চেষ্টা করেও পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেনি। ভারতকে বাদ দিয়ে বর্তমান সরকারও চীনের দিকে ঝুঁকছে বলে মিডিয়া প্রচার করছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ভারতে পর্যুদস্ত হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ভারত সফর বাতিল করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও নাকি কয়েক মাস যাবত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করছেন না। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে বিমানবন্দরে নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ রিসিভ করতে যাননি, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় না থেকে সেই সময় সিলেটে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে রয়েছে ভারত। এ অবস্থায় ভারতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে মনে হয় না। কারণ ভারত পিয়াজ দেয়া বন্ধ করলে সারা পৃথিবী চষেও পিয়াজের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চয়ই খেয়াল করেছে যে, চীন এ বছরও ১৫ আগস্টে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তথাকথিত জন্মদিনে উপহার পাঠিয়েছে। তবে উন্নয়নের গতি অনবচ্ছিন্ন রাখাসহ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সহযোগিতা অপরিহার্য। কূটনীতি খুব সহজ কাজ নয়; ক্ষমতায় গেলে বিরোধী দলের কূটনৈতিক ভাষাও অনুশীলনে পরিশীলিত থাকে। এই দুটি দেশের কোন একটির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়া সমীচীন হবে না; ভারত এবং চীনের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাই শ্রেয় হবে। তবে সমস্যা নিরসনে অনমনীয় ভারতকে নমনীয় করতে মাঝে মাঝে চীন জুজুর ভয় দেখানোর একটু ঝুঁকি নিতেই হবে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী

পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ahmedzeauddin0@gmail.com

রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৬ মহররম ১৪৪২, ২০ ভাদ্র ১৪২৭

ভারত-বাংলাদেশ-চীন

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

করোনার মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আকস্মিক ঢাকা সফর এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনার প্রেক্ষিতে গুঞ্জন ও ঔৎসক্য তৈরি হয়েছে। লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘাতের পর উভয় দেশ হঠাৎ করে বাংলাদেশকে কাছে টানার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ভ্যাকসিন ভারতেও উৎপাদন হবে, ভারত বলছে, এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে। অন্যদিকে চীনের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে হবে। বাংলাদেশ সরকার দুটি ভ্যাকসিনই হাতে রাখার চেষ্টা করছে। চীন সম্প্রতি তাদের বাজারে বাংলাদেশের ৫ হাজার ১৬১টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তার আগেও প্রায় ৩ হাজার পণ্যের শুল্ক সুবিধা দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে সার্কের আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেও এমন শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা রয়েছে; মাদক ও তামাকজাতীয় ২৫টি পণ্য বাদে বাংলাদেশের সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে ভারত। কিন্তু কয়েকটি পণ্য ছাড়া চীন ও ভারতের বাজারে বাংলাদেশের কোন পণ্যের চাহিদা আছে বলে মনে হয় না। ভারতের বাজারে আমরা যা রপ্তানি করি তার ৮ গুণ আমরা আমদানি করি; আমরা যেখানে রপ্তানি করি ১১০ কোটি ডলারের পণ্য সেখানে আমদানি করি প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি আরও ভয়াবহ; চীন বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে ৭৫ কোটি ডলারের মতো, অথচ রপ্তানি করে ১৭০০ কোটি ডলারের বেশি। ফলে চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ২০ গুণ। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে তিস্তা চুক্তি হলো না; এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীন তিস্তায় জলাধার নির্মাণে সম্প্রতি বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। চীনের সঙ্গে বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছে বলে মনে হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। কারণ ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে অপপ্রচার গুরুত্ব পাওয়ায় সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকছে না। ভারত হিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্র, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ভারতের জন্য মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের প্রীতি থাকা স্বাভাবিক নয়। একই কারণে চীনও পছন্দের দেশ নয়; কিন্তু ‘শত্রুর শত্রু মিত্র’-এই সংজ্ঞায় চীন বাংলাদেশি মুসলমানদের কাছে কিছুটা নৈকট্য লাভ করেছে। ভারতে ২২ কোটি মুসলমান উগ্র জাতীয়তাবাদী হিন্দুদের দাপটে মাঝে মাঝে কোনঠাসা হয়ে পড়েন। সংখ্যালঘুদের প্রতি উগ্র হিন্দুদের চাপিয়ে দেয়া রীতিনীতি বাংলাদেশি মুসলমানদেরও ক্ষেপিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন হলেও ভারতীয় হিন্দুরা প্রকাশ্যে ক্ষেপে না, কারণ ভারতের অদৃশ্য চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েছে। পাকিস্তান ভাঙায় অনেক বাঙালি মুসলমানের মনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তার উপশম হয় ভারত বিরোধিতায়, চীনের দ্বারা ভারতের শায়েস্তায়। ভারতের আচরণও অনেক ক্ষেত্রে সৎ প্রতিবেশীসুলভ বলে প্রতিপন্ন হয়নি। ছিটমহলগুলোর হস্তান্তরে গড়িমসির কারণে ভারতের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। চোরাচালান প্রতিহত করার নামে সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশিদের মেরে ফেলার ঘটনা সব বাঙালির মনে ভারতের প্রতি বিতৃষ্ণার জন্ম দিয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস করে কিছু মুসলমানকে অবৈধ শনাক্ত করে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘোষণা আমাদের দেশের মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করেছে। তিস্তার পানি বণ্টনে ভারতের অনীহা বাংলাদেশ সরকারকেও বেকায়দায় ফেলেছে। ফারাক্কা নিয়ে পাকিস্তান আমলে সৃষ্ট বিরোধ এখনও চলছে; সিন্ধু নদের ওপর ভারতের বাঁধ নির্মাণের পর পাকিস্তান যত চিৎকার করেছে তার ১০০ ভাগের এক ভাগ চিৎকার করলেও ফারাক্কা বাঁধের ফয়সালা পাকিস্তান আমলেই হয়ে যেত। ভাসানীর লং মার্চ ভারতের বিরুদ্ধে বাঙালিদের ক্ষেপিয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। বাবরী মসজিদ ভাঙার পর একই জায়গায় আদালতের নির্দেশে রামমন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ধার্মিক মুসলমানদের মর্মাহত করেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে সহজ যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহণের সুবিধার্থে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার বাংলাদেশের এক শ্রেণীর লোকদের ভারতবিরোধী করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরে কোথাও কোথাও গরু জবাই নিষিদ্ধ করার পর গরু হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মাবলম্বীর মধ্যে খুনাখুনি করার ধর্মীয় স্ট্যাটাসে পরিণত হয়েছে।

পশ্চিম পাকিস্তানিদের বেশিরভাগ লোক মনে করতো বাংলা হচ্ছে হিন্দুদের ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি হচ্ছে হিন্দুদের সংস্কৃতি। পশ্চিম পাকিস্তানিরা মনে করতো, বাঙালিরা খাঁটি মুসলমান নয়। যারাই মুসলিম লীগের সঙ্গে সুর মেলাতে পারতেন না তাদের বলা হতো ‘ভারতের দালাল’। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অভিপ্রায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা ভারতের দালাল বলে। পাকিস্তান আমল থেকেই শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন, বদরুদ্দিন ওমরকে ভারতীয় দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সোহরাওয়ার্দীকে বলেছিলেন ‘ভারতের লেলিয়ে দেয়া কুকুর’। চুয়ান্নর নির্বাচনে শেরে বাংলা ফজলুল হককে ‘ভারতের দালাল’ বলে গালি দেয়া হয়েছিল; এই গালির জবাব দিতে গিয়ে বরিশালের ভাষায় শেরে বাংলা বলেছিলেন, ‘চোরার পুত চোরারা, দেশটারে লুইট্যা-পুইট্যা খাইয়া আর কিছু রাখছোস যে বেইচ্যা দুইটা পয়সা পাইমু?’ ছয় দফা দাবি পেশ করে বঙ্গবন্ধু হয়ে গেলেন ভারতের দালাল। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ যারা বলে তারাও পাকিস্তানপন্থিদের কাছে ‘ভারতের দালাল’। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সর্বশেষ ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তান সফরে না যাওয়াতে পাকিস্তানপন্থি বাঙালিরা মুশফিককে বানিয়ে দিল ভারতের দালাল। ডাকসু’র ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাকারীদের ভারতের দালাল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। আন্তর্জাতিক মেরুকরণে পাকিস্তানপন্থি এবং চীনপন্থি উভয় গোষ্ঠী ভারত বিরোধিতায় এককাট্টা; উভয় গোষ্ঠীর ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম আর চীনপন্থি সমাজতন্ত্রের সুসম্পর্ক ও সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

মিডিয়ায় প্রায়ই উচ্চারিত হয়, চীন নাকি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। কিন্তু যেখানেই পরীক্ষা হয়েছে সেখানেই চীন আমাদের বিরোধিতা করেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চীন বাঙালির মরণপণ সংগ্রামে ঘোর বিরোধিতা করে বাঙালিকে হত্যা করার সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র পাকিস্তানকে সরবরাহ করেছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশর অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে চীন ভেটোর পর ভেটো প্রয়োগ করেছে। চীন এবং সৌদি আরব বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যুর একদিন আগেও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘে এখনও চীনের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই সত্য নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় খুব বেশি উচ্চবাচ্য নেই, উইঘুর মুসলিম নির্যাতন নিয়েও চীনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুসলমানদের ক্ষোভ খুব বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। কারণ চীন পাকিস্তান ভাঙেনি। কিছু লোক ভারতের সঙ্গে অনুকূল সম্পর্ককেও সহ্য করতে পারেন না; ভারতের সব ধরনের বিপদে এরা খুশি।

ভারত-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা সীমান্ত বিরোধ। ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য চীন ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের গভীরতর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শ্রীলঙ্কায় মহেন্দ্র রাজাপকসের ক্ষমতায় ফিরে আসায় চীন স্বস্তিতে আছে। রাজাপাকসের আগের শাসনামলে শ্রীলঙ্কায় চীনের বিপুল বিনিয়োগ হয়; এখন শ্রীলঙ্কার পক্ষে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে; বাধ্য হয়ে শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোটা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে হস্তান্তর করতে হয়েছে। ঋণের জালে মালদ্বীপকেও চীন আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে। ২০১৮ সনের নির্বাচনে ভারতের ঘনিষ্ঠ ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলি নির্বাচিত হওয়ায় ভারত এখন কিছুটা স্বস্তিতে আছে। নেপালে চীন সমর্থিত কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে নেপালের বাকবিত-া শুরু হয়েছে, লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে নেপাল বিতর্কিত ভারতীয় অঞ্চলকে তাদের নতুন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে চীনের পক্ষে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে। পাকিস্তানও নতুন মানচিত্র তৈরি করে তাতে ভারতের গুজরাটের অংশবিশেষসহ সমগ্র জম্মু এবং কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখিয়েছে। পাকিস্তান ও ভারত জাত শত্রু; এই দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব হয় না বলে সার্ককে সচল করা যাচ্ছে না। তবে ভারতের সঙ্গে নেপালের ধর্ম ও সংস্কৃতির মিল থাকায় দু’দেশের জনগণের মধ্যে দেয়াল তৈরি করা কঠিন হবে। এছাড়াও নেপালের সমুদ্রবন্দর না থাকায় ভারতকে শত্রু করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়াও নেপালের পক্ষে সম্ভব হবে না। ভুটানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ২৫ শতাংশের গ্রাহক ভারত। ছোট্ট এই দেশটি অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সর্বক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরশীল।

দীর্ঘ দিনের অন্তর্মুখী পররাষ্ট্রনীতি পরিত্যাগ করে চীন এখন আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ঋণের জালে আবদ্ধ করে সমীহ আদায় করার কৌশল বাংলাদেশেও চীন প্রয়োগ করবে বলে মনে হচ্ছে। বড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারতও চাইবে বংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। বিএনপি একবার পূর্বমুখী রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে বাণিজ্যনীতি পরিচালনার চেষ্টা করেও পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেনি। ভারতকে বাদ দিয়ে বর্তমান সরকারও চীনের দিকে ঝুঁকছে বলে মিডিয়া প্রচার করছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ভারতে পর্যুদস্ত হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ভারত সফর বাতিল করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও নাকি কয়েক মাস যাবত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করছেন না। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে বিমানবন্দরে নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ রিসিভ করতে যাননি, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় না থেকে সেই সময় সিলেটে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে রয়েছে ভারত। এ অবস্থায় ভারতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে মনে হয় না। কারণ ভারত পিয়াজ দেয়া বন্ধ করলে সারা পৃথিবী চষেও পিয়াজের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চয়ই খেয়াল করেছে যে, চীন এ বছরও ১৫ আগস্টে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তথাকথিত জন্মদিনে উপহার পাঠিয়েছে। তবে উন্নয়নের গতি অনবচ্ছিন্ন রাখাসহ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সহযোগিতা অপরিহার্য। কূটনীতি খুব সহজ কাজ নয়; ক্ষমতায় গেলে বিরোধী দলের কূটনৈতিক ভাষাও অনুশীলনে পরিশীলিত থাকে। এই দুটি দেশের কোন একটির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়া সমীচীন হবে না; ভারত এবং চীনের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাই শ্রেয় হবে। তবে সমস্যা নিরসনে অনমনীয় ভারতকে নমনীয় করতে মাঝে মাঝে চীন জুজুর ভয় দেখানোর একটু ঝুঁকি নিতেই হবে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী

পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ahmedzeauddin0@gmail.com