মসজিদে বিস্ফোরণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ : দুর্ভোগে এলাকাবাসী

‘সকালে ঘুম থেকে উইঠা দেখি গ্যাস নাই। কাইল ঘরের সবাই দোকান থেইকা রুটি, কলা কিন্না খাইছি। আইজকা রাস্তার উপর ইটা বিছাইয়া চুলার মতো বানাইছি। লাকড়ি না পাইয়া পুরান কাপড়-চোপড় পুইড়া আলু সেদ্ধ আর ভাত রানছি। পোলাপান তো এইসব খাইতে চায় না। কিন্তু উপায় কী?’ কথাগুলো বলছিলেন গৃহিণী সেলিনা বেগম। সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকার শামীম হাসানের বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন তিনি। গত শুক্রবার রাতে এই বাড়ি থেকে মাত্র ১০-১৫ গজ দূরে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ঘটে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ। ভয়াবহ এই দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন এই বাড়ির মালিক নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অফিস সহকারী শামীম হাসানসহ ২৪ জন।

স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের একটি লাইন রয়েছে। এই লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদে জমা হওয়া গ্যাসের কারণেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছেন তারা। বিস্ফোরণের রাত থেকেই পশ্চিম তল্লা এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। গত ৪৮ ঘণ্টা যাবৎ রান্নার জন্য গ্যাস পাচ্ছেন না বেশ ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার পাঁচ শতাধিক পরিবার। উপায় না দেখে সিলিন্ডার গ্যাস কিংবা মাটির চুলায় রান্নার কাজ সারছেন। অন্যরা বাইরে থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন।

যে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ঠিক তার পেছনে জাসিম ভিলা নামে টিনশেড দেয়া ভাড়াবাড়িতে থাকে ছয়টি পরিবার। সেখানে দেখা যায়, বাড়ির সামনে তিনটা মাটির চুলায় রান্না চলছে। কড়াইতে সেদ্ধ ডিম ভাজছিলেন নাসিমা আক্তার। ত্রিশ টাকা ভাড়া দিয়ে পার্শ্ববর্তী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকা থেকে রান্না করতে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দিন যাবৎ গ্যাস নাই। আগের দিন রুটি-কলা খাইয়া ছিলাম। আমার বাড়িতে মাটির চুলায় রান্নার ব্যবস্থা নাই, সিলিন্ডারও কিনতে পারি নাই। তাই বোনের বাড়িতে আসছি।’

মসজিদের পাশ দিয়ে লাকড়ি হাতে যাচ্ছিলেন মাহিনুর বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্যাস নাই বাবা। রাইন্ধা খাইতে কষ্ট হয়। ওই বাড়ি (হাতের ইশারায়) থেইকা ১৫০ টাকায় লাকড়ি কিন্না নিয়া আইছি। বাড়িতে একটা মাটির চুলা আছে, এইগুলা দিয়া রানমু।’ মাহিনুর বেগম যখন কথাগুলো বলছিলেন তার পাশ দিয়ে পাম্পের একটি চুলা হাতে বাড়ির পথে যাচ্ছিলেন মো. কাশেম। উদ্দেশ্য, গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত কেরোসিন তেলের সাহায্যে এই পাম্পের চুলায় রান্নার কাজ চালাবেন।

সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকাটিয় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চাপ পড়েছে আশপাশের হোটেলগুলোতে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সকালে অনেক দোকানে নাশতা পাওয়া যায়নি। সময়ের আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল সব। প্রতি পরোটার দাম দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৭ টাকায়।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নারায়ণগঞ্জ জোনাল বিপণন বিভাগের ডিজিএম মফিজুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে ওই এলাকার আশেপাশের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। কবে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় শুরু হবে তা জানাতে পারেননি তিতাসের এই কর্মকর্তা।

সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৭ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

মসজিদে বিস্ফোরণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ : দুর্ভোগে এলাকাবাসী

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

image

‘সকালে ঘুম থেকে উইঠা দেখি গ্যাস নাই। কাইল ঘরের সবাই দোকান থেইকা রুটি, কলা কিন্না খাইছি। আইজকা রাস্তার উপর ইটা বিছাইয়া চুলার মতো বানাইছি। লাকড়ি না পাইয়া পুরান কাপড়-চোপড় পুইড়া আলু সেদ্ধ আর ভাত রানছি। পোলাপান তো এইসব খাইতে চায় না। কিন্তু উপায় কী?’ কথাগুলো বলছিলেন গৃহিণী সেলিনা বেগম। সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকার শামীম হাসানের বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন তিনি। গত শুক্রবার রাতে এই বাড়ি থেকে মাত্র ১০-১৫ গজ দূরে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ঘটে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ। ভয়াবহ এই দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন এই বাড়ির মালিক নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অফিস সহকারী শামীম হাসানসহ ২৪ জন।

স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের একটি লাইন রয়েছে। এই লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদে জমা হওয়া গ্যাসের কারণেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছেন তারা। বিস্ফোরণের রাত থেকেই পশ্চিম তল্লা এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। গত ৪৮ ঘণ্টা যাবৎ রান্নার জন্য গ্যাস পাচ্ছেন না বেশ ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার পাঁচ শতাধিক পরিবার। উপায় না দেখে সিলিন্ডার গ্যাস কিংবা মাটির চুলায় রান্নার কাজ সারছেন। অন্যরা বাইরে থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন।

যে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ঠিক তার পেছনে জাসিম ভিলা নামে টিনশেড দেয়া ভাড়াবাড়িতে থাকে ছয়টি পরিবার। সেখানে দেখা যায়, বাড়ির সামনে তিনটা মাটির চুলায় রান্না চলছে। কড়াইতে সেদ্ধ ডিম ভাজছিলেন নাসিমা আক্তার। ত্রিশ টাকা ভাড়া দিয়ে পার্শ্ববর্তী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকা থেকে রান্না করতে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দিন যাবৎ গ্যাস নাই। আগের দিন রুটি-কলা খাইয়া ছিলাম। আমার বাড়িতে মাটির চুলায় রান্নার ব্যবস্থা নাই, সিলিন্ডারও কিনতে পারি নাই। তাই বোনের বাড়িতে আসছি।’

মসজিদের পাশ দিয়ে লাকড়ি হাতে যাচ্ছিলেন মাহিনুর বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্যাস নাই বাবা। রাইন্ধা খাইতে কষ্ট হয়। ওই বাড়ি (হাতের ইশারায়) থেইকা ১৫০ টাকায় লাকড়ি কিন্না নিয়া আইছি। বাড়িতে একটা মাটির চুলা আছে, এইগুলা দিয়া রানমু।’ মাহিনুর বেগম যখন কথাগুলো বলছিলেন তার পাশ দিয়ে পাম্পের একটি চুলা হাতে বাড়ির পথে যাচ্ছিলেন মো. কাশেম। উদ্দেশ্য, গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত কেরোসিন তেলের সাহায্যে এই পাম্পের চুলায় রান্নার কাজ চালাবেন।

সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকাটিয় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চাপ পড়েছে আশপাশের হোটেলগুলোতে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সকালে অনেক দোকানে নাশতা পাওয়া যায়নি। সময়ের আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল সব। প্রতি পরোটার দাম দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৭ টাকায়।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নারায়ণগঞ্জ জোনাল বিপণন বিভাগের ডিজিএম মফিজুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে ওই এলাকার আশেপাশের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। কবে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় শুরু হবে তা জানাতে পারেননি তিতাসের এই কর্মকর্তা।