শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট

তীব্র স্রোত ও নদীভাঙনে বছর বছর নাব্যতা সংকট

স্থায়ী সমাধানে পদ্মার দু’পাড়ে নদী শাসনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের বুধবার থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে

প্রতি বছর বন্যায় তীব্র স্রোতে ও নদীভাঙনের কারণে নাব্যতা সংকট দেখা দেয় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে। পদ্মা নদীর দুই পাড় ভাঙনের ফলে মাঝ নদীতে পলি পড়ে এই সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সেতুর পিয়ারের গোড়ায় পলি ও ময়লা জমে এ বছর চরম নাব্যতা সংকট তৈরি হয়েছে এই নৌরুটে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীবাহী লঞ্চ ও স্পিডবোর্ড চলাচল করছে। গত চারদিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দুই পাড়ে পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। পণ্যবাহী যানবাহনের চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়। মঙ্গলবার থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়। তবে পদ্মার নদী ভাঙন রোধে দুই পারে ৫ কিলোমিটার এলাকা নদী শাসনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউউ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাশ সংবাদকে বলেন, শুধু পদ্মা সেতু নয় আমাদের সব নদীর মাটি নরম প্রকৃতির। তাই মজবুত নদী শাসনের মাধ্যমে নদী ভাঙন রক্ষা সম্ভব। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি অনেক পার্থক্য থাকে। শুষ্কতে নদীতে পানি কম থাকে। বর্ষার সময় উজান থেকে পানি আসায় নদীগুলো পূর্ণ হয়ে যায়। বর্ষায় নদীতে পানি বেশি থাকায় তীব্র ¯্রােতের সৃষ্টি হয়। এই কারণে এ সময় নদী ভাঙে বেশি। এছাড়া নদীতে বিভিন্ন সময় ডুবচরের সৃষ্টি হয়। এতে নদীর গতি প্রবাহ পরিবর্তন হয়। এতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। তবে পদ্মা নদীর ক্ষেত্রে গবেষণা ছাড়া মন্তব্য ঠিক হবে না বলে জানান তিনি। জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি নৌরুট শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট। প্রতিবছর বন্যায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌরুটে দুটিতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। এছাড়া নদী ভাঙনের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ফেরিঘাট। তীব্র স্রোতে ও নাব্যতা সংকটের গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ী নৌরুট। এছাড়া নদী ভাঙনের কারণে কাঁঠালবাড়ীর ফেরিঘাট বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে তিনদিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুই ঘাট মিলিয়ে প্রায় এক হাজারের উপরে যানবাহন আটকা পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়। গত ২৯ আগস্ট থেকে এ রুটে রাতে ফেরি বন্ধ এবং দিনে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করে। এরপর ৩০ আগস্ট লৌহজং টার্নিং চ্যানেল ফেরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সকালে চ্যানেলের মুখে একটি ফেরি আটকে গেলে ঘাট কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয় সংশ্লিষ্টরা জানায়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র এজিএম মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সবকটি চ্যানেলে নাব্যতা সংকট থাকায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরি সার্ভিস ৩ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে শিমুলিয়া ঘাট এবং মাদারীপুর অংশের কাঁঠালবাড়ী ঘাট মিলিয়ে এক হাজারের বেশি গাড়ি এখন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এরমধ্যে শত শত পণ্যবাহী ট্রাকও রয়েছে। তিন দিন ধরে রাস্তায় অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অনেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে অন্য যান নিয়ে ফিরে গেছে। বিআইডব্লিউটিএ’র সব চ্যানেল অচল থাকায় পদ্মা সেতুর নিজস্ব চ্যানেলে ছোট আকারের ফেরিগুলো চলছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে সেই চ্যানেলও নাব্যতা হারায়, তাই পুরোপুরি ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। চ্যানলে নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং চলছে। মঙ্গলবার থেকে ফেরি চালু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অন্যদিকে গত বছর তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছয়টি ঘাটের মধ্যে চারটি ফেরিঘাট ভেঙে যায়। বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে বালির বস্তা ফেলে নদীর পার রক্ষা করা হয়। কিন্তু নদীতে স্রোতের কারণে বালির বস্তা ভেসে যায়। বিকল্প ব্যবস্থা করে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বড় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। এ বছর এই নৌরুটে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে নদী স্রোতে থাকায় মাঝেমধ্যে ফেরি চলাচলে সমস্যা তৈরি হয় বলে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)’র সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, প্রতিবছর ভারতের বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও ফারাক্কা ব্যারেজের সবকয়টি গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তীব্র স্রোতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল ব্যাহত হয়। এরমধ্যে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে পদ্মা সেতু বস্তবায়ন হলে এটা সমস্যা হবে না। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে নদী শাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট শিমুলিয়া-কাঁঠারবাড়ী ফেরিঘাট। প্রতি বছর বর্ষার সময় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান হতে আসা বিপুল পরিমাণ পলি এ ফেরি রুটের বিভিন্ন স্থানে জমা হওয়ায় নাব্যতা পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়ে ফেরি ও নৌচলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ার পর থেকেই বর্ষা মৌসুমে এ রুটের শিমুলিয়া-লৌহজং চ্যানেলে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত প্রবল স্রোতে গতিবেগ ৭ হতে ৮ নটিক্যাল মাইল হয়। তাই সরাসরি ফেরি চলাচল করতে পারে না। এছাড়া নদীতে তীব্র স্রোতে নৌরুটে নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ বিকল্প চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট বিগত ৪-৫ বছর যাবৎ বর্ষা মৌসুমে নাব্যতার সমস্যা হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে বিগত ৪-৫ বছর যাবৎ শিমুলিয়া-লৌহজং চ্যানেলের বিকল্প হিসাবে একটি চ্যানেল বিআইডব্লিউটিএ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। কিন্তু এ বছর পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের মাটি দ্বারা ওই বিকল্প চ্যানেলটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে বর্ষা মৌসুমে ফেরি চলাচল অব্যাহত রাখতে গত ২৪ মার্চ থেকে ৫টি ড্রেজার দিয়ে বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। নাব্যতা সংকটের কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে এই চ্যানেলটি বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন ১২টি ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করা হচ্ছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে চ্যানেলটি দিয়ে ফেরি চলাচল শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. সাইদুর রাহমান সংবাদকে বলেন, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি রুটের লৌহজং টার্নি হতে সেতু পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএর ৯টি ড্রেজার, সেতু কর্তৃপক্ষের গতকাল থেকে ১টি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ করা হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া লৌহজং চ্যানেল বিআইডব্লিউটিএর ৯টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করে ১৫০ ফুট পাশে ১৬ ফুট পানির গভীরতা করা হয়েছে। এখন পাশে বাড়ানোর জন?্য ড্রেজিং করা হচ্ছে। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে চায়না ড্রেজার দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ওদের কাজ শেষ না হলে ফেরি চলাচল করতে পারবে না। তাদের অংশ বিআইডব্লিউটিএর ৩টি ড্রেজার কাজ করছে। চায়না ড্রেজারটি ঠিকঠাক মতো চললে ৩ দিন পর ফেরি চলাচল করতে পারবে।

image

বন্যার পানির তীব্র স্রোতে পদ্মা নদীর দুই পাড়ের ভাঙনে মাঝ নদীতে পলি জমে সৃষ্ট নাব্যতা -সংবাদ

আরও খবর
সংসদে প্রণব মুখার্জি ও দুই এমপির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত
সাক্ষরতার হার ৭৪.৭ শতাংশ
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের নথি তলব দুদকের
নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ ডা. জাফরুল্লাহর
রংপুরে রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত
সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
বেগুন ক্ষেত কেটে দিল দুর্বৃত্তরা
এনজিও কর্মীকে গলা কেটে হত্যা
তদন্ত প্রতিবেদন ২০ অক্টোবর দাখিলের নির্দেশ
পাপিয়া দম্পতির অস্ত্র মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ
২ কোটি টাকার অবৈধ পলিথিন জব্দ

সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৭ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট

তীব্র স্রোত ও নদীভাঙনে বছর বছর নাব্যতা সংকট

স্থায়ী সমাধানে পদ্মার দু’পাড়ে নদী শাসনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের বুধবার থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

বন্যার পানির তীব্র স্রোতে পদ্মা নদীর দুই পাড়ের ভাঙনে মাঝ নদীতে পলি জমে সৃষ্ট নাব্যতা -সংবাদ

প্রতি বছর বন্যায় তীব্র স্রোতে ও নদীভাঙনের কারণে নাব্যতা সংকট দেখা দেয় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে। পদ্মা নদীর দুই পাড় ভাঙনের ফলে মাঝ নদীতে পলি পড়ে এই সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সেতুর পিয়ারের গোড়ায় পলি ও ময়লা জমে এ বছর চরম নাব্যতা সংকট তৈরি হয়েছে এই নৌরুটে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীবাহী লঞ্চ ও স্পিডবোর্ড চলাচল করছে। গত চারদিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দুই পাড়ে পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। পণ্যবাহী যানবাহনের চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়। মঙ্গলবার থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়। তবে পদ্মার নদী ভাঙন রোধে দুই পারে ৫ কিলোমিটার এলাকা নদী শাসনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউউ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাশ সংবাদকে বলেন, শুধু পদ্মা সেতু নয় আমাদের সব নদীর মাটি নরম প্রকৃতির। তাই মজবুত নদী শাসনের মাধ্যমে নদী ভাঙন রক্ষা সম্ভব। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি অনেক পার্থক্য থাকে। শুষ্কতে নদীতে পানি কম থাকে। বর্ষার সময় উজান থেকে পানি আসায় নদীগুলো পূর্ণ হয়ে যায়। বর্ষায় নদীতে পানি বেশি থাকায় তীব্র ¯্রােতের সৃষ্টি হয়। এই কারণে এ সময় নদী ভাঙে বেশি। এছাড়া নদীতে বিভিন্ন সময় ডুবচরের সৃষ্টি হয়। এতে নদীর গতি প্রবাহ পরিবর্তন হয়। এতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। তবে পদ্মা নদীর ক্ষেত্রে গবেষণা ছাড়া মন্তব্য ঠিক হবে না বলে জানান তিনি। জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি নৌরুট শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট। প্রতিবছর বন্যায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌরুটে দুটিতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। এছাড়া নদী ভাঙনের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ফেরিঘাট। তীব্র স্রোতে ও নাব্যতা সংকটের গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ী নৌরুট। এছাড়া নদী ভাঙনের কারণে কাঁঠালবাড়ীর ফেরিঘাট বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে তিনদিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুই ঘাট মিলিয়ে প্রায় এক হাজারের উপরে যানবাহন আটকা পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়। গত ২৯ আগস্ট থেকে এ রুটে রাতে ফেরি বন্ধ এবং দিনে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করে। এরপর ৩০ আগস্ট লৌহজং টার্নিং চ্যানেল ফেরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সকালে চ্যানেলের মুখে একটি ফেরি আটকে গেলে ঘাট কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয় সংশ্লিষ্টরা জানায়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র এজিএম মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সবকটি চ্যানেলে নাব্যতা সংকট থাকায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরি সার্ভিস ৩ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে শিমুলিয়া ঘাট এবং মাদারীপুর অংশের কাঁঠালবাড়ী ঘাট মিলিয়ে এক হাজারের বেশি গাড়ি এখন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এরমধ্যে শত শত পণ্যবাহী ট্রাকও রয়েছে। তিন দিন ধরে রাস্তায় অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অনেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে অন্য যান নিয়ে ফিরে গেছে। বিআইডব্লিউটিএ’র সব চ্যানেল অচল থাকায় পদ্মা সেতুর নিজস্ব চ্যানেলে ছোট আকারের ফেরিগুলো চলছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে সেই চ্যানেলও নাব্যতা হারায়, তাই পুরোপুরি ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। চ্যানলে নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং চলছে। মঙ্গলবার থেকে ফেরি চালু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অন্যদিকে গত বছর তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছয়টি ঘাটের মধ্যে চারটি ফেরিঘাট ভেঙে যায়। বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে বালির বস্তা ফেলে নদীর পার রক্ষা করা হয়। কিন্তু নদীতে স্রোতের কারণে বালির বস্তা ভেসে যায়। বিকল্প ব্যবস্থা করে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বড় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। এ বছর এই নৌরুটে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে নদী স্রোতে থাকায় মাঝেমধ্যে ফেরি চলাচলে সমস্যা তৈরি হয় বলে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)’র সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, প্রতিবছর ভারতের বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও ফারাক্কা ব্যারেজের সবকয়টি গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তীব্র স্রোতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল ব্যাহত হয়। এরমধ্যে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে পদ্মা সেতু বস্তবায়ন হলে এটা সমস্যা হবে না। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে নদী শাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট শিমুলিয়া-কাঁঠারবাড়ী ফেরিঘাট। প্রতি বছর বর্ষার সময় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান হতে আসা বিপুল পরিমাণ পলি এ ফেরি রুটের বিভিন্ন স্থানে জমা হওয়ায় নাব্যতা পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়ে ফেরি ও নৌচলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ার পর থেকেই বর্ষা মৌসুমে এ রুটের শিমুলিয়া-লৌহজং চ্যানেলে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত প্রবল স্রোতে গতিবেগ ৭ হতে ৮ নটিক্যাল মাইল হয়। তাই সরাসরি ফেরি চলাচল করতে পারে না। এছাড়া নদীতে তীব্র স্রোতে নৌরুটে নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ বিকল্প চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট বিগত ৪-৫ বছর যাবৎ বর্ষা মৌসুমে নাব্যতার সমস্যা হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে বিগত ৪-৫ বছর যাবৎ শিমুলিয়া-লৌহজং চ্যানেলের বিকল্প হিসাবে একটি চ্যানেল বিআইডব্লিউটিএ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। কিন্তু এ বছর পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের মাটি দ্বারা ওই বিকল্প চ্যানেলটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে বর্ষা মৌসুমে ফেরি চলাচল অব্যাহত রাখতে গত ২৪ মার্চ থেকে ৫টি ড্রেজার দিয়ে বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। নাব্যতা সংকটের কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে এই চ্যানেলটি বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন ১২টি ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করা হচ্ছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে চ্যানেলটি দিয়ে ফেরি চলাচল শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. সাইদুর রাহমান সংবাদকে বলেন, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি রুটের লৌহজং টার্নি হতে সেতু পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএর ৯টি ড্রেজার, সেতু কর্তৃপক্ষের গতকাল থেকে ১টি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ করা হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া লৌহজং চ্যানেল বিআইডব্লিউটিএর ৯টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করে ১৫০ ফুট পাশে ১৬ ফুট পানির গভীরতা করা হয়েছে। এখন পাশে বাড়ানোর জন?্য ড্রেজিং করা হচ্ছে। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে চায়না ড্রেজার দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ওদের কাজ শেষ না হলে ফেরি চলাচল করতে পারবে না। তাদের অংশ বিআইডব্লিউটিএর ৩টি ড্রেজার কাজ করছে। চায়না ড্রেজারটি ঠিকঠাক মতো চললে ৩ দিন পর ফেরি চলাচল করতে পারবে।