রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত কলা এখন সরাসরি যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা শহরের বাজারে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা বদরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাগান মালিকদের কাছ থেকে কলা কিনে ট্রাকে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কলা বিক্রি করে বেশি আয় করছেন কলাচাষিরা। উপজেলা কৃষি অধিদফতর বিষয়টিকে চাষির সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছে। জানা যায়, এবারে উপজেলায় মোট এক শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে কলাচাষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮০ হেক্টর জমিতে সবরি, ৩৫ হেক্টর জমিতে অমৃত সাগর, পাঁচ হেক্টর জমিতে মেহের সাগর, পাঁচ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের চিনি চম্পা, পাঁচ হেক্টর জমিতে মনুয়া জাতের কলা রয়েছে। কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী- চারা রোপণের সময় থেকে ১৪ মাস পর গাছ থেকে কলা সংগ্রহ করা হয়। তবে কলা চাষে সুবিধাটা হল কলাক্ষেতে ছয় মাস পর্যন্ত সাথী ফসল হিসেবে নানা জাতের সবজি চাষ করা যায়। যা বিক্রি করে চাষিরা সহজেই কলা ক্ষেতের পরিচর্যা করতে পারেন। বছরের মধ্য মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ক্ষেতে কলাগাছের চারা রোপণ করতে হয়। এক একরে মোট এক হাজার চারা রোপণ করা যায়। ১৪ মাস পর চাষিরা ওই ক্ষেত থেকে এক হাজার কলার কাঁদি সংগ্রহ করতে পারবেন। বর্তমান বাজারে কলার উচ্চমূল্য হলেও ব্যবসায়ীরা ৩২০ টাকা দরে কলার কাঁদি কিনে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। সে অনুযায়ী এক একর জমির কলা বিক্রি হচ্ছে মোট তিন লাখ ২০ হাজার টাকায়। যা অত্যন্ত লাভজনক বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় গোপালপুর ইউনিয়নের মাস্টারপাড়ার কার্তিক চন্দ্র শীলের সাথে। তিনি এক একর জমিতে কলা চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। তিনি প্রতি কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন ৩২০ টাকা দরে। সেে হিসেবে তার এক হাজার কাঁদি কলা বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার টাকায়। তার সব কলাই নিয়ে গেছেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা। একই কথা বলেন, বসন্তপুরের কলাচাষি মিজানুর রহমান ও আকন্দপাড়ার খলিলুর রহমান। তাদের দাবি, কলা লাভজনক ফল। কলাচাষে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ সময় কথা হয় গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকার কলা ব্যবসায়ী মনির এর সাথে। তিনি বলেন, এখানকার কলা দেখতে ভাল। বাজারে এসব কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এখানকার কলা কিনে নিয়ে গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করছি। উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, কলাক্ষেতে মোট তিনটি রোগের প্রাদুর্ভাব হয়- সিকাটোকা, পানামা এবং বানসিটিউব। সিকাটোকা ও পানামা পরিচর্যায় ভাল হয়। তবে বানসিটিউব হলে ওই কলাগাছ গোড়া থেকে তুলে ফেলতে হয় এবং মাটিতে ডলোচুন মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হয়। তিনি চাষিদের সাবধান করে বলেন, ওই ক্ষেতের চারা কোন অবস্থাতেই অন্য জমিতে রোপণ করা যাবেনা। তা’ নাহলে চাষিকে চরম মূল্য দিতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, বদরগঞ্জের কলা রাজধানীর বাজারে শোভা পাচ্ছে- এতো চাষির বিশাল সাফল্য।
মঙ্গলবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৮ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭
রুহুল আমিন সরকার, বদরগঞ্জ (রংপুর)
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত কলা এখন সরাসরি যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা শহরের বাজারে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা বদরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাগান মালিকদের কাছ থেকে কলা কিনে ট্রাকে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কলা বিক্রি করে বেশি আয় করছেন কলাচাষিরা। উপজেলা কৃষি অধিদফতর বিষয়টিকে চাষির সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছে। জানা যায়, এবারে উপজেলায় মোট এক শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে কলাচাষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮০ হেক্টর জমিতে সবরি, ৩৫ হেক্টর জমিতে অমৃত সাগর, পাঁচ হেক্টর জমিতে মেহের সাগর, পাঁচ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের চিনি চম্পা, পাঁচ হেক্টর জমিতে মনুয়া জাতের কলা রয়েছে। কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী- চারা রোপণের সময় থেকে ১৪ মাস পর গাছ থেকে কলা সংগ্রহ করা হয়। তবে কলা চাষে সুবিধাটা হল কলাক্ষেতে ছয় মাস পর্যন্ত সাথী ফসল হিসেবে নানা জাতের সবজি চাষ করা যায়। যা বিক্রি করে চাষিরা সহজেই কলা ক্ষেতের পরিচর্যা করতে পারেন। বছরের মধ্য মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ক্ষেতে কলাগাছের চারা রোপণ করতে হয়। এক একরে মোট এক হাজার চারা রোপণ করা যায়। ১৪ মাস পর চাষিরা ওই ক্ষেত থেকে এক হাজার কলার কাঁদি সংগ্রহ করতে পারবেন। বর্তমান বাজারে কলার উচ্চমূল্য হলেও ব্যবসায়ীরা ৩২০ টাকা দরে কলার কাঁদি কিনে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। সে অনুযায়ী এক একর জমির কলা বিক্রি হচ্ছে মোট তিন লাখ ২০ হাজার টাকায়। যা অত্যন্ত লাভজনক বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় গোপালপুর ইউনিয়নের মাস্টারপাড়ার কার্তিক চন্দ্র শীলের সাথে। তিনি এক একর জমিতে কলা চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। তিনি প্রতি কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন ৩২০ টাকা দরে। সেে হিসেবে তার এক হাজার কাঁদি কলা বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার টাকায়। তার সব কলাই নিয়ে গেছেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা। একই কথা বলেন, বসন্তপুরের কলাচাষি মিজানুর রহমান ও আকন্দপাড়ার খলিলুর রহমান। তাদের দাবি, কলা লাভজনক ফল। কলাচাষে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ সময় কথা হয় গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকার কলা ব্যবসায়ী মনির এর সাথে। তিনি বলেন, এখানকার কলা দেখতে ভাল। বাজারে এসব কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এখানকার কলা কিনে নিয়ে গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করছি। উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, কলাক্ষেতে মোট তিনটি রোগের প্রাদুর্ভাব হয়- সিকাটোকা, পানামা এবং বানসিটিউব। সিকাটোকা ও পানামা পরিচর্যায় ভাল হয়। তবে বানসিটিউব হলে ওই কলাগাছ গোড়া থেকে তুলে ফেলতে হয় এবং মাটিতে ডলোচুন মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হয়। তিনি চাষিদের সাবধান করে বলেন, ওই ক্ষেতের চারা কোন অবস্থাতেই অন্য জমিতে রোপণ করা যাবেনা। তা’ নাহলে চাষিকে চরম মূল্য দিতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, বদরগঞ্জের কলা রাজধানীর বাজারে শোভা পাচ্ছে- এতো চাষির বিশাল সাফল্য।