কক্ষের অভাবে এক এজলাসে দুই আদালত
ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চার শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিচারাধীন আছে। অথচ এই ট্রাইব্যুনালে এজলাস সমস্যা প্রকট। সকালে এক এজলাসে এক আদালত ও দুপুরে আরেক আদালতের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যেই সকালে দ্রুত বিচার আদালত আর দুপুরে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতের কার্যক্রম চলছে। এতে মামলার জরুরি কাগজপত্র থেকে শুরু করে আলামত রাখারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বসার কোন ব্যবস্থা। আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসে কাজ করা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়ার জায়গাটুকুও নেই। এ অবস্থায় নানা কষ্টের মধ্যে আদালতের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবুও এ আদালতেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর বিচারকার্য চলছে। অবশ্য আদালতের একজন কর্মকর্তা বলছেন, নতুন নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষে আদালত (এজলাস রুম) স্থানান্তর করা হলে আলাদা এজলাসের (রুম) ব্যবস্থা হতে পারে। আদালত সূত্র জানায়, আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের সব মামলার বিচারকার্য চলছে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। পুরান ঢাকার জজ কোর্টের দক্ষিণ পাশের ভবনের ৬তলায় এ আদালতের কার্যক্রম চালানো হয়। চাঞ্চল্যকর বহু মামলা এখনও এ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে অভিজিৎ হত্যা মামলা, ফয়সাল আরেফিন দিপন হত্যা মামলা, তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার মামলা, পান্থপথের ওলি ইন্টারন্যাশনালে ভয়াবহ বোমা হামলার মামলাসহ সব আলোচিত মামলার বিচার কাজ এ আদালতে চলছে।
সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সরোয়ার খান জাকির বলেন, ২০১৮ সালে সন্ত্রাস বিরোধী এ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইনের যত মামলা আছে সব গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার এ আদালতে হয়। আগের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের এ আদালতে এখন এজলাস সমস্যা। কম্পিউটার নেই। নেই পর্যাপ্ত অন্যান্য সরঞ্জাম। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বসার ব্যবস্থা জোড়াতালি দিয়ে চলছে। আদালতের রুমসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আরো বাড়ানো গেলে আদালতের কার্যক্রম দ্রুত চালানো সম্ভব বলে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানান।
রাষ্ট্র পক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ঢাকা ও চট্রগ্রামে প্রথম আদালত চালু করা হলেও নতুন করে দেশের প্রতিটি বিভাগে সন্ত্রাস দমন আদালত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এতে বিচার প্রক্রিয়া আরো দ্রুততম হবে বলে তিনি মতামত দেন।
অপরাধ বিষয়ক বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, সন্ত্রাস বিরোধী মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এক আদালতে বিচার করতে গিয়ে বিচার প্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে করে ন্যায় বিচার বিঘিœত হতে পারে। তাই মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা এজলাস করা দরকার বলে সিনিয়র এ আইনজীবী মনে করেন। এর সুফল পাবে বিচার প্রার্থীরা। এজলাস সমস্যার সমাধান হলে এবং সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনালে অন্যান্য উপকরণের ব্যবস্থা করা হলে ভালো হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশে সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুনাল ও বিচারকের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। শুধু তাই না রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আরও আন্তরিকতা বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। সন্ত্রাস বিরোধী নতুন এ আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের ব্যবস্থা করা দরকার। শুধু তাই না সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের যে সব মামলা যাবে সেসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নতুন আইনের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের সাজার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্য্যে করা দরকার। সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি মামলার আলামত রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আদালতে আলামত রাখার ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। আলামত নষ্ট হলে বিচার প্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে পারে। সেখানে পুলিশের প্রসিকিউশন সক্ষমতা বাড়ালে সরকার যে আশা নিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তার সুফল পাবে বিচার প্রার্থীরা।
পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, দেশের পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ট্রেনিং চলাকালে প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে দেশের নতুন নতুন আইন ও মামলা তদন্তের নানা কৌশল নিয়ে হাতেনাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শুধু দেশেই নয় আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় সময় প্রশিক্ষণের জন্য পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পাঠানো হয়। দেশে বড় ধরনের অপরাধের মামলা তদন্ত করার জন্য প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে উন্নত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তদন্তকারী অফিসার যত বেশি প্রশিক্ষণ পাবে মামলা তদন্তে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সক্ষম হবে। গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা, সিলেটে জঙ্গি হামলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি গ্রেফতার ,বিষ্ফোরক উদ্ধারসহ জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো পুলিশের ঊর্ধ্বতন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা তদন্তে গাইডলাইন দেন। তাদের তদারকিতে মামলার তদন্তের মান এখন আরও বাড়ছে। এর সুফল পাচ্ছে বিচারপ্রার্থী। সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অধিকাংশ মামলা দেশজুড়ে আলোচিত। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মামলাগুলো করা হচ্ছে। মামলা তদন্তে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধী শনাক্ত করা হচ্ছে। পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা এর তদারকির দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের নতুন নতুন ইউনিটগুলোতে মামলা তদন্তে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে এখন আর আগের মত অপরাধী পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতে হবে।
পুলিশ প্রশিক্ষণ শাখায় কর্মরত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অপরাধের ধরন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে নতুন নতুন আইন হচ্ছে। তাই পুলিশ প্রশিক্ষণ সেন্টারগুলোকে সরকারের নতুন নতুন আইনগুলো সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত আইন সংযোগের পাশাপাশি প্রতিটি আইন সম্পর্কে কর্মকতাদের যথাযথ ধারণা দেয়া হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যে কোন ধরনের অপরাধ তদন্তে আধুনিক ডিজিটাল আইন, আইসিটি অ্যাক্টসহ সবকিছুতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিং, অ্যাপস ব্যবহার করে যারা বড় ধরনের সন্ত্রাস বা নাশকতার পরিকল্পনা করছে তাদের আইনি প্রশিক্ষণ দিয়ে যুগোপযোগী করা হচ্ছে।
আদালতের প্রসিকিউশান থেকে জানা গেছে, সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সমস্যা থাকলেও তাও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তা সমাধান করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আদালত থেকে জানা গেছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের গুরুত্বপূর্ণ মামলা, মামলার চার্জশিট, নিহত জঙ্গি সন্ত্রাসীদের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, মামলার জব্দকৃত ফরেনসিক রিপোর্ট, মামলার আসামিদের স্বীকারোক্তি, গোয়েন্দা তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন তথ্য, আলোচিত ও জঙ্গি কর্মকা-ের মামলার সাক্ষীদের আদালতে সোপর্দ, তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত আলামতসহ সবকিছুই সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে হয়। কিন্তু নিরাপদে বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাখতে আদালতে এসব আলামত রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এগুলো সংরক্ষণ করার সুযোগ সুবিধা বাড়ালে বিচার কাজে সুবিধা বাড়বে।
মঙ্গলবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৮ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭
কক্ষের অভাবে এক এজলাসে দুই আদালত
বাকী বিল্লাহ ও মাহবুবুল হক
ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চার শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিচারাধীন আছে। অথচ এই ট্রাইব্যুনালে এজলাস সমস্যা প্রকট। সকালে এক এজলাসে এক আদালত ও দুপুরে আরেক আদালতের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যেই সকালে দ্রুত বিচার আদালত আর দুপুরে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতের কার্যক্রম চলছে। এতে মামলার জরুরি কাগজপত্র থেকে শুরু করে আলামত রাখারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বসার কোন ব্যবস্থা। আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসে কাজ করা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়ার জায়গাটুকুও নেই। এ অবস্থায় নানা কষ্টের মধ্যে আদালতের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবুও এ আদালতেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর বিচারকার্য চলছে। অবশ্য আদালতের একজন কর্মকর্তা বলছেন, নতুন নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষে আদালত (এজলাস রুম) স্থানান্তর করা হলে আলাদা এজলাসের (রুম) ব্যবস্থা হতে পারে। আদালত সূত্র জানায়, আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের সব মামলার বিচারকার্য চলছে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। পুরান ঢাকার জজ কোর্টের দক্ষিণ পাশের ভবনের ৬তলায় এ আদালতের কার্যক্রম চালানো হয়। চাঞ্চল্যকর বহু মামলা এখনও এ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে অভিজিৎ হত্যা মামলা, ফয়সাল আরেফিন দিপন হত্যা মামলা, তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার মামলা, পান্থপথের ওলি ইন্টারন্যাশনালে ভয়াবহ বোমা হামলার মামলাসহ সব আলোচিত মামলার বিচার কাজ এ আদালতে চলছে।
সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সরোয়ার খান জাকির বলেন, ২০১৮ সালে সন্ত্রাস বিরোধী এ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইনের যত মামলা আছে সব গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার এ আদালতে হয়। আগের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের এ আদালতে এখন এজলাস সমস্যা। কম্পিউটার নেই। নেই পর্যাপ্ত অন্যান্য সরঞ্জাম। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বসার ব্যবস্থা জোড়াতালি দিয়ে চলছে। আদালতের রুমসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আরো বাড়ানো গেলে আদালতের কার্যক্রম দ্রুত চালানো সম্ভব বলে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানান।
রাষ্ট্র পক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ঢাকা ও চট্রগ্রামে প্রথম আদালত চালু করা হলেও নতুন করে দেশের প্রতিটি বিভাগে সন্ত্রাস দমন আদালত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এতে বিচার প্রক্রিয়া আরো দ্রুততম হবে বলে তিনি মতামত দেন।
অপরাধ বিষয়ক বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, সন্ত্রাস বিরোধী মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এক আদালতে বিচার করতে গিয়ে বিচার প্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে করে ন্যায় বিচার বিঘিœত হতে পারে। তাই মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা এজলাস করা দরকার বলে সিনিয়র এ আইনজীবী মনে করেন। এর সুফল পাবে বিচার প্রার্থীরা। এজলাস সমস্যার সমাধান হলে এবং সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনালে অন্যান্য উপকরণের ব্যবস্থা করা হলে ভালো হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশে সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুনাল ও বিচারকের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। শুধু তাই না রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আরও আন্তরিকতা বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। সন্ত্রাস বিরোধী নতুন এ আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের ব্যবস্থা করা দরকার। শুধু তাই না সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের যে সব মামলা যাবে সেসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নতুন আইনের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের সাজার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্য্যে করা দরকার। সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি মামলার আলামত রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আদালতে আলামত রাখার ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। আলামত নষ্ট হলে বিচার প্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে পারে। সেখানে পুলিশের প্রসিকিউশন সক্ষমতা বাড়ালে সরকার যে আশা নিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তার সুফল পাবে বিচার প্রার্থীরা।
পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, দেশের পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ট্রেনিং চলাকালে প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে দেশের নতুন নতুন আইন ও মামলা তদন্তের নানা কৌশল নিয়ে হাতেনাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শুধু দেশেই নয় আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় সময় প্রশিক্ষণের জন্য পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পাঠানো হয়। দেশে বড় ধরনের অপরাধের মামলা তদন্ত করার জন্য প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে উন্নত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তদন্তকারী অফিসার যত বেশি প্রশিক্ষণ পাবে মামলা তদন্তে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সক্ষম হবে। গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা, সিলেটে জঙ্গি হামলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি গ্রেফতার ,বিষ্ফোরক উদ্ধারসহ জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো পুলিশের ঊর্ধ্বতন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা তদন্তে গাইডলাইন দেন। তাদের তদারকিতে মামলার তদন্তের মান এখন আরও বাড়ছে। এর সুফল পাচ্ছে বিচারপ্রার্থী। সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অধিকাংশ মামলা দেশজুড়ে আলোচিত। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মামলাগুলো করা হচ্ছে। মামলা তদন্তে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধী শনাক্ত করা হচ্ছে। পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা এর তদারকির দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের নতুন নতুন ইউনিটগুলোতে মামলা তদন্তে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে এখন আর আগের মত অপরাধী পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতে হবে।
পুলিশ প্রশিক্ষণ শাখায় কর্মরত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অপরাধের ধরন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে নতুন নতুন আইন হচ্ছে। তাই পুলিশ প্রশিক্ষণ সেন্টারগুলোকে সরকারের নতুন নতুন আইনগুলো সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত আইন সংযোগের পাশাপাশি প্রতিটি আইন সম্পর্কে কর্মকতাদের যথাযথ ধারণা দেয়া হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যে কোন ধরনের অপরাধ তদন্তে আধুনিক ডিজিটাল আইন, আইসিটি অ্যাক্টসহ সবকিছুতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিং, অ্যাপস ব্যবহার করে যারা বড় ধরনের সন্ত্রাস বা নাশকতার পরিকল্পনা করছে তাদের আইনি প্রশিক্ষণ দিয়ে যুগোপযোগী করা হচ্ছে।
আদালতের প্রসিকিউশান থেকে জানা গেছে, সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সমস্যা থাকলেও তাও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তা সমাধান করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আদালত থেকে জানা গেছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের গুরুত্বপূর্ণ মামলা, মামলার চার্জশিট, নিহত জঙ্গি সন্ত্রাসীদের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, মামলার জব্দকৃত ফরেনসিক রিপোর্ট, মামলার আসামিদের স্বীকারোক্তি, গোয়েন্দা তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন তথ্য, আলোচিত ও জঙ্গি কর্মকা-ের মামলার সাক্ষীদের আদালতে সোপর্দ, তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত আলামতসহ সবকিছুই সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে হয়। কিন্তু নিরাপদে বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাখতে আদালতে এসব আলামত রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এগুলো সংরক্ষণ করার সুযোগ সুবিধা বাড়ালে বিচার কাজে সুবিধা বাড়বে।