মাঠের নেতাদের মনোনয়নে আ’লীগের তৃণমূলে সন্তোষ

ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেলেন মনু ও হেলাল

আসন্ন উপ-নির্বাচনগুলোতে পরিবারতন্ত্রের ঊর্ধ্বে উঠে মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি শূন্য হওয়া সংসদীয় পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে এমন তিনজন স্থানীয় নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন, যারা কেউ সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য নন। স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, তৃণমূলের উপর আস্থা রেখে, তৃণমূলের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিয়েছেন।

ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলেসহ ২০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল। এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভীনসহ ৩৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসনের উপনির্বাচনে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান বিশ্বাস মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফের (ডিলু) স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, জামাতাসহ ২৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা সংবাদকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাবিবুর রহমান মোল্লা এবং কাজী মনিরুল ইসলাম মুন দু’জনকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। পরে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে কাজী মনিরুল ইসলাম মনু নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়ে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেন। এ কারণেই নেত্রী কাজী মনিরুলকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবার থেকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দলের একজন সংসদ সদস্য মারা গেলে প্রতি সম্মান রেখে ওই আসনে উপনির্বাচনে তার তার স্ত্রী কিংবা সন্তানদের মনোনয়ন দেয়ার একটা প্রথা প্রচলিত রয়েছে। তবে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে অযোগ্য বলার কোন সুযোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরে থেকে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেয়ার উদাহরণও আছে। এবার তিনটি আসনে মনোনয়নে প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের অতি জনপ্রিয় নেতৃত্বকে বেছে নেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য সংবাদকে বলেন, তিনটি আসনে এত বেশি প্রার্থী ছিল যা সত্যি অবাক করার মতো। পারিবারিক কোন্দল থাকলে, পরিবারে যোগ্য লোকের অভাব থাকলে কিংবা পরিচ্ছন্ন ইমেজসম্পন্ন লোকের অভাব থাকলে শুধুমাত্র প্রয়াত সংসদ সদস্যের সম্মানের দিকে তাকিয়ে তো আর মনোনয়ন দেয় যায় না। নেত্রী যাদের মনোনয়ন দিয়েছেন, ভেবে-চিন্তে, বুঝে-শুনেই দিয়েছেন। এখন নেত্রীর উপর আস্থা রেখে কর্মীদের উচিৎ হবে গ্রুপিং ও কোন্দলের ঊর্ধ্বে থেকে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে কাজ করা।

ঢাকা-৫ আসনসহ সম্প্রতি মনোনয়ন দেয়া ৩টি আসনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কর্মীদের একটা বিরাট অংশ এবারের মনোনয়নে খুশি। তাদের মতে, পরিবারতন্ত্রের বাইরে মনোনয়ন দিয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তারা বলছেন, এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোতে নিজেদের লোক নেয়ার এবং সর্বক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে।

সম্প্রতি শূন্য হওয়া পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে মোট ১৪১ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন। এরমধ্যে ঢাকা-৫ আসনে ২০ জন, ঢাকা-১৮ আসনে ৫৬ জন, পাবনা-৪ আসনে ২৮ জন, নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪ জন এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ৩ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এরপর গত ৩১ আগস্ট গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান বিশ্বাসের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। ওই সভায় বাকি চারটি আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশেই এ ঘোষণা তিনি করেছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। দুপুরে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের ও সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকা-৫ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে কাজী মনিরুল ইসলাম এবং ৫১ নওগাঁ-৬ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে মো. আনোয়ার হোসেন (হেলাল)-কে মনোনয়ন প্রদান করেছেন।

ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচন ১৭ অক্টোবর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। এছাড়া ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন আরও ৯০ দিন পিছিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সিরাজগঞ্জ-১ : সিরাজগঞ্জ-১ আসনে এখনও মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়, মোহাম্মদ নাসিমের ভাতিজা শেহেরিন সেলিম রিপন ও ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, যেহেতু তানভীর শাকিল জয় নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন, তাই পিতার অবর্তমানে এবার তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। এছাড়া জাতীয় নেতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবেও তানভীরকে বেছে নেবে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা-১৮ : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাহারা খাতুন চিরকুমারী থাকায় তার পরিবারিক সদস্য নেই। তাই এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চলছে। এ আসনে ৫৬ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগের সাবেক ও বর্তমান নেত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক সচিব, পুলিশের সাবেক ডিআইজি, সাবেক জেলা জজ, চিকিৎসক, শিক্ষক ও কাউন্সিলর।

এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিক, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আকতার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মতিউর রহমান, বিমান বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাজান আলী মণ্ডল, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. হাবিব হাসান প্রমুখ। ঢাকা-১৮ আসনে হাবিব হাসানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, এমন খবর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়লে, গত ১ সেপ্টেম্বর অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মহিলা যুবলীগ সভাপতি নাজমা আকতার দলীয় কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নেন। মহিলা যুবলীগের কর্মীরা জানান, ঢাকা-১৮ আসনে তাদের নেত্রী নাজমা আক্তার কেন মনোনয়ন পাবেন না, এ বিষয়টি তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে এসেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে মনোনয়ন দিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ দাবি তুলেছে। তবে পুতুল এই মুহূর্তে সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কিনা, বিষয়টি এখনও স্পষ্ট হয়নি।

মঙ্গলবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৮ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭

মাঠের নেতাদের মনোনয়নে আ’লীগের তৃণমূলে সন্তোষ

ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেলেন মনু ও হেলাল

ফয়েজ আহমেদ তুষার

আসন্ন উপ-নির্বাচনগুলোতে পরিবারতন্ত্রের ঊর্ধ্বে উঠে মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি শূন্য হওয়া সংসদীয় পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে এমন তিনজন স্থানীয় নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন, যারা কেউ সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য নন। স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, তৃণমূলের উপর আস্থা রেখে, তৃণমূলের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিয়েছেন।

ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলেসহ ২০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল। এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভীনসহ ৩৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসনের উপনির্বাচনে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান বিশ্বাস মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফের (ডিলু) স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, জামাতাসহ ২৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা সংবাদকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাবিবুর রহমান মোল্লা এবং কাজী মনিরুল ইসলাম মুন দু’জনকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। পরে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে কাজী মনিরুল ইসলাম মনু নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়ে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেন। এ কারণেই নেত্রী কাজী মনিরুলকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবার থেকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দলের একজন সংসদ সদস্য মারা গেলে প্রতি সম্মান রেখে ওই আসনে উপনির্বাচনে তার তার স্ত্রী কিংবা সন্তানদের মনোনয়ন দেয়ার একটা প্রথা প্রচলিত রয়েছে। তবে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে অযোগ্য বলার কোন সুযোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরে থেকে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেয়ার উদাহরণও আছে। এবার তিনটি আসনে মনোনয়নে প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের অতি জনপ্রিয় নেতৃত্বকে বেছে নেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য সংবাদকে বলেন, তিনটি আসনে এত বেশি প্রার্থী ছিল যা সত্যি অবাক করার মতো। পারিবারিক কোন্দল থাকলে, পরিবারে যোগ্য লোকের অভাব থাকলে কিংবা পরিচ্ছন্ন ইমেজসম্পন্ন লোকের অভাব থাকলে শুধুমাত্র প্রয়াত সংসদ সদস্যের সম্মানের দিকে তাকিয়ে তো আর মনোনয়ন দেয় যায় না। নেত্রী যাদের মনোনয়ন দিয়েছেন, ভেবে-চিন্তে, বুঝে-শুনেই দিয়েছেন। এখন নেত্রীর উপর আস্থা রেখে কর্মীদের উচিৎ হবে গ্রুপিং ও কোন্দলের ঊর্ধ্বে থেকে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে কাজ করা।

ঢাকা-৫ আসনসহ সম্প্রতি মনোনয়ন দেয়া ৩টি আসনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কর্মীদের একটা বিরাট অংশ এবারের মনোনয়নে খুশি। তাদের মতে, পরিবারতন্ত্রের বাইরে মনোনয়ন দিয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তারা বলছেন, এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোতে নিজেদের লোক নেয়ার এবং সর্বক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে।

সম্প্রতি শূন্য হওয়া পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে মোট ১৪১ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন। এরমধ্যে ঢাকা-৫ আসনে ২০ জন, ঢাকা-১৮ আসনে ৫৬ জন, পাবনা-৪ আসনে ২৮ জন, নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪ জন এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ৩ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এরপর গত ৩১ আগস্ট গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান বিশ্বাসের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। ওই সভায় বাকি চারটি আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশেই এ ঘোষণা তিনি করেছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। দুপুরে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের ও সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকা-৫ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে কাজী মনিরুল ইসলাম এবং ৫১ নওগাঁ-৬ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে মো. আনোয়ার হোসেন (হেলাল)-কে মনোনয়ন প্রদান করেছেন।

ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচন ১৭ অক্টোবর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। এছাড়া ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন আরও ৯০ দিন পিছিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সিরাজগঞ্জ-১ : সিরাজগঞ্জ-১ আসনে এখনও মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়, মোহাম্মদ নাসিমের ভাতিজা শেহেরিন সেলিম রিপন ও ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, যেহেতু তানভীর শাকিল জয় নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন, তাই পিতার অবর্তমানে এবার তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। এছাড়া জাতীয় নেতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবেও তানভীরকে বেছে নেবে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা-১৮ : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাহারা খাতুন চিরকুমারী থাকায় তার পরিবারিক সদস্য নেই। তাই এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চলছে। এ আসনে ৫৬ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগের সাবেক ও বর্তমান নেত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক সচিব, পুলিশের সাবেক ডিআইজি, সাবেক জেলা জজ, চিকিৎসক, শিক্ষক ও কাউন্সিলর।

এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিক, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আকতার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মতিউর রহমান, বিমান বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাজান আলী মণ্ডল, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. হাবিব হাসান প্রমুখ। ঢাকা-১৮ আসনে হাবিব হাসানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, এমন খবর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়লে, গত ১ সেপ্টেম্বর অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মহিলা যুবলীগ সভাপতি নাজমা আকতার দলীয় কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নেন। মহিলা যুবলীগের কর্মীরা জানান, ঢাকা-১৮ আসনে তাদের নেত্রী নাজমা আক্তার কেন মনোনয়ন পাবেন না, এ বিষয়টি তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে এসেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে মনোনয়ন দিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ দাবি তুলেছে। তবে পুতুল এই মুহূর্তে সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কিনা, বিষয়টি এখনও স্পষ্ট হয়নি।