‘চুরি করতে গিয়ে ইউএনও’র ওপর হামলা বিশ্বাসযোগ্য নয়’

ঘটনা আরও তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ

চুরি করতে গিয়ে ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলা হয়েছে বলে বলা হলেও মানুষের কাছে তা খুব ‘বিশ্বাসযোগ্য হয়নি’ বলে মনে করছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনা আরও তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি। এর পেছনে কী রহস্য আছে, গডফাদাররা কারা, সেগুলো দেখার জন্য বলা হয়েছে। আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে কেউ যদি অন্যায় করে তার বিরুদ্ধে প্রতিকার চাওয়ার জায়গা আছে। কারও যদি অভিযোগ থাকে রাতে হামলা করা। এতে সরকারি কর্মচারীরা কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে। কাজেই আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গতকাল সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কথা বলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, আইনশৃঙ্খলা বহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ কমিটির অন্য সদস্যরা।

বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বাসভবনে নয়, পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সেই সরকারিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন ইউএনওদের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করেছি। এখন আমরা সংশোধন করে বলেছি, সেখানে আরও অনেক অফিসাররা থাকেন। তাই পুরো উপজেলা কমপ্লেক্স সিসিটিভির আওতায় এনে সারা রাত পাহারা থাকবে, যাতে কোন ক্রিমিনাল অন্যায়ভাবে কারও ওপর হামলা করতে না পারে। উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনও ছাড়াও অধিকাংশ কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সবগুলো পরিবার যাতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বোধ করেন, যাতে আক্রমণের শিকার না হন এজন্য পুরো কমপ্লেক্সকে পাহারার আওতায় আনা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, কেউ আমরা আইনের ঊর্ধ্বে নই। যাকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে, তার সম্পৃক্ততা গোয়েন্দা সংস্থা খতিয়ে দেখছে। তার যদি সম্পৃক্ততা থাকে এবং তাকে প্রভাব খাটিয়ে ছাড় করিয়ে নেয়ার জন্য যদি এমপির সম্পৃক্ততা থাকে তবে তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন না।

মাদক যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে উল্লেখ করে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশে মাদক কারবারে যে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়, তা দিয়ে সমাজের নেতৃত্বদাতাদের ‘অনেককে কিনে ফেলা হয়’। সেই উপলব্ধি থেকে মাদক কারবারীদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও শনাক্ত করতে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদক যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে, তারপরেও আরও উন্নত করতে চাই। বাংলাদেশের বিশাল বর্ডার, অনেক দুর্গম জায়গাও আছে। সেখান দিয়ে ক্রিমিনালরা সহজেই ঢুকে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। আমরা এখন সব থেকে গুরুত্ব দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, (মাদক) আনা-নেয়া করে শুধু তারা না, তাদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় সেগুলো গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয়েছে আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের আইডেন্টিফাই করে হাত দিতে হবে। যারা মাদক চালানের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি যেন দৃশ্যমান হয় সেজন্য আগের আইনের দুর্বলতা কাটিয়ে আইনকে আপডেট করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

রোহিঙ্গাদের কর্মকা- তদারকি হবে উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, এনজিওর ব্যানারে কিছু কিছু সংস্থা রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কর্মকা- আরও বেশি করে তদারকির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সেখানে কিছু আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা আছে এনজিওদের নামে যাতে রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে মারামারি, কাটাকাটি বা মাদকদ্রব্য ও ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে সেগুলোও নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৪টি টাওয়ার নির্মাণ করে সেখান থেকে যেন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা দিয়ে তাদের কার্যক্রম মনিটর করা হবে। ক্রাইমের সঙ্গে অল্প সংখ্যক জড়িত। কেউ কেউ মাদক পাচারেও জড়িত হয়ে যায়, বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে তা আরও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। তারা কী অন্যায় কাজ করছে, কী খারাপ কাজ করছে সেটা দিতে বলেছি।

গোয়েন্দাদের কাজ সমন্বয়ে কমিটি করা হবে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজের সমন্বয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে একই আমব্রেলার নিচে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই কমিটি করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এলে তারা কম্পাইল করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সেই কমিটি করার দায়িত্ব দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

রাষ্ট্রবিরোধী ‘চ্যানেলে’ বিজ্ঞাপনদাতাদের চিহ্নিতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত থাকা ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে কারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এবং কীভাবে সেই বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছে। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন ইউটিউব, ফেসবুকে কিছু কিছু চ্যানেল বের হয়েছে, এ সবের মাধ্যমে শুধু সরকার বিরোধী নয়, সরকারের বিরুদ্ধে বলার তো আপনার অধিকার আছে। তাদের বক্তব্য রাষ্ট্র বিরোধী। যারা এসব সংবাদ প্রচার করে সেখানে অনেক বিজ্ঞাপন আছে, টাকার উৎস কী, সেটা কারা দেয় এবং কিভাবে এই বিজ্ঞাপন দেয়, দেশে পেমেন্ট হয় নাকি বিদেশে হয়, সেগুলো যাচাই করে দেখতে এনবিআরকে বলেছি। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, মোবাইল বা অনলাইনে বা অত্যাধুনিক কোন প্রক্রিয়ায়, সেজন্য এনবিআরকে আমরা অনুরোধ করেছি এই বিজ্ঞাপন দেয় কারা তা খতিয়ে দেখতে। সরকার প্রেসের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী উদার। কিন্তু কোন লাইসেন্স নাই, পারমিশন নেই এ রকম, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা বিটিআরসিকে অনুরোধ করেছি, যারা এগুলো চালাবে তাদের জবাবদিহি থাকতে হবে।

সাইবার অপরাধগুলো এখন খুব ‘অ্যালার্মিং’ হয়ে গেছে উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, সাইবার অপরাধ দমনের জন্য গোয়ন্দা তৎপরতা বাড়াতে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার হেড কোয়ার্টার এখানে শিফট করার মাধ্যমে মনিটর করব। কোন কিছু বন্ধ করে দেয়া হবে না, আমরা বন্ধে করার পক্ষে না। সেগুলোর জবাবদিহি থাকবে, আমরা তার পক্ষে।

সিআইডি’র ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলের কার্যত্রুম শুরু

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্র্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক আবু ইমাম জাফর জানান, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার বাস ভবন, ইউএনও’র শয়ন কক্ষসহ আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে ঘরের ওয়ালে জমাট বাধা রক্ত, রক্তমাখা বিছানাপত্র ও অন্যান্য আসবাবপত্রের অংশ বিশেষ আলামত হিসেবে জব্দ করেছেন।

সূত্রটি জানায়, গতকাল ঢাকা সিআইডি সদর দফতর থেকে একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ৫ সদস্যের টিম দিনাজপুরে এসে পৌঁছেছেন। বিশেষজ্ঞটি ডিবি পুলিশের রিমান্ডে থাকা ৩ আসামির হাতের ছাপ ও অন্যান্য নমুনা পরীক্ষার সংগ্রহ করেছেন। পুলিশের জব্দ করা আলামত প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার করছেন। গতকাল বিকেলে তারা ঘটনাস্থল করে আলামত সংগ্রহের উদ্দেশে ঘোড়াঘাটে রওনা হয়েছেন।

দিনাজপুর জেলা আনসার ও ভিডিপি অ্যাডজুডেন্ট মো. আবদুল মজিদ জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলায় অবস্থিত ১৩টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য ১০৪ জন আনসার ভিডিপি সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে ৮ জন করে আনসার ভিডিপির সদস্য থাকবে। তারা ২৪ ঘণ্টায় পলাক্রমে সশস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবেন। এই ধারাবাহিকতায় ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে অস্ত্রধারী আনসার বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বাসা দেখাশোনার জন্য উপজেলা পরিষদের ২ জন কর্মচারীকে রাখা হয়েছে।

পুলিশের প্রতি আমাদের আস্থা আছে

বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওয়াহাব ভুঞা বলেছেন, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে যে কোন মামলার তদন্ত পুলিশই করে থাকে। পুলিশ বাহিনীর প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আমরা আশাবাদি পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় সোপর্দ করে তাদের বিচার নিশ্চিত করবেন।

গতকাল জেলা কালেক্টরেট ভবনে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে সৃজিত ছাদ বাগানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এসব কথা বলেন। ইতোমধ্যে গঠন করা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কার্যত্রুম সম্পর্কে বলেন, এই তদন্ত কমিটি প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখবেন। প্রশাসনিক কোন দুর্বলতা ছিল কিনা, এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে কি কি ব্যাবস্থা নেয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে কমিটির সদস্যরা সুপারিশ আকারে তৈরি করে তা সরকারের কাছে জমা দেবেন।

আরও খবর
গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ
প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশনা
রোহিঙ্গাদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ ছিল
পাওয়ার গ্রিডে আগুন, ময়মনসিংহ বিভাগ বিদ্যুৎহীন
মৃত্যু আরও ৩৬ শনাক্ত ১৮২৯ জন
১২ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে বিক্রি
একাদশ শ্রেণীতে সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ৫,০০০ টাকা নির্ধারণ
তদন্ত প্রতিবেদন ৭৪ বারের মতো পেছালো
বরিশালে দুই পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত
মিলল আরও একটি লিকেজ
দেড়মাস পর রহস্য উদ্ঘাটন, খুনি বাবা-দাদা ও সৎমাসহ ৪ জন গ্রেফতার
ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতন মামলা
মৃতের সংখ্যা ২৮, চিকিৎসাধীন ৮ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক

বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৯ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

‘চুরি করতে গিয়ে ইউএনও’র ওপর হামলা বিশ্বাসযোগ্য নয়’

ঘটনা আরও তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

চুরি করতে গিয়ে ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলা হয়েছে বলে বলা হলেও মানুষের কাছে তা খুব ‘বিশ্বাসযোগ্য হয়নি’ বলে মনে করছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনা আরও তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি। এর পেছনে কী রহস্য আছে, গডফাদাররা কারা, সেগুলো দেখার জন্য বলা হয়েছে। আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে কেউ যদি অন্যায় করে তার বিরুদ্ধে প্রতিকার চাওয়ার জায়গা আছে। কারও যদি অভিযোগ থাকে রাতে হামলা করা। এতে সরকারি কর্মচারীরা কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে। কাজেই আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গতকাল সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কথা বলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, আইনশৃঙ্খলা বহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ কমিটির অন্য সদস্যরা।

বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বাসভবনে নয়, পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সেই সরকারিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন ইউএনওদের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করেছি। এখন আমরা সংশোধন করে বলেছি, সেখানে আরও অনেক অফিসাররা থাকেন। তাই পুরো উপজেলা কমপ্লেক্স সিসিটিভির আওতায় এনে সারা রাত পাহারা থাকবে, যাতে কোন ক্রিমিনাল অন্যায়ভাবে কারও ওপর হামলা করতে না পারে। উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনও ছাড়াও অধিকাংশ কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সবগুলো পরিবার যাতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বোধ করেন, যাতে আক্রমণের শিকার না হন এজন্য পুরো কমপ্লেক্সকে পাহারার আওতায় আনা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, কেউ আমরা আইনের ঊর্ধ্বে নই। যাকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে, তার সম্পৃক্ততা গোয়েন্দা সংস্থা খতিয়ে দেখছে। তার যদি সম্পৃক্ততা থাকে এবং তাকে প্রভাব খাটিয়ে ছাড় করিয়ে নেয়ার জন্য যদি এমপির সম্পৃক্ততা থাকে তবে তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন না।

মাদক যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে উল্লেখ করে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশে মাদক কারবারে যে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়, তা দিয়ে সমাজের নেতৃত্বদাতাদের ‘অনেককে কিনে ফেলা হয়’। সেই উপলব্ধি থেকে মাদক কারবারীদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও শনাক্ত করতে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদক যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে, তারপরেও আরও উন্নত করতে চাই। বাংলাদেশের বিশাল বর্ডার, অনেক দুর্গম জায়গাও আছে। সেখান দিয়ে ক্রিমিনালরা সহজেই ঢুকে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। আমরা এখন সব থেকে গুরুত্ব দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, (মাদক) আনা-নেয়া করে শুধু তারা না, তাদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় সেগুলো গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয়েছে আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের আইডেন্টিফাই করে হাত দিতে হবে। যারা মাদক চালানের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি যেন দৃশ্যমান হয় সেজন্য আগের আইনের দুর্বলতা কাটিয়ে আইনকে আপডেট করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

রোহিঙ্গাদের কর্মকা- তদারকি হবে উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, এনজিওর ব্যানারে কিছু কিছু সংস্থা রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কর্মকা- আরও বেশি করে তদারকির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সেখানে কিছু আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা আছে এনজিওদের নামে যাতে রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে মারামারি, কাটাকাটি বা মাদকদ্রব্য ও ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে সেগুলোও নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৪টি টাওয়ার নির্মাণ করে সেখান থেকে যেন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা দিয়ে তাদের কার্যক্রম মনিটর করা হবে। ক্রাইমের সঙ্গে অল্প সংখ্যক জড়িত। কেউ কেউ মাদক পাচারেও জড়িত হয়ে যায়, বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে তা আরও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। তারা কী অন্যায় কাজ করছে, কী খারাপ কাজ করছে সেটা দিতে বলেছি।

গোয়েন্দাদের কাজ সমন্বয়ে কমিটি করা হবে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজের সমন্বয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে একই আমব্রেলার নিচে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই কমিটি করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এলে তারা কম্পাইল করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সেই কমিটি করার দায়িত্ব দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

রাষ্ট্রবিরোধী ‘চ্যানেলে’ বিজ্ঞাপনদাতাদের চিহ্নিতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত থাকা ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে কারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এবং কীভাবে সেই বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছে। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন ইউটিউব, ফেসবুকে কিছু কিছু চ্যানেল বের হয়েছে, এ সবের মাধ্যমে শুধু সরকার বিরোধী নয়, সরকারের বিরুদ্ধে বলার তো আপনার অধিকার আছে। তাদের বক্তব্য রাষ্ট্র বিরোধী। যারা এসব সংবাদ প্রচার করে সেখানে অনেক বিজ্ঞাপন আছে, টাকার উৎস কী, সেটা কারা দেয় এবং কিভাবে এই বিজ্ঞাপন দেয়, দেশে পেমেন্ট হয় নাকি বিদেশে হয়, সেগুলো যাচাই করে দেখতে এনবিআরকে বলেছি। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, মোবাইল বা অনলাইনে বা অত্যাধুনিক কোন প্রক্রিয়ায়, সেজন্য এনবিআরকে আমরা অনুরোধ করেছি এই বিজ্ঞাপন দেয় কারা তা খতিয়ে দেখতে। সরকার প্রেসের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী উদার। কিন্তু কোন লাইসেন্স নাই, পারমিশন নেই এ রকম, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা বিটিআরসিকে অনুরোধ করেছি, যারা এগুলো চালাবে তাদের জবাবদিহি থাকতে হবে।

সাইবার অপরাধগুলো এখন খুব ‘অ্যালার্মিং’ হয়ে গেছে উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, সাইবার অপরাধ দমনের জন্য গোয়ন্দা তৎপরতা বাড়াতে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার হেড কোয়ার্টার এখানে শিফট করার মাধ্যমে মনিটর করব। কোন কিছু বন্ধ করে দেয়া হবে না, আমরা বন্ধে করার পক্ষে না। সেগুলোর জবাবদিহি থাকবে, আমরা তার পক্ষে।

সিআইডি’র ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলের কার্যত্রুম শুরু

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্র্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক আবু ইমাম জাফর জানান, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার বাস ভবন, ইউএনও’র শয়ন কক্ষসহ আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে ঘরের ওয়ালে জমাট বাধা রক্ত, রক্তমাখা বিছানাপত্র ও অন্যান্য আসবাবপত্রের অংশ বিশেষ আলামত হিসেবে জব্দ করেছেন।

সূত্রটি জানায়, গতকাল ঢাকা সিআইডি সদর দফতর থেকে একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ৫ সদস্যের টিম দিনাজপুরে এসে পৌঁছেছেন। বিশেষজ্ঞটি ডিবি পুলিশের রিমান্ডে থাকা ৩ আসামির হাতের ছাপ ও অন্যান্য নমুনা পরীক্ষার সংগ্রহ করেছেন। পুলিশের জব্দ করা আলামত প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার করছেন। গতকাল বিকেলে তারা ঘটনাস্থল করে আলামত সংগ্রহের উদ্দেশে ঘোড়াঘাটে রওনা হয়েছেন।

দিনাজপুর জেলা আনসার ও ভিডিপি অ্যাডজুডেন্ট মো. আবদুল মজিদ জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলায় অবস্থিত ১৩টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য ১০৪ জন আনসার ভিডিপি সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে ৮ জন করে আনসার ভিডিপির সদস্য থাকবে। তারা ২৪ ঘণ্টায় পলাক্রমে সশস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবেন। এই ধারাবাহিকতায় ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে অস্ত্রধারী আনসার বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বাসা দেখাশোনার জন্য উপজেলা পরিষদের ২ জন কর্মচারীকে রাখা হয়েছে।

পুলিশের প্রতি আমাদের আস্থা আছে

বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওয়াহাব ভুঞা বলেছেন, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে যে কোন মামলার তদন্ত পুলিশই করে থাকে। পুলিশ বাহিনীর প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আমরা আশাবাদি পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় সোপর্দ করে তাদের বিচার নিশ্চিত করবেন।

গতকাল জেলা কালেক্টরেট ভবনে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে সৃজিত ছাদ বাগানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এসব কথা বলেন। ইতোমধ্যে গঠন করা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কার্যত্রুম সম্পর্কে বলেন, এই তদন্ত কমিটি প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখবেন। প্রশাসনিক কোন দুর্বলতা ছিল কিনা, এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে কি কি ব্যাবস্থা নেয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে কমিটির সদস্যরা সুপারিশ আকারে তৈরি করে তা সরকারের কাছে জমা দেবেন।