১০০ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন নিয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও ইইডি বিরোধ

‘১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ (টিএসসি) স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে। মূলত নির্মাণ কাজের মান, বারবার অবকাঠামোর ‘স্ট্রাকচার’ ও ‘ডিজাইন’ পরিবর্তন করা, প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় না করেই একাডেমিক ভবন নির্মাণ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইইডি’র সঙ্গে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছে। ইইডি’র শীর্ষ কর্মকর্তার গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে প্রকল্পের নির্মাণ কাজে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে ওই প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অসন্তোষ লাঘবের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ইইডি’তে দিনব্যাপী প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন ঠিকাদার ও প্রকৌশলী-কর্মকর্তাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেন ইইডি কর্তৃপক্ষ। পরদিন সেগুণ বাগিচায় আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে ‘১০০টি টিএসসি স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সিরাজুল ইসলাম কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে প্রকল্পের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি সরকারের অগ্রাধিকারের প্রকল্প। ডিসেম্বরের মধ্যে সব কলেজে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কিন্তু কাজ এগুচ্ছে না। ইইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ আদায়ে কৌশলী অবস্থান না নিয়ে হুমকি-ধমকির মাধ্যমে কাজ আদায়ের চেষ্টা করছেন।’

ইইডি’র দু’জন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পের দায়িত্বে কোন প্রকৌশলী নেই। অথচ তারা প্রকৌশলীদের কাজ বুঝতে চান, হস্তক্ষেপ করতে চান, প্রকৌশলীদের চেয়ে বেশিও বুঝতে চান। এসব ঝামেলার কারণেই নির্মাণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি শিক্ষাকে গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ বিদ্যমান ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন প্রকল্প দুটি হাতে নেয়, যেগুলো এখনও বাস্তবায়নাধীন। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩৮৯টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জন্য অন্য একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’ নামের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ভালো নয়। প্রথম পর্যায়ে জমির জটিলতাই হচ্ছে মুখ্য। তবে ইতোমধ্যে ৯৫টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫টির জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডি’র দু’জন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের প্রধান সমস্যা হলো- ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এ কাজটি যথাযথভাবে করতে পারেনি, বিলম্ব করেছে। ভূমির অবস্থান অনুযায়ী, ইইডি অবকাঠামোর ডিজাইন ও স্ট্রাকচার তৈরি করতে হচ্ছে, এ কারণে সবকটি ভবনের ডিজাইন ও স্ট্রাকচার এক রকম হচ্ছে না।’

ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ইইডি’র জানিয়ে ওই দুই প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের যেভাবে ভূমি বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে, আমরা সেভাবেই দরপত্র আহ্বান করে অবকাঠামো নির্মাণ করছি। এখানে আমাদের কোন ব্যর্থতা নেই।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি একটি করে কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স চালু করার মাধ্যমে দেশব্যাপী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করা হবে। মূলত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন ট্রেনিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আরও খবর
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতির চাঁদা বাড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল বিলসহ ৩ বিল পাস
জেসিসি ষষ্ঠ বৈঠক হবে ভার্চুয়ালি এ মাসের শেষে
আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পরিস্থিতি দেশে নেই কাদের
ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির সাবেক দুই এমডির বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
এলজিইডি’র পৌনে তিনশ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
পাপিয়া দম্পতির অস্ত্র মামলায় সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত
নিখোঁজের ৭ দিন পর পথশিশু জিনিয়াকে না’গঞ্জে উদ্ধার
ক্রসফায়ার-গুমের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় বাম ঐক্য
রনির নেতৃত্বে ৬ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে রংপুর ছাত্রলীগ
মারমা কিশোরী ধর্ষণ ঘটনায়
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে নাভিশ্বাস
ভাইকে হত্যা করে ঘরেই মাটিচাপা দেয় বড় ভাই
৪০ হাজার গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৯ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

১০০ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন নিয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও ইইডি বিরোধ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

‘১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ (টিএসসি) স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে। মূলত নির্মাণ কাজের মান, বারবার অবকাঠামোর ‘স্ট্রাকচার’ ও ‘ডিজাইন’ পরিবর্তন করা, প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় না করেই একাডেমিক ভবন নির্মাণ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইইডি’র সঙ্গে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছে। ইইডি’র শীর্ষ কর্মকর্তার গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে প্রকল্পের নির্মাণ কাজে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে ওই প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অসন্তোষ লাঘবের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ইইডি’তে দিনব্যাপী প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন ঠিকাদার ও প্রকৌশলী-কর্মকর্তাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেন ইইডি কর্তৃপক্ষ। পরদিন সেগুণ বাগিচায় আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে ‘১০০টি টিএসসি স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সিরাজুল ইসলাম কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে প্রকল্পের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি সরকারের অগ্রাধিকারের প্রকল্প। ডিসেম্বরের মধ্যে সব কলেজে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কিন্তু কাজ এগুচ্ছে না। ইইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ আদায়ে কৌশলী অবস্থান না নিয়ে হুমকি-ধমকির মাধ্যমে কাজ আদায়ের চেষ্টা করছেন।’

ইইডি’র দু’জন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পের দায়িত্বে কোন প্রকৌশলী নেই। অথচ তারা প্রকৌশলীদের কাজ বুঝতে চান, হস্তক্ষেপ করতে চান, প্রকৌশলীদের চেয়ে বেশিও বুঝতে চান। এসব ঝামেলার কারণেই নির্মাণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি শিক্ষাকে গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ বিদ্যমান ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন প্রকল্প দুটি হাতে নেয়, যেগুলো এখনও বাস্তবায়নাধীন। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩৮৯টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জন্য অন্য একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’ নামের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ভালো নয়। প্রথম পর্যায়ে জমির জটিলতাই হচ্ছে মুখ্য। তবে ইতোমধ্যে ৯৫টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫টির জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডি’র দু’জন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের প্রধান সমস্যা হলো- ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এ কাজটি যথাযথভাবে করতে পারেনি, বিলম্ব করেছে। ভূমির অবস্থান অনুযায়ী, ইইডি অবকাঠামোর ডিজাইন ও স্ট্রাকচার তৈরি করতে হচ্ছে, এ কারণে সবকটি ভবনের ডিজাইন ও স্ট্রাকচার এক রকম হচ্ছে না।’

ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ইইডি’র জানিয়ে ওই দুই প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের যেভাবে ভূমি বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে, আমরা সেভাবেই দরপত্র আহ্বান করে অবকাঠামো নির্মাণ করছি। এখানে আমাদের কোন ব্যর্থতা নেই।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি একটি করে কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স চালু করার মাধ্যমে দেশব্যাপী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করা হবে। মূলত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন ট্রেনিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।