কখনও খুঁজে পাই কখনও পীতবসনাকে হারাই
আবদুর রাজ্জাক
শর্ত ছাড়াই এই শরতেই দেখা হবে আমাদের, শালিক
কিংবা কবুতরের ডানায় ফুটবে হিজল, কেয়া
অথবা বাসমতী বেদনার অজস্র বটফুল।
আমি এই সন্ধ্যায় ভালোবাসার গন্ধ পাই, দুখি মেঘেরা
গল্পের সারথী হয়ে নিরালোকে গৃহবাস সন্ধান করে।
মতিভ্রম না হলে তুলনীয় বটফলের গন্ধ ভুলতে পারি না
দূরত্ব বাড়ানোর প্রয়োজন নেই,
চারিদিকে কুয়াশা কুয়াশা ভাব, শিশির পড়ে না-
জুনি পোকারা পাতার আড়ালে ঘুমিয়ে থাকে। ভেজা
রোদ, বাতাসে রৌদ্রের বিলাপ, ভালোবাসার আশ্বাস দিয়ে এক
ধরণের ঘৃণাই শিখিয়েছো আমাকে।
শরতের রাত নেশাগ্রস্ত রাত, তুমি এই চক্ররাত্রির চিহ্ন
কেটে উড়ে যেতে পারো না।
আমি নিজের কাছে নিজেও এক নিগৃহ অপরাধী-
তুমি তোমার নিজেকে আমার আগেই বুঝে নিয়ে
রেখেছো, এখন-
আমার অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়াটাই সমীচীন হবে।
আমার জন্য শরতের এতো ভালোবাসা সংগৃহীত নেই-
যে জমিদারী খুলে সব আমাকেই দেবে!
বটফলের মাংস খেতে খেতে কালো ওই কোকিল নিজের
সন্তানকে ভুলে যায়, বাতাস এবং সমুদ্রের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান
লক্ষ্যিত হলে
আয়নায় জন্মান্ধের হাসিটি ভ্রম বলেই মনে হয় আমার।
আমার শরৎ
আশরাফ আহমদ
বাছুর-বয়সে বসে কেচ্ছার হাটে
ভূতকে আত্মস্থ করি,
বুকে ভরি আচিবের ভয়।
পালাই, নিজেকে লুকাই কাশবনে।
দূরের তালগাছ থেকে পাগলা গন্ধ আসে
স্বপ্ন আসে বাবুই-বাড়ির,
আমিও ভাসতে থাকি ঘোরে,
ঝাওয়ার হাওরে- স্বপনে।
দামান্দের নাও যায়
মাইকে ভইরা আব্দুল আলিম,
একদম ইচ্ছা নাই, তবু
আমারে ধইরা বাইন্দা,
সুরমা লাগাইয়া চোখে, মাখাইয়া আতর,
মায়ে, উঠাইয়া দেয় বৈরাতির নাওয়ে।
কিসের বিয়ের ফুর্তি, মনে মনে কান্দি।
এইবার যদি বাঁচি
আছানমারার খুনি আচিবের থেকে,
যদি না ঘুমাতে যাই মরাটিলা-ঘরে,
আমার শরৎ সাক্ষী,
ঘাইমারা কিশোরী বাউশ সাক্ষী,
একদিন দামান্দ হবোই।
বাবুইয়ের বাড়িও বানাবো,
কৈতর বউ হবে কম্পমান আমার শরীরে,
কাশবনে মৃদুমন্দ বয়ে যাবে ঢেউ,
সুরভি ছড়িয়ে ঠিক তালগাছ সাক্ষী দেবে,
অভয়ারণ্যে ঠিক দানা খুঁটবে
আমাদের অনেক বাবুই।
এই শরতে
বিমল গুহ
আমি যেন খোলা হাওয়া অবিরল প্রবাহের স্রোতে
সকাল-সন্ধ্যা-রাত ঘোরলাগা লাটিমের সুতোর কু-লী-
দূরপ্যাঁচ খুলে খুলে চক্রের চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান মহাকাল!
শরৎ সন্ধ্যায় দেখি- মুগ্ধ কীলকলিপি লেখে কাশবন।
ভরা ভাদরের রাতে বাতায়ন হাসে খিলখিল, দেখে-
আকাশে মেলেছে ডানা চক্রাকার পূর্ণিমার মায়া!
রাতভর শতাব্দির আঁকা-চাঁদ ঝুলে থাকে ঘরের কার্নিশে,
শুভ্র আলোকরশ্মি আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে
এসে পড়ে অচেনা তল্লাটে, বিস্ময়ে বুঁদ হয়ে থাকে।
দেখি- শৈশবে ব্যবহৃত লাটিমের সুতোর বান্ডেল কারা
ঝুলিয়ে রেখেছে ওই মাকড়সার জালে। আজ এতকাল পর
মুগ্ধচোখে ফিরে পাই ঘূর্ণিজালে আটকে-থাকা হারানো শৈশব!
বিরতি
শামীম আজাদ
বিলেতে এখন বিকাল
আগস্টের বাসি আকাশ থেকে
আপেল ঝরে পড়ছে।
বহুদিন ধরে সিথানে সভ্যতা,
আর বাজুবন্ধে উল্কার ঘাম ও
পরাজয় নিয়ে বসে আছি-
এ বিধূর কালে
ঠোঁটের আঁকে যদি একটিও
প্রজাপতি পেয়ে যাই!
মৃত্যুর চেয়ে মর্মান্তিক সময় এখন
অন্ধকারের অধিক অন্ধকারে
ঘড়িগুলো অবাধ্য অবোধ্য
অসভ্যের মতো ছুটছে।
‘ওরে ঘড়ি, এই ঘাগুকালে
চারদিক না দেখেশুনে এমন করে
কেবল বরাবরের পলকা বলের মতো
ছুটলে কি চলবে?
দেশে বৈদেশে কোভিডের চেয়েও
মারাত্মক পয়মালদের পরম্পরা
পাল্লা দিচ্ছে।
আর ভাল লাগে না রে...
একটু বিরতি নে।
আমি হাড় খুলে নিদ্রা যাই
ভাদর ভাপানো ঘ্রাণে
সূর্য চমকিত হবার আগে
তোর রাঙা বাহুমূলে।
পরম গরম ঘামকণা লয়ে
স্মৃতিপেটে জলিষ্ণু জামালপুরে।
একটু জিরাই,
দে তোর ঊষামুখী হাত
বানহীন বানে ভেসে যেতে যেতে
ভাসিয়ে দিই আমাদের
সর্বশেষ বিবেক খণ্ড।’
স্কেচ
রাজা হাসান
যেন নীল আকাশ অনুপস্থিতির কথা বলে। ফেরিঘাটে জলের তোলপাড়,
সাদা কাশফুলের ধারণাতে আমি তার ফিরে যাওয়া দেখি।
খেলার নিয়মে যাওয়া আসা, হাত নাড়ানো... কোথায় মগ্নতার ছবি?
দেখার অন্তে সেই নীল আকাশ, কাকের ওড়াউড়ি।
আড়ালে সরে যেতে যেতে শরীরে জড়িয়ে যায় ন্যাপথলিনের গন্ধ,
স্মৃতি ও ভুলের দূরবর্তী এলোমেলো...
উৎসক্রমে কিছুই থাকে না, অন্তহীন একান্ত ব্যক্তিগত।
ত্রস্ত শরৎ কেন সঙ্গ দেয় প্রবহমান আচ্ছন্নতায়?
মৃত্যুর এপারে মানুষের লৌকিক সরল আখ্যান, শরৎ তা জানে
অশোক কর
অজস্র মৃত্যুকে উপেক্ষা করে একদিন আমরা জল চাইবো বলে
দিগন্তচেরা বিদ্যুচমকে মুষলধার বৃষ্টি এনে দিলো শরৎ আকাশ
জানতাম রুদ্ধশ্বাস দরজার ওপাশে মৃত্যু ওঁৎ পেতে আছে, আর
শরৎ আকাশে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত জুড়ে জোড়া-রঙধনু উড়ছে
মৃত্যুর হাতছানি পরোয়া করে না শরৎ আকাশ, জানা ছিলো না
নিঃসংকোচে কাশবনের মেঘ ভাসে মহামারি হাহাকারের ওপাশে
শরৎ জলজ্যোৎস্না জমিয়ে রাখে আমাদের জন্য ভোরের কুয়াশা
মৃত্যুর এপারে মানুষের লৌকিক সরল আখ্যান, শরৎ তা জানে
শব্দহীন শারদ-বন্দনা
মাহফুজ আল-হোসেন
বাষ্পীভূত শরমের সাহসী পটভূমিকায়
ব্রড়াবিহীন মেঘাভিসার
আর নভোনীলে হরিদ্রাভ সৌরপ্রণয়ের
আবেগঘন আরক্তিম আয়োজন
দক্ষিণ সমীরে পূর্বরাগের সশব্দ চুম্বনাবেশ
আর চৌম্বকীয় চাপা নিঃশ্বাসের পুষ্পিত সৌরভ
জানি না কার অন্যায় অশুচি প্ররোচনায়
হঠাৎবৃষ্টির এই হঠকারিতা আর
হতচকিত-হতবিহ্বল-অপ্রস্তুত প্রণয়ীযুগল
ভিজে নেয়ে একাকার শুভ্রধবল কাশবন
ভালোবাসার আলোকিত আয়োজন নিমেষেই
নৃশংস মৃত্যুর ভয়াল থাবায় নিথর নিশ্চুপ
অনন্তর অচিন এক মর্মযাতনায়
প্রাণোচ্ছল কবিও যে আজ শব্দহীন মৌনব্রতে...
ডার্ক সার্কেল
চয়ন শায়েরী
বৃষ্টির চোখের চারপাশে
ডার্ক সার্কেলের মতো
- সন্ধ্যা নেমে এলে বিমর্ষ দুপুরে
পাখিরা বিভ্রান্ত হয় সূর্যগ্রহণের
আঁধারের ধোঁকা খেয়ে- এমন আঁধারে
বৃষ্টিমুখরতা দেখে ভাদ্রের আকাশে
দুপুরের রাত;
যেন ডার্ক ম্যাটার আচ্ছন্ন করে আছে-
এইসব প্রতিক্রিয়া এড়ানো যায় না,
অর্ঘুমা রাতেরা সাক্ষ্য দেয়
- লুকোছাপা চোখে পড়ে,
বেপর্দা প্রকাশ তার আকাশটা জুড়ে;
আলোখেকো ব্ল্যাক হোল
যে-ভাবে নজর কাড়ে ঘটনাদিগন্তে-
না-বলা কথারা
অর্ঘুমা রাতেরা
আলো-আঁধারির আঁধারিটুকুন
- সে-রকমভাবে বৃষ্টির চোখের চারপাশে
মনমরা মেঘের ম্লানতা আঁকে
শরৎ দুপুরে;
ঘুরেফিরে ডার্ক সার্কেলটা
চোখ পড়ে- যদিও বৃষ্টির চোখের ভাষায়
কখনো সে মেঘবউ হয়ে কাঁদে- কখনো-বা বৃষ্টিপুরুষের
মতো কাউকে ভেজায়- কি শরৎ কি বর্ষায়;
অবচেতনাতে কোনো ডার্ক সার্কেল লুকানো থাকে- লুকায় কেউ-বা কালিমা রে. বন সানগ্লাসে- মানুষ-মানুষীও
ব্যক্তিক অন্ধকার দিক লুকিয়ে রাখে।
১টি খাঁটি দেশি কবিতা
মুজিব ইরম
তেঁতুল পাতা নড়ে রে বন্ধু তেঁতুল পাতা নড়ে, আমি বন্ধু ঘর ছাড়া লোক আমায় মনে পড়ে? চিরল চিরল তেঁতুল পাতা ঘরের পাশে বাস, আমি বন্ধু পথ হারা লোক ঘুরি বারোমাস। ঘুরি বারোমাস রে আমি ঘুরি বারোমাস, থোকা থোকা ধরে তেঁতুল পরের ঘরে বাস। পরের ঘরে বাস করি আর মনে বড়ো আশ, পাকছে তেঁতুল গাছে গাছে আমার সর্বনাশ। তোমায় মনে পড়ে রে বন্ধু তোমায় মনে পড়ে, সেই তেঁতুল পাড়িয়া রাইখো শিকায় তুলে ঘরে। সেই না পুরান তেঁতুল বন্ধু খাইবো হাসি হাসি, সেই না তেঁতুল তলায় আমরা গাইবো বারোমাসি। তোমার বাড়ির পাশে রে বন্ধু আমার বাড়ির পাশে, সেই না তেঁতুল হাতে নিয়ে বসবো দু’জন ঘাসে। বলবে তুমি মানুষ কেনো বাড়িছাড়া হয়, বলবে তুমি মানুষ কেনো বন্ধুহারা হয়!
তেঁতুল বড়ো টক রে বন্ধু তেঁতুল বড়ো টক, তোমার বাড়ির পাশে আমি ঘুইরা উড়ি বক। তারে তুমি বসতে দিও তেঁতুল গাছের ডালে, বড়ো দুঃখ পাইছি রে বন্ধু বাড়িছাড়া কালে।
জুমিয়া পাড়ায় ঘর
হাফিজ রশিদ খান
প্রিয় মাতৃভূমির মতন একটা নরম, স্নিগ্ধ মুখ
বুকের ভেতর হাজার বছর ধরে শুয়ে আছে
নদীর প্রান্তিক পাহারায়
অরণ্য ও পাহাড়ের ভালোবাসায় রাঙিয়ে
আমি ওকে জাগাই, অনেকক্ষণ কথা বলি
নানা ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে
তারপর আকাশের শব্দহীন শাদা মেঘের ট্রলারে চেপে
প্রিয়মুখ আর আমি
ভেসে-ভেসে চলি অজানায়
কাশফুল নোয়ানো নদীগুলোর ননিময় ত্বকের পাশটি ঘেঁষে
আর বর্ণালি পাখির দল যেখানে মেতেছে গানে
সেই জুমিয়া পাড়ায় বাঁধি
ভালোবাসাভরা একটা নিরালা কুঁড়েঘর...
শরতে কি বৃষ্টি হয়?
ভাগ্যধন বড়ুয়া
সাদা কাফনে ঢাকা থাকে আকাশের দেহ
তবে কি শরতে হারানো তারার প্রার্থনা সারি?
গায়ে ঠাণ্ডা লাগে উন্মুক্ত পথে...
কখনও নীলাকাশ মুখ দেখায় লাজুক ভঙ্গিমায়
সাদা আর নীলে মিলে দিল খোলে নীরব সাধনায়...
কাঁসর তীব্রতা তোলে বহুকাল আগে শোনা
নাতিশীতোষ্ণ দিনে ভাবি চলে যাবো দূরে
নতুন ঋতুতে এসে ভাসমান মেঘে বেলা পার
পরতে পরতে শরত দেখাবে স্বরূপ, উজ্জল সন্ধ্যায়
ঢেউ জলে ঢেউ কাশে তরঙ্গিত মন দোলে
মন খোলে মন বলে বহুকথা যা বুঝিনি আগে
বোঝাপড়া শুরু হলে খোঁজাখুঁজি বহু কমে
স্থির মেঘের মতো অভিজ্ঞতার স্তুপ গড়ি।
জোরে বাতাস এলে ভাসতে হবে জানি...
‘পুজোয় দেখা হবে, এবার আসি’ বলে গেলো সে
ফিরে এলো না, কালোমেঘ এলো চোখের কোণে...
শরতে কি বৃষ্টি হয়?
বীজ অঙ্কুর মেলে উন্মুক্ত হৃদয় পেলে
আদিত্য নজরুল
কাশফুল দেখলেই
অপু ও দুর্গার কথা মনে পড়ে খুব।
লম্বা রেলগাড়ি-
অন্তহীন ক্লান্তি নিয়ে
মেঘ ও রোদ্দুরে ভিজে ভিজে
কু...ঝিক ঝিক... কু...ঝিক ঝিক
শব্দ তুলে
কল্পনায় দৌড়াতে থাকে।
শরৎ এলেই
কাশবন
রেলগাড়ি ইচ্ছে করে খুব।
মায়া ছিঁড়ে চলে যাওয়া
দুর্গা ও অপর্ণার শোক
সহ্য করতে পারবো না বলে
কখনো অপু হতে ইচ্ছে করে না...!
দিনরাত এক মেঘলাচোখী
শাহ বুলবুল
নগরীর চর ভাসে আহত শরতের মধ্যরাতে
লোনা পাহাড়ের মেঘলা বন্দর
মালতীর দেশে সুখ পোষে বেদনার কাঁচুলিতে।
কৃষাণীর ফেরারি মন মেহগনির আদিম ডালে
কার্তিকের অমাবস্যায় চুরমার প্রিয়তমা সুপারির গ্রাম
একরাত বৃষ্টি বুনে পালতোলা ছাতিমের ডালে।
শারদীয়া মেয়ের গামছাপাতা দাওয়ায়
পিঁড়িপাতে পুরনো গল্পের হলুদ শিকড়
অনুভবের চিবুক রাখে প্রতীক্ষার শেষ ঠিকানায়।
বুকের সুরঙ্গে ছেঁড়াফাড়া টুকরো স্মৃতির কাফন
তোমাদের মনে করে সন্ধ্যার নিশিদিঘি।
এখনও অপেক্ষার প্রতিবেশী পাড়ায়
দিনরাত এক মেঘলাচোখী নিড়ান দেয়
ব্যাবিলনের পথে পথে কোন এক কষ্টের কফিন।
শুভ বিজয়া এবং প্রেমযাপনের ঋতু
চামেলী বসু
অসমাপ্ত কথার রেখে যাওয়া দিনযাপন শেষে
যেটুকু মৌনতার মধুমক্ষী গুনগুন
বিসর্জনের ঘাটে-
শিউলির ঘ্রাণে ভেজা মন নিয়ে
দশমীর দেবী হবো
অচেনা চোখের মুগ্ধ ভাসানে;
লালপাড় সাদা শাড়ি
বালিকার সিঁথি হাসে সিঁদূর আভাসে; জমানো আবেগ কটাক্ষে
ঝলকে ওঠে গোধূলি গঙ্গার রেশম ঢেউয়ে-
অনুসন্ধানী চোখের বিভ্রমে পুড়ে
ভাসান বিবাগী বুকে জমিয়ে ভোরের শিশির
মায়াবী ময়ূর হবো শিকারী তোমার তীরে।
তিলকাব্য : ০৩
জাফর সাদেক
নৌকো বেসামাল- অথচ নদীটা শরতের জয়গান
যাত্রী মাত্র দুজন, তিল আর তাল
তিলের দিকে দেবে গেছে নৌকার গলুই
অসম ভারসাম্যে তালকে বেশ কথা শুনালো মাঝি
এমন অপমান সামলে
তিলকে তাল করার অনেক গল্প বললো তাল
এবং মনে করিয়ে দিলো আরও
কবিগুরু খ্যাত, তার ভূমিকায় আছে তালগাছ পদ্যও
যাতে তিল-সম্পদ হতে মাঝির মন অন্যদিকে নেয়া যায়
তবু ওই তিলক বিন্দুর ভারেই নৌকো ডুবো ডুবো ভাব
গোপন প্রকাশ্য হলে আসে ঝড়- এমন ভাবনায়
তিল নৌকো থেকে নেমে গেলে, দেখা যায় নদী নেই
পুরো নদীই ঢুকে গেছে তিলের অসীম গহীনে
মাঝি চাইছিলো তিল নৌকা ডুবিয়ে দিক
- কিন্তু তার চাওয়ায় কী আসে যায়
সংকট
লুৎফুন নাহার লোপা
তিন দশকের একটি গাছকে ভেংগে পড়তে দেখে
এড়িয়ে যাই একটি লাশের প্রতিচ্ছবি,
প্রতি রাতের জমানো সংকট থেকে
ফেলে দেই রুপান্তরিত জীবদ্দশা,
আর উত্তাপ ছড়িয়ে দেই কূল থেকে।
আংগুলের ভাঁজে জমে থাকে অগ্নিখরা,
ভাদ্র মাসে আকাশ দেখি একা,
কিঞ্চিৎ আলো যে এখনো চাঁদ হয়ে যায়।
শরতের জোছনাভোগ
বীথি রহমান
আজ মেঘের অলঙ্কারে সোনা রোদ বিমুগ্ধ সাজে সেজেছে
সে রোদের পথ ধরে তোমাকে নিয়ে যাবে অলির গুঞ্জন
নিয়ে যাবে মাখা মাখা পাতা খসানোর দুপুরে
নিয়ে যাবে রঙমাখা মাদুর বিছানো প্রসন্ন বিকেলে
শারদ বনবিহারে আজ তুমি যাবে জোছনাভোগের
তৃষ্ণায় মরে মরে...
পানকৌড়ির ডানায়, মেঘের পালকে
শাপলা ফোটার কুসুম কুসুম সকালে
সাদা বকের পিঠে ভর দিয়ে
হাতে নিয়ে সোনালি বকুল
শিশিরমাখা জলসায় আমিও তোমার সঙ্গী হবো
কাশফুলের ঝোঁপে ঝুলে আছে ঝকঝকে নীলাকাশ-
চোখ থেকে কিছু মেঘ খুলে রাখবো তার ধবল শুভ্র বুকে।
শরত ও হেমন্ত বিলীন পরস্পরে
শেলী সেনগুপ্তা
চোখের মুদ্রায় আকাশ আঁকলে
ছড়িয়ে দিলে খেয়ালি মেঘ
মাটির জরায়ু ফুঁড়ে গজানো গাছে
তুলে দিলে শিউলি,
ওরা লুটোপুটি খায় সবুজ ঘাসে
তুমি এবং আমিও
ঘাস ও শিউলি হয়ে ভেসে যাচ্ছি বৃক্ষ থেকে বনান্তরে,
প্রবল বর্ষণে ভাঙ্গা স্বপ্নটা জুড়ে নিয়ে
তুমি শরত হলে-
মেঘ-বৈরাগ্য গায়ে মেখে
আমি হেমন্ত হয়ে
কাশবন ভালোবাসায় ছুটে গেছি তোমার বুকে-
অপেক্ষার গল্প না শোনা
আমরাও বিলীন পরস্পরে-
দান্তে, শরত বোঝে না পুনঃকাল
মাসুদ মুস্তাফিজ
ঘুড়ি ওড়ে সংবাদ বন্দরে-
নতুন পাণ্ডুলিপি আবিষ্কারের বাতাসে-ট্রেন উদ্ধত বাতাস ভেঙে
উত্তাল মেঘে ভেসে যাচ্ছে আকাশ, শরতের আলোমাখা প্রেমমত্ত বিশ্বাস নিয়ে-
আমরা ঋতুর বীজ বুনি সমুদ্র বিজ্ঞানে-পৃথিবীর দেহ কী মাটি নয়, সময়ের শষ্যভাণ্ডারে
বৃষ্টিভয়ে দান্তে পরকাল বোঝে না- তিনি পর্যটক গৃহে ফেরেন করোনা আইসোলশনে!
মেঘের পুনর্জন্মে পৃথিবীর মহামারি উড়ে যাবে- উবে যাবে নতুন বৃক্ষ হয়ে
ও শরতের পেঁজাজলের মেঘ তুমি অপেক্ষার অসীমফুল নিয়ে রোদে দাঁড়িয়ো না প্লিজ!
আজ পৃথিবীর দুর্দিন মেড়ে কবিরা কেউ অভিমান আর ভালোবাসার কবিতা লিখতে পারে না
দান্তে , তুমি শরত বোঝো কী যাতনামধুর অপুষ্টিময় এই রহস্য দিনের রঙে
বছরের আনমোড়া স্মৃতির আয়না ভেঙে ঘুড়িওড়া মেঘের ট্রেনটি মাথায় সূর্যদেব রেখে
বিষমুক্ত আলো মাটির বুকে ছিঁটিয়ে দেবে নিশ্চয়ই-
তুমি শুধু আমার জীবনভরা শরতমগ্নতাগুলো জমা রেখো আগামির জন্যে
হে স্বপ্নদেবতা আমার!
হে স্বপ্নপিতা, দান্তেকে বলো-
জানি একদিন অবশ্যই আমরা আমাদের বিশ্বসৃষ্টি করতে পারবো!
শরৎ
ডালিয়া চৌধুরী
শরতের দিগন্ত ধবল সাদা কাশবন
মেঘের মতো কাশফুলের পাপড়িরা
নীল পথ ধরে দূরবর্তী দূরে
বহুদূরের শহরে উদ্দেশ্যহীন ঝরে পড়ে।
রাতের চন্দ্র নক্ষত্র-নারী
পেলব আকাশ ছেড়ে ঘন ঘাসে
জ্যোৎস্নার বেশে পায়চারি করে
খর¯্রােতা জলের রুপালি ক্যানভাসে।
সুরস্নিগ্ধ সকালের মৃদুমন্দ বাতাস
দুলাতে থাকে শিশির নিষিক্ত যুঁই জবা
শরতে ভীষণ ঘোরে পায়
রেহেনা মাহমুদ
শরত একটা ঘোরের নাম
শরতে সব জীবনানন্দনীয়
যে কোনো নদী তখন ধানসিড়ি
যে কোনো নারী বনলতা।
নিশিতে পাওয়া নারীর মতো
ধবল জোছনা যাকে ডেকে নেয় গৃহের বাইরে
তার আর ভোর দেখা হয় না।
শরতে সব তরুণী সুনীলের বরুণা
বরুণা কথা রাখতে চায়
বুকের কপাটে দুঃখ মাথা ঠুকে বলে-
গুনে গুনে একশো একটাই নীল পদ্ম চাই
চাই দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে উন্মুত্ত যুবক বাঁধুক লাল কাপড়।
অথচ, কেউ কথা রাখেনি সুনীল;
কেউ না।
নীরার প্রেমিক ছুঁয়েছে ঠোঁট, ছুঁয়েছে আরো অজস্র পাপ।
শরতে আকাশটা ক্যানভাস
যার বুকে ইচ্ছেমতো দীর্ঘশ্বাস ছোড়া যায়
মেঘের তুলিতে সেসব শব্দ হয়
শব্দগুলো দীর্ঘ কবিতা বুনে কাশবনে লুটিয়ে পড়ে।
শরতে ভীষণ ঘোরে পায়
শরতে কেমন, কেমন কবিতা পায়!!
হলুদ পাতার কান্না
মিলি রায়
মন্দ্রিত হিমের শ্রান্ত প্রহরগুলো ফুরিয়ে গেলে
হাজার বছরের ক্লান্তি নেমে এসেছিলো,
বোধের কারাগারে বন্দি এক হলুদ পাতার শরীরে।
অনুভূতির মৃত্যুতে সর্বস্ব খুইয়ে ঝরে পড়েছিলো
ভোর না দেখা রাতের শিউলীর মতো।
তারপর
স্থানুমূর্তির মতো প্রেমহীন, আবেগহীন
নীরব, নিথর এক হৃদয় নিয়ে হেঁটে চলে গেছে
নির্জন পৃথিবীর পথ ধরে।
শতাব্দির জীর্ণতা শরীরে নিয়ে,
বিস্বাদে ভরা, স্বপ্নাহত মন নিয়ে হারিয়ে গেল অবশেষে,
মহাকালের গর্ভে লুকানো, অন্ধকারের অচিনপুরে।
দীর্ঘ বিষণœ ব্রাহ্ম মুহূর্তের শেষে
নিষ্পত্র বৃক্ষের নিঃসীম একাকীত্বকে মুছে দেবে বলে,
চেতনার প্রতিটি কোষ থেকে জন্ম নেবে কি
পৃথিবীর প্রথম কবিতা?
লেখা হবে কি, অলিখিত কোনো পঙক্তিমালা?
সময়ের শূন্যতায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষের শূন্য আঁচলে
লাগবে কি কখনো অনুরাগের শেষ রঙ?
আনকোরা বাতাস ছুঁয়ে যাবে কি
পত্রপল্লবহীন বৃক্ষের নিস্তরঙ্গ শাখা?
নির্জন একাকীত্বকে ভালোবেসে
কে কবে এঁকেছে, সুখের জলছবি।
বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২০ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭
কখনও খুঁজে পাই কখনও পীতবসনাকে হারাই
আবদুর রাজ্জাক
শর্ত ছাড়াই এই শরতেই দেখা হবে আমাদের, শালিক
কিংবা কবুতরের ডানায় ফুটবে হিজল, কেয়া
অথবা বাসমতী বেদনার অজস্র বটফুল।
আমি এই সন্ধ্যায় ভালোবাসার গন্ধ পাই, দুখি মেঘেরা
গল্পের সারথী হয়ে নিরালোকে গৃহবাস সন্ধান করে।
মতিভ্রম না হলে তুলনীয় বটফলের গন্ধ ভুলতে পারি না
দূরত্ব বাড়ানোর প্রয়োজন নেই,
চারিদিকে কুয়াশা কুয়াশা ভাব, শিশির পড়ে না-
জুনি পোকারা পাতার আড়ালে ঘুমিয়ে থাকে। ভেজা
রোদ, বাতাসে রৌদ্রের বিলাপ, ভালোবাসার আশ্বাস দিয়ে এক
ধরণের ঘৃণাই শিখিয়েছো আমাকে।
শরতের রাত নেশাগ্রস্ত রাত, তুমি এই চক্ররাত্রির চিহ্ন
কেটে উড়ে যেতে পারো না।
আমি নিজের কাছে নিজেও এক নিগৃহ অপরাধী-
তুমি তোমার নিজেকে আমার আগেই বুঝে নিয়ে
রেখেছো, এখন-
আমার অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়াটাই সমীচীন হবে।
আমার জন্য শরতের এতো ভালোবাসা সংগৃহীত নেই-
যে জমিদারী খুলে সব আমাকেই দেবে!
বটফলের মাংস খেতে খেতে কালো ওই কোকিল নিজের
সন্তানকে ভুলে যায়, বাতাস এবং সমুদ্রের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান
লক্ষ্যিত হলে
আয়নায় জন্মান্ধের হাসিটি ভ্রম বলেই মনে হয় আমার।
আমার শরৎ
আশরাফ আহমদ
বাছুর-বয়সে বসে কেচ্ছার হাটে
ভূতকে আত্মস্থ করি,
বুকে ভরি আচিবের ভয়।
পালাই, নিজেকে লুকাই কাশবনে।
দূরের তালগাছ থেকে পাগলা গন্ধ আসে
স্বপ্ন আসে বাবুই-বাড়ির,
আমিও ভাসতে থাকি ঘোরে,
ঝাওয়ার হাওরে- স্বপনে।
দামান্দের নাও যায়
মাইকে ভইরা আব্দুল আলিম,
একদম ইচ্ছা নাই, তবু
আমারে ধইরা বাইন্দা,
সুরমা লাগাইয়া চোখে, মাখাইয়া আতর,
মায়ে, উঠাইয়া দেয় বৈরাতির নাওয়ে।
কিসের বিয়ের ফুর্তি, মনে মনে কান্দি।
এইবার যদি বাঁচি
আছানমারার খুনি আচিবের থেকে,
যদি না ঘুমাতে যাই মরাটিলা-ঘরে,
আমার শরৎ সাক্ষী,
ঘাইমারা কিশোরী বাউশ সাক্ষী,
একদিন দামান্দ হবোই।
বাবুইয়ের বাড়িও বানাবো,
কৈতর বউ হবে কম্পমান আমার শরীরে,
কাশবনে মৃদুমন্দ বয়ে যাবে ঢেউ,
সুরভি ছড়িয়ে ঠিক তালগাছ সাক্ষী দেবে,
অভয়ারণ্যে ঠিক দানা খুঁটবে
আমাদের অনেক বাবুই।
এই শরতে
বিমল গুহ
আমি যেন খোলা হাওয়া অবিরল প্রবাহের স্রোতে
সকাল-সন্ধ্যা-রাত ঘোরলাগা লাটিমের সুতোর কু-লী-
দূরপ্যাঁচ খুলে খুলে চক্রের চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান মহাকাল!
শরৎ সন্ধ্যায় দেখি- মুগ্ধ কীলকলিপি লেখে কাশবন।
ভরা ভাদরের রাতে বাতায়ন হাসে খিলখিল, দেখে-
আকাশে মেলেছে ডানা চক্রাকার পূর্ণিমার মায়া!
রাতভর শতাব্দির আঁকা-চাঁদ ঝুলে থাকে ঘরের কার্নিশে,
শুভ্র আলোকরশ্মি আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে
এসে পড়ে অচেনা তল্লাটে, বিস্ময়ে বুঁদ হয়ে থাকে।
দেখি- শৈশবে ব্যবহৃত লাটিমের সুতোর বান্ডেল কারা
ঝুলিয়ে রেখেছে ওই মাকড়সার জালে। আজ এতকাল পর
মুগ্ধচোখে ফিরে পাই ঘূর্ণিজালে আটকে-থাকা হারানো শৈশব!
বিরতি
শামীম আজাদ
বিলেতে এখন বিকাল
আগস্টের বাসি আকাশ থেকে
আপেল ঝরে পড়ছে।
বহুদিন ধরে সিথানে সভ্যতা,
আর বাজুবন্ধে উল্কার ঘাম ও
পরাজয় নিয়ে বসে আছি-
এ বিধূর কালে
ঠোঁটের আঁকে যদি একটিও
প্রজাপতি পেয়ে যাই!
মৃত্যুর চেয়ে মর্মান্তিক সময় এখন
অন্ধকারের অধিক অন্ধকারে
ঘড়িগুলো অবাধ্য অবোধ্য
অসভ্যের মতো ছুটছে।
‘ওরে ঘড়ি, এই ঘাগুকালে
চারদিক না দেখেশুনে এমন করে
কেবল বরাবরের পলকা বলের মতো
ছুটলে কি চলবে?
দেশে বৈদেশে কোভিডের চেয়েও
মারাত্মক পয়মালদের পরম্পরা
পাল্লা দিচ্ছে।
আর ভাল লাগে না রে...
একটু বিরতি নে।
আমি হাড় খুলে নিদ্রা যাই
ভাদর ভাপানো ঘ্রাণে
সূর্য চমকিত হবার আগে
তোর রাঙা বাহুমূলে।
পরম গরম ঘামকণা লয়ে
স্মৃতিপেটে জলিষ্ণু জামালপুরে।
একটু জিরাই,
দে তোর ঊষামুখী হাত
বানহীন বানে ভেসে যেতে যেতে
ভাসিয়ে দিই আমাদের
সর্বশেষ বিবেক খণ্ড।’
স্কেচ
রাজা হাসান
যেন নীল আকাশ অনুপস্থিতির কথা বলে। ফেরিঘাটে জলের তোলপাড়,
সাদা কাশফুলের ধারণাতে আমি তার ফিরে যাওয়া দেখি।
খেলার নিয়মে যাওয়া আসা, হাত নাড়ানো... কোথায় মগ্নতার ছবি?
দেখার অন্তে সেই নীল আকাশ, কাকের ওড়াউড়ি।
আড়ালে সরে যেতে যেতে শরীরে জড়িয়ে যায় ন্যাপথলিনের গন্ধ,
স্মৃতি ও ভুলের দূরবর্তী এলোমেলো...
উৎসক্রমে কিছুই থাকে না, অন্তহীন একান্ত ব্যক্তিগত।
ত্রস্ত শরৎ কেন সঙ্গ দেয় প্রবহমান আচ্ছন্নতায়?
মৃত্যুর এপারে মানুষের লৌকিক সরল আখ্যান, শরৎ তা জানে
অশোক কর
অজস্র মৃত্যুকে উপেক্ষা করে একদিন আমরা জল চাইবো বলে
দিগন্তচেরা বিদ্যুচমকে মুষলধার বৃষ্টি এনে দিলো শরৎ আকাশ
জানতাম রুদ্ধশ্বাস দরজার ওপাশে মৃত্যু ওঁৎ পেতে আছে, আর
শরৎ আকাশে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত জুড়ে জোড়া-রঙধনু উড়ছে
মৃত্যুর হাতছানি পরোয়া করে না শরৎ আকাশ, জানা ছিলো না
নিঃসংকোচে কাশবনের মেঘ ভাসে মহামারি হাহাকারের ওপাশে
শরৎ জলজ্যোৎস্না জমিয়ে রাখে আমাদের জন্য ভোরের কুয়াশা
মৃত্যুর এপারে মানুষের লৌকিক সরল আখ্যান, শরৎ তা জানে
শব্দহীন শারদ-বন্দনা
মাহফুজ আল-হোসেন
বাষ্পীভূত শরমের সাহসী পটভূমিকায়
ব্রড়াবিহীন মেঘাভিসার
আর নভোনীলে হরিদ্রাভ সৌরপ্রণয়ের
আবেগঘন আরক্তিম আয়োজন
দক্ষিণ সমীরে পূর্বরাগের সশব্দ চুম্বনাবেশ
আর চৌম্বকীয় চাপা নিঃশ্বাসের পুষ্পিত সৌরভ
জানি না কার অন্যায় অশুচি প্ররোচনায়
হঠাৎবৃষ্টির এই হঠকারিতা আর
হতচকিত-হতবিহ্বল-অপ্রস্তুত প্রণয়ীযুগল
ভিজে নেয়ে একাকার শুভ্রধবল কাশবন
ভালোবাসার আলোকিত আয়োজন নিমেষেই
নৃশংস মৃত্যুর ভয়াল থাবায় নিথর নিশ্চুপ
অনন্তর অচিন এক মর্মযাতনায়
প্রাণোচ্ছল কবিও যে আজ শব্দহীন মৌনব্রতে...
ডার্ক সার্কেল
চয়ন শায়েরী
বৃষ্টির চোখের চারপাশে
ডার্ক সার্কেলের মতো
- সন্ধ্যা নেমে এলে বিমর্ষ দুপুরে
পাখিরা বিভ্রান্ত হয় সূর্যগ্রহণের
আঁধারের ধোঁকা খেয়ে- এমন আঁধারে
বৃষ্টিমুখরতা দেখে ভাদ্রের আকাশে
দুপুরের রাত;
যেন ডার্ক ম্যাটার আচ্ছন্ন করে আছে-
এইসব প্রতিক্রিয়া এড়ানো যায় না,
অর্ঘুমা রাতেরা সাক্ষ্য দেয়
- লুকোছাপা চোখে পড়ে,
বেপর্দা প্রকাশ তার আকাশটা জুড়ে;
আলোখেকো ব্ল্যাক হোল
যে-ভাবে নজর কাড়ে ঘটনাদিগন্তে-
না-বলা কথারা
অর্ঘুমা রাতেরা
আলো-আঁধারির আঁধারিটুকুন
- সে-রকমভাবে বৃষ্টির চোখের চারপাশে
মনমরা মেঘের ম্লানতা আঁকে
শরৎ দুপুরে;
ঘুরেফিরে ডার্ক সার্কেলটা
চোখ পড়ে- যদিও বৃষ্টির চোখের ভাষায়
কখনো সে মেঘবউ হয়ে কাঁদে- কখনো-বা বৃষ্টিপুরুষের
মতো কাউকে ভেজায়- কি শরৎ কি বর্ষায়;
অবচেতনাতে কোনো ডার্ক সার্কেল লুকানো থাকে- লুকায় কেউ-বা কালিমা রে. বন সানগ্লাসে- মানুষ-মানুষীও
ব্যক্তিক অন্ধকার দিক লুকিয়ে রাখে।
১টি খাঁটি দেশি কবিতা
মুজিব ইরম
তেঁতুল পাতা নড়ে রে বন্ধু তেঁতুল পাতা নড়ে, আমি বন্ধু ঘর ছাড়া লোক আমায় মনে পড়ে? চিরল চিরল তেঁতুল পাতা ঘরের পাশে বাস, আমি বন্ধু পথ হারা লোক ঘুরি বারোমাস। ঘুরি বারোমাস রে আমি ঘুরি বারোমাস, থোকা থোকা ধরে তেঁতুল পরের ঘরে বাস। পরের ঘরে বাস করি আর মনে বড়ো আশ, পাকছে তেঁতুল গাছে গাছে আমার সর্বনাশ। তোমায় মনে পড়ে রে বন্ধু তোমায় মনে পড়ে, সেই তেঁতুল পাড়িয়া রাইখো শিকায় তুলে ঘরে। সেই না পুরান তেঁতুল বন্ধু খাইবো হাসি হাসি, সেই না তেঁতুল তলায় আমরা গাইবো বারোমাসি। তোমার বাড়ির পাশে রে বন্ধু আমার বাড়ির পাশে, সেই না তেঁতুল হাতে নিয়ে বসবো দু’জন ঘাসে। বলবে তুমি মানুষ কেনো বাড়িছাড়া হয়, বলবে তুমি মানুষ কেনো বন্ধুহারা হয়!
তেঁতুল বড়ো টক রে বন্ধু তেঁতুল বড়ো টক, তোমার বাড়ির পাশে আমি ঘুইরা উড়ি বক। তারে তুমি বসতে দিও তেঁতুল গাছের ডালে, বড়ো দুঃখ পাইছি রে বন্ধু বাড়িছাড়া কালে।
জুমিয়া পাড়ায় ঘর
হাফিজ রশিদ খান
প্রিয় মাতৃভূমির মতন একটা নরম, স্নিগ্ধ মুখ
বুকের ভেতর হাজার বছর ধরে শুয়ে আছে
নদীর প্রান্তিক পাহারায়
অরণ্য ও পাহাড়ের ভালোবাসায় রাঙিয়ে
আমি ওকে জাগাই, অনেকক্ষণ কথা বলি
নানা ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে
তারপর আকাশের শব্দহীন শাদা মেঘের ট্রলারে চেপে
প্রিয়মুখ আর আমি
ভেসে-ভেসে চলি অজানায়
কাশফুল নোয়ানো নদীগুলোর ননিময় ত্বকের পাশটি ঘেঁষে
আর বর্ণালি পাখির দল যেখানে মেতেছে গানে
সেই জুমিয়া পাড়ায় বাঁধি
ভালোবাসাভরা একটা নিরালা কুঁড়েঘর...
শরতে কি বৃষ্টি হয়?
ভাগ্যধন বড়ুয়া
সাদা কাফনে ঢাকা থাকে আকাশের দেহ
তবে কি শরতে হারানো তারার প্রার্থনা সারি?
গায়ে ঠাণ্ডা লাগে উন্মুক্ত পথে...
কখনও নীলাকাশ মুখ দেখায় লাজুক ভঙ্গিমায়
সাদা আর নীলে মিলে দিল খোলে নীরব সাধনায়...
কাঁসর তীব্রতা তোলে বহুকাল আগে শোনা
নাতিশীতোষ্ণ দিনে ভাবি চলে যাবো দূরে
নতুন ঋতুতে এসে ভাসমান মেঘে বেলা পার
পরতে পরতে শরত দেখাবে স্বরূপ, উজ্জল সন্ধ্যায়
ঢেউ জলে ঢেউ কাশে তরঙ্গিত মন দোলে
মন খোলে মন বলে বহুকথা যা বুঝিনি আগে
বোঝাপড়া শুরু হলে খোঁজাখুঁজি বহু কমে
স্থির মেঘের মতো অভিজ্ঞতার স্তুপ গড়ি।
জোরে বাতাস এলে ভাসতে হবে জানি...
‘পুজোয় দেখা হবে, এবার আসি’ বলে গেলো সে
ফিরে এলো না, কালোমেঘ এলো চোখের কোণে...
শরতে কি বৃষ্টি হয়?
বীজ অঙ্কুর মেলে উন্মুক্ত হৃদয় পেলে
আদিত্য নজরুল
কাশফুল দেখলেই
অপু ও দুর্গার কথা মনে পড়ে খুব।
লম্বা রেলগাড়ি-
অন্তহীন ক্লান্তি নিয়ে
মেঘ ও রোদ্দুরে ভিজে ভিজে
কু...ঝিক ঝিক... কু...ঝিক ঝিক
শব্দ তুলে
কল্পনায় দৌড়াতে থাকে।
শরৎ এলেই
কাশবন
রেলগাড়ি ইচ্ছে করে খুব।
মায়া ছিঁড়ে চলে যাওয়া
দুর্গা ও অপর্ণার শোক
সহ্য করতে পারবো না বলে
কখনো অপু হতে ইচ্ছে করে না...!
দিনরাত এক মেঘলাচোখী
শাহ বুলবুল
নগরীর চর ভাসে আহত শরতের মধ্যরাতে
লোনা পাহাড়ের মেঘলা বন্দর
মালতীর দেশে সুখ পোষে বেদনার কাঁচুলিতে।
কৃষাণীর ফেরারি মন মেহগনির আদিম ডালে
কার্তিকের অমাবস্যায় চুরমার প্রিয়তমা সুপারির গ্রাম
একরাত বৃষ্টি বুনে পালতোলা ছাতিমের ডালে।
শারদীয়া মেয়ের গামছাপাতা দাওয়ায়
পিঁড়িপাতে পুরনো গল্পের হলুদ শিকড়
অনুভবের চিবুক রাখে প্রতীক্ষার শেষ ঠিকানায়।
বুকের সুরঙ্গে ছেঁড়াফাড়া টুকরো স্মৃতির কাফন
তোমাদের মনে করে সন্ধ্যার নিশিদিঘি।
এখনও অপেক্ষার প্রতিবেশী পাড়ায়
দিনরাত এক মেঘলাচোখী নিড়ান দেয়
ব্যাবিলনের পথে পথে কোন এক কষ্টের কফিন।
শুভ বিজয়া এবং প্রেমযাপনের ঋতু
চামেলী বসু
অসমাপ্ত কথার রেখে যাওয়া দিনযাপন শেষে
যেটুকু মৌনতার মধুমক্ষী গুনগুন
বিসর্জনের ঘাটে-
শিউলির ঘ্রাণে ভেজা মন নিয়ে
দশমীর দেবী হবো
অচেনা চোখের মুগ্ধ ভাসানে;
লালপাড় সাদা শাড়ি
বালিকার সিঁথি হাসে সিঁদূর আভাসে; জমানো আবেগ কটাক্ষে
ঝলকে ওঠে গোধূলি গঙ্গার রেশম ঢেউয়ে-
অনুসন্ধানী চোখের বিভ্রমে পুড়ে
ভাসান বিবাগী বুকে জমিয়ে ভোরের শিশির
মায়াবী ময়ূর হবো শিকারী তোমার তীরে।
তিলকাব্য : ০৩
জাফর সাদেক
নৌকো বেসামাল- অথচ নদীটা শরতের জয়গান
যাত্রী মাত্র দুজন, তিল আর তাল
তিলের দিকে দেবে গেছে নৌকার গলুই
অসম ভারসাম্যে তালকে বেশ কথা শুনালো মাঝি
এমন অপমান সামলে
তিলকে তাল করার অনেক গল্প বললো তাল
এবং মনে করিয়ে দিলো আরও
কবিগুরু খ্যাত, তার ভূমিকায় আছে তালগাছ পদ্যও
যাতে তিল-সম্পদ হতে মাঝির মন অন্যদিকে নেয়া যায়
তবু ওই তিলক বিন্দুর ভারেই নৌকো ডুবো ডুবো ভাব
গোপন প্রকাশ্য হলে আসে ঝড়- এমন ভাবনায়
তিল নৌকো থেকে নেমে গেলে, দেখা যায় নদী নেই
পুরো নদীই ঢুকে গেছে তিলের অসীম গহীনে
মাঝি চাইছিলো তিল নৌকা ডুবিয়ে দিক
- কিন্তু তার চাওয়ায় কী আসে যায়
সংকট
লুৎফুন নাহার লোপা
তিন দশকের একটি গাছকে ভেংগে পড়তে দেখে
এড়িয়ে যাই একটি লাশের প্রতিচ্ছবি,
প্রতি রাতের জমানো সংকট থেকে
ফেলে দেই রুপান্তরিত জীবদ্দশা,
আর উত্তাপ ছড়িয়ে দেই কূল থেকে।
আংগুলের ভাঁজে জমে থাকে অগ্নিখরা,
ভাদ্র মাসে আকাশ দেখি একা,
কিঞ্চিৎ আলো যে এখনো চাঁদ হয়ে যায়।
শরতের জোছনাভোগ
বীথি রহমান
আজ মেঘের অলঙ্কারে সোনা রোদ বিমুগ্ধ সাজে সেজেছে
সে রোদের পথ ধরে তোমাকে নিয়ে যাবে অলির গুঞ্জন
নিয়ে যাবে মাখা মাখা পাতা খসানোর দুপুরে
নিয়ে যাবে রঙমাখা মাদুর বিছানো প্রসন্ন বিকেলে
শারদ বনবিহারে আজ তুমি যাবে জোছনাভোগের
তৃষ্ণায় মরে মরে...
পানকৌড়ির ডানায়, মেঘের পালকে
শাপলা ফোটার কুসুম কুসুম সকালে
সাদা বকের পিঠে ভর দিয়ে
হাতে নিয়ে সোনালি বকুল
শিশিরমাখা জলসায় আমিও তোমার সঙ্গী হবো
কাশফুলের ঝোঁপে ঝুলে আছে ঝকঝকে নীলাকাশ-
চোখ থেকে কিছু মেঘ খুলে রাখবো তার ধবল শুভ্র বুকে।
শরত ও হেমন্ত বিলীন পরস্পরে
শেলী সেনগুপ্তা
চোখের মুদ্রায় আকাশ আঁকলে
ছড়িয়ে দিলে খেয়ালি মেঘ
মাটির জরায়ু ফুঁড়ে গজানো গাছে
তুলে দিলে শিউলি,
ওরা লুটোপুটি খায় সবুজ ঘাসে
তুমি এবং আমিও
ঘাস ও শিউলি হয়ে ভেসে যাচ্ছি বৃক্ষ থেকে বনান্তরে,
প্রবল বর্ষণে ভাঙ্গা স্বপ্নটা জুড়ে নিয়ে
তুমি শরত হলে-
মেঘ-বৈরাগ্য গায়ে মেখে
আমি হেমন্ত হয়ে
কাশবন ভালোবাসায় ছুটে গেছি তোমার বুকে-
অপেক্ষার গল্প না শোনা
আমরাও বিলীন পরস্পরে-
দান্তে, শরত বোঝে না পুনঃকাল
মাসুদ মুস্তাফিজ
ঘুড়ি ওড়ে সংবাদ বন্দরে-
নতুন পাণ্ডুলিপি আবিষ্কারের বাতাসে-ট্রেন উদ্ধত বাতাস ভেঙে
উত্তাল মেঘে ভেসে যাচ্ছে আকাশ, শরতের আলোমাখা প্রেমমত্ত বিশ্বাস নিয়ে-
আমরা ঋতুর বীজ বুনি সমুদ্র বিজ্ঞানে-পৃথিবীর দেহ কী মাটি নয়, সময়ের শষ্যভাণ্ডারে
বৃষ্টিভয়ে দান্তে পরকাল বোঝে না- তিনি পর্যটক গৃহে ফেরেন করোনা আইসোলশনে!
মেঘের পুনর্জন্মে পৃথিবীর মহামারি উড়ে যাবে- উবে যাবে নতুন বৃক্ষ হয়ে
ও শরতের পেঁজাজলের মেঘ তুমি অপেক্ষার অসীমফুল নিয়ে রোদে দাঁড়িয়ো না প্লিজ!
আজ পৃথিবীর দুর্দিন মেড়ে কবিরা কেউ অভিমান আর ভালোবাসার কবিতা লিখতে পারে না
দান্তে , তুমি শরত বোঝো কী যাতনামধুর অপুষ্টিময় এই রহস্য দিনের রঙে
বছরের আনমোড়া স্মৃতির আয়না ভেঙে ঘুড়িওড়া মেঘের ট্রেনটি মাথায় সূর্যদেব রেখে
বিষমুক্ত আলো মাটির বুকে ছিঁটিয়ে দেবে নিশ্চয়ই-
তুমি শুধু আমার জীবনভরা শরতমগ্নতাগুলো জমা রেখো আগামির জন্যে
হে স্বপ্নদেবতা আমার!
হে স্বপ্নপিতা, দান্তেকে বলো-
জানি একদিন অবশ্যই আমরা আমাদের বিশ্বসৃষ্টি করতে পারবো!
শরৎ
ডালিয়া চৌধুরী
শরতের দিগন্ত ধবল সাদা কাশবন
মেঘের মতো কাশফুলের পাপড়িরা
নীল পথ ধরে দূরবর্তী দূরে
বহুদূরের শহরে উদ্দেশ্যহীন ঝরে পড়ে।
রাতের চন্দ্র নক্ষত্র-নারী
পেলব আকাশ ছেড়ে ঘন ঘাসে
জ্যোৎস্নার বেশে পায়চারি করে
খর¯্রােতা জলের রুপালি ক্যানভাসে।
সুরস্নিগ্ধ সকালের মৃদুমন্দ বাতাস
দুলাতে থাকে শিশির নিষিক্ত যুঁই জবা
শরতে ভীষণ ঘোরে পায়
রেহেনা মাহমুদ
শরত একটা ঘোরের নাম
শরতে সব জীবনানন্দনীয়
যে কোনো নদী তখন ধানসিড়ি
যে কোনো নারী বনলতা।
নিশিতে পাওয়া নারীর মতো
ধবল জোছনা যাকে ডেকে নেয় গৃহের বাইরে
তার আর ভোর দেখা হয় না।
শরতে সব তরুণী সুনীলের বরুণা
বরুণা কথা রাখতে চায়
বুকের কপাটে দুঃখ মাথা ঠুকে বলে-
গুনে গুনে একশো একটাই নীল পদ্ম চাই
চাই দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে উন্মুত্ত যুবক বাঁধুক লাল কাপড়।
অথচ, কেউ কথা রাখেনি সুনীল;
কেউ না।
নীরার প্রেমিক ছুঁয়েছে ঠোঁট, ছুঁয়েছে আরো অজস্র পাপ।
শরতে আকাশটা ক্যানভাস
যার বুকে ইচ্ছেমতো দীর্ঘশ্বাস ছোড়া যায়
মেঘের তুলিতে সেসব শব্দ হয়
শব্দগুলো দীর্ঘ কবিতা বুনে কাশবনে লুটিয়ে পড়ে।
শরতে ভীষণ ঘোরে পায়
শরতে কেমন, কেমন কবিতা পায়!!
হলুদ পাতার কান্না
মিলি রায়
মন্দ্রিত হিমের শ্রান্ত প্রহরগুলো ফুরিয়ে গেলে
হাজার বছরের ক্লান্তি নেমে এসেছিলো,
বোধের কারাগারে বন্দি এক হলুদ পাতার শরীরে।
অনুভূতির মৃত্যুতে সর্বস্ব খুইয়ে ঝরে পড়েছিলো
ভোর না দেখা রাতের শিউলীর মতো।
তারপর
স্থানুমূর্তির মতো প্রেমহীন, আবেগহীন
নীরব, নিথর এক হৃদয় নিয়ে হেঁটে চলে গেছে
নির্জন পৃথিবীর পথ ধরে।
শতাব্দির জীর্ণতা শরীরে নিয়ে,
বিস্বাদে ভরা, স্বপ্নাহত মন নিয়ে হারিয়ে গেল অবশেষে,
মহাকালের গর্ভে লুকানো, অন্ধকারের অচিনপুরে।
দীর্ঘ বিষণœ ব্রাহ্ম মুহূর্তের শেষে
নিষ্পত্র বৃক্ষের নিঃসীম একাকীত্বকে মুছে দেবে বলে,
চেতনার প্রতিটি কোষ থেকে জন্ম নেবে কি
পৃথিবীর প্রথম কবিতা?
লেখা হবে কি, অলিখিত কোনো পঙক্তিমালা?
সময়ের শূন্যতায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষের শূন্য আঁচলে
লাগবে কি কখনো অনুরাগের শেষ রঙ?
আনকোরা বাতাস ছুঁয়ে যাবে কি
পত্রপল্লবহীন বৃক্ষের নিস্তরঙ্গ শাখা?
নির্জন একাকীত্বকে ভালোবেসে
কে কবে এঁকেছে, সুখের জলছবি।