জাহিদের নির্যাতনে মৃত্যু হয় ঝুট ব্যবসায়ী সুজনের

মামলার কার্যক্রম স্থগিত

২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনকে মিরপুর থানায় নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলো জনি হত্যা মামলার মূল আসামি পল্লবী থানার এসআই জাহিদ। হাইকোর্টের আদেশে সুজন হত্যা মামলার কার্যক্রম এখন স্থগিত রয়েছে। এদিকে পল্লবী থানায় নিয়ে জনিকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় এসআই জাহিদকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ আলোচিত এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন। এর আগে ঝুট ব্যবসায়ী সুজন হত্যা মামলা তুলে নিতে আসামি এসআই জাহিদের পরিবার নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ বাদীপক্ষের। এমনকি মামলার বাদী লুসিকে আটকে রেখে মামলার বিষয়ে আপোষ করারও অভিযোগ তোলা হয়।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১২ জুলাই রাতে মিরপুর থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই বছরের ২০ জুলাই আদালতে নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি এই মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে ঘটনার দিনই মিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম খান বাদী হয়ে ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর মিরপুর থানার ওসি সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দিয়ে এসআই জাহিদসহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে সিএমএম আদালত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। মামলায় বলা হয়, ২০১৪ সালের ১২ জুলাই হাজারীবাগ থানার পশ্চিম জাফরাবাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে সুজনকে আটক করে মিরপুর থানায় নিয়ে আসেন এসআই জাহিদ। এরপর রাত অনুমান সোয়া বারোটা থেকে ভোররাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে নিজেদের হেফাজতে রেখে তাকে নির্যাতন করেন। ফলে আটক মাহবুবুর রহমান সুজনের মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তাকে বাসায় ও থানার একটি কক্ষে আটকে রেখে বেধড়ক পেটানো হয়। ভোরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, মিরপুর থানা হেফাজতে এসআই জাহিদের নির্যাতনে এক পর্যায়ে মারা যান ঝুট ব্যবসায়ী সুজন। এর আগে পল্লবী থানায় থাকাকালীন একই কায়দায় জনি নামে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করে এসআই জাহিদ। একই বছর জানুয়ারিতে জাভেদ হোসেন নামে এক যুবককে পায়ে গুলি করলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। জনি হত্যা মামলার বিচার শেষ হলেও সুজন হত্যা মামলায় গত ৬ জানুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে নিখোঁজ হন মামলার বাদী লুসি। বেশ কিছুদিন নিখোঁজ থাকার পর গত ১৪ এপ্রিল আদালতে সন্ধান মেলে তার।

এ বিষয়ে লুসি কথা না বললেও তার পরিবার ও তাদের আইনজীবীর অভিযোগ, মামলার আপোষ করতেই এসআই জাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে আটকে রাখা হয়েছিল লুসিকে। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, এখানে স্বার্থ কার? যারা এই কেসটাকে নষ্ট করতে চায় তারাই আটকে রাখতে পারে। আপোষ করার চেষ্টা করতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বলেছেন, কয়েকজন পুলিশের জন্য সবাই তার দায়িত্ব নেবে না। আমরাও সেটা দেখতে চাই। তবে মামলা তুলে নিতে বাদীকে আটকে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন এসআই জাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।

বাদীপক্ষের অভিযোগ মামলা তুলে নিতে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে আসামির পরিবার। এ বিষয়ে নিহত সুজনের মা শাহিদা বেগম বলেন, জাহিদের মা আমার বাড়িতে গিয়ে ১২-১৩ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে। আমি টাকা চাই না, আমি চাই আমার ছেলে হত্যার বিচার। এ মামলার প্রধান আসামি এসআই জাহিদ ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে এবং অপর সোর্স রাশেদ পলাতক রয়েছে। এছাড়া, অপর আসামি পুলিশের ২ এএসআই রাশেদুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান মিঠু গত ১০ ফেব্রুয়ারি উচ্চআদালত থেকে জামিন পায়।

আরও খবর
এসআই জাহিদসহ ৩ পুলিশের যাবজ্জীবন
গ্যাস লিকেজ থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ
ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি হবে প্রধানমন্ত্রী
দেশে করোনায় একদিনে আরও ৪১ জনের মৃত্যু
অনুমতি ছাড়া কোন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না
একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সময় ২ দিন বেড়েছে
বিস্ফোরণে হতাহতদের প্রতি পরিবারকে ৫ লাখ করে টাকা দেয়ার নির্দেশ
ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ, লেনদেন বন্ধ নয়
অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বিরতি
সিনহা হত্যা তদন্তকে প্রভাবিত করুক এটা চাই না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বিভ্রান্তি
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৮ জন
নেত্রকোনায় ট্রলারডুবি : ১০ লাশ উদ্ধার, শিশুই বেশি
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্প মনোনীত

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২০ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭

জাহিদের নির্যাতনে মৃত্যু হয় ঝুট ব্যবসায়ী সুজনের

মামলার কার্যক্রম স্থগিত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনকে মিরপুর থানায় নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলো জনি হত্যা মামলার মূল আসামি পল্লবী থানার এসআই জাহিদ। হাইকোর্টের আদেশে সুজন হত্যা মামলার কার্যক্রম এখন স্থগিত রয়েছে। এদিকে পল্লবী থানায় নিয়ে জনিকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় এসআই জাহিদকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ আলোচিত এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন। এর আগে ঝুট ব্যবসায়ী সুজন হত্যা মামলা তুলে নিতে আসামি এসআই জাহিদের পরিবার নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ বাদীপক্ষের। এমনকি মামলার বাদী লুসিকে আটকে রেখে মামলার বিষয়ে আপোষ করারও অভিযোগ তোলা হয়।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১২ জুলাই রাতে মিরপুর থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই বছরের ২০ জুলাই আদালতে নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি এই মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে ঘটনার দিনই মিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম খান বাদী হয়ে ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর মিরপুর থানার ওসি সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দিয়ে এসআই জাহিদসহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে সিএমএম আদালত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। মামলায় বলা হয়, ২০১৪ সালের ১২ জুলাই হাজারীবাগ থানার পশ্চিম জাফরাবাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে সুজনকে আটক করে মিরপুর থানায় নিয়ে আসেন এসআই জাহিদ। এরপর রাত অনুমান সোয়া বারোটা থেকে ভোররাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে নিজেদের হেফাজতে রেখে তাকে নির্যাতন করেন। ফলে আটক মাহবুবুর রহমান সুজনের মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তাকে বাসায় ও থানার একটি কক্ষে আটকে রেখে বেধড়ক পেটানো হয়। ভোরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, মিরপুর থানা হেফাজতে এসআই জাহিদের নির্যাতনে এক পর্যায়ে মারা যান ঝুট ব্যবসায়ী সুজন। এর আগে পল্লবী থানায় থাকাকালীন একই কায়দায় জনি নামে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করে এসআই জাহিদ। একই বছর জানুয়ারিতে জাভেদ হোসেন নামে এক যুবককে পায়ে গুলি করলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। জনি হত্যা মামলার বিচার শেষ হলেও সুজন হত্যা মামলায় গত ৬ জানুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে নিখোঁজ হন মামলার বাদী লুসি। বেশ কিছুদিন নিখোঁজ থাকার পর গত ১৪ এপ্রিল আদালতে সন্ধান মেলে তার।

এ বিষয়ে লুসি কথা না বললেও তার পরিবার ও তাদের আইনজীবীর অভিযোগ, মামলার আপোষ করতেই এসআই জাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে আটকে রাখা হয়েছিল লুসিকে। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, এখানে স্বার্থ কার? যারা এই কেসটাকে নষ্ট করতে চায় তারাই আটকে রাখতে পারে। আপোষ করার চেষ্টা করতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বলেছেন, কয়েকজন পুলিশের জন্য সবাই তার দায়িত্ব নেবে না। আমরাও সেটা দেখতে চাই। তবে মামলা তুলে নিতে বাদীকে আটকে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন এসআই জাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।

বাদীপক্ষের অভিযোগ মামলা তুলে নিতে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে আসামির পরিবার। এ বিষয়ে নিহত সুজনের মা শাহিদা বেগম বলেন, জাহিদের মা আমার বাড়িতে গিয়ে ১২-১৩ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে। আমি টাকা চাই না, আমি চাই আমার ছেলে হত্যার বিচার। এ মামলার প্রধান আসামি এসআই জাহিদ ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে এবং অপর সোর্স রাশেদ পলাতক রয়েছে। এছাড়া, অপর আসামি পুলিশের ২ এএসআই রাশেদুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান মিঠু গত ১০ ফেব্রুয়ারি উচ্চআদালত থেকে জামিন পায়।