ঢাবি অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের সুপারিশের ভিত্তিতে ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিকেল ৩টায় সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)

অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বাহালুল মজনুন চুন্নু প্রমুখ।

২০১৮ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান। সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে পরদিন বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সে সময় অধ্যাপক মোর্শেদকে বরখাস্ত করার দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেয়া হয়। পরে ২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ওই কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হলে মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা নিয়ে আইনি সুপারিশ করতে গত বছর ৩০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। এই ট্রাইব্যুনালের সুপারিশের ভিত্তিতেই তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি সাদা দলের :

এদিকে ড. মোর্শেদ হাসান খানকে কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তিনি যেন ন্যায়বিচার পান সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাবি উপাচার্যকে দুইবার চিঠি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। তবুও ড. মোর্শেদকে চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে সাদা দল। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বিবৃতিতে বলা হয়- ড. মোর্শেদকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি। একটি জাতীয় দৈনিকে লিখিত নিবন্ধে কিছু অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের কারণে নিবন্ধটি প্রত্যাহার, দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা সত্ত্বেও তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করার ঘটনা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারী হওয়ায় সম্পূর্ণ বিধি-বহির্ভূতভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা এ ধরনের নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে বলা হয়- ১৯৭৩ বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬(৩) উপধারা এবং ১ম স্ট্যাটিউটের ৪৫ (৩) উপধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ এবং অদক্ষতা প্রমাণিত হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যায়। ড. মোর্শেদ হাসান খান উপযুক্ত কোন অভিযোগে অভিযুক্ত নন। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬(২) উপধারা অনুযায়ী বিশ^বিদ্যালয়ের যেকোন শিক্ষক বা কর্মকর্তা রাজনীতি করার তথা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখেন। অথচ একটি নিবন্ধে কিছু অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত চাকরিবিধিরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২০ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭

বিতর্কিত মন্তব্য

ঢাবি অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি

প্রতিনিধি, ঢাবি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের সুপারিশের ভিত্তিতে ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিকেল ৩টায় সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)

অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বাহালুল মজনুন চুন্নু প্রমুখ।

২০১৮ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান। সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে পরদিন বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সে সময় অধ্যাপক মোর্শেদকে বরখাস্ত করার দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেয়া হয়। পরে ২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ওই কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হলে মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা নিয়ে আইনি সুপারিশ করতে গত বছর ৩০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। এই ট্রাইব্যুনালের সুপারিশের ভিত্তিতেই তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি সাদা দলের :

এদিকে ড. মোর্শেদ হাসান খানকে কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তিনি যেন ন্যায়বিচার পান সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাবি উপাচার্যকে দুইবার চিঠি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। তবুও ড. মোর্শেদকে চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে সাদা দল। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বিবৃতিতে বলা হয়- ড. মোর্শেদকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি। একটি জাতীয় দৈনিকে লিখিত নিবন্ধে কিছু অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের কারণে নিবন্ধটি প্রত্যাহার, দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা সত্ত্বেও তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করার ঘটনা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারী হওয়ায় সম্পূর্ণ বিধি-বহির্ভূতভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা এ ধরনের নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে বলা হয়- ১৯৭৩ বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬(৩) উপধারা এবং ১ম স্ট্যাটিউটের ৪৫ (৩) উপধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ এবং অদক্ষতা প্রমাণিত হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যায়। ড. মোর্শেদ হাসান খান উপযুক্ত কোন অভিযোগে অভিযুক্ত নন। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬(২) উপধারা অনুযায়ী বিশ^বিদ্যালয়ের যেকোন শিক্ষক বা কর্মকর্তা রাজনীতি করার তথা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখেন। অথচ একটি নিবন্ধে কিছু অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত চাকরিবিধিরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।