করোনায় একদিনে

আরও ৪১ জনের মৃত্যু নতুন শনাক্ত ১৮৯২

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৪ জনে দাঁড়ালো। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯২ জন। করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৭০ জন হলো।

গতকাল বিকালে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য জানানো হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে সংক্রমণ এড়াতে অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, মানুষও তা মানছিল। পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও সেই সচেতনতা হারিয়ে গেছে, শিমুলিয়া লঞ্চ ঘাটে ডিসইনফেকশন চেম্বার এমন পড়ে থাকতে দেখা যায়, এখন কেউ তা ব্যবহার করছে না।

আইইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৭৪৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫০ জন হয়েছে।

গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

রোগী শনাক্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃতের মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৬১৩ (৭৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ) এবং নারী ১ হাজার ২১ জন (২২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ)।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৪১ জনের মধ্যে দশোর্ধ্ব একজন, ত্রিশোর্ধ্ব ২ জন, চল্লিশোর্ধ্ব ৮ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১১ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ১৯ জন রয়েছেন।

বিভাগ অনুযায়ী, ৪১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২২ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, রাজশাহীতে ৫ জন, খুলনায় ৩ জন, সিলেটে ১ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন রয়েছেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, ২৬ আগস্ট তা তিন লাখ পেরিয়ে যায়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ৮৫ দিন পর ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। এরপর তা আড়াই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় ১৭ জুলাই। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে। ১২ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই তালিকায় আরও ৫০০ নাম যোগ হতে সেই ১৩ দিনই লাগে। অর্থাৎ গতকাল ৮ সেপ্টম্বরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৫৫২ জনে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। জনসংখ্যার অনুপাতে নমুনা পরীক্ষাও কম হচ্ছে। এতে প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরের কিছু অঞ্চলে সন্দেহভাজন অনেকে পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। আবার সংক্রমণ ঠেকানোর কার্যকর কোন উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা, একটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে সংক্রমণের পঞ্চম মাসের তুলনায় ষষ্ঠ মাসে নতুন রোগী শনাক্ত, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার কমলেও মৃত্যু সেভাবে কমেনি। আগের মাসে মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ১৬৮ জনের। এই মাসেও ৭২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, অবশ্য তা আগের মাসের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কম। এই মাসে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, টেস্টিং (পরীক্ষা), ট্রেসিং (আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা), আইসোলেশন (রোগীদের বিচ্ছিন্ন রাখা) এগুলো যারা যথাযথভাবে করেছে তারা সংক্রমণ কমিয়ে আনতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব যথাযথভাবে হচ্ছে না। দুই-তিন মাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় মানুষ বের হতে বাধ্য হচ্ছে। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। অন্যদিকে অনেকে পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছে, অনেকে উপসর্গবিহীন। এসবের ফলে বাংলাদেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে আসা কঠিন হবে।

বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ২ কোটি ৭৮ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৯ লাখ পেরিয়ে গেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৯তম অবস্থানে।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

করোনায় একদিনে

আরও ৪১ জনের মৃত্যু নতুন শনাক্ত ১৮৯২

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৪ জনে দাঁড়ালো। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯২ জন। করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৭০ জন হলো।

গতকাল বিকালে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য জানানো হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে সংক্রমণ এড়াতে অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, মানুষও তা মানছিল। পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও সেই সচেতনতা হারিয়ে গেছে, শিমুলিয়া লঞ্চ ঘাটে ডিসইনফেকশন চেম্বার এমন পড়ে থাকতে দেখা যায়, এখন কেউ তা ব্যবহার করছে না।

আইইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৭৪৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫০ জন হয়েছে।

গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

রোগী শনাক্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃতের মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৬১৩ (৭৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ) এবং নারী ১ হাজার ২১ জন (২২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ)।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৪১ জনের মধ্যে দশোর্ধ্ব একজন, ত্রিশোর্ধ্ব ২ জন, চল্লিশোর্ধ্ব ৮ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১১ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ১৯ জন রয়েছেন।

বিভাগ অনুযায়ী, ৪১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২২ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, রাজশাহীতে ৫ জন, খুলনায় ৩ জন, সিলেটে ১ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন রয়েছেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, ২৬ আগস্ট তা তিন লাখ পেরিয়ে যায়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ৮৫ দিন পর ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। এরপর তা আড়াই হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় ১৭ জুলাই। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে। ১২ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই তালিকায় আরও ৫০০ নাম যোগ হতে সেই ১৩ দিনই লাগে। অর্থাৎ গতকাল ৮ সেপ্টম্বরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৫৫২ জনে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। জনসংখ্যার অনুপাতে নমুনা পরীক্ষাও কম হচ্ছে। এতে প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরের কিছু অঞ্চলে সন্দেহভাজন অনেকে পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। আবার সংক্রমণ ঠেকানোর কার্যকর কোন উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা, একটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে সংক্রমণের পঞ্চম মাসের তুলনায় ষষ্ঠ মাসে নতুন রোগী শনাক্ত, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার কমলেও মৃত্যু সেভাবে কমেনি। আগের মাসে মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ১৬৮ জনের। এই মাসেও ৭২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, অবশ্য তা আগের মাসের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কম। এই মাসে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, টেস্টিং (পরীক্ষা), ট্রেসিং (আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা), আইসোলেশন (রোগীদের বিচ্ছিন্ন রাখা) এগুলো যারা যথাযথভাবে করেছে তারা সংক্রমণ কমিয়ে আনতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব যথাযথভাবে হচ্ছে না। দুই-তিন মাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় মানুষ বের হতে বাধ্য হচ্ছে। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। অন্যদিকে অনেকে পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছে, অনেকে উপসর্গবিহীন। এসবের ফলে বাংলাদেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে আসা কঠিন হবে।

বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ২ কোটি ৭৮ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৯ লাখ পেরিয়ে গেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৯তম অবস্থানে।