পিয়াজ বাজার ফের অস্থির হয়ে উঠেছে

চট্টগ্রামের সেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু

পিয়াজের বাজার ফের অস্থির হয়ে উঠেছে। পিয়াজের দাম বাড়ানোর পেছনে চট্টগ্রামের একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গতবছর পিয়াজের দাম বাড়ার পিছনে যে সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করেছিল, তাদের তেমন কোন শাস্তি না হওয়ায় এবারও পিয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি করে চলছে চক্রটি। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ভারতে পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন। এদিকে পিয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে।

পিয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে খাতুনগঞ্জের সবচেয়ে বড় পিয়াজের মার্কেট হামিদ উল্যাহ খান মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পিয়াজের দাম খাতুনগঞ্জ মার্কেটে নির্ধারণ করা হয় না। ল্যান্ড পোর্টের (স্থলবন্দর) দামের উপর নির্ভর করে আমাদের কেনাবেচা করতে হয়। ভারত থেকে পিয়াজের সরবরাহ বাড়লে এখানে দাম কমে যাবে। এখন সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন গতকাল পাইকারি বাজারে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা দাম থাকলেও বর্তমানে পিয়াজের দাম ৪২ টাকা চলছে।

সরবরাহ ও মজুদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে মজুদ ঠিকঠাক পরিমাণে আছে। সরবরাহও হচ্ছে। তবে ভারতের যে রাজ্যে পিয়াজ উৎপাদিত হয়, সেখানে বৃষ্টির কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় সার্বিকভাবে সরবরাহ কমেছে। ফলে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ ঠিকঠাক হলে আবার পিয়াজের দাম কমে আসবে বলে তিনি জানান।

নগরীর কয়েকটি বাজার সরেজমিনে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে পিয়াজের দাম ৪৮ টাকা থেকে ৭০ টাকা। তবে ৪৮ টাকা থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পিয়াজ। আর দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। বন্দর নগরীর বাইরেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পিয়াজের ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ও বিদেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ২০-৩৫ টাকা। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে শওকত নামের অলঙ্কার বাজারের এক পিয়াজ বিক্রেতা বলেন, বন্যার কারণে পিয়াজ ঠিকমতো আসছে না। এছাড়া করোনার কারণেও ফলন কম হয়েছে মনে হয়। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। তাই এর প্রভাবে এখানেও দাম বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, যেকোন পণ্যের দাম বাড়লে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে ইতোপূর্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন ওই খাতের ব্যবসায়ী ও ভোক্তা এবং প্রশাসনের লোকজনকে নিয়ে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ সভা করে বিকল্প উৎস থেকে আমদানি, বাজার তদারকি জোরদার করে মজুত ঠেকানো ও টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করে অস্থিরতা বন্ধে উদ্যোগ নিয়ে থাকলেও ইদানীং ব্যবসায়ীদের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে অভিযান চালালেই ব্যবসায়ীরা বিক্রি বন্ধ করে ধর্মঘট দিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দেনদরারে চলে যান। আর প্রশাসন বড় বড় ব্যবসায়ীদের চাপে এসব অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। আর চোরাচালান কায়দায় বৈধ কাগজপত্র ছাড়া পণ্য বিক্রি ও অর্থ লেনদেনের কারণে মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ বাড়ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে।

সরেজমিনে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজারে এক দোকানি বলেন, আমরা খুচরা ব্যবসায়ী। যে দামে কিনি, তার দুই-এক টাকা লাভে বিক্রি করি। আমরা বাজারের কোন জিনিসের দাম বাড়াতে পারি না। এসব ইমপোর্টার ও আড়ৎদারদের নিয়ন্ত্রণে। ওরা বাড়ালে বাড়ে, কমালে কমে।

কাজীর দেউড়ি বাজারে পিয়াজ ক্রয় করা কালে এক ক্রেতা বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাজার মনিটরিংয়ে রাখতে হয়। সরকার এ বাজার ব্যবস্থা নিয়ে উদাসীন। বাজারে শুধু পিয়াজ নয়, সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। করোনার কারণে মানুষের আয় কমেছে, কিন্তু খাবারের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া সরকার গত বছর পিয়াজ নিয়ে যে সিন্ডিকেট চক্র মানুষকে জিম্মি করে অর্থলুট করেছিল, তাদের চিহ্নিত করেছিল বলে জেনেছি। কিন্তু তাদের কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। মাঝে মাঝে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে টাকা জরিমানা করেন। এ জরিমানা তাদের জন্য কিছুই না। আসল কথা হলো, বিচার ও শাসন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে এবারও অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠে।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

পিয়াজ বাজার ফের অস্থির হয়ে উঠেছে

চট্টগ্রামের সেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

পিয়াজের বাজার ফের অস্থির হয়ে উঠেছে। পিয়াজের দাম বাড়ানোর পেছনে চট্টগ্রামের একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গতবছর পিয়াজের দাম বাড়ার পিছনে যে সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করেছিল, তাদের তেমন কোন শাস্তি না হওয়ায় এবারও পিয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি করে চলছে চক্রটি। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ভারতে পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন। এদিকে পিয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে।

পিয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে খাতুনগঞ্জের সবচেয়ে বড় পিয়াজের মার্কেট হামিদ উল্যাহ খান মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পিয়াজের দাম খাতুনগঞ্জ মার্কেটে নির্ধারণ করা হয় না। ল্যান্ড পোর্টের (স্থলবন্দর) দামের উপর নির্ভর করে আমাদের কেনাবেচা করতে হয়। ভারত থেকে পিয়াজের সরবরাহ বাড়লে এখানে দাম কমে যাবে। এখন সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন গতকাল পাইকারি বাজারে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা দাম থাকলেও বর্তমানে পিয়াজের দাম ৪২ টাকা চলছে।

সরবরাহ ও মজুদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে মজুদ ঠিকঠাক পরিমাণে আছে। সরবরাহও হচ্ছে। তবে ভারতের যে রাজ্যে পিয়াজ উৎপাদিত হয়, সেখানে বৃষ্টির কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় সার্বিকভাবে সরবরাহ কমেছে। ফলে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ ঠিকঠাক হলে আবার পিয়াজের দাম কমে আসবে বলে তিনি জানান।

নগরীর কয়েকটি বাজার সরেজমিনে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে পিয়াজের দাম ৪৮ টাকা থেকে ৭০ টাকা। তবে ৪৮ টাকা থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পিয়াজ। আর দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। বন্দর নগরীর বাইরেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পিয়াজের ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ও বিদেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ২০-৩৫ টাকা। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে শওকত নামের অলঙ্কার বাজারের এক পিয়াজ বিক্রেতা বলেন, বন্যার কারণে পিয়াজ ঠিকমতো আসছে না। এছাড়া করোনার কারণেও ফলন কম হয়েছে মনে হয়। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। তাই এর প্রভাবে এখানেও দাম বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, যেকোন পণ্যের দাম বাড়লে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে ইতোপূর্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন ওই খাতের ব্যবসায়ী ও ভোক্তা এবং প্রশাসনের লোকজনকে নিয়ে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ সভা করে বিকল্প উৎস থেকে আমদানি, বাজার তদারকি জোরদার করে মজুত ঠেকানো ও টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করে অস্থিরতা বন্ধে উদ্যোগ নিয়ে থাকলেও ইদানীং ব্যবসায়ীদের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে অভিযান চালালেই ব্যবসায়ীরা বিক্রি বন্ধ করে ধর্মঘট দিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দেনদরারে চলে যান। আর প্রশাসন বড় বড় ব্যবসায়ীদের চাপে এসব অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। আর চোরাচালান কায়দায় বৈধ কাগজপত্র ছাড়া পণ্য বিক্রি ও অর্থ লেনদেনের কারণে মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ বাড়ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে।

সরেজমিনে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজারে এক দোকানি বলেন, আমরা খুচরা ব্যবসায়ী। যে দামে কিনি, তার দুই-এক টাকা লাভে বিক্রি করি। আমরা বাজারের কোন জিনিসের দাম বাড়াতে পারি না। এসব ইমপোর্টার ও আড়ৎদারদের নিয়ন্ত্রণে। ওরা বাড়ালে বাড়ে, কমালে কমে।

কাজীর দেউড়ি বাজারে পিয়াজ ক্রয় করা কালে এক ক্রেতা বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাজার মনিটরিংয়ে রাখতে হয়। সরকার এ বাজার ব্যবস্থা নিয়ে উদাসীন। বাজারে শুধু পিয়াজ নয়, সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। করোনার কারণে মানুষের আয় কমেছে, কিন্তু খাবারের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া সরকার গত বছর পিয়াজ নিয়ে যে সিন্ডিকেট চক্র মানুষকে জিম্মি করে অর্থলুট করেছিল, তাদের চিহ্নিত করেছিল বলে জেনেছি। কিন্তু তাদের কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। মাঝে মাঝে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে টাকা জরিমানা করেন। এ জরিমানা তাদের জন্য কিছুই না। আসল কথা হলো, বিচার ও শাসন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে এবারও অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠে।